নাটক: পদ্ধতি (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও মণিভূষণ ভট্টাচার্য অবলম্বনে) – মৈনাক সেনগুপ্ত

একজন ঘাড় নিচু করে বসে। হাতগুলো যেন পিছমোড়া করে বাঁধা। পা-এর নিচের অংশও দেখা যায় না। খুব কষ্ট করে সে ঘাড়টা তোলে। সামনে আনে। বেশ কষ্ট করে মুখের বাঁধনটা খোলে। তখনও সে বসেই। হাঁটুর নিচের অংশটা দৃশ্যমান নয়।)

(ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে)– তো সেদিন হাঁটছিলাম, বুঝলেন। অনেককাল ধরেই ওটা আমার অভ্যেস। হাঁটা আর দেখা, দেখা, হাঁটা। দেখতে দেখতে হাঁটা। আবার হাঁটতে হাঁটতে দেখা। কখনও থমকে যাইনি, তা নয়। সেদিনও থমকেই গেছিলাম। একটা মস্ত মাঠ। সেখানে থিকথিক করছে মানুষ। আর বুঝলেন তো, আমার কাছে বরাবর-ই মানুষ সব চাইতে রঙিন। এই ধরুন, পাহাড় ধূসর, সবুজ কিংবা বরফে মোড়া– ফ্যাটফ্যাটে সাদা। সমুদ্র? নীল, সবুজ বা বালি-বালি, জঙ্গল তো একটু ঘন হলেই অন্ধকার। অথচ মানুষকে দেখুন– আলো–অন্ধকার–খয়েরি–গোলাপি সব পাবেন। আর রঙ আমাকে খুব টানে– নানারকম রঙ। তো বলতে পারেন সেদিন অত মানুষ দেখে রঙের টানেই দাঁড়িয়ে পড়লাম।
(উঠে দাঁড়িয়ে)

এক.

গুটিগুটি ভিড় ঠেলে এগিয়ে পড়লাম। ছোটখাটো সাধারণ চেহারার মানুষ আমি। দশজনের মধ্যে আলাদা করে চোখে পড়ি না। (একটু গলা নামিয়ে) – মানে যাদের চোখ চারিদিকে বনবন করে ঘোরে তাদের চোখ এড়াতে পারি না; কে-ই বা পারে, বলুন? তবে আমার আশেপাশে সেদিন যারা ছিল, বেশিরভাগই আম-আদমি। আমাকে আলাদা করে খেয়াল করেনি। আর আমিও সেই সুযোগে, এর বগলের তলা দিয়ে, ওর থুতনির নিচ দিয়ে একদম বধ্যভূমির সামনে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন – বধ্যভূমি। দু’জন উর্দিপরা সিপাই একটা লোককে টানতে টানতে নিয়ে আসছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে ওই লোকটা, তোমরা তাকে ওভাবে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছ কেন? ওর গোটা মুখ জুড়ে তো কেবল উজ্জ্বল একজোড়া চোখ। ওকে দেখে তো অপরাধী মনে হচ্ছে না। আমার কথা বোধহয় ওদের কানে গেল না। আসলে চারিদিকে বিচিত্র সব শব্দ। কেউ ভেঁপু বাজাচ্ছে। কেউ ক্যামেরায় খিচখিচ করে একটার পর একটা ছবি তুলে যাচ্ছে। বাচ্চাগুলো বেলুনের জন্য বায়না করছে। আমি ভিড় ঠেলে আরও এগিয়ে গেলাম। সেপাইদের কাছে গিয়ে চিৎকার করে বললাম, ও কে? ওকে তোমরা এভাবে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছ কেন?

