কোভিড পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রেক্ষাগৃহগুলি প্রায় বন্ধ ছিল। বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হতেই ছন্দে ফিরছে নাটক। ফের রিহার্সাল ও নাট্যমেলার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিভিন্ন নাট্যগোষ্ঠী ও থিয়েটারের স্পেসগুলি। নতুন করে নাটকে প্রাণ ফিরে পাওয়ায় খুশি গ্রাম শহরের সংস্কৃতিমনষ্ক মানুষজন।
এই অনিশ্চিত হতাশা কাটিয়ে নাটকের হাত ধরে আলোর পথে হাঁটছে এখন উত্তর চব্বিশ পরগণার গুরুত্বপূর্ণ উদবাস্তু উপনগরী অশোকনগর। গত একবছর ধরে এই প্রথম নিয়মিত নাটক পরিবেশন হচ্ছে অমল আলো নামক অশোকনগর রোড স্টেশনের কাছেই অবস্থিত একটি স্থায়ী থিয়েটার স্পেসে। যা অন্যান্য স্পেস গুলোর থেকে অনেকটাই এগিয়ে। নিয়মিত টিকিট কেটে সেনিটাইজার ও থার্মাল টেম্পারেচার নিয়ে সরকারি নিয়মবিধি মেনে অভিনয় করতে আসছে বাংলার বিভিন্ন নাটকের দলগুলো।
বর্তমানে গোবরডাঙ্গার পাশাপাশি অশোকনগরকেও থিয়েটারের শহর বলা হয়ে থাকে। এই ছোট্ট জনপদে একমাত্র নিয়মিত নাট্যচর্চায় ব্রতী নাট্যমুখ দলটি। একটানা বাইশ বছর ধরে এই দলের সারাবছর ধরে নাটকের বিভিন্ন কর্মকান্ড চলে। পাশাপাশি সারা বাংলা জুড়ে এবং বাংলার বাইরের রাজ্যেও অভিনয় করে চলেছে এই দল।
সম্প্রতি ১২ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি ২০২২ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সাহিত্য থেকে নাট্য নিয়ে সম্মিলিত উৎসব। তৃতীয় ঢেউকে উপেক্ষা করে এবার নাটকপ্রেমীদের আগ্রহ ছিল প্রথম বারের থেকে অনেক বেশি। অশোকনগর নাট্যমুখ এর কর্ণধার অভি চক্রবর্তী জানিয়েছেন – যখন শিল্পের অন্যান্য বিষয়ে সরকার এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়ার এত প্রচার সেখানে থিয়েটার নিয়ে প্রায় প্রচারের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সেখানে থিয়েটারের দলগুলো নিজস্ব খরচে নিয়মিত চর্চা চালিয়ে যাওয়ার এই ব্রত ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। এই প্রচার বিমুখ শিল্পের চরম কঠিনতম সময়ে থিয়েটারকে বাঁচিয়ে রাখতে এই সম্মিলিত উৎসবের আয়োজন নতুন থিয়েটার কর্মীদের মনোবলকে চাঙ্গা করতেই আমাদের এই প্রয়াস।
মূলত সাহিত্য থেকে নাটকের জনপ্রিয়তা আগাগোড়া সবসময় প্রাধান্য পেয়েছে। বিশিষ্ট নাট্যকার ও সাহিত্যিকদের গল্প থেকে সেজে উঠেছিল এবারের উৎসব।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন অভিক ভট্টাচার্য সম্পাদক ভাবনা থিয়েটার পত্রিকা, প্রাবন্ধিক কৌশিক মজুমদার, নাট্য নির্দেশক সুপ্রিয় চক্রবর্তী ও নাট্যকার নির্দেশক অভি চক্রবর্তী।
