কত রঙ্গ দেখি কলকেতায় | পর্ব-৮

আগে যা ঘটেছিল

বিনোদিনী গোলাপসুন্দরীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেও আবার ফিরে যায় গোলাপের বাড়ি, গোলাপের মেয়েটাকে আরেকবার দেখার আশায়। সেখানে গিয়ে একরত্তি মেয়েটাকে বুকের মাঝে চেপে ধরে। বুকের মাঝখান থেকে গোলাপের মেয়েকে নামিয়ে বিনির চলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। তাই স্নান খাওয়ার অনুরোধ ফেলতে পারেনা বিনোদিনী। কিন্তু স্নানঘরেই নগ্ন হয়ে ওঠে অতীত, বর্তমান কেবল ভবিতব্য জানা থাকেনা। নিজের মুখোমুখি হওয়া বড় কঠিন। নিজেকে ডুবিয়ে দেওয়া তো আরও শক্ত। জলে হোক, জ্ঞানে হোক আর প্রেমেই হোক, বিনোদিনীরও যে মাতৃ সম্ভাবনা হয়েছিলো একদিন। সে বাড়িতে কিছুক্ষণ থেকে উন্মোচিত হয় গোলাপের আরেক পরিচয়…

নীলা বন্দ্যোপাধ্যায়

পর্ব – ৮

গঙ্গার পাড়ে বসে ছিলো তরুলতা সেদিনও। বিকেল থেকে সন্ধে রোজই চুপটি করে বসে থাকে সে। এই সময়ে বাড়িতে সব পুরুষেরা ফেরেন নানান কাজ সেরে তাই বাড়ির মেয়ে বউরা তাদের জন্য খাবার বানাতে, গা ধুতে, চুল বাঁধতে ব্যস্ত থাকে, ছোটরা মত্ত থাকে খেলায়। তরুর কিছু করার থাকেনা। ঠাকুরে কখানা লুচি মোহনভোগ তৈয়ের করতে আর গুড়ের নাড়ু পাকাতে কত সময় আর লাগে! বহু বছর ধরে করে করে হাত সড়গড় হয়ে গেছে।
তরুলতা দেখে জোয়ারের জল আছড়ে পড়ছে গঙ্গার ধারে। আজ পুণ্যিমে তবে। সেজ খুড়িকে বাতের তেল মাকাতে হবে। উঠতে যায় তরুলতা, শুনতে পায় বল্লভপুর মন্দিরে খোল কর্তাল বাজিয়ে কে যেন নাম গান করছে, শুনতে ইচ্ছে হয় তরুলতার। তাই তরুলতা খানিক বসে তারপর যাবে ভাবে। একটু পরে আরও কোনও বাড়ি থেকে নাম সংকীর্তন ভেসে আসে। এই আকনা গাঁয়ে ঘরে ঘরে বোষ্টম। তরুলতার বাপেরাও বৈষ্ণব। তবে টিকিধারী, নেড়ানেড়ি, আখড়া করা বোষ্টম নয়। বারেন্দ্র বামুন। বাড়িতে শালগ্রাম শীলা আছে, রাধা গোবিন্দ জীউয়ের মন্দির আছে। এই সন্ধে লাগার মুখে পুরুতঠাকুর শেতল দিয়ে, ঠাকুরকে শয়ন দিয়ে বাড়ি যান। ততক্ষণ অব্দি রোজই গঙ্গার ধারে বসে থাকে তরুলতা। গঙ্গার পাড় দিয়ে চওড়া পাকা রাস্তা, তার ওপারে তরুদের বাড়ির বাগান। বাড়ির পেছন দিকে ঠাকুরের ফুল ছাড়াও আম, কাঁঠাল, লিচু গাছে ঘেরা বাগানটা থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। এসময়ে এদিক পানে কেউ বড় একটা আসেনা।

আসলে আগে এ রাস্তা দিয়ে দেনেমাররা যেত, আর কিছু এগুলেই দেনেমারদের কুঠিগুলো গঙ্গার পাড় ধরে দাঁড়িয়ে আছে, চল্লিশ পয়তাল্লিশ বছর ধরে বহু কুটি ফাঁকা পড়ে আছে। কিছু ইংরেজ আর কেরেস্তান সাহেবরা দখল নিয়েছে। ওদিক পানে গেলে সন্ধের মুখে ফাঁকা বাড়িগুলো দেখলে গা ছমছম করে। কেরেস্তানরা পেল্লায় কালেজ করেছে একখানা, সেখানাও দেকা যায় এই পাড় ধরে এগিয়ে গেলেই। তবে ওখেনটায় একটা গঙ্গা একখানা বাঁক নিয়েছে বলে তরু যেখেনে বসে আছে সেখেন থেকে সহজে কালেজখানা দেখা যায়না। কেবল রাত বাড়লে গ্যাসবাতির আলো জ্বলে কালেজের মাঠে। সেই আলো গঙ্গায় পড়ে ঝলমল করে। এখনও সাহেবসুবো পাদ্রীরা এ রাস্তা ধরে। তাই বাড়ির মেয়ে বউদের আসা বারণ। সাহেব মেমদের নিশ্বেস গায়ে পড়লেও পাপ, নরকে গমন।

