অশোকনগর নাট্যমুখ পরিচালিত
সাপ্তাহিক ওয়েবজিন অমল আলো জার্নাল
৪৭ তম সংখ্যা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
সম্পাদক – অভি চক্রবর্তী
নির্বাহী সম্পাদক – অসীম দাস
আজকাল শরতের গুমোট সন্ধেগুলো শহরে কাটে নরমে গরমে । চারিদিকে বড় বড় পাহাড়ের মতো অট্টালিকা। সেইসব ভেদ করে চওড়া কালো রাস্তার পেট চিড়ে পালিয়ে যেতে চাইলেও আজকাল পালানো হয়না। ধোঁয়াহীন ঠান্ডা চলমান যানে জানলার পাশে বসে সেই সব দৃশ্য দেখলে বরং মন খারাপ হয়। একদিন এখানে ধান ফলতো, চাষীদের জমিতে এখন কোটিপতির বাস। মধ্যবিত্ত বাঙালির পাতে ভাতের দাম চড়া। জমির দালালিতে রমরমা বাজার। এসব মন খারাপের কথা মনে পড়লে আজকাল আর কবিতা পায় না। ‘ধন্যধান্য পুষ্পভরা’ যেনো অর্থহীন দেখায় কেমন। তবুও যেতে হয় বন্ধুর ডাকে সেমিনারে।
এ সপ্তাহের প্রায় সব দিনগুলোই ব্যস্ততায় কাটালাম। এক সপ্তাহে দুবার জীবনানন্দ সভাঘরে আসতে হলো। কনকনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর। বেশিক্ষণ বসে থাকলেই ঘুম জড়িয়ে আসে চোখে। ৩০ অগাস্ট বিভাব নাট্য আকাদেমি আয়োজিত আড়ম্বরহীন এক সেমিনারে ঢুকতেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। সেকথা যাক। সেমিনারে বিষয় ছিল ‘সাম্প্রতিক কালে নাটকে দর্শক বিমুখতা’। মূল বক্তা নাট্য গবেষক কমল সাহা, অদ্ৰীজা দাশগুপ্ত এবং হৈমন্তী চট্টোপাধ্যায়। সঞ্চালক দেবাশিস সরকার। সামগ্রিক বক্তব্য শুনে দর্শক বা শ্রোতা হিসেবে আশাহতই হয়েছি। সমাধানের তেমন কোনো সঠিক পথ পাওয়া যায়নি। সবটাই ধারণা আর তথ্যে আবদ্ধ চিত্রকথা। এখন গ্রুপ থিয়েটারের সঠিক কনসেপ্ট ভেঙে চৌচির। ফ্রিল্যান্সার অভিনেতাদের দৌরাত্ম। রঙিন পর্দার স্বনামধন্য অভিনেতার প্রবেশে দর্শক আসার ইচ্ছেটা আজ গ্রাম শহরে ভিন্ন রয়েছে। মনোরঞ্জন শুধু তত্ত্ব কথায় হবে না। দর্শক বোর হতে চায় না। ভাবনার অন্য কোনো পথ খুঁজতে হবে প্রযোজক দলকে। যে পথে আনন্দের বন্যা বয়, যে পথে সত্যের বিকাশ ঘটে। তবে ভালো থিয়েটার না হওয়ার বড় কারণ হিসেবে তিন বক্তাই দায়ী করছেন সরকারের অনুদানকে। একটি দলের প্রতি আরেকটি দলের সু-সম্পর্ক নিয়ে। বন্ধুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমরা অন্যের থিয়েটার দেখি না। আমরা অন্যের কথা শুনি না। আমরা সব জানি।
