ময়ূরাক্ষী সেন
গতকাল (৫ এপ্রিল, ২০২২) তৃপ্তি মিত্র নাট্যগৃহে কসবা অর্ঘ্য আয়োজিত এক সারাদিনব্যাপী আলোচনাসভায় আট বক্তা কসবা অর্ঘ্যের শিল্প-নির্দেশক শ্রী মণীশ মিত্রের কাজ ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন। সঙ্গে ছিল এক গোলটেবিল প্রশ্নোত্তর পর্ব।
নীলাঞ্জন মিশ্রের দক্ষ পরিচালনায় এই চিত্তাকর্ষক আয়োজনের একটি সংক্ষিপ্তসার নিয়ে এই লেখা।
- শরণ্য দে – নির্দেশক, টেন্থ প্ল্যানেট স্টুডিও থিয়েটার।
সুসংগঠিত এবং তথ্যনির্ভর প্রারম্ভিক উপস্থাপনায় শরণ্য ব্যাখ্যা করেন, মণীশ মিত্রের কাজগুলি কিভাবে মঞ্চকে উপনিবেশবাদের হাত থেকে মুক্ত করার উপযুক্ত প্রমান রূপে উপস্থাপিত হয়ে চলেছে। বাস্তববাদী এবং অকৃত্রিম থিয়েটারের প্রচলিত পরম্পরাকে প্রতিহত করে তাঁর “উরুভঙ্গম” নাটকে মহাভারতের পাশা খেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে এক অবাস্তবিক রূপে দেখানো হয়েছে। এছাড়াও ভারতের নিজস্ব শাস্ত্রীয় শিল্পচর্চার ধারাগুলিকে বুদ্ধিদীপ্ত এবং অর্থপূর্ণ ভাবে কাজে লাগিয়ে থিয়েটারের এক আধুনিক সংকর ভাষা সৃষ্টি করা। একঘেয়ে সরলরৈখিকভাবে গল্প বলে যাওয়ার উর্দ্ধে থিয়েটারকে প্রতিটা মুহূর্তের উদযাপন রূপে দেখার মতাদর্শ, সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‛দেবীমঙ্গল কাব্যের’ মতো থিয়েটার প্রস্তুতিকালে একটি গোষ্ঠীর শিকড়কে আবিস্কার করার একনিষ্ঠ আগ্রহকে তিনি মণীশ মিত্রের বাংলা থিয়েটারের এক বিকল্প ধারা এবং ভাষার সুনিপুণ অন্বেষণের এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেন যা কিনা এর উপনিবেশবাদী ঐতিহ্য অথবা আমাদের দেশের শাস্ত্রীয়, আঞ্চলিক এবং লোক-শিল্প চর্চাকেন্দ্রগুলির উর্দ্ধে।
মণীশ মিত্রের কাজে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ঢুকে পড়ায় বারংবার পুনরাবৃত্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন ‛Andha Yug’, ‛American Football’, ‛Echoes Of Silence’ এবং ‛Nanaghar’ এর কথা যেখানে নাৎসি কর্তৃক ব্যাপক ইহুদি হত্যাকান্ড এবং বন্দিশিবির নিয়ে সূক্ষ্ম গবেষণাকে অনুসরণ করে নিরপেক্ষভাবে অনুকূল অবস্থান বজায় রেখে তিনি তাঁর সময়ের এক রাজনৈতিক বিবৃতি বুনেছেন। এছাড়া, যেভাবে মণীশ মিত্র তাঁর প্রযোজনাগুলিতে সামাজিক-রাজনৈতিক ঘটনাবলী চিত্রায়নে কখনোই নিরাপদ আশ্রয় নেননি, যা রাষ্ট্রের শোষণ যন্ত্রের বিরুদ্ধে এক কার্যকরী প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং দর্শককে আরো সংবেদনশীল এবং সচেতন করে তোলে, তারও প্রশংসা করেছেন শরণ্য।