পাপ পুণ্যের ফারাক গুলিয়ে ফেলে তরুলতা। এই এতো যে পবিত্র গঙ্গা তার ওপর দিয়ে হামেশাই অপবিত্র মড়া ভেসে চলে। মড়ার ঠেকা পেয়ে গঙ্গার পবিত্রতা তো কমেনা! অথচ মড়া সেই অপবিত্রই থাকে এমন শুদ্ধ গঙ্গা ছোঁয়া লাগিয়ে পবিত্র করে তুলতে পারেনা। পাপী মানুষ মাথা অব্দি গঙ্গায় ডুবে থাকলেও পাপ যায়না। অথচ এই গঙ্গার জল ছিটয়ে ছিটিয়ে শুদ্ধ করে, তবে কী শুদ্ধ হয় সেই জলের ছিটেতে! তরু তো রোজ ডুব দেয় গঙ্গায়। আসলে পাপের ক্ষেত্রে কোনও যুক্তি, কোনও তর্ক খাটে না। পাপকে টলানো ভারি কঠিন। পূণ্যের মতো সে ঠুনকো নয় যে এক ছোঁয়াতেই তা চলে যাবে।

গির্জের ঘন্টা বাজলো। মানে বামুন ঠাকুর শয়ন দিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। তরুলতা উঠে পড়ে। খুড়িমাকে বাতের তেল মালিশ করে নিজের ঘরে যাবে। আজ বহুক্ষণ ধরে মালিশ করবে। অন্য কোনও কাজ থাকলেও মা খুড়িকে করে দেবে তরু। যত দেরি করে ঘরে যাওয়া যায় তরুর ততোই ভালো। নিরিমিষ পাক ঘরের সামনে লাইন করে পাঁচখানি বেধবাদের থাকার ঘর। এ বাড়ির নিয়ম সিঁথির সিঁদুর খোয়ালে নিজের ঘরখানা কাউকে ছেড়ে দিয়ে ও ঘরে থাকতে হবে। তরু কবে থেকে আছে খেয়াল নেই। লোকে বলে জ্ঞান হবার আগেই বেধবা হয়ে বাপের ঘরে ফিরে এসেছে তরু। যখন প্রথম আসে বড় ঠাকমার সঙে একঘরে থাকতো সে, অন্যঘরে ঠাকুমা, রাঙাপিসি, অন্নদিদি,মেজোখুড়ি, বড় জ্যাঠাইমারা ভাগাভাগি করে থাকতেন। একে একে সবাই গত হয়েছেন। তরু এখন একা। রাতের দিকে গা ছম ছম করে। কেবলই মনে হয় গাদা গাদা সাদা থান বারান্দায় হেঁটে বেড়াচ্ছে। মানুষগুলো নেই, কেবল থান আর জপমালার পুঁটলিগুলো ভেসে চলে। অন্নদিদি বৃন্দাবনের বেধবা আশ্রমে চলে গিয়ে খুব ভালো করেছে। খুব চেয়েছিলো তরুলতাও সঙ্গে যাক। কিন্তু তরুর মা ছাড়েননি। সেই কোন ছোট্টবেলায় বেধবা হয়েছে মেয়ে। সব তো গেছে, মায়ের কোলটুকু ছাড়া, এই বলে কাকুতি করে রেখেছে তাকে এখেনে। মা রাখলেন বটে। কদিন তরুলতার খোঁজ নিতে পারেন! বচ্ছরে তিনমাসও মায়ের পেট খালি থাকেনা। তরুলতার পরে আরও ছয়টি ভাই বোন হয়েছে। তিনটি টিকে আছে। মা এখনো গর্ভবতী। রোগা ধুঁকতে থাকা শরীরে মায়েরই যত্ন করে তরু। ভাই বোনদের খাওয়ানো নাওয়ানো সেই করে। কেবল নিজের নয় খুড়তুতো জেঠতুতো ভাই বোনদেরও। দিনের বেলাতে এতেই কেটে যায়। সন্ধেবেলাটা দুঃসহ লাগে তরুর। বাবার আদরের মেয়ে কিনা, তাই বাবা সন্ধেবেলা থেকে বাড়ি থাকলে কেউ কোনও কাজ করায়না তরুকে দিয়ে। তরু নিজে জোর করে কাজ খুঁজে নেয়।

তরু মাঝেমধ্যে ভাবে পেটে বাচ্ছা এলে ঠিক কি অনুভব হয় মায়েদের, কে জানে! গির্জেতে আবার ঘন্টা পড়লো। তরুলতা তড়িঘড়ি করে বাগানে পা দিলে শুনতে পায়
“রাঙা বৌঠান ঠিক আছো তো?”

