উত্তরবঙ্গের মৌসুমীর কাছে থিয়েটার বেঁচে থাকার রসদ। বিজয়কুমার দাস

উত্তরবঙ্গের থিয়েটারে খুব চেনা নাম মৌসুমী কুণ্ডু। আসলে একজন দায়বদ্ধ থিয়েটারকর্মী হিসাবে মৌসুমী নিজেকে চিনিয়েছেন তার থিয়েটারকর্মের গুণে। যদিও থিয়েটারের একজন একনিষ্ঠ অভিনেত্রী মৌসুমী, তবু নিজেকে থিয়েটারকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেই পছন্দ করেন। জলপাইগুড়ি মুক্তাঙ্গন নাট্যগোষ্ঠীতে অভিনয় করেন মৌসুমী।পেশাগতভাবে সে অবশ্য একজন সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলর। এই কাজে চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যেও থিয়েটারে সে নিবেদিতপ্রাণ। অথচ আচমকাই থিয়েটারে এসেছিলেন।

ছোট থেকেই মঞ্চের একটা আকর্ষণ ছিল। ছোট থেকেই কত্থক নৃত্য, রবীন্দ্র নৃত্যের পাঠ গ্রহণ করলেও সেভাবে মঞ্চে নামার আগে থিয়েটারের পাঠ নেওয়া হয়নি তার। তবে আর পাঁচজনের মতই অরবিন্দ মাধ্যমিক (উচ্চতর) বিদ্যালয়ে আবৃত্তি, নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিছুদিন বিরতির পর কলেজে পড়ার সময় অধ্যাপিকা ইন্দ্রাণী সেনগুপ্তের মাধ্যমে যোগাযোগ অভিনেত্রী নির্দেশিকা রীণা ভারতীর সঙ্গে। মৌসুমী জোর গলায় বলেন, রীণা ভারতীই তাকে তৈরি করে নিয়েছেন থিয়েটারের উপযোগী করে। ২০১৪ সাল থেকে গ্রুপ থিয়েটারে যুক্ত। ২০১৫ সাল থেকে দলের সম্পাদকের দায়িত্ব মৌসুমীর কাঁধেই।

জলপাইগুড়ি শহরেই মৌসুমীর বেড়ে ওঠা। পড়াশুনোয় স্নাতকোত্তরের চৌকাঠ ছুঁয়েছে মৌসুমী। রীণা ভারতীর নির্দেশনায় দর্পণ নাট্যগোষ্ঠী প্রযোজিত বিষ্ণুপ্রিয়ার বৃদ্ধাশ্রম নাটকে উকিল মহুয়া সেনের চরিত্রে সচেতনভাবে থিয়েটারে অভিনয়। পরে এই দলেই বনজোছনা, নিষ্পত্তি নাটকে এবং জলপাইগুড়ি মুক্তাঙ্গন নাট্যগোষ্ঠীতে উদবাহ, অনিন্দিতা, শুদ্ধ মাটির সন্ধানে, জলদাও, আকাশ চুম্বন, দ্রোহ প্রভৃতি নাটকে অভিনয়।সব নাটকেই মৌসুমীর অভিনয় রীণা ভারতীর নির্দেশনায়। এর মধ্যে মৈনাক সেনগুপ্তের লেখা ” জলদাও” নাটকে প্রকৃতির মা মায়ার চরিত্রের প্রতি তার একটা বিশেষ ভাল লাগা আছে। এছাড়া বহু পথনাটক ও অণুনাটকে অভিনয় করেছে মৌসুমী। থিয়েটার মৌসুমীর কাছে একটি সম্পূর্ণ শিল্প মাধ্যম। তাই বিভিন্ন কর্মশালায় নাট্য প্রশিক্ষণ,থিয়েটারের বিভিন্ন দিক নিয়ে পড়াশুনো করা, দলের বিভিন্ন কাজ করতে করতেই থিয়েটারের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। অভিনয় ছাড়া বিভিন্ন নাট্য পত্রিকায় লেখালেখিও করেন নিয়মিত। এর বাইরে ড: তপন রায়প্রধানের অধীনে বাচিক শিল্পের একজন শিক্ষার্থীও।আবৃত্তি,অনুষ্ঠান সঞ্চালনার সঙ্গেও যুক্ত রেখেছেন নিজেকে।

থিয়েটার যদিও তার কাছে রুটিরুজির মাধ্যম নয়, তবু উত্তরবঙ্গে বসে অভিনয় নিয়ে উপার্জনের কোন সুযোগ পেলে ভিন্ন পেশায় যাওয়ার ইচ্ছা নেই মৌসুমীর। জলপাইগুড়ি মুক্তাঙ্গন নাট্যগোষ্ঠীতে মৌসুমীর দলে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী এবং ছোটদের নিয়ে কাজ হয়। কিন্তু করোনা সেক্ষেত্রে একটা বড় বাধা হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন মৌসুমী।

২০১৭ সালে থিয়েটারের টানেই পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত নাট্য কর্মশালাতেও।মুক্তাঙ্গন নাট্যগোষ্ঠী সহ অন্যান্য বিভিন্ন নাট্যদল আয়োজিত একাধিক কর্মশালায় শিক্ষার্থী হিসাবে যোগ দিয়ে বাধ্য ছাত্রীর মত থিয়েটারের পাঠ নিয়েছেন। মৌসুমী মনে করেন, থিয়েটার করতে গেলে প্রতিনিয় থিয়েটার বিষয়ক চর্চা ও পাঠের মাধ্যমে নিজেকে থিয়েটারের উপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন।

প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব স্বপন দাস, নাট্যজন দুলাল চক্রবর্তী সহ বেশ কয়েকজন এক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করেছেন মৌসুমীকে।
মৌসুমীর পরিবারে কেউ তেমন করে থিয়েটারে যুক্ত ছিলেন না। সেইরকম পরিবার থেকে থিয়েটারে আসা অভিনেত্রী মৌসুমী কুণ্ডু থিয়েটারকে ভালবেসে বলতে পারেন, থিয়েটার করে যেতে চাই আজীবন। থিয়েটারই বেঁচে থাকার রসদ।

3 thoughts on “উত্তরবঙ্গের মৌসুমীর কাছে থিয়েটার বেঁচে থাকার রসদ। বিজয়কুমার দাস

  1. আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই অমল আলো পরিবার, অভি চক্রবর্ত্তী এবং বিজয় দাস দাদা কে। আরো নতুন মুখ এর খবর উঠে আসুক।

  2. মৌসুমি খুব কাছের ও প্রাণের মানুষ হওয়া সত্বেও ওর অভিনয় দেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। মানুষ হিসাবে যে মেয়েটিকে চিনি তার সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। ওর সততা, স্বচ্ছতা, দায়িত্ববোধ আর প্রিয়জনের জন্য আকুল আন্তরিকতা ওর স্বাতন্ত্র্য। ওর উন্নতি ও অগ্রগতি যে আমাকে কতটা খুশি করবে তা আমার থেকে ও নিজে বেশি জানে।
    ভালো থাকিস বোনটি নিজের স্বপ্নপূরণের পথে।

Comments are closed.