এই যা কিছু ঘটেছে , বা ঘটছে , তা ভুল ঠিক অন্যায় না ঘৃণ্য , আপনি কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া দেন নি ! কেন ? উত্তর , ‘ইয়ে মানে যদি তবে’ কিন্তু’ ! আচ্ছা ‘প্রতিবাদ’ শব্দটি কি আপনার অভিধানে নেই ? নাকি ভয় কাজ করে , তাই মুছে ফেলেছেন ! অথচ আপনি না জানি কতবার ভয়কে জয় করার বুলি আওড়েছেন এই সমাজ সংসারে , তাই না ? নষ্টামি ধ্যস্টামি যা কিছু ঘটমান বর্তমান , তা আপনার মনকেও আলোড়িত করে , কিন্তু আপনি অপেক্ষা করেন , আপনার ভিতরের কম্পন প্রশমিত হওয়ার অপেক্ষায় ! তারপর বিষয়টিকে ঝামেলার ডাস্টবিনএ ফেলে , সবই প্রভুর লীলা বলে , ঘুমোন ! আসলে আপনি অপমান সইতে শিখে গেছেন ! যা কিনা এখন আপনার মজ্জাগত ! হে সুবিধাবাদী আপনাকে কেউ বিরক্ত করবে না , আপনি ঘুমোন ! বেড়ালের মতো পায়ে পায়ে ঘুরুন কিছু পাওয়ার চেষ্টায় , কে বারণ করেছে ! এই নাগরিক ঢ্যা ম না মি চালিয়ে যান ! বরং এই কাজটি আমি করি ! আমার প্রতিবাদের ভাষা কিংবা হাতিয়ার হল গিয়ে আমার থিয়েটার … “গালি দিবেন নি কাক্কা !”
টুনি সেন্সার মোদো হুদোদের এক অদ্ভুত পরিবার ! বেশিরভাগই খেটেখাওয়া মানুষ যারা একত্রিত হয় টুনির অস্থায়ী সরাইখানায় ! সস্তা মাঝারিমানের সুরা পান ও নাচ গান করে ওদের দৈনন্দিন জীবনের জ্বালা মেটায় ওরা ! ঠাট্টা ইয়ার্কি , এ ওর পিছনে লেগে দিব্যি চলছিল ওদের ! বাধ সাধলো তখন , যখন ওদের পরিবার উচ্ছেদের খবর ওদের কানে আসে ! টুনির চিন্তা ,ঠেক উঠে গেলে খাবে কি ?
রাত গভীর হলে সেন্সার টুনি এ হেন প্রসঙ্গে ভাব বিনিময় করে ! সমাধান হবে কোন রাস্তায় ?
ড্রাই- ডে তে মদ কিনতে আসা এক সরকার বশংবদ বুদ্ধিজীবিকে তারা অনুরোধ করে , ব্যাপারটা দেখার জন্য ! কিন্তু তিনি তার স্টাইলে জবাব দেন ! এই উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে , কেন্দ্র-রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়ে ওঠে ! চলে প্রতিবাদ আন্দোলন ! শেষমেষ প্রতিষ্ঠিত হয় সাধারণের অধিকার ! কিন্তু ‘লঙ্কায় যে যায় …!’ ফলে , সাধারণ সাধারণ’ই ব্যাপারটি থেকে যায় !
নাটকটি … কমন মেন , পাবলিক এবং পলিটিকাল সার্কাস , সঙ্গে সিস্টেম মাসালা ধোকা পাঞ্চ !
এই নাটকে পুরো ঘটনা প্রবাহ , চলতে থাকে নাচ গান চোখা চোখা সংলাপ , চলে মজাদার ভঙ্গিতে ! ছিমছাম মঞ্চ , যার আর্ট ভ্যালু প্রশ্নাতীত ! আলোর ম্যাজিক , নাটকটিকে বারবার নিয়ে যায় মায়াময় জগতে ! প্রত্যেক অভিনেতা অভিনেত্রী , তাদের অভিনীত চরিত্র থেকে একফোঁটা এদিক সেদিক হননি !
নাটকটির প্রেজেন্টেশান নিয়ে কোন কথা হবে না !