তরুলতা এ গলা বিলক্ষণ চেনে। ননীমাধব।

“তুমি আবার এখেনে কেন এয়েচ?”

কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া বাগানে লিচু গাছের আড়াল থেকে ভুস করে বেরিয়ে আসে ননীমাধব।

“রথ দেকতে আর কলা বেচতে”

তরুলতা জবাব না দিয়ে তড়িঘড়ি করে পা চালাতে গেলে হুমড়ি খায়। মাটিতে পড়ার আগেই সামলে নেয় ননীমাধব। তরুলতার বাহু ধরে তাকে তোলে। তোলার পরও তরুর হাত ছাড়ে না। তরুলতা এক ঝটকায় সরিয়ে নিতে গেলে ননীমাধব বলে
“একেই বলে ননীর গা, কি নরম। বাহু তো নয় যেন ননী এক দলা, ননীচোরা নিয়ে গান জানোনা বৌঠান?”

তরুলতা মৃদু ঠেলে দেয় ননীমাধবকে। তারপর বলে
“আমি কিন্তু চিৎকার করে বাড়ির লোক ডাকবো”

ননীমাধব হায়নার মতো বিশ্রী খ্যাকখ্যাক করে হেসে ওঠে তারপর বলে
” এই এতোক্ষণ তোমাদের বৈঠকখানাতেই তোমার জেঠতুতো দাদাদের সঙে আড্ডা মারছিলুম, আস্ত ন্যাকা সব, হরি হরি করে কাল কাটালে, মেয়েছেলে যেন। তা আজ চিকের আড়াল থেকে তোমার কত মা কাঁদলেন, কইলেন বাবা তুমি ছাড়া তরুর শউর ঘরের কেউ তো আর খোঁজ করেনে মেয়েটার। মরলে কি বাঁচলে। তোমায় অনেক আশীব্বাদ। এত্ত ফল মিষ্টি, শরবৎ, পাটিয়ে দিলেন। তোমার মা বোধহয় আমার চেয়ে ছোটই হবেন তাই মাওইমাকে আর প্রণাম করলুম না। সাক্ষাৎ লক্ষ্মী। একটু রোগা, রোগা লক্ষ্মী। তা তিনি, আজকে তোমাদের বাড়ি থাকতে কয়েচেন, থাকবো নাকি তোমার ঘরে?”

একটানা কথাগুলো বলে থামে ননীমাধব। যেন কি ভীষণ রসিকতা হলো, যা শুনে তরু হেসে লুটোপুটি খাবে এমন মুখ ভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে রইলো ননী। কথা শুনে তরুলতার ঘেন্না করে। লোকটা কাউকে বাদ দেয়না! তরুলতা বলে

” আমাকে মুক্তি দাও। একদিনের ভুলের জন্য এভাবে অত্যাচার কোরোনে।”

“ভুল কিসের গো। বল জীবনে ওই একদিনই ঠিক কাজ করেচো। আহা গো, এই কচি বয়েসে কত আর উপোষী থাকা যায়। তোমায় আর আমি এই সাদা শাড়িতে সহ্য করতে পারিনে, আমার সঙ্গে চল দিকিনি”

তরুলতা জবাব না দিয়ে বাড়ির দিকে এগোতে থাকে। দূরে কোনও স্টিমারের বাঁশি বাজছে। আষাঢ় মাসের কত তারিখ হলো কে জানে। বাগানের শুকনো পাতাগুলো ভিজে আছে। ভিজে পাতায় পা পড়ে তরুলতার গা ঘিনঘিন করে ওঠে। ননীমাধব নিজের জায়গা থেকে নড়েনা। ওখান থেকেই চেঁচিয়ে বলে
” যেদিন যেতে চাইবে বলো, এইখেনে দাঁড়িয়ে থাকবো। কদিন আচি এখন। মাহেশে জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা দেকে যাবো।”

তরুলতা থেমে যায়, পায়ে জড়িয়ে থাকা পচা পাতা ফেলতে গেলে দেখে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। বোঝে ফেলে দিলেও এ গন্ধ যাবেনা। ওর এই পচা পাতার ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। তরু ঠান্ডা গলায় ননীরমাধবকে বলে

“নিয়ে গিয়ে কী করবে? বিদ্যেসাগরের চেলা হয়েছো? বেধবা বে করবে”