সিপাইগুলো মুখ খুলল। ওদের আলজিভগুলো দেখতে পেলাম। জিভ দেখতে পেলাম না। ততক্ষণে পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল – এই লোকটা কবি, কবিতা লেখে। কবিতা তো আমিও অনেক পড়েছি। ছোটবেলায়, বড়বেলায়। একজন নিরীহ কবিতালিখিয়েকে জল্লাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কেন? এতক্ষণে কবির চেহারা আমার কাছে অনেক স্পষ্ট। ওনার কড়ে আঙুলে একটা তিল। অনামিকায় কোনো আংটি নেই। তর্জনী যেন কোনো দিক নির্দেশ করছে! বুড়ো আঙুলটা! ও মা গো! থ্যাঁতলানো, বীভৎস। তবু উনি হাসছেন, মৃদু অথচ দৃপ্ত। আমার ঠিক পাশে দুজন নিচু স্বরে কথা বলছিল —

দুই.

প্রথমজন বলল, পৃথিবীতে এখন মানুষের সংখ্যা মুরগির চেয়ে অনেক বেশি। জিজ্ঞেস করে জানলাম – প্রথমজন একমহান দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানী ; দ্বিতীয়জন কসাই। একজন জননেতা এক গণিত শাস্ত্রবিদকে জিজ্ঞেস করলেন – পরের ভোটে জিততে গেলে আর কী কী করতে হবে? একটা অদ্ভুত দেখতে লোক অস্ফুটে বলল – বাপের জন্মে একসঙ্গে এত বেজন্মা দেখিনি শালা! লোকটা নিজেকে দেখতে পাচ্ছিল কিনা, কে জানে! পোড়ামাটি-রঙের জামাপরা একজন বলে উঠল – রক্তপাত ছাড়া পৃথিবী উর্বর হবে না। আর ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ যেন দৈববাণীর মত উচ্চারণ করলেন – হাতের শিকলটা খুলে দাও ভাই, রক্ত জমে যাচ্ছে যে!

তখনই একজন মুটে আর একজন চাষা সমস্বরে বলে উঠল – আরে এ তো ভুল লোককে নিয়ে এসেছে ! ভুল মানুষ, ভুল মানুষ। এই অসময়ে শেয়াল ডেকে উঠল কেন? শকুনের ডানার ছায়া! তক্ষকের আওয়াজ – এক, দুই, সাতবার। কবির ঠোঁটদুটো নড়ছে। কী বলছেন তিনি? “ইনকিলাব, জিন্দাবাদ।“ একথাটা তো আগে শুনি নি। জনতার একটা অংশ তাঁর গলাতেই তাঁর উচ্চারণ তাঁকে ফিরিয়ে দিল – “বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।“ কবির চোখদুটো যেন কিছু খুঁজছে। আমি ওনার দৃষ্টি অনুসরণ করছিলাম। একটা লোক মুঠো করা হাত ছুঁড়ে দিল আকাশের দিকে। এক যুবতী কান্না চেপে একটা চুমু উড়িয়ে দিল- কবিকে উদ্দেশ্য করে নাকি কোনো নীলকন্ঠ পাখির দিকে। কবিকে এখন খুব তৃপ্ত মনে হচ্ছে। আমার অজান্তেই আমার ঠোঁট নড়ে উঠল – “বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক” আর তক্ষুণি প্রথম গুলিটা ছুটে এল, বেরিয়ে গেল ওনার কানের পাশ দিয়ে। যেমনটা যায়। দ্বিতীয় গুলিটাতে তাঁর বুক ফুটো হয়ে গেল। যেমনটা যায়। কবি হাসছেন হা হা করে। পরের গুলিটা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল তাঁর গলা। তার পরেরটা কপালে, পাঁচ নম্বর আছড়ে পড়ল কাঠের খুঁটিতে। পরেরটা ছিন্ন করল তাঁর হাত। রক্ত ছিটকে এল

তিন.

