কলম হেঁটে চলে যার উদ্বাস্তু মিছিলের সঙ্গে
“আমি ইংল্যান্ডে এসেছিলাম, যখন ‘শরণার্থীর’ মতো শব্দগুলোর অর্থ কিছুটা আলাদা ছিল। মানুষ সংগ্রাম করছিল, সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রগুলো থেকে পালিয়ে বাঁচছিল…” এ বক্তব্য আর কারোর নয়, সম্প্রতি 2021 সাহিত্যে নোবেলজয়ী। 1948 ক্রিস্টাব্দের 20 শে ডিসেম্বর জাঞ্জিবারে যা বর্তমানে তানজানিয়ার অংশ। সেখানে তখন আরব বংশোদ্ভূত নাগরিকরা নির্যাতিত হচ্ছিলেন। সেই সময়কালে নিজের স্কুল শেষ করে মাত্র 18 বছর বয়সে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং চলে আসেন ইংল্যান্ডে। ভূমিচ্যুত হওয়ার একটা অবিরাম দংশন থাকে যা মানুষকে ভেতর থেকে নিংড়ে নিতে থাকে, খানিকটা এই কারণেই হয়তো কলমকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ডক্টর আব্দুলরজাক গুরনাহ, তারপর দুনিয়া দেখেছে শিকড়হীন মানুষের বেদনার অবিরাম বিস্ফোরণ।
‘মেমরি অফ ডিপার্চার’ (১৯৮৭) দিয়ে শুরু, তারপর একে একে এসেছে ‘পিলগ্রিমস'(১৯৮৮), ‘প্যারাডাইস’ (১৯৯৪) , ‘অ্যাডমায়ারিং সাইলেন্স’ (১৯৯৬), ‘বাই দ্য সি’ (২০০১), ‘ডেসারশন’ (২০০৫) ইত্যাদি এবং আরও অনেক ছোটগল্প ও উপন্যাস। ‘আফটারলাইফ’ তার সর্বশেষ উপন্যাস যা প্রকাশিত হয়ে ২০২০ তে।
ভূমিচ্যুত হওয়াকেই তার ঔপনিবেশিকতাবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কারণ হিসেবে ধরেন বুদ্ধিজীবী মহল। তিনি কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করার পর ক্যান্টারবেরির ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট-এ ইংরেজি এবং উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করে যান অবসরের আগ পর্যন্ত। ৭৩ বছর বয়সে এসে তার এই নোবেল জয় অবশ্যই তার বক্তব্যকে এ বিশ্বের প্রতিটি ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে নির্যাতিত মানুষের জয় হিসেবে গণ্য হবে।
এ জয় আমাদের সকলের জয়।