কলকাতা রঙ্গশীর্ষ প্রযোজিত ‘অন্য শকুন্তলা’,সামগ্রিক নির্মাণ মনোজিৎ মিত্র। এই নাট্য দিয়েই শুরু হলো এবারের উৎসব। পরে কুয়াশা নাটকটি মঞ্চস্থ হলো দৃশ্যান্তন প্রযোজনায়। শৌভিক ঘোষের রচনা নির্দেশনায়। দ্বিতীয় দিনের প্রথম নাটক
ব্যাসদেব রচিত মহাকাব্য মহাভারতের জনপ্রিয় নারী চরিত্র গান্ধার কন্যার জীবন কাহিনি নিয়ে সাহিত্যিক শুদ্ধসত্ব ঘোষ লিখেছেন ‘গান্ধারী ‘। অমল আলো স্পেসেই গান্ধারী নির্মাণের কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন প্রখ্যাত নাট্য নির্দেশক সত্যব্রত রাউত। কর্মশালা ভিত্তিক নাট্যমুখ এর নিজস্ব এই প্রযোজনাটি ত্রিশতম অভিনয় পার করলো। পরে বিদেশি কথা সাহিত্যিক ও হেনরি অনুপ্রাণিত ‘টু-সোলস্’ অভিনীত হলো অভি চক্রবর্তীর নির্দেশনায়।
১৪ জানুয়ারি অভিনীত হয় নবারুণ ভট্টাচার্যের গল্প অবলম্বনে ‘মহাযানের আয়না’, নাট্যরূপ নির্দেশনা সুপ্রতিম রায়ের। প্রযোজনা বরানগর অবশিষ্ট এবং ইন্দ্রিয় প্রযোজনা ‘নিরন্তর নির্জনে ‘,নাটক পরিচালনা হিমাদ্রি শেখর দে। আলো – প্রীতম চক্রবর্তী, সংগীত প্রয়োগ- তমালিকা ও সৌমিক, অভিনয়- অভীপ্সা ও হিমাদ্রি।
পরদিন অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি বারাসাত রমেশপল্লী থিয়েটার গ্রুপ প্রযোজিত একটি পূর্ণাঙ্গ নাট্য দ্বিধা, মূল গল্প আবদুল হাসনাত হাই , নাট্যরূপ সঙ্গীত ও নির্দেশনা সুদীপ সিংহ। শ্রেষ্ঠাংশে সুমন্ত রায় ও সুমিত কুমার রায়। ১৬ জানুয়ারি অর্থাৎ উৎসবের শেষ দিনে দুটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। প্রথমটি যাদবপুর মন্থন প্রযোজনায় গার্সিয়া মার্কেজ অনুপ্রাণিত ‘ত্রিকাল’, নাট্যরূপ নির্দেশনা – রাজীব বর্ধন। দ্বিতীয়টি জাহ্নবী সংস্কৃতি চক্র প্রযোজনা
বাদল সরকার এর জনপ্রিয় নাট্য ‘পাগলা ঘোড়া’, সম্পাদনা – রোদ্দুর, পরিচালনা- সমরজিৎ দাস।
পৌষের শেষবেলার মফস্বলের শীতের কামর উপেক্ষা করে বিদ্যাধরীর চায়ের আমেজে দর্শক আসনে বিশেষ উপস্থিতি এবারে বেশ উজ্জ্বলতা পায়। বাংলা থিয়েটারের গুণী অভিনেতা ও নির্দেশকদের মধ্যে এসেছেন ঋষভ বসু, সন্দীপন চ্যাটার্জী, ভাস্কর মুখার্জি, মহম্মদ সেলিম, ধীরাজ ভট্টাচার্য, বরুণ কর,বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, রাজেশ দেবনাথ, আকাশবাণী বেতারের সম্পাদক প্রযোজক রফিউদ্দিন, সন্দীপকুমার সহ আরো অনেক বিশিষ্টজনরা।
প্রতিদিন প্রতিটি নাটকের শেষে বিদ্যাধরীর ক্যাফেতে ডিরেক্টরস মিট হয় দর্শকের সঙ্গে। ভালো লাগা ভালোবাসার এই আদান প্রদানে থিয়েটারের ভগবান দর্শকদের আন্তরিকতায় অমল আলো য় আলোকিত উদ্ভাসে এমন উৎসব হওয়ার প্রচেষ্টা জারি থাকার সুর অনেকের মনেই শোনা গেল।
❤️
খুব ভালো 😇
নাট্যমুখ পরিবার কে অনেক অনেক শুভেচ্ছা,এই পরিবারের একটি ছোট্ট অংশ হতে পেরে আমি আনন্দিত 🌹🍁
এমন আয়োজন আমরা আরো করব। সঙ্গে থাকুন।