গত ২০ জুন ২০২২, ছিল “ক্লাসিক চন্দননগর” নাট্যদলের ৫০ বছর পূর্তি এবং ৫১ তম জন্মদিন। ১৯৬৭ – ১৯৭৭ : এই দশকের সময়টা ছিল বাংলা এবং বাঙালিদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিপর্যস্ত – সংকটময় – সংগ্রামপূর্ণ ঘাম-রক্ত ঝড়ার কাল। ওই উত্তাল দশকের দিনে বাংলার শহর – শহরাঞ্চল – গ্রাম – গ্রামাঞ্চল বিশেষ করে মফস্বল বাংলার তরুণ – যুবক নাট্যকর্মীরা তাঁদের প্রাণের ঘাম-রক্তের ভালোবাসায় নিজেদের নাট্যদল নিয়ে প্রায় প্রতিদিন ছুটে বেরাচ্ছে বাংলা তথা বর্হি-বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। অনেক না-পাওয়া, বঞ্চনা, অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁদের একমাত্র অস্ত্র তাঁদের নাটক। ওই রকম এক ঝড়ের দিনে চন্দননগরের সুচারু দাস এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা গড়ে তুলেছিলেন তাঁদের ক্লাসিক চন্দননগর -কে ১৯৭২ সালে যদিও সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে থেকে। সুবিখ্যাত নট-নাট্যকার-প্রযোজক-পরিচালক অমরেন্দ্রনাথ দত্তের “দি ক্লাসিক থিয়েটার” এর অনুপ্রাণিত হয়ে দলের নাম “ক্লাসিক চন্দননগর”। ৫১তম জন্মদিনের স্মৃতিচারণায় সেই উত্তাল সময়ের অনেক কথাই উঠে এসেছে তুষার ভট্টাচার্য, চিন্তা মুখার্জীদের বক্তব্যে।
সেদিনের অন্যতম অনুষ্ঠান ছিল বিজয়লক্ষী বর্মনের আবৃত্তি এবং রবীন্দ্রনাথের গল্প “সে” থেকে পাঠ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চন্দননগরের বিভিন্ন নাট্যদলের সদস্য এবং সংস্কৃতিকর্মীরা সহ বিশিষ্ট অধ্যাপক তারক সেনগুপ্ত।
এছাড়া ওইদিন একই সঙ্গে বিরল কৃতিত্বের অধিকারী “এভারেস্ট জয়ী” ঘরের মেয়ে পিয়ালী বসাক-কে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করলেন ক্লাসিকের সদস্য সহ চন্দননগরের মানুষেরা।
আশা আর আশাহতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বিপর্যস্ত সময়ের মুখে এই আন্দোলনকে ৫০ বছর চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই যে প্রচেষ্টা তাঁদের এই মহৎই প্রয়াস সুচারুদার স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাক আমাদের মনে এই প্রার্থনা।
দুই.
সিঁথি কলকাতা রঙ্গশীর্ষ নাট্য দলের জন্ম খুব বেশি দিন নয়, ৫ মার্চ ২০১৭ কিন্তু এরই মধ্যে দলটি অনেকগুলো প্রযোজনা উপস্থাপন করেছে। বিভিন্ন ফর্মের নাটক। যেমন প্রসেনিয়াম , অন্তরঙ্গ এবং পথনাটিকাও। এখনো পর্যন্ত যেসব নাট্য মঞ্চস্থ হয়েছে – ‘এসানু’ , ‘অগ্নিকণ’ , ‘উৎসর্জন’ , ‘আমার বৃষ্টিবেলা’ , ‘বিদায় অভিশাপ’, ‘তমিস্র-নুর’ , ‘ঘ্রাণ’, ‘ছত্রান্বেষী, ’বোহেমিয়া’, ‘বিবেক’ এবং ‘আহুতি’ ‘অন্য শকুন্তলা’ ‘দ্বেষলাই’, ‘কেকয় কন্যা’। এর মধ্যে সাতটি অন্তরঙ্গ এবং চারটি প্রসেনিয়াম নাট্য । এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের ওপর পথনাটিকা যেমন ‘ইন্টেগ্রিটি’, ‘সেভ ড্রাইভ, সেভ লাইভ’, ‘স্বচ্ছ ভারত’, ‘আজাদি’ ইত্যাদিও রয়েছে । আরও একটি উল্লেখযোগ্য কাজ তা হলো প্রতি ৬ মাস অন্তর ‘শিশু নাট্য কর্মশালা’ – চলতে থাকে