কবির রক্ত আমাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে, স্নান করছি নতুন কয়েকটি শব্দে ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’। বিপ্লব। দীর্ঘজীবী। হোক। একটা অচেনা অজানা লোকের জন্য আমার কান্না পাচ্ছে! আমার গলা বুঁজে আসছে। কয়েক মিনিট আগে পর্যন্ত এই লোকটাকে আমি চিনতাম না। ওর লেখা একটি শব্দের সঙ্গেও আমি পরিচিত নই৷ বুলেটের মত কিংবা তার চেয়েও অমোঘ অন্তত ছ’টি শব্দ যদি লিখতে পারতাম। হাঁটলাম, আরও হাঁটলাম। মানুষের কাছে গেলাম। দু’হাত পেতে রক্ত চাইলাম তাদের কাছে। আস্তে আস্তে শব্দ-রা ভিড় করতে লাগল আমার কলমের ডগায়। সাদা কাগজে উঠে আসতে লাগল প্রেম-বিরহ-যন্ত্রণা আর লড়াই-এর কথা – মানুষের কথা।

ঐ যে শুরুতেই বলছিলাম না, হাঁটতাম আর দেখতাম। আবার হাঁটা শুরু করলাম, দেখাও, ছিন্ন তর্জনী আমাকে পথ দেখাচ্ছে। এলোমেলো নয়, এবার হাঁটছি এক না-ফোটা ফুলের গন্ধের উদ্দেশ্যে। রক্তের ফোঁটা আমাকে শেখাচ্ছে কীভাবে বর্ণ থেকে অক্ষর তুলে আনতে হয়। ধীরে ধীরে আমার অক্ষরগুলো প্রাণ পাচ্ছিল, জ্যান্ত হয়ে উঠছিল, মাটিতে পড়ছিল, ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছিল চতুর্দিকে৷ আগুনের ফুলকির মত, বন্যার জলের মত – হাতে হাতে ঘুরছিল, মুখে মুখে ফিরছিল আমার লেখা। কাউকে ভাবাচ্ছিল, জ্বালাচ্ছিল কাউকে। যারা ভাবছিল তাদের অনেকেই আস্ত এক একটা অস্ত্র হয়ে উঠছিল। যারা জ্বলছিল, তারা কি ভয় পাচ্ছিল? না হলে ভয় দেখাবে কেন? দরজায় হঠাৎ আওয়াজ, বিকট, বীভৎস আওয়াজ, গভীর রাত। সমস্ত চরাচরে সেদিন যেন কারফিউ জারি হয়েছিল। কোথাও কোনো মানুষের গলার আওয়াজ নেই, পায়ের শব্দ নেই। নিস্তব্ধতা খানখান করে দিচ্ছিল কেবল কয়েকটা বেমক্কা সারমেয়-সন্তান। আমি লিখছিলাম। বা বলা ভাল খুঁজছিলাম, খুঁড়ছিলাম সময়ের কালগহ্বরে। কালো কালো ছোট ছোট অক্ষরগুলো আমার চোখের সামনে

রামধনু পাখনা মেলছিল। আর ঠিক তখনই ―

চার.

