থিয়েটার মিশে গেছে আশাবরীর জীবনের স্রোতে

বিজয়কুমার দাস

ছোটবেলা থেকেই নাচে আগ্রহ আশাবরীর। তার নৃত্যগুরু শিঞ্জিতা ঘোষের মাধ্যমে আশাবরী গুপ্তর যোগাযোগ হয় মালদার নাট্যব্যক্তিত্ব সৌমেন ভৌমিকের সঙ্গে।সৌমেনবাবু মালদা অন্যরঙ্গ (প্রতিষ্ঠা ২০ জানুয়ারি ২০১৪) দলের কর্ণধার। তারপর থেকে নাচের ( নিজের সম্পূর্ণ কত্থক নাচের স্কুল ‘রিদম্’ চালায়) পাশাপাশি নাটকে অভিনয় করছে আশাবরী। বেশ কয়েকটি নাটকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সূত্রে আশাবরী তার অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করেছে। অশোকনগর নাট্যমুখ আয়োজিত অমল আলো থিয়েটার অঙ্গনে আশাবরী একক নাটক প্রতিযোগিতায় ” একা সে মাধবী ” নাটকে অভিনয় করে চমকে দিয়েছে দর্শকদের এবং অবশ্যই সম্মানীয় বিচারকদের। আশাবরীর লেখা ও অভিনয়ের গুণেই ” একা সে মাধবী ” নাটকটি শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার সম্মানে সম্মানিত হয়েছে। মালদার সীমানা ছাড়িয়ে অভিনয় দক্ষতার গুণেই আশাবরী গুপ্ত এভাবেই তার দক্ষতা প্রমাণ করে চলেছে।

অবশ্য তার অভিনয়ের সমস্ত কৃতিত্বের অধিকারী সেই সৌমেন ভৌমিক, যাঁর প্রেরণায় প্রশিক্ষণে শুরু হয়েছিল আশাবরীর থিয়েটারের প্রথম পাঠ। আশাবরীর কথায়, থিয়েটার আসলে কী সেটাই ভাল করে জানা ছিল না। অন্যরঙ্গ দলের নির্দেশক তথা আশাবরীর নাট্যশিক্ষক সৌমেন ভৌমিক তাকে থিয়েটারের যোগ্য করে তুলেছেন। আর এভাবেই ধীরে ধীরে থিয়েটার জড়িয়ে গেছে আশাবরীর জীবনের সাথে। অথবা আশাবরী জড়িয়ে গেছে থিয়েটারের সাথে। অবশ্য পরিবারের মানুষজনের মানসিক সহায়তাও তার কাছে উল্লেখযোগ্য।

২০ মার্চ, ১৯৯৮ সিঙ্গাতলা, ইংরেজ বাজার মালদা টাউনে আশাবরীর জন্ম ও লেখাপড়া, বেড়ে ওঠা । মা শাশ্বতী গুপ্ত, বাবা অধীর রঞ্জন গুপ্ত পেশায় হেল্থ ইন্সুরেন্স এজেন্ট। বাড়ির একটা সাপোর্ট সবসময়ই ছিল। মালদা বার্লো স্কুল পরে মালদা কলেজ থেকে বাংলায় সাম্মানিক এবং পরবর্তীতে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃত্যকলায় স্নাতকোত্তর লাভ। ২০ জানুয়ারি ২০১৯ সালে প্রথম আশাবরীর নাটকের মঞ্চে অভিনয় শুরু। নাট্যকার মন্মথ রায়ের বিদ্যুৎপর্ণা অবলম্বনে “নিছক খুন নয় ” নাটকে আশাবরীর প্রথম অভিনয়। থিয়েটারের জগতে প্রবেশ করে অভিনেত্রী আশাবরীর মনে হয়েছে এখানে নিজের বিকাশ ঘটানো সম্ভব। তাই থিয়েটার নামক শিল্পমাধ্যমটিকে সে নতুনভাবে চিনতে শিখেছে। প্রত্যেকটা চরিত্র তাকে নতুনভাবে ভাবিয়েছে। নিজেকে যেন নতুনভাবে প্রতিটি চরিত্রে মেলে ধরবার সুযোগ পেয়েছে। এভাবেই তার জীবনের স্রোতে মিশে গেছে থিয়েটার।