ননীমাধব খুশি হয় তরুলতার প্রশ্নে। ভাবে এতো কথা জানতে যখন চাইছে অভিপ্রায় বদলেছে নিশ্চয়ই।

“বে করতে চাইলে করবে। তবে গীতায় বলেছে কর্মে মুক্তি। আমার সঙে কলকেতার থ্যাটার পাড়ায় রঙিন, স্বাধীন জীবন কাটাবে”

একথা আগেও অনেকবার বলেছে ননীমাধব। ওকথা বলার সময় মাহেশ অঞ্চলের গোলাপ সুন্দরীর কথা বলে ননী। তরু নিজেও গোলাপকে দেখেছে অনেকবার ছেলেবেলায়। মা রাসসুন্দরীর সঙ্গে তাদের বাড়ি কেত্তন গেয়ে গেছে। যেমন রূপ, তেমনি গলা। কলকেতার থ্যাটারে নাকি এখন তার খুব নাম। কি করে এই শ্রেরামপুর থেকে কলকেতায় পৌঁছুলে কে জানে। এমনই কোনও ননীমাধবের হাত ধরে হয়তো। থ্যাটার জিনিসটা কি বুঝতোনা তরুলতা। এখন বোঝে, কেষ্ট যাত্রার মতো কিছু। দেনেমাররা নাকি এখেনেও থ্যাটার করতো। কিন্তু ভদ্র বাঙালি সেখেনে যেতোনা কোনও দিনও। তরুলতা সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চলে বাড়ির দিকে। আর ননীমাধব ঘাটের দিকে।

খানিক এগিয়ে গিয়ে সামনের ঘাটে নৌকো বাঁধা আছে। ননী শ্রীরামপুর থেকে বৈদ্যবাটী যাবে এখন। সেখেনে চন্দ্রবদন বসাক তার বাগান বাড়িতে অপেক্ষা করছে ননীগোপালের জন্য। চন্দ্রবদনের সঙ্গে রথ দেখতে কলকেতা থেকে মাহেশে এসেছে ননীমাধব। ননীর বাড়ি যদিও বরাহ নগর। কুটিঘাটের কাচে। কিন্তু বাড়ি আর কতটুকু থাকতে পারে। ননীমাধব স্যান্যালকে একরকমের চন্দ্রবদনের মোসাহেবই বলা যায়। যেখেনে যেখেনে চন্দ্রবদন ঘোরে ননীর কাজ তার পেছনে পেছনে ঘোরা। সাদা মোষ চন্দ্রবদনের বাপের অঢেল টাকা। বাড়িতে এক জোড়া বউ, সাতটি সন্তান। সংসারে আর কি দেওয়ার থাকতে পারে। তাই চন্দ্রবদন বেবুশ্যে পল্লীতে ঘুরে বেড়ায়।

এমনিতে চন্দ্রের মেয়েমানুষের নেশা নাকি নেই। সে ভবিষ্যতে মস্ত থ্যাটার খুলবে তাই নায়িকা খুঁজে বেড়ায়। তার মাথায় কে ঢুকিয়েছে লেবেদেফ সাহেব যে প্রথম থিয়েটার করেন বাংলায় মেয়েছেলে অভিনেত্রী নিয়ে তারা নাকি বোষ্টমী ছিলো। তা সে থ্যাটার তো কবেই লাটে উঠেছে। আবার বাঙালিবাবুদের করা থ্যাটারের প্রথম মেয়েছেলে অভিনেত্রীও বোষ্টম। গোলাপ সুন্দরী খোদ এই শ্রেরামপুরের মেয়ে। তাই এখেন থেকেই বোষ্টম মেয়ে নে যাবে তার থ্যাটারের জন্যি। এ জীবনে ননীমাধব কম বোষ্টম মেয়ে জোটায়নি চন্দ্রবদনের জন্য। সব তাকে তুলে রেখে দিয়েছে। কবে চন্দ্রের থেটার নামবে আর কবে তার থেকে ঝেড়ে বেছে পেড়ে নামাবে কে জানে। অনেকগুলি তো তাকে থেকে থেকে পুরনো হয়ে গেছে। অন্যদের দানও করে দিয়েছে চন্দ্রবদন।

ননীমাধব নৌকোতে চেপে বসে। নৌকো দুলে দুলে রওনা দেয়। গঙ্গার ওপারেই ইংরেজদের ব্যারাক। সেপাই বিদ্রোহ হয়েছিলো এখেন থেকেই শুনেছে ননীমাধব। আজ ভরা পুণ্যিমে গঙ্গার জলে চাঁদের ছায়া পড়ছে আর নৌকার দাঁড় দিয়ে সে ছায়া ভেঙে দিচ্ছে মাঝি। কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে জল। ননীমাধব মাঝে মাঝে চাঁদের ছায়ায় তরুলতার নিষ্পাপ মুখখানা দেখতে পাচ্ছিলো। কেন কে জানে তরুকে চন্দ্রবদনের হাতে তুলে দিতে মন চাইছিলো না ননীমাধবের।

