প্রসঙ্গ ধারা ৩৭৭ | অর্ণব সাহা

৬ অক্টোবর  ১৮৬০, ঔপনিবেশিক ভারতে লর্ড মেকলের নেতৃত্বে আইন পরিষদে ৩৭৭ ধারা ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই আইনি ধারায় যেকোনও সমকামী আচরণকে ‘অপরাধ’-এর আওতায় নিয়ে আসা হয়। বলা হয়—‘Whoever voluntarily has carnal intercourse against the order of nature with any man, woman or animal, shall be punished with imprisonment for life…’। পায়ুকাম, পশুকাম—ইত্যাদি সবধরনের বিকল্প যৌনতা, লিঙ্গনির্বিশেষে এইবার শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হতে লাগল। উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারতে, জুলাই, ২০০৯-এর এক ঐতিহাসিক রায়ে দিল্লি হাইকোর্ট ৩৭৭ ধারাকে অপরাধের এক্তিয়ারমুক্ত করেন এবং এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেন এই বলে যে ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব কোনও ব্যক্তির একান্ত প্রাইভেট যৌনাচরণে হস্তক্ষেপ করবে না ভারতীয় আইনব্যবস্থা। গোটা ভারতের সমকামী, উভকামী, লিঙ্গান্তরকামী ও যাবতীয় বিকল্প যৌনতার মানুষজন হাফ ছেড়ে কিছুদিনের জন্য হলেও অন্তত বাঁচেন। কিন্তু এই নিশ্চিন্তি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সুপ্রিম কোর্টের ডিসেম্বর, ২০১৩-র রায়ে এই বয়ান উলটে যায়। ধারা ৩৭৭ নতুন করে লাগু হয় এবং বিষমকামী যৌনতার বাইরে যেকোনওধরনের যৌনতাই ফের ‘অপরাধের’ আওতায় চলে আসে। ‘সমকাম’ পুনরায় ক্রাইমের তালিকাভুক্ত হয়। ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্টে জাস্টিস এ পি শর্মার দেওয়া রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যারা আবেদন করেছিলেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন যোগগুরু বাবা রামদেব, যাঁর মতে সমকাম ভারতীয় সংস্কৃতি এবং প্রকৃতিবিরোধী এক পাশ্চাত্য অসুখ, যোগবলে যার আরোগ্য সম্ভব। ভারতীয় সমকামী সম্প্রদায় ভেঙে পড়লেন, কারণ, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে পরিবর্তন করে আর কোনও অ্যামেন্ডমেন্ট পার্লামেন্টে পাস হওয়া ছিল সত্যিই কষ্টকল্পনা। অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল ইন্দিরা জয়সিং যদিও বললেন, কোর্টের বিচারকদের কখনোই রায় দেবার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রেজুডিসকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু ততোদিনে যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে। ভারতীয় বিকল্প যৌনতার সম্প্রদায় চরম হতাশা এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছেন।

 

এরপর এল ২০১৪-র সাধারণ নির্বাচন। বিপুল ভোটে জিতে সরকার গড়ল নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। এলজিবিটি-ক্যুইয়ার সম্প্রদায়ের মানুষ এইবার সত্যিই আতঙ্কিত হয়ে উঠলেন—তবে কি এবার থেকে তাঁরা সামাজিক এবং রাজনৈতিক অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন? অথবা আফ্রিকার কোনও কোনও দেশ, যেরকম উগান্ডার মতোই ভারতেও কি সমকামীদের বিরুদ্ধে ‘উইচ-হান্টিং’ শুরু হবে? এই ভোটের আগে, কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী প্রকাশ্যে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের অধিকারের সপক্ষে বার্তা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, যদি কংগ্রেস ক্ষমতায় ফেরে, এই রায় তাঁরা আইনি পদ্ধতিতে বদলে দেবেন। প্রায় একই সময়ে আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল আলাদাভাবে বিভিন্ন ‘ক্যুইয়ার’ গোষ্ঠীর সঙ্গে মিটিং করেন এবং বলেন, তাঁরা আপ্রাণ লড়াই করবেন এই বিকল্প যৌনতার মানুষগুলিকে ন্যায্য সম্মান আর প্রাপ্য অধিকার দেবার জন্য। যেকারণে ২০১৪ লোকসভা এবং দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে গোটা ক্যুইয়ার সম্প্রদায় ঢেলে কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টিকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু বিজেপির মতো অতি-দক্ষিণপন্থী পার্টি শুরু থেকেই বিষমকামী যৌনতার বাইরে সমকাম বা অন্য যেকোনও ধরনের যৌন আচরণ-অভ্যাস সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট আপত্তি জানিয়ে এসেছিল। সুতরাং এটা বোঝাই গেল সুপ্রিম কোর্টের এই অমানবিক রায়ের বিরুদ্ধে তারা কোনও অ্যামেন্ডমেন্ট আনবে না। এই হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের কাছে কোনওরকম প্রত্যাশাই সমকামীরা করেননি। বিজেপি সরাসরি সমকামকে পাশ্চাত্য থেকে আসা বিপজ্জনক প্রবণতা বলে মনে করে। তাদের মতে এটি সমাজের মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্ত মানুষের মধ্যেই প্রচলিত। তাদের মতে, মধ্যবিত্ত সহ দেশের ব্যাপক অংশের মানুষের মধ্যে এর কোনও অস্তিত্ব নেই। ভারতীয় মধ্যবিত্ত মূলত বিষমকামী দাম্পত্য, বিবাহ, সন্তান উৎপাদন, পরিবার ইত্যাদির কঠোর চৌহদ্দিতেই যৌনতাকে আটকে রাখেন এবং সেটাই না কি তাঁরা সঠিকি বলে মনে করেন। এদের রক্ষা করা এবং এদের মানসিক গঠনকে সমর্থন জোগানোর জন্যই   আইপিসি ৩৭৭ ধারার প্রয়োজন রয়েছে। বিজেপি একটি মেজরিটারিয়ান পার্টি। কোনও ধরনের সংখ্যালঘু অংশের জন্যই তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। সংখ্যালঘুদের জন্য তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিতান্ত মায়োপিক। মুসলিম সংখ্যালঘুরা যেরকম তাদের কাছে ধর্মীয় শত্রু, সমকামীরাও তাদের চোখে যৌন সংখ্যালঘু অর্থাৎ এক অর্থে ‘অস্তিত্বহীন’। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ডিসেম্বর ২০১৩-তে ৩৭৭ ধারা পুনর্বহাল করার সময় সুপ্রিম কোর্ট অব্দি ‘মাইনরিটি’ এই শব্দটি ব্যবহার করেন। তাঁরা বলেন দেড়শো বছরের বেশি সময়ব্যাপী দেশে যে আইন বলবৎ রয়েছে, একটি ‘মিনিসকিউল মাইনরিটি’ অংশের জন্য তা পরিবর্তন করা যায় না। অর্থাৎ ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ‘এলজিবিটিকিউ’ সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত বড়ো অশনি সঙ্কেত ডেকে এনেছিল। সুপ্রিম কোর্টের ভার্ডিক্টের বিরুদ্ধে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের সামনে যে পিটিশন দাখিল করে ভারতীয় সমকামী গ্রুপগুলো, সেই পিটিশন ব্যর্থ হয়। আর এইবার, বিজেপির বিপুল জয় তাদের সমস্ত আশাভরসা শেষ করে দিল।