তবে শুধু অভিনয় নয়, দলের মধ্যে থেকে দলকে, দলের মানুষগুলোকে যাপন করার সর্বাঙ্গীন প্রক্রিয়াটাকেই আশাবরী থিয়েটার হিসেবে বিশ্বাস করে। অভিনয়, কোরিওগ্রাফি নিয়ে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি দলের সবার সঙ্গে অভিনয় নিয়ে আলোচনা, রিহার্সালের ব্যবস্থা করা, সকলের প্রয়োজনের দিকে নজর রাখা সব কিছুর সঙ্গেই নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে সে । এক কথায় দলের সব কাজের সঙ্গেই সে নিজেকে জড়িয়ে রাখে।

থিয়েটার নিয়ে ডিগ্রীলাভের সুযোগ না হলেও দলের নির্দেশকের সাহচর্যে নিজেকে গড়ে তুলেছে আশাবরী। অবশ্য থিয়েটারের নানা কর্মশালায় নিজেকে যুক্ত করেছে শুধু মাত্র থিয়েটার ভাল করে শিখবে বলে। সৌমেন ভৌমিকের প্রশিক্ষণ ছাড়াও নাট্য নির্দেশক পরিমল ত্রিবেদী, অয়ন জোয়াদ্দার, কমল চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে কর্মশালা করেছে। থিয়েটারকে ভালবেসেই নির্দেশক সৌমেন ভৌমিক ছাড়া মালদা মালঞ্চ দলের নির্দেশক পরিমল ত্রিবেদীর নির্দেশনায় ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ‘এবং বিদ্যাসাগর’ নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে আশাবরী।

দু বছরের করোনার মধ্যেও থিয়েটার তার পথ খুঁজে নিয়েছে বলে তার মনে হয়েছে। এই দু:সময়ে স্বল্প দর্শকের মাঝেও থিয়েটার হয়েছে। অনেক নাট্যদল করোনাকালে বিপর্যস্ত হলেও থিয়েটারের মানুষজন হার মানেনি। তাই থিয়েটার করতে করতেই একটা লড়াকু মানসিকতা অর্জন করেছে আশাবরী।
মফস্বলে থিয়েটারজীবী হয়ে বেঁচে থাকা যে ঝুঁকি, এটা জেনেও আশাবরী অনুভব করেছে থিয়েটার ছেড়ে থাকারও উপায় নেই। থিয়েটার তার কাছে একটা শান্তির আশ্রয়।নিজেকে মেলে ধরার মাধ্যম। তাই তার জীবন যাপনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছে থিয়েটার।
মালদা অন্যরঙ্গর প্রযোজনা ” অথ : চ অনাম্নী ” নাটকের সত্যবতী চরিত্রটি তার অভিনীত চরিত্রগুলির মধ্যে প্রিয় চরিত্র । মহাভারতের সত্যবতীকে কেন্দ্র করে এ নাটকের প্রেক্ষাপট।
নিজেকে থিয়েটারের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য অবসর সময়ে থিয়েটার বিষয়ক বই পড়া, বিভিন্ন গল্প উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে বিশ্লেষণ করার মধ্যেই তার থিয়েটার যাপন। এছাড়া নিয়মিত অনুশীলন তো আছেই। থিয়েটার দেখা,কর্মশালায় যুক্ত হওয়া,শারীরিকভাবে সক্ষম থাকার জন্য শরীরচর্চা তার নিয়মিত অভ্যাসের মধ্যে জড়িয়ে আছে নিজেকে থিয়েটারের উপযোগী হিসাবে গড়ে তোলার জন্যই।

টাপুর টুপুর, নিছক খুন নয়, যদি হতেম বেদুইন, সোঁদামাটি নোনাজল, দ্য রোমা, ভানুদাদা – ইন মেমোরিজ অফ লেডি রাণু মুখার্জী, স্বর্গের প্রহসন, স্বপ্ন ভাঙার শব্দ, অথ:চ অনামী, একা সে মাধবী সহ প্রভৃতি নাটকে গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে চলেছে আশাবরী। মালদা অন্যরঙ্গের আশাবরী গুপ্ত এভাবেই এগিয়ে চলেছে থিয়েটারের পথে।

3 thoughts on “থিয়েটার মিশে গেছে আশাবরীর জীবনের স্রোতে

  1. এগিয়ে চলুক আশাবরীর নাট্যযাপন।অমল আলো এদের কথা তুলে ধরে একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহন করছে।শরিক হতে পেরে আনন্দিত।

    1. ভাল হোক তোর। শুভেচ্ছা নিস।

  2. অনেক ধন্যবাদ অশোক নগর নাট্যমুখ কে। ভীষণ ভালো লাগলো।

Comments are closed.