মাঝে মাঝে মনে হয় এই উঞ্চবৃত্তি ছেড়ে আবার কেষ্ট যাত্রায় ফিরে যাবে সে। তখন কেমন সরল ছিলো জীবনখানা। এই তরুলতাদের বাড়ি একবার রাসের সময় যাত্রা দেখাতে এসে নিজের পরিচয় দেয় ননীমাধব। ওর খুড়তুতো দাদা বেণীমাধব স্যান্যালের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিলো তরুলতার। তখন তরুর বছর পাঁচেক হবে, ননীমাধবের বছর ষোলো আর তরুর বরের পঁচিশ। বিয়ের কিছুদিন পরেই সাপে কেটে মরে যায় তরুলতার বর। বেণীমাধবের দেহখানা গঙ্গার জলে ভাসিয়েই তরুলতার নৌকা ভাসিয়ে দেওয়া হয় শ্রেরামপুরের দিকে। ননীমাধব কার সঙ্গে যেন দিতে এসেছিলো শেষবারের মতো তরুলতাকে। এসব কথা ভাবতে ভাবতে ননী দেখে নৌকো এগিয়ে গেছে বেশ খানিকটা। এখন ভরা কোটাল চলেছে, মাঝি খুব জোরে দাঁড় বাইতে পারছেনা। হাঁপাচ্ছে বেশ। মাঝির পায়ের কাছে একটা কুপী জ্বলছে। মাঝি গুন গুন করে গানও ধরেছে। কি ভাষায় কে জানে। ননীমাধব জানতে চায়
“ও মাঝি, কী গান গাইছো?”
মাঝি লজ্জায় উত্তর করেনা। কেবল হাসে। ননীমাধব কিন্তু চট করে সুরখানা তুলে নেয়। ছেলেবেলা থেকে ননীর এই এক গুণ সুর সে ভোলেনা। এই সুরের নেশাই তাকে পালাগানে এনেছে।

নয়তো ভালো বাড়ির ছেলে ননীমাধব স্যান্যাল। ছোটবেলায় বখে গিয়ে লেখাপড়া তেমন হয়নি। যাত্রা থিয়েটারেই আগ্রহ বেশি ছিলো। চেহারাখানাও শ্যামলা রঙের ওপর বেশ চেকনাই। যাত্রা দলে ঘুরে ঘুরে মদ, ভাঙ, মেয়েছেলে সব নেশাই ধরিয়ে ছিলো ননী। গাঁ গঞ্জে পালা গাইতে গেলে কত মেয়ে বউ ননীর প্রেমে পড়তো সেকি ননীর দোষ! না সামনে মাংস ঝোলালে বাঘ পেটে খিল মেরে পড়ে থাকতে পারে! ননীমাধবও পারেনি। আজও পারেনা।

তরুলতাও জ্ঞান হবার পর প্রথমবার যৌবনের ননীকে দেখে থাকতে পারেনি। প্রথম যেবার রাসের সময় পালা গাইতে এলে তরুলতার বাপেরবাড়ি, দেওয়ের আশ্চর্য অভিনয় ক্ষমতা আর গানের গলায় মুগ্ধ হয়ে গেছিলো তরুলতা। ননীমাধব পালা গেয়ে অন্য জায়গায় যাবার জন্য যখন পুঁটলি বাঁধছে দলের সকলে, বাড়ির দাসীকে দিয়ে ডেকে পাঠায় ননী। ওদের বাগানেই দাঁড়িয়ে ছিলো। কাঁচের বয়ামে কখানা নারকেল তক্তি আর একখানা সোনার চেন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো তরুলতা। সেই ছেলেবেলার পর এই প্রথম সামনে থেকে দেখলো ননীমাধব। কদিন যা দেখেছে চিকের আড়াল থেকে। আশ্চর্য নিষ্পাপ মুখ। রূপ, লাবণ্যে ভরপুর। সাদা থানে মনে হচ্ছিলো গন্ধরাজ ফুল। মিঠে গলায় বলে তরুলতা

“তোমার জন্য এনিছি, খেয়ো। আর এই হারখানা তোমায় দিলুম, পালা শুনে খুশি হয়ে”

ননীমাধব তক্তি নেয় কিন্তু হার নিতে অস্বীকার করে। তরুলতা বলে

” তোমাদের বাড়িরই সম্পত্তি। বেধবার আর কী কাজে লাগে বলো”

