রঙ্গশীর্ষ-এর ‘নৈনং দহতি পাবকঃ’ A Tribute to Raktakarabi | অসীম দাস

দেখে এলাম মনোজিৎ মিত্র পরিচালিত কলকাতা রঙ্গশীর্ষ-এর উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নাটক ‘নৈনং দহতি পাবকঃ’ – A Tribute to Raktakarabi. Written by none other than Mr. Ujjwal Chattopadhyay.

শুরুতেই বলতে ইচ্ছে করছে অর্থের দিক থেকে তেমন সামলম্বী নয় ওঁরা। ওঁরা মানে মনোজিতরা। মনোজিতরা মানে কলকাতা রঙ্গশীর্ষ। ওঁদের এই গণমাধ্যমে আন্তরিক ডাকে আমার মতো বহু মানুষ সাড়া দিয়েছেন। …”না আমরা কোন ফ্লেক্স বা ব্যানার কোথাও দিতে পারছি না। কোন পেপারেও অ্যাড দিতে পারছি না। কারন আমাদের কাছে পয়সা নেই। শুধু নাটকটা করব এবং এই ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া যেখানে কোন পয়সা লাগে না সেখানে আমরা প্রচার করব।”

নাটকের নামটাও খুব আকর্ষণ করেছিল, ‘নৈনং দহতি পাবকঃ’, গীতার ২৩ তম শ্লোক। “আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না, আগুনে পোড়ানো যায় না, জলে ভেজানো যায় না, অথবা হাওয়াতে শুকানো যায় না। এই আত্মা অব্যক্ত, অচিন্ত্য ও অবিকারী বলে শাস্ত্রে উক্ত হয়েছে। অতএব এই সনাতন স্বরূপ অবগত হলে দেহের জন্য তোমার শোক করা উচিত নয়”। পনেরো দিনের মাথায় কুরুক্ষেত্রের ময়দানে সঞ্জয় অর্জুনকে বলেছিলেন। তখন এসব এত মানে ফানের কথা ভাবিনি। আমন্ত্রণ পেয়েই বিকেলবেলা ফাঁকা থাকায় চলে গেলাম শিশির মঞ্চে, টিকিট কেটে তার দশ গুণ বেশি প্রাপ্তি নিয়ে ফিরলাম বাড়ি।

আজকের দিনে এই মূল্যে টিকিটটাই তো দুর্মূল্যের সমান। বিগত কয়েক দিনে কয়েক হাজার টাকার টিকিট কাটতে কাটতে যা বুঝছিলাম এভাবে আর সম্ভব না। প্রত্যেকে তো আর আদানী অম্বানীর ঘরে আমরা জন্মাইনি। সব কিছুর একটা মাপ থাকে। কত কত খারাপ নাটক দেখি, কতটা সময় দেই।তৃপ্তি পাই না সেভাবে। আমারও কোথাও মনে হচ্ছিল অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে, সেখানে কাউন্টারে একশো বা দুশো টাকা শুনে মনটা আনন্দে ভরে যায়। আর কে বলে স্টার ছাড়া নাটক দাঁড়ায়না। তার জন্যে একবার কষ্ট করে ঐ টাকাটা ব্যয় করতে হবে, দেখতে যেতে হবে কলকাতা রঙ্গশীর্ষ-এর ‘নৈনং দহতি পাবকঃ’- A Tribute to Raktakarabi.

এবার আসি নাটক নিয়ে দু-চার কথায়। “মঞ্চে মাল্টিভার্স” বলতে যা বোঝায় এই নাটক তাই। সময়ে সময়ে বিভিন্ন যুগ থেকে বিভিন্ন চরিত্রকে উঠে আসতে দেখা গেছে। একদিকে এই নাটকে ডার্ক নাইটের জোকার রয়েছে আবার অন্যদিকে হীরক রাজাও রয়েছেন, কিংবা ধরুন জগৎ শেঠ কেও খুঁজে পাবেন আবার সোফোক্লিসের এর “ক্রেয়ন”ও উঁকি মারবে। আবার এদের ঠেঙ্গাতে প্রয়োজনে উঠে আসতে হবে কবিগুরুর “নন্দিনী” কে। কি অদ্ভুত একটা কম্বিনেশনে নাটক টি টানটান উত্তেজনায় বোনা হয়েছে সেটা না দেখলে বোঝা সম্ভব না। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এরকম এক দুঃসাহসিক প্লটে কাজ করবার জন্যে এনটায়ার টিমকে কুর্নিশ জানাই। দেশ কে যেভাবে বেঁচে দেওয়ার এক ভয়ঙ্কর যজ্ঞ বসানো হয়েছে, সেই যজ্ঞের আগুনে একটা কেনো শত শত নন্দিনীরা ঝাঁপাবে।
আমরা এই বিশ্বাস নিয়েই ফিরবো যে শেষে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাতে আমাদের প্রাণবায়ুর ওপরেও যদি কর চাপানো হয় আমরা সেই ষড়যন্ত্রকেও হত্যা করবো, মুক্ত করবো নিজেদের। ভয়কে জয় করবোই। শেষ হাসিটা আমরাই হাসবো।

মাত্র কয়েক বছর বয়স দলটার। কলকাতা রঙ্গশীর্ষের এই নবতম প্রয়াস বেশ দুঃসাহসিক ভাবে মঞ্চস্থ করতে দেখে ভালোই লাগল। আর মনোজিতের আন্তরিকতায় কনকনে শীতাতপ হলে জমে গেল ৩১ শে আগষ্ট ‘২২ এর সন্ধেটা।  নাট্য নির্দেশক তথা অভিনেতা উৎপল ফৌজদারের অভিনয় আমি আগে একটি নাটকে দেখেছিলাম, তারপর এই দ্বিতীয়বার দেখলাম। ওঁনার গেটআপ এই চরিত্রে ভীষণ মানানসই। এবং অভিনয়ের একশো শতাংশ দিয়ে চরিত্রের পূর্ণতা মিটিয়েছেন। মনোজিতকে যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি। ইন্টিমেট স্পেসে ওর ঘ্রাণ নাটকে অভিনয় চমকে দেওয়ার মতো। ওর আন্তরিক ব্যবহার আমাকে আরও চমকে দিয়েছে। একটা অল্প সময়ের মধ্যে থিয়েটারই পারে এভাবে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করতে। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো তোমাদের জন্য। আরো যাঁরা অভিনয় করলেন মঞ্চে তাঁদের মধ্যে স্বাগতা সেন, পৃথা ভট্টাচার্য, লিপিকা মাঝি, অনির্বাণ, সুব্রত, সুদীপ্ত, দেবরূপ, সোমাঞ্জনরা বেশ ভালো। শেষে ভালোবাসার সাথে বিনীত প্রার্থনা রইলো আলোর দিকে আরো মনোনিবেশ করার জন্য। এ নাটক অন্ধকার দিকে নতুন আলোকে আবিষ্কার করার। আর সবশেষে তোমার প্রায় প্রতিটি নাটকে মাইথলজির খোঁজ আছে। ব্যাপারটা কি বলো তো? ভালোবাসা সকলকে।