অদ্রি + ঈশ = অদ্রীশ, অর্থাৎ হিমালয়। অশোকনগর নাট্যমুখ এর বিশ্বকর্মা, থিয়েটারের কারিগর, অদ্রীশ কুমার রায়। ২ এপ্রিল ১৯৮৭ জন্ম বসিরহাটে হলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পাকাপাকি ভাবে বাবা অরুণ কুমার রায়, মা সাধনা রায় চলে আসেন বারাসাতে। সেখানেই retail management নিয়ে পড়াশোনা , এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্যের জন্য বেড়ে ওঠা।
নয় নয় করে এগারোটা বছর ধরে দলে আজও দুরন্ত গতিতে চলমান অদ্রীশ। দলের মঞ্চ ভাবনা থেকে নাটকের সেট তৈরি , জার্নালের জন্য ক্যালিওগ্রাফি , অমল আলোর বাইরে ভেতরে এমনকি গ্রীণরুম সহ সাজসজ্জা তার নিজে হাতে করা। পাশাপাশি অমল আলোর প্রজেকশন রুমের অদ্রীশই সর্বময় কর্তা। দলের নাটকের প্রয়োজনে খুচখাচ অভিনয়ে ঢুকে পড়া তার এসব নতুন নয়। একপ্রকার দলের সর্বঘটের কাঠালীকলার মতো সে । মিতভাষী, শান্ত মনের মানুষ। সর্বক্ষণের থিয়েটার কর্মী হিসেবে নাট্যমুখে ছোটদের রবিবার আঁকার ক্লাসের অদ্রীশ স্যার ভীষণ মজাও করেন। ২০১২ তে নাট্যমুখে অনিয়মিত প্রবেশ। সংগীতা চক্রবর্তীর নির্দেশনায় অশোকনগর ব্রাত্যজন প্রযোজনায় তিতলি নাটকে প্রথম মঞ্চ অলংকরণ ও প্রপস রিকুইজিশন অদ্রীশের তৈরি।
ততদিনে গুরু হিসেবে পাশে পেয়েছেন দত্তপুকুর দৃষ্টি নাট্যদলের নির্দেশক তথা প্রখ্যাত মঞ্চ রূপকার চিত্রশিল্পী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। নিয়মিত কাজ দেখতে দেখতেই অদ্রীশ বারাসাতে বসে আরো অনেকে মিলে বারাসাত কাল্পিক নামে একটি নাটকের দল তৈরি করলেন। ফাউন্ডার মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে দলের লোগো এবং কাপড় কোথায়, মিঃ আউল,স্বপ্ন এবং, ছেলেটা ইত্যাদি নাটকের সেট ভাবনা ও তৈরি করলেন। স্বপ্ন নয় লক্ষ্যই তাকে অবিচল রেখেছে নিয়মিত থিয়েটারে থাকার। থিয়েটারের মাটিকে আঁকড়ে থিয়েটারকে প্রফেশন করে আজ তার বাঁচার সংগ্রাম। অনেকেই বলে অদ্রীশের হাতে জাদু আছে, তাই তো থিয়েটারের এই তরুণ গুণী মানুষটিকে দিয়ে অনেকেই নাট্য দলের লোগো, সেমিনার মঞ্চ সাজানো ফেস্টিভ্যাল গেটের ডিজাইন করিয়েছেন। গোবরডাঙ্গা মৃদঙ্গম, সন্তোষপুর অনুচিন্তন প্রভৃতি দলের লোগো আজও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । জীবনের প্রথম মঞ্চ ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন চাঁদপাড়া পুবের আলো সংস্থার ‘ইচ্ছে করে’ নাটকের। আজীবন মনে রাখার মতো কাজ বলতে মধ্যমগ্রাম নটমনের মাছ মঙ্গলকথা, দলের নাটক লোহার দাম, কাল্পিকের ছেলেটা এর মঞ্চ ভাবনা আজও উল্লেখযোগ্য তার কাছে।
অতিরিক্ত আয়ের সংস্থানের লক্ষ্যে আর্ট এন্ড ক্রাফ্ট শেখানোর জন্য Colourbee নামে স্কুল করেছেন বাড়ির নিচতলায়। পাশাপাশি এই মুহূর্তে অশোকনগর নাট্যমুখের যোগসূত্র ধরেই স্থানীয় দল অভিযাত্রীর উৎসবে স্মারক তৈরি করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন। এ মরশুমে তো হাতে তার প্রচুর কাজ এসেছে। দমদম ইফটা দলের নতুন নাটক Can X San এর মঞ্চ নির্মাতা, সবুজ সাংস্কৃতিকের নতুন নাটক গালি দিবেন না কাক্কা ‘র মঞ্চ তৈরিতে সম্প্রতি অদ্রীশ ব্যস্ত হয়ে পরেছেন। সুদূর বালুরঘাট নাট্যকর্মী নাট্যদলের প্রেমিকের মনোলগ, ভাতের গন্ধ নাটকে বিশাল ব্যাকড্রপে খিদের আর্তনাদের একটা বড় ক্যানভাস তার নিজের হাতের তৈরি। এই দলের ষান্মাসিক পত্রিকা সহজ উত্তর এর লোগো ডিজাইনও করেছেন। থিয়েলাইট নাট্যদলের নতুন নাট্য চুয়া চন্দন এর নামাঙ্কণ এঁকে বেশ নজর কেড়েছে সবার।
দলের আলোতে সযত্নে নিজেকে রাঙিয়েও অন্য দলের এসব নিরন্তর কাজ বাংলা থিয়েটারে ক্রমশ জায়গা তৈরি করে নিচ্ছে অদ্রীশ। ভাবনা থিয়েটার পত্রিকার নিজস্ব ঘর ভাবনা জংশনের বাইরে ও ভেতর জুড়ে কী অসাধারণ পেইন্টিং এর কারুকাজ অদ্রীশের মনের মতো করে সেজে উঠেছে ওরই ছোঁয়ায়। যা সম্পাদক অভীকের বাসনা পূরণে আরও একধাপ থিয়েটারের মনোরম আড্ডার স্থান হিসেবে চিহ্নিত হতে চলেছে। মনে পরল করোনা মহামারি আসার আগে মিনার্ভা থিয়েটারের সেমিনার পর্বের উদ্বোধনী মঞ্চের ডিজাইনও অদ্রীশকে অর্থের পাশাপাশি সুনাম দিয়েছে।
অদ্রীশের অভিনয় শুরু অবশ্য বারাসাত কাল্পনিক থেকেই জানি। পাশাপাশি ছোটদের নিয়ে নাটক নির্দেশনা তার প্রথম দিকের কীর্তিকথা অনেকেরই অজানা। সাম্প্রতিক নাট্যমুখ এর বড়ো নাটক মিঃ রাইট এ রণেন চরিত্রে নির্বাক হাসি ইতিমধ্যে সকলের নজর কেড়েছে।
অদ্রীশের জয়ের রথ এভাবেই এগিয়ে চলুক নিজের ছন্দে। নিজের দলের পাশাপাশি বাইরের জগতে এমন অবিরাম পরিশ্রম আসলে নাট্যমুখের এক গতির নাম এখন অদ্রীশ। এ গতি দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলুক।
Darun
..
আমার থিয়েটারের অন্যতম সঙ্গী। অদ্রীশের হাতের কাজে সঙ্গীতের মুর্ছনা টের পাওয়া যায়।
এই অত্যন্ত গুণী শিল্পী জার পারদর্শিতার ছোঁয়ায় সেজে সেজে ওঠে নাট্যের বৃহৎ-পরিসর।