 

২০১৪-র ডিসেম্বর নাগাদ গোটা দেশের এলজিবিটিকিউ গ্রুপগুলো দিল্লিতে ওপেন র‍্যালি করে ধারা ৩৭৭-কে পুনর্বহাল রাখার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। ভারতের বিখ্যাত কৃতী সমকামী মানুষজন যেমন, ফিল্মমেকার শ্রীধর রঙ্গায়ন এবং অ্যাক্টিভিস্ট লক্ষ্মীনারায়ণ ত্রিপাঠী বোম্বে থেকে উড়ে আসেন এই জমায়েতে যোগ দেবার জন্য। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের  চেয়ারম্যান এবং প্রাক্তন চিফ জাস্টিস কে জি বালাকৃষ্ণান এই সমাবেশে বক্তব্য পেশ করেন। তিনি সোচ্চার কণ্ঠে বলেন—“এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের প্রয়োজন সুরক্ষা, অপরাধীকরণ নয়”। একই সময়ে সমকামী চলচ্চিত্র ফেস্টিভ্যাল হয় দিল্লিতে, নাম—‘ভিসিবল এভিডেন্স’। একটি ওয়ার্কশপেরও আয়োজন করা হয়, ‘এলজিবিটিকিউ ডকুমেন্টারি ইন ইন্ডিয়া আফটার ৩৭৭ : হোয়্যার আর উই কামিং ফ্রম, হোয়্যার আর উই গোয়িং’। ‘স্পেস’ নামের একটি এনজিও (পুরো নাম—সোসাইটি ফর পিপলস অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট) পরে একটি ভারতব্যাপী সমীক্ষা চালান এই রায়ের প্রভাব সমকামীদের জীবনে কী হতে চলেছে সেই নিয়ে। এঁদের গবেষণা ও ক্ষেত্রসমীক্ষায় যা উঠে আসে তা রীতিমতো আতঙ্কজনক। তাঁরা জানতে পারেন রায়ের প্রথম তিনমাসের ভিতরে একজন সমকামী পুরুষ ও তিনজন ট্রান্সজেন্ডারকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে তাদের যৌন ওরিয়েন্টেশনের কারণে। অসংখ্য সমকামী স্বীকার করেছেন তাঁরা ঘরের ভিতরে এবং বাইরে হোমোফোবিক ভায়োলেন্সের শিকার হয়েছেন। তাঁরা পুলিশের কাছে যেতেও ভয় পেয়েছেন, তাঁদের মনে হয়েছে, পুলিশ অপরাধীদের বদলে তাঁদেরই গারদে পুরবে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁদের ‘অপরাধী’-তে পরিণত করেছে। কেউ কেউ এরকমও বলেছেন যে এই রায় বেরোনোর পর বাড়িওয়ালা তাঁদের সমকামী পরিচিতির দোহাই দিয়ে হাউজিং কমপ্লেক্স থেকে বেরও করে দিয়েছেন। এমনকী মেডিক্যাল শপে কন্ডোম কিনতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, এরকম অভিজ্ঞতাও রয়েছে কারও কারও। সমকামীদের মধ্যে যাদের এইডস রয়েছে, সেরকম কেউ কেউ আবার হাসপাতালে গিয়ে প্রতিষেধক ইনজেকশন নিতেও ভয় পেয়েছেন, কারণ, তাতে চিহ্নিত হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘স্পেস’-এর একটি আলোচনাসভায় ট্রান্সজেন্ডার রুদ্রাণী ছেত্রি জানান তাঁর ভয়াবহ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন পুলিশ তাঁকে ইংরেজি নতুন বছরের অনুষ্ঠানে যোগ দেবার অপরাধে হেনস্থা করেছিল। পুলিশ তাঁকে সেই রাতে যৌননিগ্রহ করার চেষ্টাও করে। ভারতের বিষমকামী মেইনস্ট্রিম সমাজ এইবার আদালতের রায়কে সঙ্গী করে গোটা এলজিবিটি সম্প্রদায়কেই হেনস্থা করতে উঠেপড়ে লাগে। খুশ মিশ্র নামের একজন সমকামী পুরুষ তাঁর জীবনের এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। সেক্স-চেঞ্জ অপারেশন করার জন্য টাকা জমাচ্ছিলেন খুশ। তাঁর বান্ধবী কোনও প্রয়োজনে তাঁর কাছ থেকে ওই টাকা ধার নেয়। অপারেশনের সময় এগিয়ে এলে খুশ তাঁর টাকা ফেরত চান। কিন্তু বান্ধবী টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে। মেয়েটি চায়নি তিনি সেক্স চেঞ্জ করুন। কারণ সেক্স-চেঞ্জ করে ফেললে খুশ আর তার ‘বয়ফ্রেন্ড’ স্ট্যাটাস ধরে রাখতে পারবেন না, যা ওই মেয়েটির কাছে সমস্যার হবে। খুশ ওই মেয়েটির বাবার কাছে অভিযোগ জানান। কিন্তু মেয়েটির বাবা নিজের মেয়েকে টাকা ফেরত দেবার কথা তো বললেনই না। উলটে পুলিশের কাছে খুশের নামে অভিযোগ দায়ের করলেন। পুলিশ বাবার বয়ানের উপর  ভিত্তি করে খুশকে গ্রেপ্তার করল। পুলিশ কাস্টডিতে তাঁকে নির্দয়ভাবে প্রহার করল এই অভিযোগে যে খুশ একজন সমকামী হয়ে ওই মেয়েটির জীবন নষ্ট করতে চেয়েছেন। পুলিশের বয়ানে মেয়েটিই ভিক্টিম হয়ে দাঁড়াল। খুশ মিশ্র সার্বিকভাবেই সমস্তকিছু হারালেন। টাকা, বান্ধবী, নিজের স্বাধীনতা এমনকী সেক্স-চেঞ্জ অপারেশনের টাকা—সবকিছুই। সুপ্রিম কোর্টের ডিসেম্বর ভার্ডিক্ট এভাবেই এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়কে চূড়ান্ত অরক্ষিত অবস্থায় এনে দাঁড় করাল।

