থিয়েটারকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবেসে সৌরভ হয়ে উঠেছে একজন অনলস থিয়েটারকর্মী।দলের নাম থিয়েটার ওয়ার্কার্স রেপার্টারি। আর এই দলের প্রাণপুরুষ সৌরভ চট্টোপাধ্যায় একাধারে দলের পরিচালক, সংগঠক এবং দলের যে কোন অনুষ্ঠানে ফেস্টুন টাঙানো থেকে চেয়ার সাজানোর অনলস কর্মী। থিয়েটারের কাজে সৌরভ একাই একশো। শুধু নিজের দলের নয়, যে কোন বন্ধু দলের এক ডাকে সাড়া দিয়ে পাশে থাকার মত নাট্যবন্ধু সে। নিজের কথা ভাবার চেয়ে বেশি ভাবে থিয়েটারের কথা। থিয়েটার জগতের বহু বিখ্যাত নাট্যজনের প্রিয়পাত্র। কলকাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলার নাট্যদলের সঙ্গে তার সৌহার্দ্য। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের অনেক নাট্যজন এক ডাকে চেনে তাকে।
নিজের দলের নাটক প্রযোজনা, পরিচালনা, কল শো, নানা নাট্যজনের সঙ্গে যোগাযোগ, বিভিন্ন সামাজিক কাজ সামলেও সৌরভ অন্য দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বন্ধুর মত গিয়ে পাশে দাঁড়ায়।
খানিকটা ভবঘুরে, বাউণ্ডুলে স্বভাবের সৌরভের সর্বক্ষণের চিন্তায় মননে জড়িয়ে থাকে থিয়েটার। আজ বাঁকুড়ায়, কাল কলকাতায়, পরশু বীরভূমে অথবা গোবরডাঙায়। আবার হয়তো পরের দিনই সৌরভকে পাওয়া যায় বাংলাদেশে। এই হল নাট্যকর্মী সৌরভ।
জন্মসূত্রে বাঁকুড়া জেলার কোতুলপুরের ছেলে সৌরভের থিয়েটারপ্রীতি গড়ে উঠেছিল কোতুলপুর অঞ্চলের যাত্রাপালা দেখতে দেখতে। তবে বাঁকুড়ার সৌরভ কোতুলপুরে ষষ্ঠশ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর বাবার চাকরী সূত্রে হাওড়ায় চলে আসে। সেখানেই বেড়ে ওঠা।১৯৯৪ সালে ” ভীমবধ ” নাটকে প্রথম মঞ্চে নামা। তারপর থেকে শুধুই থিয়েটার। সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে তার থিয়েটারে জড়িয়ে পড়া। জোর গলায় সে বলতে পারে থিয়েটারের কাজ ছাড়া তার অন্য কোন কাজ নেই। থিয়েটার নিয়ে কোন ডিগ্রী, প্রশিক্ষণ নেই। নেই কর্মশালায় থিয়েটারের প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা। অশোক ঘোষ, বিপ্লব মল্লিক, কৃতি মজুমদার প্রমুখের অধীনে থিয়েটার করেছে। থিয়েটারই তার রুটিরুজির মাধ্যম। থিয়েটার ছাড়া অন্য কিছুর সঙ্গেই সে এখনও পর্যন্ত যুক্ত নয়।
২০১৩ সালের ১ মে গড়ে তোলে নিজের নাট্যদল থিয়েটার ওয়ার্কার্স রেপার্টারি। ভীমবধ ছাড়াও সুখী বদন, আজকে আমার ছুটি, মাৎস্যন্যায় পালা, সুভদ্রা, শাস্তি, কবর প্রভৃতি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি কবর ( মুনীর চৌধুরী), কৌটো, বিধাতাপুরুষ (মোহিত চট্টোপাধ্যায়), জ্বালা (ঋত্বিক ঘটক), থিম থিম থিম (সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্তী) অরূপকথা (সুচরিতা বড়ুয়া চট্টোপাধ্যায়) প্রভৃতি নাটকের নির্দেশনার দায়িত্ব পালন করেছে নিজের দল থিয়েটার ওয়ার্কার্স রেপার্টারির প্রযোজনায়। পাশাপাশি বাংলাদেশের ঝিনাইদহ অঙ্কুর নাট্য আকাদেমি প্রযোজিত মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের “সুন্দর” নাটকের নির্দেশনার দায়িত্ব পালন করেছে সে। দুই বাংলায় বেশ কয়েকটি শো হয়েছে সেই নাটকের। ২০০৭ সালে “থিয়েটার বাংলা” নামে একটি নাট্য পত্রিকা প্রকাশের কাজ শুরু করলেও সেটি অনিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হয়।
নিজের নাটকের দলের সব কাজ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি নাট্যজন সম্মাননা, নাট্য বিষয়ক আলোচনার আয়োজন, নাট্য উৎসবের আয়োজন করে থাকে সৌরভ।গৌতম বণিক স্মৃতি সম্মাননা প্রদান, বিষ্ণু বসু ও নৃপেন্দ্র সাহা স্মৃতি বক্তৃতামালার আয়োজন তার অন্যতম উদ্যোগ।
নানা ঘাটের জল খেয়ে ভবঘুরে নাট্যবাউল সৌরভ বিবাহসূত্রে বাঁধা পড়েছে বীরভূমে। স্ত্রী সঙ্গীতা ভাল সঙ্গীতশিল্পী ও তবলাবাদক।বীরভূমের শ্রীনিধিপুর গ্রামে কোপাই নদীর কাছে ” কোপাই অঙ্গন ” নামে নাট্যক্ষেত্র গড়ে তোলার কাজে নেমে পড়েছে কোমর বেঁধে।এখন সেটাই তার ধ্যান জ্ঞান। থিয়েটারকে ভালবেসেই এই কঠিন কাজে নেমে পড়েছে পুরো সময়ের থিয়েটারকর্মী সৌরভ চট্টোপাধ্যায়।
সৌরভ পুরনো বন্ধু। তার কাজ আমাদের প্রাণিত করে। অনেক ধন্যবাদ।
সৌরভ দার সম্পর্কে বলার কোনো ভাষা নেই। অসামান্য ব্যক্তিত্ব
নাট্যকর্মী-নাট্যজন তোমায় প্রণাম🙏😊
সৌরভদা আসলেই থিয়েটার এবং নাট্যবন্ধুদের কাছে নিবেদিত প্রাণ একজন নাট্যকর্মী…