এলিজাবেথীয় নাটকের রকমসকম – কৌশিক মজুমদার

১৫৯৬ সালে এক ওলন্দাজ পর্যটক জোহানেস ডি উইট লন্ডনে ঘুরতে ঘুরতে কি এক খেয়ালে সোয়ান থিয়েটারে নাটক দেখতে ঢুকে পড়েন। জব্বর নাটক। ডি উইট খুশ। কিন্তু শুধু নাটক দেখেই চলে আসার আগে ভদ্রলোক নিজের নোটবুকে গোটা থিয়েটারের একটা ছবির খসড়া এঁকে রাখলেন।

কী দেখা গেল তাতে? ভদ্রলোক একেবারে মাঝের সিটে বসে ছবি এঁকেছিলেন। তাই তাঁর চোখে উপরের গ্যালারি, সামনের বিরাট স্টেজ, যার কিছুটা ছাউনিতে ঢাকা, ঠিক তাঁর পিছনেই অভিনেতাদের বিশ্রাম নেবার টায়ারিং রুম, টায়ারিং রুমের উপরে বাদ্যযন্ত্র বাদক, গ্যালারিতে দর্শক, সবাইকে দেখা যাচ্ছে। মঞ্চে নাটক অভিনীত হচ্ছিল। নাটককার কোন এক উইলিয়াম শেক্সপীয়র। ডি উইটের ছবিটি ঐতিহাসিক। কারণ আজ অবধি এটিই একমাত্র শেক্সপীয়রের নাটকের প্রত্যক্ষদর্শীর আঁকা ছবি। ডি উইটের ছবির সঙ্গে আজকের গ্লোবের অদ্ভুত মিল। সোয়ান বা রোজ আজ আর নেই, কিন্তু এই ছবি রয়ে গেছে। আর রয়ে গেছে কিছু রহস্য যার সমাধান আজ অবধি হয়নি।