 

ন্যান্সি নিকোলের তোলা ৯২ মিনিটের ডকু-ফিল্ম ‘নো ইজি ওয়াক টু ফ্রিডম’ ৩৭৭ ধারার পুনর্প্রবর্তনের পরবর্তী এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সমস্যাগুলো নিয়ে বিস্তারিত কাজ করেছে। এটি শুরু হয়েছে ৩৭৭ ধারার বিরুদ্ধে ‘নাজ ফাউন্ডেশন’-এর পিটিশন থেকে। অঞ্জলি গোপালন, আনন্দ গ্রোভার, গৌতম ভাণের নেতৃত্বে আইনজীবীদের একটি সিন্ডিকেট এই পিটিশন জমা দিয়েছিল এবং ভারত সরকারের কাছে আবেদন রেখেছিল ৩৭৭ ধারা সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য। কিন্তু বিজেপি সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রক এবং স্বরাষ্ট্রদপ্তর সরাসরি জানায় সমকাম জিনিসটাই ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী। এই ডকু-ফিল্মে প্রখ্যাত কুইয়ার ইতিহাসবিদ্‌ সেলিম কিদোয়াইয়ের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে যাতে কিদোয়াই সবিস্তারে জানিয়েছেন ভারতীয় সংস্কৃতিতে সুদীর্ঘকালব্যাপী সমপ্রেম এবং সমপ্রেমের দৃঢ় অস্তিত্বের কথা। কিদোয়াইয়ের মতে সমকামের বিরুদ্ধে এই অভিযান আসলে উত্তর-ঔপনিবেশিক ভিক্টোরীয় নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠা। চতুর্থ শতকে চান্ডেল রাজবংশের সমকালীন খাজুরাহোর মূর্তিগুলির প্রসঙ্গ টেনে এনে কিদোয়াই দেখিয়েছেন প্রাচীন ভারতে সমকামী এবং বিষমকামী যৌথ-যৌনাচারের দীর্ঘ ঐতিহ্য চালু ছিল। এই ছবিতে জাস্টিস এপি শাহের সাক্ষাৎকারও রয়েছে যিনি দিল্লি হাইকোর্টে ২০০৯-এর ৩৭৭ ধারা বিলোপের রায় দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন ‘সাংবিধানিক নৈতিকতা’-র নামে সমকামীদের যৌন-অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া আসলে দেশের একটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মৌলিক জীবনাধিকার ছিনিয়ে নেওয়া, যে অধিকার ভারতীয় সংবিধানই তাদের দিয়েছে। ২০০৯-এ দিল্লি হাইকোর্টের রায় ভারতীয় সমকামীদের জীবনে যে মুক্তির হাওয়া এনেছিল, ২০১৩-র সুপ্রিম কোর্টের রায় কীভাবে তার সঙ্কোচন ঘটাল তারই ক্রমিক ব্যাখ্যা দেয় এই ছবি। এখানে মুম্বাইয়ের ‘হামসফর ট্রাস্টের’ অশোক রাও কবি, ‘কুইয়ার ইঙ্ক’-এর শোভনা কুমার, ব্যাঙ্গালোর ‘সঙ্গম’-এর মনোহর, ‘বিকজ আই হ্যাভ আ ভয়েস’-এর লেখক অরবিন্দ নারায়ণের ইন্টারভিউ দেখানো হয়েছে।

 