ননীমাধব অবাক হয়না। গাঁ গঞ্জের বহু মেয়ে বউ তার পালা শুনে গয়না পত্তর দিয়েছে তাকে বাড়ির লোককে লুকিয়ে। আসলে ননী কেষ্টযাত্রায় একেবারে রাজা ছিলো। কি যে মাথায় থিয়েটারের ভূত চাপলো। কলকেতার থেটার পাড়ায় খুব ঘুরে বেড়ালে কদিন ননীমাধব। কার সঙ্গে না দেখা করেনি সেখেনে গিয়ে, যদি একটা পাট পায়।

কেষ্ট যাত্রার নায়ক ননী থিয়েটারে ভিড়ের মধ্যে পাট পেলে। যে ননীর অহঙ্কারে মাটিতে পা পড়তো না, সে নাকি মৃত সৈনিকের পাট করবে থিয়েটারে! অর্ধেন্দুশেখর, গিরিশ ঘোষ এদের কী দেমাক। বলে চা জল দাও, কদিন দেকো থিয়েটার কী, পালাগানের সঙ্গে তফাত কী, তারপর পাট পাবে। ওরা জানেও না গুড়ের কারবার করে ননীমাধবের বাপের যা পয়সা তাতে সে নিজে একখানা থিয়েটার খুলতে পারে। তবু যদি হিরো হয় এই আশায় টানা এক বচ্ছর বেঙ্গল থিয়েটারের ঘরে ঝাঁট দিয়েছে ননীমাধব। সেখেনে গিয়ে দেখেছে তার মতো স্বপ্ন নিয়ে কতো ছেলে ছোকরা ঘুরে বেড়ায় ও পাড়ায়।

ননী তো তরুর চোখেও স্বপ্ন জাগাতে চেয়েছিলো। হারটা সেদিন নেয়নি তরুর থেকে। বলেছিলো আজ থেকে সাতদিনের মধ্যে যে কোনও দিন বিকেল বেলায় ননী আবার আসবে এখানে। এই একই সময়ে। এসে যদি দেখে তরুলতা অপেক্ষা করছে তার জন্য তবে সে হারখানা নেবে। আশ্চর্য জীবন। গ্রহীতার পরীক্ষা দিতে হয়না, দাতার পরীক্ষা দিতে হয়। সেই বারে ফিরে এসে ননী জানায় আর সে পালা গাইবেনা। থেটারের হিরো হবে। আজ অব্দি হওয়া আর হলো কই!

ননীমাধব থেটার পাড়ায় এক বছর পড়ে থাকার পর বুঝতে পারে পাট এরা জীবনে দেবেনা। এমনকি সে পাট করতে পারে কিনা তা পর্যন্ত কেউ দেখবেনা। ননী বড়মুখ করে যাত্রার অধিকারীকে বলে এসেছিলো নতুন কেষ্ট খুঁজে নাও। আমার আর সময় হবেনা। সেখানে আর ফিরে যেতে পারবেনা। নতুন কৃষ্ণর পাট করে যে সে নাকি ননীমাধবের চেয়েও সুদর্শন। বাড়িতে বাপ তেজ্য করেছে। পালাগান করে যেটুকু টাকা করেছিলো তা নিয়ে হাড়কাটা গলিতে পড়ে থাকতো ননীগোপাল। সেই একবছর আর তরুলতার সঙ্গে দেখা হয়নি ননী গোপালের। হাড়কাটা গলির অঢেল মেয়ে মানুষ পেয়ে শ্রীরামপুরের বৌঠানকে আর মনে পড়েনি ননীর।

সেখেনেই আলাপ চন্দ্রবদনের সঙ্গে। চন্দ্রবদন কথা দিয়েছে উপযুক্ত বোষ্টমী নায়িকা খুঁজে দিতে পারলে নায়কের পাট পাবে ননীমাধব। তরুলতাকে দেখে মনে হয় চন্দ্রবদনের পছন্দ হবে। গলায় কণ্ঠি নেই বটে। তবে বৈষ্ণব বাড়ির মেয়ে। গানের গলা চমৎকার। বাংলা, সংস্কৃত পড়তে জানে। বাকিটুকু ভাবছে শিখিয়ে পড়িয়ে নিলেই হবে। সাতপাঁচ ভাবতে ননীমাধব দেখে নৌকা শেওড়াফুলির তিনপয়সার ঘাটের পাশ দিয়ে এগুচ্ছে। ননী মাঝিকে ঘাটে নৌকো ভেড়াতে বলে।