ওরা এসে বলল আমাকে লেখা বন্ধ করে দিতে হবে। আমি অবাক হয়ে তাকালাম। ওরা আবারও বলল। আমি অল্প হেসে আবার কলমটা তুলে নিলাম – আমার ডানহাতে। ওরা আবার নিষেধ করল, এবার অনেকটা উঁচু গলায়। আমি জঙ্গলের পথে দলবদ্ধ হায়েনাদের দেখেছি। এরা অনেকটা সেইরকমই। তবে হায়েনারা একে অপরকে বিশ্বাস করে। এদের মধ্যে সেই সুতোটুকুও যেন ছিঁড়ে গেছে। ওরা আবার আমায় লিখতে বারণ করল। করেই গেল, জোর গলায়। আমিও হাসছিলাম। জোরে, জোরে। ওরা চেষ্টা করল আমার হাত থেকে কলমটা কেড়ে নিতে। আমি প্রাণপণে আমার কলমটাকে আঁকড়ে ধরেছিলাম। লিখে যাচ্ছিলাম পাগলের মত। যেন এ লেখা আমার জীবনের শেষ লেখা। আর তখনই একটা ইস্পাতের ছোবল নেমে এল আমার ডানহাত লক্ষ্য করে। ওদের তরবারি, আমার ডানকাঁধ। আমার ডানহাতটা পড়ে আছে আমারই পায়ের কাছে। ওরা বিজয়গর্বে বেরিয়ে যাচ্ছে। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। রক্ত আমি আগেও অনেক দেখেছি। কিন্তু নিজের রক্তের রঙ যেন সবকিছুর থেকে আলাদা। আমার রক্তে আমি আমার মায়ের গন্ধ পাচ্ছি। আমার পিতৃপুরুষের। আমার সন্তানের। আমার রক্তের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে চারদিক – অন্তত যতদূর আমার ঝাপসা দুটো চোখ যায়। আমি কি আর বেঁচে থাকব? মানুষ হয়ে? কবি হয়ে? আমার চোখদুটো বুঁজে আসছে। ঠিক সেই সময়েই কিছু স্পর্শ পেলাম নিশ্বাসের, ভালবাসার, বিশ্বাসের। আচ্ছন্ন হয়েও টের পাচ্ছিলাম আমার শরীর ধীরে ধীরে উত্তাপ ফিরে পাচ্ছে। আমার আশেপাশে এক এক করে একত্রিত হচ্ছে আগুনের ফুলকিরা, ভোরের প্রতীক্ষায় সারারাত

ধরে হাঁটতে থাকা পথিকের দল। স্বপ্নের সন্ধানে যারা পথ হাঁটে তাদের ভুলে যেতে নেই। রক্ত-ই সভ্যতাকে আলো দেখিয়েছে – যুগে যুগে – বারবার।

ঐ ঘোরের মধ্যেই আমি ছুঁয়ে দেখলাম – মনে মনে আমার অন্য হাতটিকে। জোর পাচ্ছিলাম, ধীরে ধীরে। বাঁ হাতের আঙুলগুলো একে অপরকে ছুঁয়ে দেখছিল, তারা বেঁচে আছে কিনা। ছুঁতে ছুঁতে হঠাৎ-ই তারা মুঠোতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে – আমাকে অবাক করেই। ডানদিকটা শূন্য। অস্তিত্বহীন। বাঁ দিকটা তো এখনও বেঁচে আছে। আমিও বেঁচে আছি। আমার সব ক’টি হৃদস্পন্দন নিয়ে। ঐ হৃদস্পন্দনগুলি আস্তে আস্তে আমার চোখের সামনে একটু আগে হারিয়ে যাওয়া অক্ষরগুলো তুলে ধরছিল। আর আমিও তুলে নিচ্ছিলাম। আমার কলমে।

পাঁচ.

ওরা আবার এল। এবার প্রকাশ্য দিবালোকে। কড়া না নেড়ে। সরাসরি দরজা ভেঙে এসে আমার সামনে দাঁড়াল। একগাল হাসি নিয়ে বলল, কী নরম করে বলল, লিখে যেতে। খুব আশ্চর্য হয়ে তাকালাম। আবারও বলল লিখে যেতে। ওদের হয়ে। অনেকেই নাকি — মুখটা ফিরিয়ে নিয়ে আমি মন দিয়েছিলাম আমার কাগজে – তাকে গর্ভবতী করব বলে। দ্বিতীয়বার কিছু বলেনি। কেবল আমার বাঁ হাতটা মাটিতে ফেলে দিয়ে চলে গেল ওরা।

এবারও যন্ত্রণা হচ্ছে। তবে আগের বারের চাইতে কিছুটা কম । ক্ষিদের মত যন্ত্রণাও বোধহয় অভ্যেস হয়ে যায়। শরীরের যন্ত্রণা। কিন্তু মনের?

ছয়.