যেখানে বিভিন্ন সামাজিক স্তরের শিশু-তরুণ ছাত্রছাত্রীরা তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চা করে থাকে । এখনো পর্যন্ত শিশুশিল্পীদের দ্বারা অভিনীত দুটি নাট্য প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয়েছে – ‘আজব বেহালা’ এবং ‘ঘ্যাঘ্যাসুর’। ক্ষয়প্রাপ্ত সমাজে যাতে এই ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় সংস্কৃতির সৌন্দর্যতা ছড়িয়ে পড়তে পারে সেইদিকেও রঙ্গশীর্ষ সর্বদা লক্ষ্য রাখে। সেই সাথে রঙ্গশীর্ষ মনে করে নিয়মিত কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন অভিনেতা আরও ভাল হয়ে উঠতে পারে । তাই প্রতি বছর বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্বদের কর্মশালা আয়োজন করে থাকে।
গত ১০-১২ জুন’২২ ,কলকাতা রঙ্গশীর্ষ
আয়োজিত তিনদিনব্যাপী নাট্য কর্মশালা
হয়ে গেলো। কর্মশালাটি মূলত একটি প্রযোজনাভিত্তিক ভাবনা থেকে আয়োজন। এই সংস্থার পরিচালক মনোজিত মিত্র জানান যে তাঁর দলের সমস্ত প্রযোজনায় নব নব চিন্তার প্রয়োগ ঘটিয়ে বৈচিত্র্যময় করে তোলার লক্ষ্যে এই প্রয়াস প্রতি বছরের মতো এবছরও করা হয়েছে। পাশাপাশি এই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা কোলকাতা
রঙ্গশীর্ষের আগামী প্রযোজনায় সুযোগ পাবে এমনই ভাবনা।
এই তিনদিনের কর্মশালায় ছিলেন বর্তমান
থিয়েটারের তিন দিকপাল কমল চট্টোপাধ্যায়, রাকেশ ঘোষ এবং মণীশ মিত্র। প্রথম দিন কমল চট্টোপাধ্যায় তাঁর নাট্যজীবনের
অভিজ্ঞতা ও অভিনয়ের উদ্দেশ্য এবং তার সার্থকতা নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি বডি মুভমেন্টের নানান বিষয়
নিয়ে অনুশীলন ও ভয়েস এবং অভিনয় শৈলী নিয়ে কাজ করান ।
দ্বিতীয় দিনে রাকেশ ঘোষ কাজ করান বিভিন্ন রকম থিয়েটার গেমসের পাশাপাশি অভিনেতাদের নিজস্ব চেতনা আত্ম উপলব্ধি ও বিভিন্ন ইম্প্রোভাইজেশনের উপর কাজ করান।
এই কর্মশালার শেষ দিনে ছিলেন মণীশ মিত্র । যিনি এই কর্মশালার মাধ্যমে নাট্যকর্মীদের ইন্টারনাল এবং এক্সটার্নাল এনার্জি এবং এনার্জি রিফ্লেকশন তথা আদানপ্রদানের মধ্যে দিয়ে একপ্রকার অনুশীলনের চর্চা করান । এর সাথে নানান মিউজিক্যাল বডি মুভমেন্ট ও নিজেদের শরীর ও মনকে অভিনয়ের জন্য সব সময় প্রস্তুত রাখার নানান উপায় ও অনুশীলন সম্পর্কে শিক্ষা দেন।
বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্বদের এই অনুভবী প্রশিক্ষণ উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মননের মণিকোঠায় ধরে রাখবে প্রয়াস আশা করি সহায় হবে।
তিন.
কানাইলাল দত্ত নামটা শুনলেই শরীর মন কেমন যেন কেঁপে ওঠে। অরবিন্দ ঘোষ, ক্ষুদিরাম বসু এই মহান বিপ্লবীদের ত্যাগ মানুষ আজও ভোলেনি। ভবিষ্যতেও ভুলবে না। আর এই প্রণম্য মানুষের জীবন নিয়ে যদি কোনো কাজ হয় সে সিনেমাই হোক বা নাটক মানুষ তা দ্যাখে বা দেখা উচিত।
যুগের যাত্রী চন্দননগরের ২৫ তম নাট্যমেলায় (প্রথম পর্যায়) ২১ অগাস্ট ২০২২ দেখা যাবে অন্য থিয়েটারের নবতম নাটক “প্রথম রাজনৈতিক হত্যা”। নাটক, মঞ্চ, আলো, আবহ ও নির্দেশনা – দেবাশিস। সহ নির্দেশনা ভাস্কর মুখোপাধ্যায়।
খুব সুন্দর
Good job 👍👌