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দশ মাস পরে বলিউডের স্টার অভিনেতা আমির খান তাঁর ‘সত্যমেব জয়তে’ টিভি-শোয়ে সমকামীদের নিয়ে একটি এপিসোড সম্প্রচার করেন। দুই গে এবং ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট, দীপক কাশ্যপ এবং গজল  ঢালিওয়াল তাতে অংশ নেন। অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গেই এই এপিসোডটি বানানো হয়েছিল যেখানে মনোবিদ অঞ্জলি ছাবরিয়া আমির খানকে প্রশ্ন করেন বলিউডের একজন জনপ্রিয় বিষমকামী অভিনেতা হিসেবে হিসেবে আমির কোনও পুরুষের সঙ্গে যৌনসম্পর্কে যেতে পারবেন কি না!  আতঙ্কিত আমির খান এই প্রশ্নে দৃশ্যতই সঙ্কুচিত হয়ে ওঠেন, তাঁর এই আচরণ মেইনস্ট্রিম ভারতীয়  সমাজের অভ্যন্তরে লুকোনো ‘হোমোফোবিয়া’-কেই প্রকাশ করে। তা সত্ত্বেও আমির খান সাধুবাদযোগ্য, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে প্রায় অস্বীকার করেই তিনি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় টেলিভিশন-অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছেন। আমির এই অনুষ্ঠানে সমকামীদের বাবা-মা সহ পরিবারের  অন্যান্য লোকজনকেও এনে হাজির করেছিলেন, যারা নিজেদের সন্তানদের প্রকাশ্য সমর্থন জানান টিভির পর্দায়। ওই অনুষ্ঠানেই আমির খান দুজন বিখ্যাত সমকামিতার পক্ষ-নেওয়া অ্যাক্টিভিস্ট গৌতম ভাণ এবং অঞ্জলি গোপালনকে এনেছিলেন যাঁরা যেকোনও মূল্যে ৩৭৭-এর মতো একটি অমানবিক আইন অবলোপের পক্ষে সওয়াল করেন। ‘সত্যমেব জয়তে’-র পর আরেকটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান আনেন আমির, ‘মুমকিন হ্যায়’, সেখানে ৩৭৭ ধারা নিয়ে দর্শকদের মতামত আহ্বান করা হয়েছিল। মোট ১৬ হাজার টুইট জমা পড়ে, ৩৭৭ ধারাকে অবলুপ্ত করে দেবার আবেদন জানিয়ে। এরই মধ্যে এপ্রিল, ২০১৪-য়, সুপ্রিম কোর্ট ট্রান্সজেন্ডারদের সমর্থনে একটি রায় দেন, যাতে তাদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু এই রায় ডিসেম্বর, ২০১৩-র রায়কে খণ্ডিত করে। কারণ, ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে প্রায় কেউই বিষমকামী নয়। একজন ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ নিজেকে নারী মনে করেন, তিনি পুরুষের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট হন। সুপ্রিম কোর্ট যখন ট্রান্সজেন্ডারকে অন্যান্য সমস্ত মানবিক অধিকার পাবার যোগ্য হিসেবে ঘোষণা করছেন, তখন কীভাবে সমকামীদের যৌন অধিকারের বিরুদ্ধে তাঁরাই ফের দাঁড়ান। বিশেষত এই রায়ের পর সরকারি চাকরিতে ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সংরক্ষণ স্বীকৃত হয়। অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট নিজেরাই নিজেদের প্রাক্তন রায়কে কন্ট্রাডিক্ট করলেন, তাঁরা ট্রান্সজেন্ডারদের ৩৭৭ ধারার আওতা থেকে মুক্তি দিলেন। কিন্তু এই রায়ের নিহিত দ্বৈধ হল, কোনও ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ কোনও পুং-সমকামীর সঙ্গে যৌনাচারে লিপ্ত হলে এই নতুন আইনের বলে ট্রান্সজেন্ডারটি ছাড় পাবে, অথচ পুং-সমকামীটি ছাড় পাবে না।  অর্থাৎ আইনের আওতা থেকে বাঁচতে হলে ট্রান্সজেন্ডারটিকে আজীবন ব্রহ্মচর্য পালন করতে হবে। এ থেকেই বোঝা যায় এই বিশেষ ইস্যু নিয়ে মত দেবার সময় তাঁরা ‘ট্রান্সজেন্ডার’ কাকে বলে সেই বিষয়ে আদৌ কোনও স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করে উঠতে পারেননি। কারণ, ‘ট্রান্সজেন্ডার’ কথাটির সঙ্গে ‘গে’, ‘লেসবিয়ান’, ‘বাইসেক্সুয়াল’ ইত্যাদি যাবতীয় পরিচিতি সত্তা জড়িয়ে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রাজু রামচন্দ্রন এই বিশেষ দিকটির উপর আলোকপাত করে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ লেখেন ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-য় (১৮ এপ্রিল, ২০১৪)।

সুপ্রিম কোর্টের এই জাজমেন্ট আরও একটি দিক থেকে ভয়ানক ত্রুটিপূর্ণ। একজন ব্যক্তি আদৌ ট্রান্সজেন্ডার কি না তা কীভাবে প্রমাণ হবে? ক্যাসট্রেশন একটি প্রমাণ হতে পারে। কিন্তু গোটা ভারতের হিজড়ে সম্প্রদায়ের মাত্র ৬০% এই অপারেশনটি করিয়েছেন।  একজন  মেয়েলি সমকামী পুরুষ, যিনি মনের দিক থেকে নারী, নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার দাবি করে এই আইনের সুবিধা অনায়াসেই ভোগ করতে পারেন। তাঁকে  কেবল ক্রস-ড্রেস, অলঙ্কার পরিধান, মেয়েলি শরীরী ভাষা আয়ত্ত করে নিতে হবে। আর, চাকরির সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই রায় এক ভয়ানক ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ খুলে দেবে। সবচেয়ে বড়ো কথা, ‘ট্রান্সজেন্ডার’ একটি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দিয়ে এর প্রমাণ অসম্ভব। শারীরবৃত্তীয় সমকামী আচরণ সহজেই প্রমাণ করা যায়, কিন্তু কে ট্রান্সজেন্ডার আর কে তা নয়, প্রমাণ করা খুবই কঠিন। ফলত, সমকামী এবং বিষমকামী পুরুষ—উভয়েই চাকরিক্ষেত্রে এই কোটার সুবিধা নিতে পারে।  এরপর কেন্দ্রীয় সরকার, তার অতি  প্রত্যাশিত পদক্ষেপটি নিল। তারা সুপ্রিম কোর্টের এই জাজমেন্টকে চ্যালেঞ্জ করে দাবি করল, ‘ট্রান্সজেন্ডার’  নামক নামক বর্গ থেকে ‘গে’, ‘লেসবিয়ান’, ‘বাইসেক্সুয়াল’ ইত্যাদি পরিচিতি সত্তাকে বিচ্ছিন্ন করা হোক। এপ্রিল, ২০১৪-র জাজমেন্ট যাঁরা দিয়েছিলেন, বলাই বাহুল্য, তাঁরা বেশ কিছুটা মুক্ত ও প্রগতিশীল মানসিকতার অধিকারী ছিলেন। কিন্তু এইবার ‘এলজিবিটি’-র ‘এল’, ‘জি’, ‘বি’-কে যৌন অভিমুখ এবং কেবল ‘টি’ অর্থাৎ ‘ট্রান্সজেন্ডার’-কে লিঙ্গ অভিমুখ হিসেবে স্বীকৃতি দেবার প্রক্রিয়া বলবৎ হল। ‘ট্রান্সজেন্ডার’ নামক ‘আমব্রেলা টার্ম’ থেকে ভিন্ন যৌন ওরিয়েন্টেশনের মানুষদের আলাদা করে সেই পুরোনো ৩৭৭ ধারার পুনরাবৃত্তিই স্বীকৃতি পেল। পূর্ববর্তী ২০১৪-র এপ্রিলের জাজমেন্টে ট্রান্সজেন্ডারদের ‘ওবিসি’-ভুক্ত করার কথা বলা হলেও এর ফলে আইনি জটিলতা গোটা বিষয়ের উপর জল ঢেলে দিল।

 

বিজেপি হল সেই একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা ২০১৩-র ‘৩৭৭-বিরোধী’ সুপ্রিম কোর্টের রায়কে খোলাখুলি সমর্থন করেছিল। ওই রায়দানের সময়েও তারা কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতায় আসেনি। ক্ষমতায় আসার পরে মিডিয়ার একাংশ, মানবাধিকার সংস্থা সহ বহু অংশ  থেকে বিজেপি সরকারের উপর চাপ আসে, ৩৭৭ ধারার উপর অ্যামেন্ডমেন্ট আনতে। বিজেপি সরকার বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি সেই কথায়। বিজেপির মূল ভোটব্যাঙ্ক যে দক্ষিণপন্থী, হিন্দু পৌরুষের ধারক-বাহক অংশ, তাদের সমর্থন খোয়ানোর মতো ভুল করেনি বিজেপি। সেরকমই একজন উগ্র দক্ষিণপন্থী ভদ্রলোক, যিনি একজন অ্যাডভোকেট, দিল্লি মেট্রোপলিটান কোর্টে মামলা দায়ের করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, ৩৭৭ ধারার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট যখন সমস্ত ‘অ-স্বাভাবিক’ যৌনকাজের বিরুদ্ধেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, তখন অবিলম্বে ‘সেক্স টয়েজ’ কেনাবেচা বন্ধ করে দিক কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ ‘সেক্স টয়েজ’ সর্বার্থেই  অ-স্বাভাবিক যৌনতায় ইন্ধন জোগায়। আদালত এই পিটিশনের দায়িত্ব নিজেরা না নিয়ে পুরো বল পুলিশের কোর্টে ঠেলে দেয়। লক্ষণীয়, মেট্রোপলিটান কোর্ট এই পিটিশনকে লঘু করে দেখেনি। বোঝাই যাচ্ছিল, ভবিষ্যতে এরকম আরও পিটিশন জমা পড়বে এবং কুইয়ার আর্ট, কুইয়ার সাহিত্য, কুইয়ার সিনেমাও এধরনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে। যদিও এই উদ্ভট পিটিশন নিয়েও হাজারো প্রশ্ন তোলা হয়। কীভাবে জানা গেল ‘সেক্স টয়েজ’ ‘অ-স্বাভাবিক’ যৌনতাকে প্রশ্রয় দেয়? তা বড়োজোর সেক্সুয়াল স্টিমুলেশনের কাজ করে বলা যেতে পারে। সেই একই যুক্তিতে তো পেঁয়াজ অথবা লবঙ্গের বিক্রিও বন্ধ হওয়া উচিত, কারণ, প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এই সব্জিগুলোও যৌনতার উদ্দীপনে সাহায্য করে। মাসখানেকের ভিতরেই মিডিয়ায় ব্যক্তির নিজস্ব গোপনীয়তা সংক্রান্ত আইনের যৌক্তিকতা নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়। মুম্বাইতে পুলিশ একটি ফ্ল্যাটে হানা দেয় যেখানে কয়েকজন অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে পার্টি করছিল। দক্ষিণপন্থী মতামত উঠে আসে, ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব ‘স্পেস’ বলে কিছু থাকা উচিত নয়, কারণ, তা ব্যক্তির ‘নৈরাজ্যবাদী’ হয়ে ওঠাকে ইন্ধন জোগায়। এই দক্ষিণপন্থী সামাজিক অংশটি, বলাই বাহুল্য এরা বিজেপির সমর্থক, প্রচার চালাতে থাকে, প্রাক্‌-বিবাহ যৌনতা, বিবাহ-বহির্ভূত যৌনতা, যৌথ যৌনতা, এমনকী যদি সেগুলো ব্যক্তির নিজস্ব পরিসরেও ঘটে, তবুও তা সামাজিক থাকবন্দের ভিত্তি নড়িয়ে দেবার পক্ষে যথেষ্ট। এই দক্ষিণপন্থী নীতিপুলিশদের মতে ‘ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব স্পেস’ আসলে ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার একটি উপাদান মাত্র। তাই ‘প্রাইভেসি’ জিনিসটাকেই ধ্বংস করা উচিত। এটাই হল বিজেপির সামাজিক মতামতের জনভিত্তি, যা আজও ভারতের মতো পিছিয়ে থাকা দেশের একটা বিরাট সংখ্যক মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে এবং দক্ষিণপন্থী মানসিকতার চাষবাস করেই চলেছে। এক বিরাটসংখ্যক এলজিবিটিকিউ অ্যাক্টিভিস্টের মতে ভারতের তথাকথিত ‘লিব্যারাল’-রাও এই রক্ষণশীল  মানসিকতার সম্পূর্ণ বাইরে নয়। তারাও একটা স্তরের পরে ব্যক্তির নিজস্ব ‘স্বাধীন ইচ্ছা’-র উপর নিষেধাজ্ঞার বেড়িই পরাতে চায়।