দাঁড়ান দাঁড়ান, একটু তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে। মূল ঘটনায় যাবার আগে ধান ভানতে কিছু শিবের গীতের প্রয়োজন। ইংল্যান্ডের থিয়েটারের ধারা না জানলে গোটাটাই পানসে ঠেকবে। ধরা যাক একটা টাইম মেশিন চেপে আপনি আমি সোজা চলে গেলাম ১৬০০ সালের লন্ডনে। লন্ডনে তখন রাণী এলিজাবেথের শাসনকাল। ভদ্রমহিলা ঢের লড়াই ঝগড়া করে ১৫৫৮ সালে ব্রিটেনের সিংহাসনে বসেন। তখন ব্রিটেনের রাণী দারুণ বিরাট কিছু ছিলেন না। সাধারণ জমিদার বা সামন্ত থেকে সামান্য উঁচুতে ছিল তাঁর অবস্থান। তিনি যখন রাণী হলেন, সে সময় ব্রিটেনে থিয়েটার বলে কিছু ছিল না। ছিল ভ্রাম্যমান অভিনেতাদের দল। তাঁরা গরুর বা ঘোড়ার গাড়ি চেপে গোটা ইংল্যান্ড ঘুরে ঘুরে নাটক দেখাত। নাটকের বিষয় ছিল বাইবেলের কোন চেনা ঘটনা কিংবা নৈতিকতার শিক্ষাদান। ইংরাজিতে যাকে মরালিটি প্লে বলা হত। যেহেতু প্রায় সারা বছরই ঘুরে বেড়াতে হত, তাই দলে কোন মহিলা সদস্য ছিলেন না, পুরুষরাই মহিলাদের ভূমিকায় অভিনয় করতেন। আর এই দীর্ঘ যাত্রায় শারীরিক চাহিদা মেটাতে পুরুষে পুরুষে প্রেম খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল, যে দুটো পরে এলিজাবেথীয় থিয়েটারের সিগনেচার হয়ে গেছিল। তবে এই দলের অভিনেতাদের পরিশ্রম ছিল প্রচণ্ড। নতুন নতুন জায়গায় তাবু বেঁধে নাটক দেখানোর পাশাপাশি মাসে প্রায় ২৫টা নাটক আর ৫০টা চরিত্রের সংলাপ ও অভিনয় মুখস্থ রাখতে হত। কোন এক জায়গায় ঘাটি গেঁড়ে টানা ২০-২৫টা নাটক দেখিয়ে তাঁরা বিদায় নিতেন। তাই রিপিটের কোন সুযোগই ছিল না।
যতদিন যেতে লাগল এই নাটকদের দলগুলোতে বেনোজল ঢুকতে লাগল। নানা অপেশাদার অভিনেতা, চোর, ডাকাতরাও নাটকের অভিনেতা সেজে নিজেদের কাজ সিদ্ধ করতে শুরু করল। রাণী দেখলেন মহা মুশকিল। তিনি নিয়ম করে দিলেন প্রতিষ্ঠিত নাটকের দল ছাড়া এলিতেলি যে কেউ দল নিয়ে ঘুরতে পারবে না। ফলে বেশকিছু অভিজাত এমনকি রাণী নিজেও নাটকের দলের প্যাট্রন হলেন। প্যাট্রন হবার সুবিধে ছিল। দায় দায়িত্ব খুব বেশি কিছু নেই। নাটকের দল নিজেদের মতই নিজেদের চালাবে, বরং বছর শেষে সেই অভিজাত লাভের একটা অংশ পাবেন কাটমানি হিসেবে। ঠিক এভাবেই লর্ড চেম্বারলিন একখানা দল বানিয়েছিলেন, নাম লর্ড চেম্বারলিন্স মেন। তাতে অধিকারী মশাই কাম নাটককার কাম অভিনেতা হিসেবে ছিলেন উইলিয়াম শেক্সপীয়র নামের এক ছোকরা। ইংল্যান্ডে তো দূরে থাক খোদ লন্ডনেও তখন একটাও থিয়েটার ছিল না। বোর’স হেড ইন নামে এক সরাইখানার উঠানে রোজ সন্ধ্যায় মোচ্ছব বসত, তাতে কোনদিন কেউ গাইতেন, কেউ নাচতেন, আবার কখনও অভিনয়ও হত। থিয়েটার স্পেস বলতে এটাই। এখন এই কোভিড কালে যে ইন্টিমেট থিয়েটার স্পেসগুলো হয়েছে অনেকটা সেই গোছের। তবে এখনকার মত সুভদ্র দর্শকরা এসে বসতেন না সেখানে। একজন খুক করে কাশলেই অন্যরা চোখ রাঙাত না। বরং উলটোটা। মদের ফোয়ারা, হাসির হুল্লোড়, মেয়ে নিয়ে ফষ্টিনষ্টি সব চলত। এই প্রবল আওয়াজের মধ্যেই অভিনেতাদের সেরা পারফর্মেন্সটা করতে হত, নইলে কপালে পচা ডিম ছাড়া মারধোরও জুটে যেত প্রায়ই। সে যাই হোক পিউরিটানরা এই নাটককে ভাল চোখে দেখতেন না। ওখানে বদ লোকেদের আড্ডা। ছেলেরা নাকি ছেলেদের সাথেই কিসব করে। এর শাস্তি ছিল প্রাণদন্ড। মজার কথা রাণী এলিজাবেথ নাকি সব জেনেও চোখবুজে থাকতেন। তাঁর বক্তব্য ছিল যা করে করুক “গে”-আমার রাজ্যে জনসংখ্যা না বাড়লেই হল। রাজকোষের যা দশা!!খাওয়াব কি?? শোনা যায় নাটক দেখতে যাওয়াও নাকি খুব রিস্কি ছিল। চোর পকেটমার জুয়াচোরেরা নিকটেই থাকত। অদ্ভুত নাম ছিল তাঁদের। ফইস্ট, হুকার, নিপার, ফিঙ্গারার…ছিল সব জোচ্চরের শ্রেণীবিভাগ। তারা শুধু চুরি নয়, আরও কি করত তা নিয়ে ধ্রুপদী একটা ঘটনা রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। আমি নিজের মত করে বলছি।