তিনপয়সার ঘাটের পাশেই প্রাচীন বেশ্যাপাড়া। একটু কাটিয়ে গেলে হয়। চন্দ্রবদন বাগান বাড়িতে এখন নতুন রাঁঢ় নিয়ে ফুর্তি মারছে। আসর বসবে সেই রাতে। শ্রীরামপুরে এলে এই এক সুবিধে। মেয়েছেলের অভাব হয়না। মুসলমান, দেনেমার, ইংরেজদের কল্যাণে অনেক বেবুশ্যে পাড়া এখেনে সেখেনে। তাই মাহেশের রথের সাতদিন আগ থাকতে বাবুরা এখেনে এসে ফুর্তি করে। দেনেমাররা নাকি শ্রীরামপুরের এক অংশের নাম করেছিলো ফেডেরিক নগর। কিন্তু কলকাতার বাবুরা অনেকে মজা করে এটাকে ছেনালপুরও বলে। বেনীমাধব তিন পয়সার ঘাটে নামার সময় গঙ্গার জলে চাঁদের ছায়ায় আবার তরুলতার মুখ দেখলো। নিজেই জলে ঢেলা মেরে ভেঙে দিলো সে মুখ।

ক্রমশ…

14 thoughts on “কত রঙ্গ দেখি কলকেতায় | পর্ব-৮

  1. চলুক। সময়টা হাতের মুঠোয় পাচ্ছি

  2. আহা ! বড় ভালো। সেইসময়টা নড়ে চড়ে বেড়াচ্ছে।

  3. চোখের সামনে দিয়ে ভেসে যাচ্ছে যেন সবটা।

  4. প্রতি টি পর্বে.. শুধু মুগ্ধ হই.. পৌঁছে যাই.. সেই সময়ে.. 🙏

  5. পড়তে পড়তে সেই ডেনিশদের পুরনো ভেঙে পড়া কিছু কুঠি যার কোন টা তে এখন স্কুল বা মহিলা কলেজ বা হাসপাতালে র অংশ হয়ে গেছে, কিছু ধ্বংসস্তুপ হয়ে জবরদখল হয়ে কিছু টা অনাশ্রয়ের আশ্রয় হয়েছে, কিছু সমাজবিরোধীদের আড্ডা আবার পুরনো ডেনিশ টাভার্ন নবরূপে আবার চালু হয়ে শ্রীরামপুরে র ঐতিহ্য কে মনে পড়িয়ে দিচ্ছে ।
    তাছাড়া ঐ কৃষ্ণ যাত্রা র কথা মনে করিয়ে দিল খুব ছোট বেলায় মাহেশের খটির বাজারে আমার ঠাকুমা র বাপের বাড়ি র উঠোনে ঐ কৃষ্ণ যাত্রা র পালা গান শোনার ঝাপসা ছবি।
    উঠোনের মাঝখানে চৌকিপেতে পালা গান এর আসর বসতো আর তার চারিদিকে চটের ওপর বসে পাড়া বেপাড়ার সব লোক ঝেঁটিয়ে আসতো কৃষ্ণলীলা পালা দেখতে। নীচের টানা রোয়াকে আমার ঠাকুমা ও অন্যান্য বয়স্ক মহিলা এবং বাচ্চা রা বসে পালা দেখতো আর ওপরের বারান্দা থেকে বাড়ি র কম বয়সী মহিলারা দেখতো। আর আমার ঠাকুমা ও তাঁর বৌদিদিরা পালার অধিকারী এবং কৃষ্ণ সাজা ননীগোপালের মতোই টিকোলো নাক, মাথায় মুকুট,ও ময়ূরপুচ্ছ, হাতে মোহনবাঁশি নিয়ে সুঠাম দেহী মানুষ টি কে আমার ঠাকুমা রা আভূমি নত হয়ে প্রণাম করে গলায় গোড়ে মালা পরিয়ে থালায় করে থরে থরে চাল ডাল শাকসব্জি থেকে মন্ডা মিঠাই অবধি সিধে ধরে দিতেন। আর আমরা ও ঐ অভিনেতা কে সত্যি কারের শ্রীকৃষ্ণ ভেবে অবাক হয়ে দেখতাম!!!!!
    তারপর শুরু হতো পালা গান। কখনো নৌকা বিলাস, কখনো মাথুর, কখনো গোষ্ঠলীলা আবার কখনো বৃন্দাবন লীলা। যেমন গান, তেমন সাজ পোষাক, তেমনি অভিনয় ।জটিলা, কুটিলা, আয়ান ঘোষ, বৃন্দে দূতী, ললিতা বিশাখা, যশোদা মা, নন্দরাজা, ভয়ংকর কংশ রাজা সব চরিত্র যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল!!!!
    আর পালার মাঝে রাধিকে ও সখীসাজা মেয়ে রা থালা হাতে নিয়ে দর্শকদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে প্যালা তুলে বেড়াতো।
    উঃ, ঐ এক ননীগোপাল ই আমার শৈশবের স্মৃতি র নিবে যাওয়া প্রদীপ কে উস্কে দিল গো ❓ ❓ ❓
    এই পুকুরঘাট এর আর কারো এই পালা দেখার অভিজ্ঞতা আছে কি না জানা নেই। কিন্তু তোমার লেখা আমাকে টাইম মেশিনে চাপিয়ে নিয়ে গেল অনেক পেছনে?
    তিন চার দিন এর পালার বায়না হলে পুরো টীম বার বাড়িতে থাকতো আর তাদের খাওয়া দাওয়া সব ঐ বাড়ি থেকেই দেওয়া হতো খুব মজা লাগতো দিনের বেলায় লুঙ্গি পরে বিড়ি টানতে টানতে শ্রীকৃষ্ণ কে তার চুলে তেল মাখিয়ে চিরুনি দিয়ে পরিচর্যা করতে দেখলে। ঠাকুমা কে দেখাবার জন্য টানাটানি করে ও দেখাতে পারি নি, ওনার কথা ছিল ঠাকুর দেবতা নিয়ে মস্করা করলে ঠাকুর পাপ দেবে।
    আর সত্যি ই বল্লভপুরের আগে এবং শ্রীরামপুরে ফেরিঘাট এর কাছাকাছি বেশ কিছু রেড লাইট এলাকা কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ছিল দেখেছি। ইদানিং তাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে কি না জানি না। কিন্তু শুনেছি আগে নাকি নৈহাটি, ইছাপুর, নবাবগঞ্জ বা ব্যারাকপুর থেকে বড় মানুষ দের বজরা এসে দাঁড়াতো ঘাটৈ, আর মোসাবকরা এসে পছন্দ করে বায়না করে ঐ খানে র মেয়েদের বজরায় নিয়ে যেত এবং সেখানে খানা পিনার মোচ্ছব বসতো। তবে এগুলো কখনো দেখিনি, শুধু কানে শোনা।
    তবে গোলাপসুন্দরী মাহেশে র মেয়ে ছিল এই ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং, আগে শুনিনি কারো কাছে। এবারে পুরোনো লোকেদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করতে হবে 👍👍👍👍
    তোমার এই পরিশ্রম এক অনন্য নজির গড়ে তুলছে। এই লেখা ই তোমাকে আরো খ্যাতি ও সুনাম দেবে এই প্রার্থনা করছি 🙏
    প্রসঙ্গত একটা কথা জানাই যে…..
    প্রায় সাড়ে ছ শো বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মাহেশে র জগন্নাথ দেব এর মন্দির কে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী র উদ্যোগে আমূল সংস্কার করে নব রূপায়ণ করা হয়েছে। এখানে বহু নামী মানুষের পদধূলি পড়ে ছিল এবং শ্রীরামকৃষ্ণ দেব ও মা সারদা ও এসেছিলেন জগন্নাথ দর্শনে। এই মাসের তিন তারিখে সেই স্মৃতি স্মরণ করে মাহেশে র জগন্নাথ মন্দিরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও মা সারদা র ও মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
    খুব ইচ্ছে রয়েছে আগামী পয়লা বৈশাখে নব বর্ষের দিন নবরূপে মাহেশে র পূণ্য ভূমি জগন্নাথ ধাম দর্শন করবার। দেখি ঠাকুর এর কি ইচ্ছা???
    ভালো থেকো নীলা। তোমার এই রচনা কালজয়ী হোক এই আশীর্বাদ দিলাম ❤️