সবশেষে মণীশ মিত্র তাঁর ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার এবং তাঁর প্রযোজনা গড়ে তোলার বিশেষ পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন তিনি। মণীশ মিত্রের ‛Organic Theatre’ এর মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাপ্রদর্শন করে তিনি ব্যাখ্যা করেন কিভাবে তাঁর কর্মপদ্ধতি যোগসূত্র গড়ে তোলে স্তানিস্লভস্কির পদ্ধতি যেখানে একজন অভিনেতার ‛emotional memory’ কে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং অভিনয়ের বিকল্প অনুশীলন পদ্ধতির মধ্যে যেখানে একজন অভিনেতা তার শরীর এবং শ্বাসপ্রক্রিয়ার ধরনকে ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট রস উদ্রেকের মাধ্যমের সর্বোত্তম শৈল্পিক অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলে, যেটি প্রচলিত হয় মেয়েরহোল্ডের মাধ্যমে, এমনকি Ammanur Madhava Chakyar এর মতো ভারতীয় শাস্ত্রীয় ঘরানা কুডিয়াট্টম এর বিশেষজ্ঞ শিল্পীদের মাধ্যমেও। শরণ্য তাঁর বক্তব্য শেষ করেন মণীশ মিত্রের কর্মপদ্ধতিতে ‛সংগীত চেতনা’র গুরুত্ব উল্লেখ করে যা একইসঙ্গে দর্শকের মধ্যে তাৎপর্য এবং সার্বজনীন অংশগ্রহণ গড়ে তোলে এবং এটি হল সদা-পরিবর্তনশীল উপাদান যা একজন নির্দিষ্ট অভিনেতা এবং একটি নির্দিষ্ট প্রযোজনার বস্তুগত প্রসঙ্গের জন্য প্রয়োজন।
অভিজিৎ অনুকামিন – নির্দেশক, মুক্তধারা।
অনুকামিন তাঁর বক্তব্য শুরু করেন মণীশ মিত্রের কাজ কিভাবে সমকালীন ‛আধুনিক’ ভারতীয় থিয়েটারের ‛Preach to the choir’ প্রবণতাকে ভেঙে দেয় যেখানে মূলত শিক্ষিত সম্প্রদায়ের একটি অংশ এবং সুবিধাপ্রাপ্ত মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত দর্শকদের লক্ষ্য করা হয়, সেটি তুলে ধরার মাধ্যমে। তিনি আরো বলেন কিভাবে তিনি মণীশ মিত্রের কাজের সঙ্গে ‛Theatre Therapy’ র প্রতি তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারার মিল খুঁজে পান কারণ, মণীশের কাজ দর্শকের মন তোলপাড় করে দিতে পারে বা তার উত্থান ঘটাতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত বলপূর্বক বা সৃজনশীল ভাবে বিশুদ্ধিকরণ ঘটায়। এইভাবে তিনি ব্যাখ্যা করেন কিভাবে মণীশ মিত্রের অভিনেতারা দর্শকের মধ্যে এমন শারীরিক প্রতিক্রিয়া গড়ে তোলে যা সমবেতভাবে তাদের সংবেদনশীলতার গুণগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে। উল্লেখযোগ্য উদাহরণ রূপে অনুকামিন ‛সাইকোসিস’ এর কথা বলেন, যা অভ্যন্তরীণ ভাবে সমকালীন সময়ে মানুষের ক্রমশ একাকী হয়ে যাওয়া তুলে ধরার মাধ্যমে থিয়েটারের এক সার্বজনীন ভাষার উৎপত্তি ঘটায়।
রাজীব বর্ধন- নির্দেশক যাদবপুর মন্থন।