এক ভদ্রমহিলা বহুদিন ধরে তাঁর স্বামীকে বলছেন “কি গো!চল না একবার থ্যাটার দেখতে। চেম্বারলিনের দলের শেক্সপীয়ার নামের একজন নাকি দারুণ সব নাটক নামাচ্ছে। বাজে কিছু না। সামাজিক পালা” ভদ্রলোক রাজি নন। কি দরকার ওসব প্যাঁচাপেঁচি লোকেদের ভীড়ে?? অনেক মান অভিমান চলল। শেষে রাজি হলেন ভদ্রলোক। তবে একটা শর্ত। টাকার থলিটা তোমায় পেটিকোটের ভিতর লুকিয়ে নিতে হবে। সেকালের ইংরেজ মহিলাদের পোশাক ভাবলেই পরিষ্কার হবে যে ভদ্রলোক কতটা দূরদর্শী ছিলেন। কিন্তু হায়!! নাটক দেখে ঘরে ফিরেই মহিলা কান্নায় ভেঙে পড়লেন। কেউ সেই টাকার থলিটা মেরে দিয়েছে। ভদ্রলোক অবাক”সে কি??তুমি কোন হাতের ছোঁয়া টের পাওনি?”
“পেয়েছি তো”ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললেন মহিলা “কিন্তু কি করে বুঝব ড্যাকরাটা এই জন্য হাত দিয়েছে”।

ইয়ার্কি থাক। কিন্তু এভাবেই গোটা ব্যাপারটা চলত যদি না জেমস ব্যাবেজ নামে এক সরাইয়ের মালিক অন্যকিছু ভাবতেন। আজকের থিয়েটারের তাঁর কাছে অনেক ঋণ। পরেরবার তাঁকে দিয়েই শুরু করব। আজ বরং অন্য দুটো প্রসঙ্গ দিয়ে আলচনায় ইতি টানি।

শেক্সপীয়ারের আমলে তো মেয়েরা কেউ থিয়েটারে অভিনয় করতেন না। তবে মেয়েরা প্রথম থিয়েটারে এল কবে এই প্রশ্ন মনে আসা স্বাভাবিক। এল অনেক পরে, আর অদ্ভুতভাবে। শেক্সপীয়রের মৃত্যুর কিছুদিন বাদেই শুরু হল ইংলন্ডের গৃহযুদ্ধ। সে ঝামেলার প্রথম কোপ পড়ল নাটকের ওপর। পিউরিটানরা আইন করে ১৬৪২ সালে নাটক বন্ধ করে দিলেন। অনেক পরে রাজা দ্বিতীয় চার্লস সিংহাসনে বসলে আবার নাটক শুরু হল।
১৬৬০ সালের কথা। সপারিষদ রাজা বসে নাটক দেখছেন, হঠাৎ নাটক বন্ধ। রাজা তো দারুন বিরক্ত। একজন ছুটে এসে জানাল যে পুরুষ অভিনেতাটি নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করবেন তাঁর গত রাতের খোয়ারি ভাঙতে দেরি হয়েছিল। তিনি এখন একমনে দাড়ি কামাচ্ছেন। কামানো শেষ হলেই নাটক শুরু হবে। খাপ্পা হয়ে উঠে চলে এলেন রাজা। রীতিমত আইন করে দিলেন নাটকে মহিলার চরিত্রে মহিলারাই অভিনয় করবেন-পুরুষ নয়। তখনকারদিনে এই সিদ্ধান্ত সব্বাইকে চমকে দিয়েছিল সন্দেহ নেই। কোন মহিলা রাজি হচ্ছিলেন না মঞ্চে নামতে। এমনকি দেহপজীবিনীরাও না। আর যাকে তাকে মঞ্চে নামালেই তো হবে না,অভিনয় জানা চাই। অনেক খুঁজে এমন একজনকে পাওয়া গেল। তার নাম মার্গারেট হিউজেস। লোকে আদর করে ডাকে পেপি বলে।তাঁর রূপে লুটিয়ে পড়ে রাজা থেকে অভিজাত সবাই। তালিম দিয়ে দেখা গেল দুর্দান্ত অভিনয় করেন তিনি। রাজপুত্র ফিলিপের এই রক্ষিতা ১৬৬২ সালে ৩০ বছর বয়সে মঞ্চে এলেন ওথেলো নাটকে। ডেসডিমনার ভূমিকায়। শোনা যায় অতভাল অভিনয় খুব কমই হয়েছে আগে পরে। শেক্সপীয়র বেঁচে থাকলে খুশি হতেন। ডেসডিমনার প্রসঙ্গই যখন এল, তখন একটা ছোট্ট ব্যাপারের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এ আমার একান্ত নিজের ভাবনা।