‘অ্যানার্কিস্ট’ বা ‘নৈরাজ্যবাদী’ কথাটি ব্যবহার করেছিলেন ‘আম আদমি পার্টি’র অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ফেব্রুয়ারি, ২০১৫-তে তাঁরা প্রথমবার দিল্লির ক্ষমতায় আসেন। প্রচলিত রাজনৈতিক ইডিয়ম অনুযায়ী কেজরিওয়াল এবং তাঁর অনুগামীরা ভারতীয় রাজনীতিতে খানিকটা নৈরাজ্যবাদীই ছিলেন। এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায় দুহাত ভরে সমর্থন করেছিল আম আদমি পার্টিকে। যোগেন্দ্র যাদব, প্রশান্ত ভূষণ, কেজরিওয়াল সহ ‘আপ’-এর একটা বিরাট আইনজীবী নেতৃত্ব প্রকাশ্যেই ১৮৬০-এর এই কালাকানুন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে  আসছিলেন বহুদিন ধরেই। তাঁরা সমস্তরকম সংখ্যালঘুর হয়ে কথা বলতে চাইছিলেন। কিন্তু তাতে সাধারণ এলজিবিটিকিউ সংখ্যালঘু মানুষদের দৈনন্দিন জীবনে ঘরে-বাইরে সম্মুখীন হওয়া অজস্র সমস্যা এতোটুকুও হাল্কা হয়নি। এমনকী যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর দেশের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ২০১৩-র ভার্ডিক্টের বিরোধিতা করেছিলেন, তিনি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মিলিত হতে যখন ভারতে এলেন, সমকামীদের অধিকার নিয়ে একটাও কথা বললেন না। বিজেপি অবশ্য সমকামিতার অধিকারকে সংখ্যালঘুর অধিকার হিসেবে স্বীকার করে না। যদিও আমেরিকার অধিকাংশ প্রদেশ সমকামিতাকে এখন  আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে। মার্কিন বিদেশনীতির বরাবরের নিয়ম হল, নিজের দেশে তাদের কাছে যা মানবাধিকার, পৃথিবীর অন্যান্য তুলনায় গরিব দেশে তাকে তারা মানবাধিকার হিসেবে স্বীকার করে না। কেবল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দোষ দিয়েও অবশ্য কোনও লাভ নেই। মার্কিনপ্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে এলজিবিটিকিউ অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপগুলো অত্যন্ত সক্রিয় হলেও তারাও কিন্তু ভারতীয় সমকামী বা ভিন্নকামী যৌনতার মানুষদের সমর্থনে সেরকমভাবে এগিয়ে আসেনি। ওদের সবচেয়ে বড়ো সংগঠন ‘সালগা’ (সাউথ এশিয়ান লেসবিয়ান অ্যান্ড গে অ্যাসোসিয়েশন) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ৩৭৭ ধারা পুনর্বহালের প্রতিবাদে একটি স্মারকলিপি পেশ করা ছাড়া তেমন কোনও উদ্যোগই নেয়নি। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট যখন সমকামী যৌনতা ও সমকামী বিবাহকে বৈধ ঘোষণা করল, তখন, ভারতীয় মিডিয়ার একটি প্রগতিশীল অংশও আমেরিকার উদাহরণ সামনে এনে ভারতে ৩৭৭ ধারা বিলোপের দাবি তুলেছিল। কিন্তু অতিদক্ষিণপন্থী বিজেপি সরকার সে আবেদনে কর্ণপাত করেনি। বিজেপি সরকার বরং ব্যস্ত ছিল বাবা রামদেব জাতীয় গুরুদের কথা শুনতে, যাঁরা বলেন ‘সমকাম’ একটা রোগ এবং চিকিৎসার সাহায্যে একে সারিয়ে তোলা যায়। বিজেপি সরকার মার্কিন মডেল অনুকরণ করে কেবল তাদের দক্ষিণপন্থী নীতি অনুসরণের ক্ষেত্রে, অন্য কোথাও নয়। বিজেপি সরকারের পরিষ্কার বক্তব্য হল, ভারতে যারা সমকামিতার পক্ষে সওয়াল করছে, তারা মূলত উচ্চবিত্ত মুষ্টিমেয় অংশ। দেশের বৃহত্তর মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত অংশ মুখ্যত বিষমকামী, যেকারণে দেশে এতো বিবাহ অনুষ্ঠান আর এতো বেশি জন্মহার। মুশকিল হল, সরকার স্বীকার না করলেও এটাই সত্যি যে সাধারণ লোকসমাজেও যারা বিবাহ করছে, তাদের ভিতরেও একাংশন কিন্তু ‘গে’ বা ‘লেসবিয়ান’ প্রবণতাযুক্ত, নিতান্ত বাধ্য হয়েই তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসছে, আইনি অথবা সামাজিক চাপের ভয়ে।

 

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিজেপি সরকার ধাপে ধাপে তাদের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে। জুন মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনকে তারা ‘আন্তর্জাতিক যোগা দিবস’ ঘোষণা করেছে। প্রখ্যাত দুই স্কলার রুথ বনিতা এবং দেবদত্ত পটনায়েকের মতে অবশ্য সমকামকে অনায়াসেই সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতি হিসেবে দাগিয়ে দেওয়াই যায়, কারণ, ‘কামসূত্র’-জাতীয় গ্রন্থে বহুযুগ আগে থেকেই ‘তৃতীয়া প্রকৃতি’-র কথা বলা হয়েছে। কোনও কোনও এলজিবিটিউকিউ অ্যাক্টিভিস্টের মতে, ৩৭৭-সংখ্যাটি মনে পড়িয়ে দেয় আর একটি সংখ্যার কথা—১৭৫, যেটি জার্মানির নাৎসি-জমানায় ব্যবহৃত হত ক্রিমিন্যাল কোড হিসেবে। ১৮৭১ থেকে ১৯৯৪ অব্দি এই কোডটি সমকামকে এক অপরাধের আওতায় ধরে রেখেছিল। নাৎসি জমানায় এই ক্রিমিন্যাল কোড কেবল সমকামের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়নি। পায়ুকাম, ওয়াশরুমে গণ-হস্তমৈথুন প্রভৃতিকেও এর এক্তিয়ারে এনেছিল। নাৎসি-জমানায় প্রতি বছর প্রায় ১৫,০০০ লোককে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হত সমকামিতার ভপরাধে। তাদের কঠোর শ্রমের দণ্ড দেওয়া হত। অতিরিক্ত পরিশ্রমে তাদের অধিকাংশেরই মৃত্যু হত। ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩-এ নাৎসি পার্টি ‘হোমোফাইলস’-দের বিরুদ্ধে ‘পার্জ’  শুরু করে। এই টার্মটি গে, লেসবিয়ান, বাইসেক্সুয়ালদের সম্পর্কে ব্যবহৃত হত। আন্ডারগ্রাউন্ড ‘গে’-গ্রুপগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। যাবতীয় হোমোসেক্সুয়াল বইপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নাৎসি পার্টির ভিতর যারা হোমোসেক্সুয়াল ছিল, তাদের হত্যা করা হয়। ‘হির্শফিল্ড ইন্সটিটিউট অফ সেক্স রিসার্চ’-এর প্রতিষ্ঠাতা কুর্ট হিলারকে গ্রেপ্তার করে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে চালান করে দেওয়া হয়। গেস্টাপোরা একটা আলাদা উইং খুলেছিল, ‘হোমোফাইল’-দের খুঁজে বের করা এবং তাদের ক্যাম্পে বন্দী করার জন্য। কতিপয় ভাগ্যবান সমকামী লোকজন সেদিন জার্মানি থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। যারা পালাতে পারেনি, ইহুদিদের মতোই তারাও ‘হলোকস্ট ভিক্টিম’ হিসেবে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়।