১ সেপ্টেম্বর ছিল আমাদের দল অশোকনগর নাট্যমুখ এর ২৩ তম জন্মদিন, পালিত হলো অমল আলো স্পেসে। জমাটি আড্ডা বেশ কেটেছিল সন্ধেটা। ৩ সেপ্টেম্বর ছিল ‘মননে শুভেন্দু ‘ স্মরণে শ্যামনগর রবীন্দ্র ভবনে ইছাপুর আলেয়ার আয়োজন। অভিনীত হলো নাট্যমুখ এর কুহকিনী বীররাত্রি -র ১৮ তম অভিনয়। দর্শক আসন ফাঁকা বলবো না, ছিল মোটামুটি। শুভেন্দুদাহীন মন খারাপের মতো কাটলো সন্ধেটা। পরদিন আবার মিস্টার রাইটের মঞ্চাভিনয় গিরিশে। নিজেদের শো। দর্শকাসন দেখে মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। এত প্রচার, এত বিজ্ঞাপন, এত ফেসবুকে লেখালেখি, এত ফোনে আমন্ত্রণ, দর্শক কি তবে সত্যিই বিমুখ! আমরা তো এসেছিলাম শহরে ভালো থিয়েটার দেখাবো বলে! এদিকে গোবরডাঙ্গা উদীচীর থিয়েটার কার্নিভাল শুরু হয়েছে ৮ সেপ্টেম্বর, আমাদের প্রান্তিক শহরে। শহীদ সদনে প্রচুর দর্শক। তিতুমীর আসছে। টাইপিস্ট আসছে। আসছেন দেব শংকর হালদার, অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
এসব প্রশ্ন নিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর আবার এলাম জীবনানন্দ সভাঘরে। সৃষ্টিসুখ প্রকাশনীর বই প্রকাশ অনুষ্ঠান। অশোকনগর নাট্যমুখের নির্দেশক অভি চক্রবর্তীর বই নাম ‘থিয়েটার নিয়ে ১’, আবরণ উন্মোচন করলেন নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, নাট্য নির্দেশক মনীশ মিত্র এবং লেখক স্বয়ং। বইটির প্রচ্ছদ নির্মাণ করেছেন পার্থপ্রতিম দাস। প্রকাশক রোহন কুদ্দুস। বইতে অভির লেখালেখির শুরুর সরণী ধরে একালের পথে এসে থেমেছে লেখার কথারা। ওঁর থিয়েটার জীবনের ২৩ বছরের এই দীর্ঘ জার্নি তিনি কিভাবে বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছেন, তার প্রকাশ কিভাবে ব্যক্ত করেছেন, বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত এমনই মূল্যবান বেশ কিছু লেখা একজায়গায় জড়ো করেছেন সঙ্গে এতোদিনকার বিভিন্ন নাট্যনির্মাণ পথের চলমান চিত্র তুলে ধরেছেন, যা ওঁর একান্ত মনের কথা। সৃষ্টিসুখের এমন একটা সুন্দর সুখের অনুষ্ঠানে প্রায় দর্শক হীন পরিবেশ দেখে আবারও মর্মাহত হলাম । তবুও অপ্রতিরোধ্য এসব কথাকে সাহসের আগুন ভেবে বরাবর মান্যতা দিয়ে এসেছেন সৃষ্টিসুখ প্রকাশনী। থিয়েটার নিয়ে ১ উন্মাদনা জাগিয়ে তুলুক পাঠকের মনে, ভবিষ্যতের নব্য অভিনেতারাই পারে বই সংগ্রহ করে লেখকের যাপনকে আরো একধাপ সত্যের সন্ধানে পৌঁছে দিতে পাশাপাশি ভাবী গবেষকদের কাছেও অমূল্য রতন হয়ে উঠবে এই বই একদিন।
এটি জার্নালের সম্পাদকীয় না হলেও সম্পাদকীয় ই মনে হল। চতুর্মুখী খুবই গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর আলোচনা। ‘র’ এবং ‘ড়’ টা একটু দেখে নিলে ভালো হতো এবং ‘ধন ধান্যে…’ হয়তো টাইপ মিস্টেক।