অভিনয়কেই জীবনে পেশা হিসাবে গ্রহণ করবে শ্রেয়া

বিজয়কুমার দাস 

 

থিয়েটারের সাধনক্ষেত্র গোবরডাঙার কাছেই চাঁদপাড়ার মেয়ে শ্রেয়া ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছে। সেই স্বপ্ন সফল করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে শ্রেয়া সাহা। এই লড়াইটা শ্রেয়া শুরু করেছে তার বালিকাবেলা থেকেই। থিয়েটারকে ভালবেসেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগে পাঠ নেওয়া তার। অবশ্য ছোটবেলা থেকেই থিয়েটারকে ভালবেসেছিল। চাঁদপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশুনো চলাকালীন বিদ্যালয়ের নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিত। নাচ শিখত ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু থিয়েটারের প্রতি একটা আকর্ষণ ছিলই। আর সেই আকর্ষণের সূত্রেই চাঁদপাড়া এক্টো দলে আসা যাওয়া শুরু করে। সেখানে নির্দেশক সুভাষ চক্রবর্তী নাটকের রিহার্সাল দেওয়াতেন। শ্রেয়া বসে বসে রিহার্সাল দেখত আর একটা নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার জন্য বসে থাকত।কিন্তু ঐ বয়সের মেয়ের উপযোগী কোন ভূমিকা না থাকার জন্য সুভাষবাবু তাকে পরামর্শ দেন গোবরডাঙা নকসার সঙ্গে যুক্ত হতে।
বাড়িতে শ্রেয়ার মা কৃষ্ণাদেবী মেয়ের সব ইচ্ছার স্বপক্ষে থাকতেন। বাবা স্বপন সাহাও আপত্তি করেননি। বাড়িতে অবশ্য কেউ থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বাবা থিয়েটার দেখতে ভালবাসেন । মায়ের উৎসাহে শ্রেয়া যুক্ত হল গোবরডাঙা নকসার সঙ্গে। পড়াশুনোতেও ভাল ছাত্রী শ্রেয়া। কিন্তু অভিনেত্রী হওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে চাঁদপাড়া থেকে গোবরডাঙা এসে নকসায় যুক্ত হয়ে নাটক শেখা শুরু করল। আশিস দাস, দীপান্বিতা বণিক দাসের স্নেহচ্ছায়ায় শ্রেয়া হয়ে উঠল থিয়েটারের মনোযোগী ছাত্রী।
গোবরডাঙা নকসার বেশ কিছু প্রযোজনায় অভিনয়ের সুযোগ পেল সে। পাশাপাশি থিয়েটারের প্রতি তার ভালবাসাটা গভীর হতে শুরু করল। গোবরডাঙা নকসার প্রযোজনা বাটারফ্লাই, হুলো, অন্যজন্ম, আঁখিপদ্মা , হিয়ার কথকতা প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করল শ্রেয়া। গোবরডাঙা নকসার থিয়েটার প্রশিক্ষণ এবং বেশ কয়েকটা নাটকে অভিনয়ের সূত্রে আরো বেশি করে থিয়েটার করা ও শেখার ইচ্ছাটা তার আরো প্রবল হল।
উচ্চ মাধ্যমিকে যথেষ্ট ভাল ফল করে বেশ কিছু ভাল কলেজে পড়ার সুযোগ পেল। কিন্তু তার মন তখন আরো বেশি করে থিয়েটার শেখার জন্য উদগ্রীব। একসময় ঠিক করে ফেলে, থিয়েটারকেই সে জীবিকা করবে।শ্রেয়ার এই ইচ্ছের পক্ষে বাড়ির সবাই একমত না হলেও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগেই ভর্তি হলো । নিজেকে তৈরি করতে লাগল অভিনয়ের ফ্রীল্যান্সার হওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে।

ছোটবেলা থেকেই নানা বিষয় নিয়ে পড়াশুনো করার একটা প্রবণতা তার ছিলই।রবীন্দ্রভারতীতে পড়তে ঢুকে থিয়েটার নিয়ে দেশ বিদেশের ইতিহাস পড়ে শ্রেয়া এবার হয়ে উঠল থিয়েটারের একনিষ্ঠ ছাত্রী। রবীন্দ্রভারতীর বিভিন্ন প্রযোজনায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন নাট্যদলেও অভিনয় চলতে থাকল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ওথেলো, অষ্টক, পড়ে থাকা কবিতারা প্রভৃতি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পেল। অভিনয়ের অভিজ্ঞতাকে সম্বল করেই বিভিন্ন সময় শ্রেয়া গোবরডাঙা থিয়েটার রেপার্টারি, মৃদঙ্গম প্রভৃতি নাট্যদলেও অভিনয় করল। মৃদঙ্গম দলে বরুণ করের পরিচালনায় মেঘমল্লার (সুনন্দা), গোবরডাঙা থিয়েটার রেপার্টারিতে শান্তনু নাথের পরিচালনায় নাটক করেছে।

রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষক শিক্ষিকাদের পড়ানো, থিয়েটার শেখানো তাকে থিয়েটারের প্রতি আরো আগ্রহী করে তুলেছে। থিয়েটারে এক্সপ্রেশন বা অভিব্যক্তি নিয়ে নিজে নাচের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে অবিরত।রাজডাঙা দ্যোতকের একটি নির্মীয়মান প্রযোজনার রিহার্সাল দিতে চাঁদপাড়া থেকে কালীঘাটে এসে রিহার্সাল দিতেও পিছপা হয়নি শ্রেয়া। এই রিহার্সাল দিয়ে বাড়ি ফিরতে যথেষ্ট রাত্রি হলেও সেই ঝুঁকিটা সে নিয়েছে থিয়েটারকে ভালবেসেই।

বাড়িতে থিয়েটার করা নিয়ে তেমন আপত্তি না থাকলেও থিয়েটার নিয়ে পড়াশুনো করাটা সবাই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু আর পিছন ফিরে তাকাতে চায়নি শ্রেয়া।ইতিমধ্যেই একটা শর্ট ফিল্মের চিত্রনাট্য লিখেছে। রবীন্দ্রভারতীতে ” বিসর্জন” নাটকের একটা অংশ পরিচালনার দায়িত্বও পালন করেছে। থিয়েটার নিয়ে গভীর পাঠ তাকে এক অনুসন্ধিৎসার জগতে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। গগনদীপ কৌর, সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, শুভাশীষ হালদার, শান্তনু দাস, সমরেশ বসু, ইন্দ্রাণী পাল প্রমুখ শিক্ষক শিক্ষিকার আন্তরিক প্রশিক্ষণে, শিক্ষায় থিয়েটারের ভুবনে গভীরভাবে প্রবেশ করে থিয়েটারকে বেশি করে ভালবেসে শ্রেয়া প্রায় ঠিক করেই নিয়েছে যে, অভিনয়কেই সে জীবনে পেশা হিসাবে গ্রহণ করবে। ইতিমধ্যেই সেই পথে তার হাঁটা শুরু হয়ে গেছে।

2 thoughts on “অভিনয়কেই জীবনে পেশা হিসাবে গ্রহণ করবে শ্রেয়া

  1. Ami dhonno amol alo potrika o bijoy babur ka6 j tara amr ei poth chola k sobar samne tule dhora6

Comments are closed.