 

নাৎসিরা সমকামীদের ‘সাবভার্সিভ’ হিসেবে দেখেছিল, যারা তাদের ‘জার্মানরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি’—এই ন্যারেটিভে আঘাত হানে। গুপ্ত পুলিশের প্রধান হেইনরিখ হিমলার ‘ম্যাসকুলিনিটি’ এবং পুরুষদের মধ্যে ‘বিশ্বভ্রাতৃত্বের’ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর মতে, হোমোসেক্সুয়ালিটি এই পৌরুষের আদর্শের বিরোধিতা করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি চার মিলিয়ন পুরুষকে হারিয়েছে, অতএব, জার্মান সমাজে পুং-নারীর সমতা রক্ষার জন্য এইমুহূর্তে জার্মান পুরুষদের উচিত হোমোসেক্সুয়াল প্র্যাক্টিস বন্ধ করে বিবাহ করা এবং পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়া। সেটাই জার্মান জাতির দাবি—এমনটাই মনে করতেন তিনি। তাঁর ধারণা ছিল হোমোসেক্সুয়ালরা নারীর সঙ্গে যৌনমিলনের সক্ষমতা হারায়। অতএব জনমানসে তাদের ঘৃণিত হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের লেবার ক্যাম্পে পাঠিয়ে জাতীয় দায়িত্বই পালন করা হয়েছে। এতেই জার্মান জাতির ‘আর্যত্ব’ রক্ষিত হবে। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ অব্দি বারো বছরের নাৎসি শাসনে মোট এক লক্ষ হোমোসেক্সুয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের মধ্যে পনেরো হাজার লোককে  বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছিল। এদের মধ্যে ষাট শতাংশ হোমোসেক্সুয়ালের মৃত্যু হয়। এদের উপর নৃশংস শারীরিক ও যৌননির্যাতন চালানো হত। যারা মারা যায়নি, নাৎসি ডাক্তাররা তাদের গিনিপিগ হিসেবে পরীক্ষানিরীক্ষা করে খুঁজতে চাইত, ‘গে’ জিনের উৎস ও প্রকৃতি। এই লোকগুলোর গলায় ‘পিঙ্ক ট্র্যাঙ্গল’ পরিয়ে রাখা হত, নাৎসি পুলিশ যাতে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে তাদের চাঁদমারি হিসেবে বন্দুকের টিপ প্র্যাক্টিস করতে পারে। এইভাবে গুলিতে মৃত মানুষের সংখ্যা ১৯৩৯-এ ছিল ১৭০, সেটাই ১৯৪৫-এ গিয়ে পৌঁছয় ৬০০-তে। এদের বেশিরভাগটাই ছিল জার্মান, ফ্রেঞ্চ, রাশিয়ান ও পোলিশ। ১৯৬৯-এ আমেরিকার নিউ ইয়র্কে হোমোসেক্সুয়ালদের বিরুদ্ধে স্টোনওয়েল দাঙ্গার পর থেকে ওই ‘পিঙ্ক ট্র্যাঙ্গল’-ই হয়ে ওঠে সমকামীদের গৌরবচিহ্ন। এটাই এখন ‘গে প্রাইড’-এর নিদর্শন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সমকামিতার বিরুদ্ধে এই নৃশংস অভিযান বন্ধ হয়। ১৯৬৮-এ আইন করে কেবল আঠারো বছরের নীচের বালকদের সঙ্গে পায়ুকাম অপরাধ বলে চিহ্নিত হয়। পূর্ব জার্মানি আগেই এই সমকাম-বিরোধী আইন প্রত্যাহার করে। ১৯৭৩ অব্দি পশ্চিম জার্মানিতে নাৎসি আইন বলবৎ ছিল। ১৯৮৯-এ দুই জার্মানির মিলনের পরে ১৯৯৪ সালে গোটা আইনটাই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ২০০২ সালে জার্মান সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে গে কমিউনিটির কাছে নাৎসি বর্বরতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নেয়। কোলোন শহরে নাৎসি অত্যাচারে মৃত ‘গে’-দের স্মরণে একটি বেদি প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

নভেম্বর, ২০১৫-তে ‘জয়পুর লিটারারি ফেস্টিভ্যাল’-এ বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি  মন্তব্য করেন, সুপ্রিম কোর্টের উচিত ৩৭৭ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া। কারণ, এই আইন অসংখ্য ভারতীয় নাগরিকের বেঁচে থাকার স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করছে। কিন্তু বিজেপি দলের চতুর্থ ক্ষমতাবান নেতা  হওয়া সত্ত্বেও জেটলির এই কথাকে বিজেপি দল হিসেবে কোনও সার্বিক গুরুত্ব দেয়নি। কারণ আরএসএস,  শিবসেনা, মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কেউই চায়নি  এই আইন তুলে নেওয়া হোক। এরপর পার্লামেন্টে কংগ্রেস সাংসদ শশি থারুর ৩৭৭ ধারার বিরুদ্ধে  দুটি প্রাইভেট মেম্বার বিল আনেন। দু’বারই তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। থারুর পান ২৪ টি ভোট, উল্টোদিকের বিজেপি সাংসদ পান ৭০ টি ভোট। থারুর দাবি করেন কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন এই অমানবিক আইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ সুনিশ্চিত করার মতো যথেষ্ট সময় পায়নি, কারণ ২০১৪-তে তারা ভোটে হেরে যায়। থারুর বলেন, একুশ শতকে পৌঁছে এরকম অমানবিক কোনও আইনি ধারা থাকা উচিত নয়। এবং এই ধারা দেশের নাগরিকদের সংবিধান-প্রদত্ত অধিকারের বিরোধী। তিনি এও বলেন, ২০১৩ সালে এই ধারা পুনর্বহাল হবার পর থেকে ভারতে ৫৭৮ জন ‘গে’-কে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এই আইনে। মার্চ, ২০১৬-তে থারুর ফের একবার পার্লামেন্টে এই বিল পেশ করেন এবং এবারও প্রত্যাখ্যাত হন। তাঁর পক্ষে ১৮ জন, বিপক্ষে ৫৮ জন সাংসদের ভোট পড়ে।