শেক্সপীয়র কেন আলাদা? কেন মারা যাবার চারশো বছর পরেও শেক্সপীয়র প্রাসঙ্গিক? আমি তত্ত্ব দিতে বসিনি। শুধু এটা মনে হয় মানুষের প্রাথমিক ও আদিম রিপুগুলোকে দারুনভাবে ধরতে পেরেছিলেন তিনি। জানি তাঁর বহু নাটক দাঁড়িয়ে আছে একটা কথা বা একটা chance factor এর উপর। কিন্তু সেটাকে অবলম্বন করে যে দারুন নির্মান তা তিনি ছাড়া আর কেউ এভাবে করতে পারেন না। ভেবে দেখুন তো ডেসডিমোনার বাবা ওথেলোকে যদি না বলতেন “যে মেয়ে তার বাবাকে ধোঁকা দিতে পারে সে যে কোন দিন তোমায় দেবে” তাহলে গোটা ট্রাজেডিটাই হয় না। হ্যামলেট আচমকা দেশে ফিরে না এলে ম্যারমেড়ে একটা গল্পও দানা বাঁধে না। তিন ডাইনিবুড়ি ম্যাকবেথের পথ আটকে ভবিষ্যৎবাণী না করলে তাঁর রাজা হবার ইচ্ছেটাই হয় না।

এক একটা ছোট্ট ঘটনা। দেখতে যতই মামুলি হোক না কেন তাঁরা ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আর তখনই সে মোড় ঘোরে যখন তা মানুষের মনের গভীরতম রিপু কাম ক্রোধ লোভ মোহকে ছুঁয়ে ফেলে…আর এখানেই শেক্সপীয়র বলে বলে ছক্কা মারেন। তখন লন্ডন থিয়েটার হত দুপুর বেলায়। মঞ্চের চারিদিকে দর্শকের চিৎকারে কান পাতা দায়। তবু শেক্সপীয়র হ্যামলেট শুরু করছেন শীতের মধ্যরাত দিয়ে। এখন হলে আলোর কেরামতিতে মাঝরাত ফোটানো কোন ব্যাপারই না। কিন্তু সে সব তখন কোথায়? রাত নামলেই লন্ডনের রাস্তায় নেমে আসত গভীরতর অন্ধকার। লন্ডন ব্রিজের কোণায় কোণায় গণিকারা দাঁড়িয়ে। যা হবার খোলা আকাশের তলাতেই হত। কে দেখবে? আলো কোথায়? তাই একমাত্র শব্দের উপর ভর দিয়ে নাটক সাজান শেক্সপীয়র। শুরুতেই এক সৈন্য মশাল হাতে প্রশ্ন করে ” কে যায়? কে যায় ওখানে গরম আলখাল্লা পড়ে কুয়াশার মধ্যে দিয়ে?”
কি মজা দেখুন শুধু শব্দের জাদুতেই এক লহমায় গরমকালের দুপুরের লন্ডনের মঞ্চ ডেনমার্কের মধ্যরাত হয়ে গেল…

শেক্সপীয়র এসব পারতেন। যেমন পারতেন দরকার মত নিত্য নতুন শব্দ বানাতে। ইংরাজি অভিধানে ২০৩৫ টা শব্দ তাঁর বানানো। শুধু হ্যামলেটেই তো ৬০০ নতুন শব্দ ছিল। ইংরাজি ভাষার সেই গড়ে ওঠার দিনে critical, lonely, antipathy, excellent, frugal, eventful এর মত শব্দ আর into thin air, flesh and blood, foul play র মত শব্দবন্ধ দিয়ে ভাষাকে তিনি আধুনিক করেছেন। চারশো বছর আগে যখন পৃথিবীতে কেউ যৌথ পরিবার ছাড়া ভাবতেই পারত না, সেখানে সে পরিবারের ভাঙন আর nuclear family র উদ্ভবের দিক নির্দেশ করেছেন কিং লিয়রে… যা এখন পৃথিবীজুড়ে সত্যি…
বাংলাতেও কি অদ্ভুতভাবে শেক্সপীয়র এসেছেন। ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক-

 

লক্ষপতি বলিলেন, “তুমি আমাকে পদাঘাত করিবা, এবং মহোৎসব দিবসে আমার গ্রাত্রে মুখ হইতে পীতাবশিষ্ঠ জল ফেলিবা, ও অন্য সময়ে কুক্কুর বলিয়া ডাকিবা, তোমার এই সৌজন্য জন্য কি আমি দাসের ন্যায় নত হইয়া তোমাকে এত টাকা ঋণ দিব?”