  6. নীলা গল্প ও ইতিহাস সমান ভাবে টানছে। অনবদ্য এক ভাল লাগা ঘিরে ধরছে। প্রতি পর্ব পড়ার পর তোমার জন্য মনের মধ্যে জমে উঠছে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

  7. আমাদের জার্নালের গর্ব এই লেখা। ধন্যবাদ নীলা।

  8. অনবদ্য।বই হয়ে বেরোলে একটানে আবার পড়বো।
    তোমার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি হোক।এই কামনা করি নীলা। অনেক ভালবাসা।

    এই লেখার জন্য অনেকটা অপেক্ষা করাই যায় ।

  9. সেই সময়ের ভাষার ব‍্যবহারে মনে হয়, সেই সময়ের তুলে ধরা ঘটনাটি আমার চোখের সামনে ঘটছে। আমি মন্ত্রমুগ্ধ দর্শক শুধু দেখে যাচ্ছি। লেখিকার কলমকে প্রণাম জানাই 🙏🏼

  10. অসম্ভব ভালো ও যথাযথ তথ্য উপাদানে ভরপুর এই লেখা। তাই অতন্ত্য সুখপাঠ্য। লেখার রস অস্বাদনের লোভ থেকে নিজেকে কিছুতেই দূরে রাখা যায় না। তোমায় ধন্যবাদ।

  11. দুরন্ত… একটু সময় পেলেই খুঁজে খুঁজে পড়ছি তোমার লেখা…

Comments are closed.