 

এর আগে, একটি টিভি শোয়ে অংশ নিয়ে, যেখানে বিপক্ষের বক্তা ছিলেন ‘নাজ ফাউন্ডেশন’-এর অঞ্জলি গোপালন এবং কলিন গঞ্জালভেস, বিজেপির এমপি সুব্রহ্মণ্য স্বামী মন্তব্য করেন, সমকাম জিনিসটাই ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী। এর আগে শশি থারুর ‘কামসূত্র’, খাজুরাহো, কোনার্ক, হাম্পির মন্দিরগাত্রে মিথুনমুদ্রার প্রসঙ্গ এনে এটাই বলতে চেয়েছিলেন, সমকাম আদৌ কোনও বিদেশি আমদানি নয়, ভারতীয় সংস্কৃতিরই অংশ। প্রাক্‌-ঔপনিবেশিক ভারতে সমকামের অপরাধিকরণের কোনও ইতিহাসও নেই। থারুরের মতে এটাই বিজেপির ফ্যালাসি। বিজেপি নিজেদের ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক-বাহক বলে মনে করলেও সমকামের প্রসঙ্গে তারা রীতিমতো অ-ভারতীয়। স্বামী দাবি করেন, ভারতীয়রা আদৌ চায় না সমকাম আইনি হোক। স্বামীর মতামত অনেকটা বাবা রামদেবের সমতুল্য, যিনি দাবি করেছিলেন, সমকাম থেকেই   পশুকামের বাসনা জাগে মানুষের মনে। স্বামী অথবা রামদেব কেউই পারস্পরিক সম্মতিতে সমকামী আচরণের বিষয়টিই বোঝার চেষ্টা করেননি। পশুকামে পশুর সম্মতি দানের কোনও সামর্থ্য নেই, কিন্তু সমকামে দুটি মানুষের তা রয়েছে। এঁদের দুজনের কেউই বোঝেননি, সমকাম ব্যাপারটা সমপ্রেমের সঙ্গে  জড়িত। কেবল রিরংসা নয়, এতে প্রেমেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। পূর্বোক্ত টিভি অনুষ্ঠানে যখন স্বামীকে থারুরের প্রাইভেট অ্যামেন্ডমেন্ট বিল নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, স্বামী খানিকটা প্রসঙ্গ-বহির্ভূতভাবেই শশি থারুরের প্রাক্তন স্ত্রীর মৃত্যু এবং থারুরের সমকাম-সমর্থনের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি প্রশ্ন করেন, থারুর সমকাম নিয়ে এতো আগ্রহী কেন? ইতিমধ্যে আরএসএস বিষয়টির মধ্যে ঢুকে পড়ে। তাদের নেতা রাকেশ সিন্‌হা  দাবি তোলেন, শশি থারুর সমকামকে আইনি করে দেবার সপক্ষে প্রাইভেট মেম্বার বিল পেশ করেছেন, কারণ, তিনি ইউরোপীয় মানসিকতায় বড়ো হওয়া একজন ব্যক্তি। রাকেশ সিন্‌হাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, বিজেপি নেতা অরুণ জেটলিও কি ইউরোপীয় মানসিকতার লোক, তিনিও তো আইন করে সমকামকে ছার দেবার পক্ষে, রাকেশ রীতিমতো আমতা আমতা করতে থাকেন। তাঁর আসলে বলার উপযোগী কিছু ছিলই না। সেলিম কিদোয়াই এবং রুথ বনিতা তাঁদের দীর্ঘ গবেষণায় দেখিয়েছেন, মধ্যযুগের প্রথমদিকে যেখানে  সমকাম-সংক্রান্ত উল্লেখ স্বল্প, পরের দিকে কিন্তু অজস্র উল্লেখ এবং প্রমাণ পাওয়া গেছে সাহিত্য ও অন্যান্য মাধ্যমে। অবশেষে রাকেশ সিন্‌হা চমকপ্রদ দাবি করেন। তিনি বলেন, যাঁরা সমকামকে আইনি বৈধতা দেবার  কথা বলছেন, তাঁরা আসলে শিশুকামী এবং পর্নোগ্রাফির চর্চা করেন। এই আইনি বাধা উঠে গেলে তাঁদের বিকৃত জীবনযাপনে সুবিধা হবে। এর কয়েকমাস পরে, আরেকজন আরএসএস-কর্তাব্যক্তি, দত্তাত্রেয় হোসাবেল দাবি করেন, সমকাম কোনও ক্রিমিন্যাল অফেন্স নয়, বরং এটি একধরনের অনৈতিক প্যাথলজিক্যাল সমস্যা। আজও বিভিন্ন সমকামী গ্রুপ তাদের শরীরী অধিকারের দাবিতে লড়ে যাচ্ছেন। আদালতের ভিতরে এবং বাইরে—উভয় জায়গাতেই। আজ, সময় এসেছে, অসংখ্য ছোটো-বড়ো গ্রুপ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর একত্র লড়াই এবং এই লড়াইকে এক রাজনৈতিক যুদ্ধে উত্তীর্ণ করা—তবেই হয়তো একুশ শতকের ভারতে সমকামীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবেন, যাঁরা গোটা ভারতীয় জনসংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যাদের আনুমানিক সংখ্যা দু-কোটি।

 

ঋণ :

ক্রিমিন্যাল লাভ? কুইয়ার থিয়োরি, কালচার অ্যান্ড পোলিটিক্স ইন ইন্ডিয়া/ আর রাজ রাও, সেজ পাবলিকেশন, ২০১৭

সেক্সুয়ালিটিজ, সম্পাদনা : নিবেদিতা মেনন, কালী ফর উইমেন, ২০০৭

 

One thought on “প্রসঙ্গ ধারা ৩৭৭ | অর্ণব সাহা

  1. অনবদ্য লেখা। যদিও যেকোনো লেখাতেই তোমার নিষ্ঠা এবং অধ্যাবসায় আমাদের মুগ্ধ করে।

Comments are closed.