হুগলী বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আবগারির সুপারিনটেন্ডেন্ট হরচন্দ্র ঘোষ ১৮৫৩ সালে ভানুমতীর চিত্তবিলাস নামে একটি নাটক লেখেন। নাটকটি ঐতিহাসিক। কারণ লং সাহেব এই নাটক পড়ে বলেছেন সেই প্রথম ” Shakespere’s ideas, but given in Bengali dress; well and ably done”। এক কথায় সেই প্রথম শেক্সপীয়রকে বঙ্গীকরণ করা হল। এর আগে অবশ্য ল্যামের টেলস ফ্রম শেক্সপীয়র-কে বাংলায় অনুবাদ করে অপূর্বোপাখ্যান নামে গুরুদাস হাজরা, মুক্তারাম বিদ্যাবাগীশ ১৮৪৮ সালে পূর্ণচন্দ্রোদয় প্রেস থেকে ছেপে প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু সে তো নেহাত অনুবাদ। হরচন্দ্রই প্রথম শেক্সপীয়রের চরিত্রদের আটপৌরে বাঙালী বানিয়ে ছাড়েন। তাঁর ট্রান্সক্রিয়েশানের জোরে শাইলক হন লক্ষপতি, রোমিওর নাম চারুমুখ আর জুলিয়েট চিত্তহরা। হরচন্দ্রের পরে পরেই গোবিন্দচন্দ্র রায় ১৮৮৮ তে ভিষক দুহিতা নামে অলস ওয়েল দ্যাট এন্ডস ওয়েল উপন্যাস আকারে লেখেন। তাঁর আগেই অবশ্য বিদ্যাসাগর মশাই ভ্রান্তিবিলাস লিখে ফেলেছেন। ভ্রান্তিবিলাস এতই জনপ্রিয় হয়, যে এর ঠিক তিন বছর বাদেই একই নাটক অবলম্বনে বেনীমাধব ঘোষ যে ভ্রমকৌতুক নাটকটি লিখেছিলেন তা স্মৃতির আড়ালে চাপা পড়ে গেছে। তবে সে সময় ভারতীয় পরিবেশে শেক্সপীয়রের যে নাটক্টা সে সময় সত্যিকারের সাড়া ফেলেছিল তা হল হরিরাজ। লেখক দুই নগেন্দ্রনাথ। বসু আর চৌধুরী। বিখ্যাত অভিনেতা অমরেন্দ্র দত্ত হরিরাজ সাজতেন। এই নাটকেরই এক দৃশ্য সচল ক্যামেরায় তুলেছিলেন হীরালাল সেন।

হরিরাজের মনোলগ ছিল এই রকম-

জীবন ধারণ কিংবা প্রাণ বিসর্জন
কিবা প্রয়োজন, চাহে মন জানিবারে।
আবরি হৃদয় নিজ চির অন্ধকারে-
পন্থহারা হয়ে রব অলক্ষ্য প্রদেশে।
চেনা চেনা ঠেকছে?
“To be, or not to be: that is the question:
Whether ’tis nobler in the mind to suffer
The slings and arrows of outrageous fortune,
Or to take arms against a sea of troubles”

এতো গেল হ্যামলেট। ম্যাকবেথের প্রথম সার্থক অনুবাদ করেন গিরীশ ঘোষ। এর পরে শেক্সপীয়রের নাটককে বাংলায় আনার ধুম পরে যায়। সুশীলা (সিম্বেলিন), প্রকৃতি নাটক (টেম্পেস্ট), রাণী তমালিনী (উইন্টার্স টেল), সুরসুন্দরী(ওথেলো) এদেরই কিছু। অবশ্য সুরসুন্দরী-তে শেষে নায়ক নায়িকার মিলন হয়।

মনেই হয়না কোন বিদেশী লেখকের, বিদেশী পরিবেশে, বিদেশী মানুষদের নিয়ে লেখা নাটক। মানুষ যে দেশেদেশে কালে কালে এক। অভিন্ন। সাধে সৌমিত্র থেকে বিশাল, সৃজিত থেকে আকিরা সবাই দিনের শেষে তাঁর কাছে হাত পাতেন!

One thought on “এলিজাবেথীয় নাটকের রকমসকম – কৌশিক মজুমদার

  1. খুব সুন্দর, তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটি। পড়ে বিশেষ উপকৃত হলাম। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম সবটা। পরের সংখ্যা র আশায় রৈলাম!

Comments are closed.