থিয়েটার নির্মাণকালে নিজের শিকড়ের প্রতি মণীশ মিত্রের অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার ওপর জোর দিয়ে রাজীব তাঁর বক্তব্য শুরু করেন, যা একইসঙ্গে এটিকে আন্তঃসাংস্কৃতিক, আধুনিক এবং সংকর করে তোলে। ‛রায়ট’ থেকে শুরু করে ‛সাইকোসিস’- মণীশ মিত্রের বহু কাজ দেখার পর রাজীব তাঁর কাজকে আদি, মধ্যযুগীয় ও সমকালীন লেখনীর যোগসূত্র রূপে ব্যাখ্যা করেছেন। এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন মণীশ মিত্রের প্রযোজনাগুলিতে অভিনেতাদের শারীরিক ভঙ্গির সুস্পষ্টতা এবং কিভাবে তা এক শরীরী রাজনীতি গড়ে তোলে যা চতুর্থ দেওয়ালকে ভেঙে প্রতিমুহূর্তে দর্শকের সঙ্গে কথোপকথন চালায়। রাজীব অন্যান্য সকলের সঙ্গেই একমত হন যে শিল্পী হিসেবে নিজের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার ফলেই মণীশ মিত্রের কর্মপদ্ধতির নিয়মিত বিবর্তন ঘটেছে। ‛উরুভঙ্গম’ কিভাবে মণীশ মিত্রের কর্মজীবনে এক সন্ধিক্ষণ রূপে দেখা দিয়েছে যাকে অনুসরণ করে মৃত্যু ও তার উদযাপন সম্পর্কিত তাঁর চিন্তাধারা আরো বিকশিত হয়েছে তা বলার মাধ্যমে তিনি তাঁর উপস্থাপনায় ইতি টানেন।
সাগ্নিক চ্যাটার্জি – নির্দেশক, মরমিয়া।
মণীশ মিত্রের প্রযোজনায় ক্রমাগত খুঁড়ে চলা অভিনেতার মানসিক সত্তার উপর শারীরিকতা এবং সংগীতময়তার গুরুত্ব উল্লেখ করেন সাগ্নিক এবং এমন পদ্ধতির ফলস্বরূপ কিভাবে বারংবার নাটক এবং অভিনেতার মানসিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে দর্শক এক অভূতপূর্ব প্রভাব অনুভব করেন, তিনি সেটিও ব্যাখ্যা করেন। শরণ্য দের মতোই তিনি উল্লেখ করেন কিভাবে মণীশ মিত্রের কর্মপদ্ধতিতে জের্জি গ্রোটস্কির ‛poor thetare’ প্রতিফলিত হয়, যার মধ্যে চূড়ান্ত অনন্য বিষয় নির্বাচনও রয়েছে। তিনি উদাহরণস্বরূপ বলেন ‛Just An Hour’ এর কথা এবং তুলে ধরেন কিভাবে মণীশ মিত্রের কাজ প্রতিনিয়ত চতুর্থ দেওয়ালকে ভেঙে দর্শকের আবেগে পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার সুযোগ করে দেয়। মণীশ মিত্রের কাজে ভারতীয়করণ এবং ভারতের শাস্ত্রীয়, আঞ্চলিক এবং লোক-শিল্পচর্চার ধারাগুলি ব্যবহারের প্রশংসা করেন, যেগুলির সঙ্গে ছিল পোশাক, সিনোগ্রাফির মতো থিয়েটারের এমন কিছু উপাদান যা কেবলমাত্র এক সার্বর্জনীন প্রভাব সৃষ্টি করে। সাগ্নিক তার আলোচনা শেষ করেন কসবা অর্ঘ্যের গুরুকুল প্রথার ওপর আলোকপাতের মাধ্যমে যা মণীশ এবং তাঁর অভিনেতাদের মধ্যে দৃঢ় সমন্বয় এবং মানসিক সংযোগ গড়ে তোলে।
জয়ন্ত কে. বিশ্বাস- নির্দেশক, মালদা আগামী।
জয়ন্ত তার বক্তব্য শুরু করেন কলকাতার মতো বিশ্বজনীন পরিবেশ থেকে অনেক দূরে মালদার মতো এক আঞ্চলিক শহরে থিয়েটার চর্চার প্রতিকূলতাগুলি তুলে ধরার মাধ্যমে। মণীশ মিত্রের সঙ্গে তার প্রথম কথোপকথনের কথা বলতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন মণীশ তাঁর কাজের মাধ্যমে কিভাবে মঞ্চে জীবন্ত ক্যানভাসে ছবি আঁকেন। জয়ন্ত স্পষ্টভাবে মণীশ মিত্রের কাজে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের ব্যবহার এবং এগুলি সম্পর্কে সূক্ষ্ম গবেষণার কথা বলেন। উদাহরণ রূপে তিনি ‛উরুভঙ্গম’ এবং ‛ম্যাকবেথ বাদ্যে’র বিভিন্ন মুহূর্তের কথা উল্লেখ করেন। এছাড়াও মণীশ মিত্রের কর্মপ্রক্রিয়ায় শারীরিকতার প্রাধান্যের কথা তিনি তুলে ধরেন, যেখানে অভিনেতা শারীরিক উত্তেজনা থেকে মানসিক উদ্দীপনার দিকে বয়ে যায় কুডিয়াট্টমের আদি ও শাস্ত্রীয় রীতি অনুসরণ করে; এছাড়া শ্বাসপ্রক্রিয়া ও শরীরের বিভিন্ন চক্র সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের গুরুত্বও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন ‛Nanaghar’, ‛Andha Yug’, ‛American Football’, এবং ‛Adhyas’ এর কথা মণীশ মিত্রের কাজে দৃশ্যায়ন এবং আচার-অনুষ্ঠানের ব্যবহার চিত্রিত করার জন্য যেগুলি সুদক্ষ আন্তঃসংস্কৃতি এবং সার্বজনীন রসের উৎপত্তি ঘটায়। এছাড়াও মণীশ মিত্রের তত্ত্বাবধান এবং পরামর্শ কিভাবে তার সৃজনশীল পদ্ধতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে ‛থেরিগাঁথা আম্রপালি’ র মতো প্রযোজনায় তাও জানান তিনি। ‛সাইকোসিস’ কিভাবে এক পরিবর্তিত ও আরো প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক মণীশ মিত্রকে মূর্ত করে যার মৃত্যু সম্পর্কে সম্পূর্ণ উপলব্ধি রয়েছে কোভিড মহামারীর ফলাফল রূপে সেটি উল্লেখ করতেও ভোলেননি জয়ন্ত।
অভি চক্রবর্তী – নির্দেশক, অশোকনগর নাট্যমুখ।
অভি তাঁর বক্তব্য শুরু করেন মণীশ মিত্র এবং সীমা ঘোষের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতিচারণার মাধ্যমে। এরপর তিনি ব্যাখ্যা করেন কিভাবে দীর্ঘ যাত্রাপথে মণীশ মিত্রের চর্চাকেন্দ্র ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতার বাইরে বিভিন্ন জেলায় এবং কিভাবে তিনি রাজনৈতিক থিয়েটারের এক বিকল্প ধারা গড়ে তুলেছেন সেই জেলাগুলিতে। পুরুলিয়া এবং এর ছৌ সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ‛রায়ট’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে মণীশ মিত্র এবং তাঁর দলের ‛অনুভূমিক জাতিতত্ত্ব’ অভ্যাসের কথা বলেন যেখানে তাঁরা স্থানীয় মানুষদের একজন হয়ে ওঠেন তাঁদের লোকসংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে প্রযোজনা গড়ে তোলার জন্য। মণীশ মিত্রের পরিপূর্ণতা সম্পর্কিত ধারণা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন Lacan এর ‛Jouissance’ এবং Freud এর ‛death drive’ এর কথা এবং উল্লেখ করেন কিভাবে মণীশ প্রতিনিয়িত নির্দেশক হিসেবে নতুন কিছু সৃষ্টি করার জন্য তাঁর পুরোনো সত্তা গুলিকে ধ্বংস করেন। অভি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন তাঁর বিভিন্ন কাজে আবহের ব্যবহারের ওপর মণীশ মিত্রের প্রভাবের কথা বলে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি উল্লেখ করেন দিবারাত্রির গদ্যের কথা।
সমুদ্রনীল সরকার – অভিনেতা ও নির্দেশক।