আমি তো এখনও লিখে যেতে চাই। আগামী সহস্র বছর ধরে। আমার মস্তিষ্কের ভেতরে শব্দগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাকে স্থির থাকতে দিচ্ছে না। আর কোনোদিন পারব না লিখতে?
অসহ্য ব্যথা আমার বাঁ কাঁধে। আরও বেশি বেদনা – এ গ্রহ জুড়ে। কথাগুলো জমা হচ্ছে, আমার কণ্ঠনালীতে। উগরে দিতে থাকলাম।

“এ আগুন যেন আকাশকে ছুঁয়ে দেয় –
দাউদাউ জ্বলে গরম রুটির স্নেহ;
স্পর্ধাবর্ণ মিছিলের সন্তান
রক্তের বীজে বেঁচে থাক বিদ্রোহ।“

আমি বলে যাচ্ছিলাম, অনর্গল। আমার বন্ধুরা আরও বেশি দ্রুততার সঙ্গে লিখে নিচ্ছিল পংক্তিগুলো। ছড়িয়ে দিচ্ছিল লাঙলের ফলায়, হাতুড়ির ডগায়, মাউসের ক্লিকে।
ওরা আবার এল। আমি জানতাম আসবেই, আসতে তো ওদের হবেই। কয়েকজোড়া হাত মিলে জোর করে ফাঁক করল আমার মুখ। দলা দলা থুথু ছেটাল। না, সেই থুথুতে কোনো ঘেন্না ছিল না। কেবল ছিল সরকারি হুকুমের গন্ধ। তারপর দলাপাকানো ন্যাকড়া আর সিমেন্ট ঢুকিয়ে আমার মুখ বন্ধ করে দিয়ে ওরা হাসতে হাসতে চলে গেল।
ওরা ভাবে লোভ বা ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দিলেই বুঝি মূক করে দেওয়া যায়। ওরা হয়ত ইতিহাস পড়ে নি, কিন্তু ইতিহাস তো বহুবার

ওদের সামনে আয়না তুলে ধরেছে।

সাত.

আপনারা ভাবছেন, আমার মুখ বন্ধ। আমি কথা বলছি কী করে? আমি নই, কথা বলে যাচ্ছে আমার দুটি পা। আমার সাথীরা আমায় নিয়ে এসেছে সাগরপাড়ে, বেলাভূমিতে। আমি লিখে চলেছি, অবিশ্রান্তভাবে, বালির ওপরে, আমার ডানপায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে।
“রক্তপাতেই স্বপ্নগুলো সত্যি হওয়া শুরু
রক্তপাত-ই বুঝতে শেখায় – পৃথিবী খুবসুরৎ।
কান্না মুছে, ঘাম পেরিয়ে রক্তপতাকার
কসম এটাই – আগামীটা – প্রেম উপত্যকা।“
আমি লিখে যাচ্ছিলাম আর পরের ঢেউ আসার আগেই সেগুলো টুকে নিচ্ছিল আমার বন্ধুরা। তুলে দিচ্ছিল তার পরের ঢেউ-এর পিঠে, শব্দগুলো ছড়িয়ে পড়ছিল – দেশে দেশান্তরে।
এবার ওরা এল। ভোর হওয়ার একটু আগেই। আর কোনো সুযোগ নেয় নি। দুটো পা-ই খুবলে নিয়েছে ডালকুত্তার মত। আমার রক্তধারা মিশে যাচ্ছে লবণাক্ত জলে, সমুদ্রের ঢেউ-এ মিশে যাচ্ছে আমার না-বলা শব্দগুলো। ওরা অবাক বিস্ময়ে দেখছে আমি হাসছি। তৃপ্তির হাসি।

আট.

ওরা জানে না, আমার চেয়ে অনেক শক্তিশালী ও দূরদর্শী তিনজন কবি এসে গেছেন। আমি হয়ত স্তব্ধ হলাম। আমার সন্ততিরা রয়ে গেল। রয়ে গেল আমার কণ্ঠস্বর, আবহমান এই সমুদ্রের মতই।

(অভিনয় স্বত্ব সংরক্ষিত)