যেটুকু বলার , নাটকটিতে ঘটে যাওয়া কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আদৌ যুক্তিগ্রাহ্য কিনা !
তা হল’ , দুই হাই প্রোফাইল ব্যক্তি ,ঠেক উচ্ছেদ বিষয়ে সরাসরি নেমে এসে কথা বলতে পারেন কিনা ?
সেই বিষয় এতো গুরুত্ব পেলো , এবং এমনই উত্তাল বিরুদ্ধ হাওয়া উঠল , যে সরকারই পড়ে গেলো !
বোতল চিহ্নে ভোটে দাঁড়ানো যায় কি না ? তারপর তো জিতে ক্যাবিনেট প্রধান হওয়ার প্রশ্ন !
কারণ , যিনি পার মাতাল , তিনিও বোতল চিহ্নে ভোট দেবেন কিনা সন্দেহ !
তবু ,মাতাল মানুষকে খাটো করে দেখার প্রশ্নই ওঠে না , কারণ আমরা জানি , মরা দাঁতাল এক লাখ , আর মরা মাতাল দু লাখ !
মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে মিডিয়া পারসন বড় ? তা হয় কি করে ? যেখানে সরকারি বিজ্ঞাপন ছেপে দিলে , মিডিয়া হাউজে তো হা হা রব উঠে যায় !
প্রশ্নগুলি সহজ আর উত্তর তো জানা … পরিচালকের কথা অনুযায়ী , ‘এটি একটি ব্ল্যাক কমেডি ! অত যুক্তি তর্ক মানা হয়নি , জাস্ট মজা করতে করতে বুঝিয়ে দেওয়া এটা ওটা সবটা !’
আর আমাকে সবচেয়ে অবাক করেছে , মোদো চরিত্রটি যে উপায়ে লারজার দ্যান লাইফ হয়ে ওঠে !
নাটকের প্রথম অর্ধটি মঞ্চের বাঁ দিকটি অত্যন্ত ভারি লাগছে … যদিও পরিচালক পরে তা সমন্বয়ের চেষ্টা করেছেন !
আমরা দর্শক প্রশ্ন করবই , এসব স্বত্বেও , আবার বলছি নাটকটির উপস্থাপনা আমাকে মুগ্ধ করেছে !
এর একশো শতাংশ মুনশিয়ানা পরিচালক রাজেশ ও টিম রাজেশের , অর্থাৎ সবুজ সাংকৃতিক কেন্দ্র !
আলো পরিচালক নিজে নক্সা বুনেছেন ! আলোক নিয়ন্ত্রণ প্রিয়ব্রত এককথায় দুর্দান্ত ! আবহ কানে ঠিকই লেগেছে ! দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এর নির্মেদ মঞ্চ , আলো আবহ ও অভিনেতাদের সঙ্গে দিব্যি সঙ্গত করেছে ! মঞ্চ নির্মাণ করেছেন মদন হালদার ও অদ্রীশ কুমার রায় !
এই নাটকে প্রজেকশন এর ব্যাবহার ছিলো ত্রুটিমুক্ত !
গানের ব্যাবহার অত্যন্ত সুপ্রযুক্ত এবং গানগুলির ব্যবহারে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে নাটকটি ! এর জন্য দায়ী থাকবেন ভাস্কর মুখোপাধ্যায় , সঙ্গীতে অবশ্যই নবমিতা ঘোষ !
দেবাশিস ন্যান্সি উর্ণা প্রীতম ও শুভজিৎ , ওদের অভিনয়ের গুনগতমান নিয়ে প্রশ্ন করা অবান্তর ! কিন্তু মোদো এবং টুনি’র ভূমিকায় যথাক্রমে , অনিরুদ্ধ মাসীদ ও পারমিতা ঘোষ’এর অভিনয় অনবদ্য !
এককথায় জমজমাট উপস্থাপনা !
এই নাটকটি গিরিশ মঞ্চে দেকা শুনায় আমার ভুল ভেরান্তি থাকলি , কতা একটাই , “গালি দিবেননি কাক্কা !”
রাজেশের কাজ প্রশ্ন তৈরি করছে। ভাল বা খারাপের বাইরে আমাদের থিয়েটার নিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করতে হবে। প্রশ্ন তৈরি করতে হবে।
Thankuuu