সমুদ্রনীল মণীশ মিত্রের কাজের বহুমুখী ও বিচিত্র ধারা এবং বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন ‛নাগ-নাগিনী কথা’ এবং ‛সাইকোসিস’ এর মাধ্যমে। তিনি সেগুলির রাজনৈতিক ভাবে কার্যকরী প্রয়োগের প্রশংসাও করেন। তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন কিভাবে মণীশ তাঁর অভিনেতাদের প্রশিক্ষণ দেন ভারতের শাস্ত্রীয় এবং লোকশিল্পের সঙ্গে পাশ্চাত্যের শিল্পপদ্ধতির সংযোগে এক সংকর শিল্পচর্চা ও প্রদর্শনের যা সমকালীন সময়ে সহজেই কথোপকথন চালাতে সমর্থ। Ariane Mnouchkine এবং রতন থিয়ামের শিল্পচর্চার পদ্ধতির প্রসঙ্গ তুলে নিজের বক্তব্য শেষ করার আগে তিনি আরো একবার জোর দেন মণীশ মিত্রের থিয়েটার সম্পর্কিত মতাদর্শের অন্তহীন বিবর্তনের ওপর, যা কিনা তাঁর ‛organic theatre’ চর্চায় আবদ্ধ।
রাকেশ ঘোষ – নির্দেশক, দমদম শব্দমুগ্ধ।
রাকেশ তাঁর সঙ্গে মণীশ মিত্রের ব্যক্তিগত আলাপচারিতাগুলির স্মৃতিচারণা করেন এবং তাঁর আন্তঃসাংস্কৃতিক শিল্পচর্চার প্রশংসাও করেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন কিভাবে তাঁর কাজের কিছু বিশেষ মুহূর্ত, নিঃশব্দ প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে। রাকেশ ব্যাখ্যা করেন মণীশের চূড়ান্ত আবেগময়তা কিভাবে তাঁর কাজকে প্রভাবিত করে এবং তাঁর অভিনেতাদের সঙ্গে কর্মপদ্ধতিকে রূপ দান করে। নিজের দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে গোটা বিশ্বের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের ফলে মণীশ এক বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছেন যা তীব্র, প্রত্যক্ষ এবং খাঁটি এবং এই বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁর প্রযোজনার সৃজনশীল গঠনে প্রভাব সৃষ্টি করে বলে মত ব্যক্ত করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
আলোচনাসভার সমাপ্তি ঘটে মণীশ মিত্র এবং আমন্ত্রিত নির্দেশকগণের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক গোলটেবিল প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে। কিছু অকল্পনীয় পূর্ব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে মণীশ তাঁর ‛সংগীত চেতনা’র আদর্শ এবং কিভাবে তা অকৃত্রিমভাবে অভিনেতাদের প্রদর্শনকে রূপ দান করে, তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর প্রযোজনাগুলি নির্মিত হয় স্ক্রিপ্টের ওপর স্বল্পতম চাপ দিয়ে এবং নির্মাণ প্রক্রিয়ার শুরুতে শুধুমাত্র থাকে অভিনেতার মননশীল শরীর এবং আবহের প্রতি এর প্রতিক্রিয়া। অবশেষে সকলে এক জটিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন যেখানে বঙ্গ তথা ভারতে থিয়েটারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং এইরূপ পটভূমিতে সর্বক্ষণের থিয়েটার চর্চার উপযুক্ত অর্থনৈতিক কাঠামোর অনুপস্থিতি সম্পর্কে কথাবার্তা চলে।
বাংলা অনুবাদ – সৌমেন্দু হালদার