অশোকনগর নাট্যমুখ পরিচালিত
সাপ্তাহিক ওয়েবজিন, অমল আলো জার্নাল
৫০ তম সংখ্যা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২
সম্পাদক – অভি চক্রবর্তী
নির্বাহী সম্পাদক – অসীম দাস
সিসিফাসের জার্নাল, সূর্য আনতে আমরা ক’জন যাত্রী | অভি চক্রবর্তী
পঞ্চাশতম সংখ্যায় এসে পৌঁছনোর মধ্যে আজ আর সংখ্যাধিক্যের আধিপত্য ব্যতীত অন্য কোনো সুখ অন্তরে অনুভূত হয়না। মধ্যচল্লিশের দোরগোড়ায় পৌঁছে অন্তরে-বাহিরে মিথ্যে সাজিয়ে রাখবার কোনো যৌক্তিকতাও সেভাবে পাইনা। আনন্দ একটাই যে কাজ শুরু করি সে কাজ চালিয়ে যেতে চাই নাগাড়ে, বিচ্যুতি বা অনর্থক থমকে যাওয়ার মধ্যে যে শৈল্পিক আলস্য আছে তাকে কখনোই জীবনে জাঁকিয়ে বসতে দিতে চাইনি। ফলত তা আমাদের নাট্যদলের চর্চায় প্রভাব ফেলবে এমন ভাবনাকেও নিকটে ঘেঁষতে দিইনি। এতো কথার চচ্চড়ি যে রাঁধছি তার মূল স্বাদ হল এই যে, আমরা ‘কষ্ট করি, স্পষ্ট বলি’… এই স্পষ্ট বলায় একটি মুখপত্র থুড়ি নাট্যপত্র লেগেছিল প্রথম দিন থেকেই, আত্মকাজের প্রচারের ছিটেফোঁটা ভাবনাও ছিলনা সেখানে, মূলত বুঝতে চেয়েছিলাম পরিপার্শ্বের কাজের হাল-হাকিকৎ। সেখান থেকেই নাট্যমুখ বয়ে চলেছে সন্ধানী দৃষ্টিতে অন্বেষণের বিবিধ সূচীমুখ আবিস্কারের তাড়নায়। অমল আলো জার্নাল সে তাড়নারই প্রবাহিত শাখা নদী মাত্র…
এই যে স্পষ্টত একটা হতাশা দিয়ে শুরু করেছিলাম, ভিতর আমাকে বলতে চাইল এই যে পঞ্চাশতম সংখ্যা উৎযাপন কোনো মহৎ কাজ নয় কারণ দিনে দিনে পাঠক কমে যাচ্ছে, লিঙ্কে ক্লিক করবার লোক কমে যাচ্ছে অথচ বিভিন্ন মুখরোচক রাজনৈতিক দলবদল, প্রশাসনিক চুরি – ছ্যাঁচড়ামি – বাটপারি ইত্যাদি খবরের লিঙ্কে লাফিয়ে পড়ছে মানুষ? একি আমাদের সার্বিকভাবেই রুচির অবক্ষয়? গভীরে না গিয়ে শুধুই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যেকোনো রচনাকেই গরু রচনার দিকে নিয়ে যাবার উদগ্র উল্লাস? (এই গরুর সঙ্গে সাম্প্রতিক গরু পাচার বা তাকে নিয়ে কেন্দ্র করে খরচা হওয়া নিউজপ্রিন্ট, বাইট বা স্যাটেলাইটের কোনো সম্পর্ক নেই) এখন সেই গরু রচনারই বাজার। এই বাজার চলবে। বৈচিত্র্যময় কাজের প্রকাশ কমতে থাকবে, সাফল্যকে রিপিট করার একই সূত্র বারবার প্রয়োগ করে তাকে হাতের তালুর মধ্যে পাবার উল্লাসপর্বই আজ বাংলা নাট্যপর্বের আনাচ কানাচে সদা বিরাজমান। পাঠক বা দর্শক আপনি সর্বশক্তিমান, খেয়াল করলে বা একটু তলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন আমি আসলে কি বলতে চাইছি… ক্রমাগত পড়াশুনো থেকে দূরে চলে যাওয়া, বড়দের (কাজে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বয়সেও) কাজকে না দ্যাখা, তাদের সঙ্গে কথোপকথনেও আত্মদর্শনকে বড় করে দ্যাখানোর বাসনা, ছোটদের তাচ্ছিল্য করা আমাদেরকে নাট্যের এক অনিশ্চিত কুয়োতলায় এনে ফেলেছে। যেখানে নাট্য হয়ে উঠছে প্রতিযোগিতার চর্চা। ব্যক্তিগত খেয়োখেয়ির খোয়া পাটকেল ছোড়ার ক্ষেত্র… অমল আলো জার্নাল এসবের বাইরে এক উন্মুক্ত রৌদ্র চাতালে দাঁড়াতে চায়, যেখানে একের সঙ্গে অপরের লড়িয়ে দেওয়া নেই, যেখানে সমমনস্ক মানুষ একত্র হয়ে শিল্পের ধ্বজা উড়িয়ে দিতে চাইবে… কারোকে দ্যাখানোর জন্য নয়, শুধুমাত্র মুক্তির আলোকবর্তিকা হিসেবে…
জানিনা এসব স্বপ্নের আদৌ আর কোনো মানে আছ কীনা! আমরা আসলে একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের পরম্পরার মধ্যে দিয়ে চলেছি… হয়তো অমল আলো জার্নাল সেইসব স্বপ্নভঙ্গের মাঝে কোথাও একটুকরো আলো নিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে যাবে, সেখানে পিছনে পিছনে সেই আলোতেই হয়তো আমাদের সহচর হয়ে আসবে অনন্ত প্রতারণা, জোঁকের মতো গায়ে লেপ্টে রক্ত চুষে খাবে টানটান বিশ্বাসঘাতকতা, স্বার্থপরতার ঝুলি পিছনে ঝুলিয়ে রেখে সামনে আমাদেরই সহচর হয়ে উঠবে রাশি রাশি ফেসিয়াল করা গিরগিটিরদল, আমরা আনন্দে এগিয়ে যাব, পিছনে হিংস্র হায়নার মতো তান্ডবের সমগ্র তৈরি করবে আলস্য, বিকার এবং হতাশার উদগ্র স্রোত…
তাও চেষ্টা করতে হবে। সেই চেষ্টাতেই পঞ্চাশ হয়ে গেল… দেখি খড়কুটো জড়ো করে আরেকটু এগোনো যায় যদি…