নীলদিগন্ত
অমল আলো তে প্রিমিয়ার শো হয়ে গেল বরানগর ভূমিসুত থিয়েটার প্রযোজনায় দেখলাম বুলন্দ নাটকটি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিন হিসেবে উপহার স্বরূপ পেলাম। যা বহুদিন মনে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। গল্পটি এমন — আজকের মেয়ে রূপকথা, কলেজে পড়ে। প্রতিবাদি। ফেসবুকে সে সবসময় সরগরম লেখার জন্য। থিয়েটার ওয়ার্কার। অভিভাবক একমাত্র দাদা পত্রিকায় লেখালেখি করেন। চরম যুক্তিবাদী। অন্যায়ের কাছে মাথা নীচু করেননা। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের লোকেদের দাদার লেখা যেনো চোখের কাঁটা।
সেদিন রামনবমীর মিছিলে সশস্ত্র বাইক বাহিনী পথচারী এক বৃদ্ধকে আঘাত চলে গেছে। সাংবাদিকরা মিছিল কভারেজ করতেই ব্যস্ত। কারো নজর নেই আহত রক্তাক্ত মানুষটার প্রতি। রূপকথা দলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে লোকটাকে চিকিৎসা করায়। মিছিলের বিপক্ষে ফেসবুকে রূপকথা লিখে প্রতিবাদ করে। আর তারপরই শুরু হয় ফোনের পর ফোন, আর বাজে বাজে কমেন্ট। পরদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে একদল চরম উগ্র মৌলবাদী মানুষ তুলে নিয়ে যায়। নষ্ট করে রূপকথাকে। দাদাকে শাসিয়ে যায় লোকাল নেতা। ধর্ম নিয়ে কোনো কথা বলা বা লেখা যাবে না তার। ক্ষমতার নিবিড় আনন্দে সময় ও সরকার। লেখায় উঠে এসেছে মুসোলিনী হিটলারের কথা। চরম অবজ্ঞার কথা। যখন সারা দেশ জুড়ে কৃষক আন্দোলনের জোয়ার, হিন্দু উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়েছে। মাসের পর মাস ধর্ণা, কৃষকের পাশে সরকার নেই। সি এ এ আন্দোলন, এন আর সির ঝড় তীব্র। ওপার বাংলা এপার বাংলার মানুষের মুখে হাসি মিলিয়ে যাচ্ছে। কি হবে, কি করবে সরকার! তবে কি ভাষার ভিত্তিতে বিভাজন করবে জাতিকে? মুসলমানদের অস্তিত্ব বিপন্ন। দুলালবাবুরা বাড়ি বয়ে এসে তছনছ করছে বেছে বেছে প্রতিবাদীদের। হুঙ্কার আসে ব্ল্যাকসার্ট, গেস্টাপো। প্রতিরোধের মহান মিছিল এসে মিলিত হয় মঞ্চে, থিয়েটারের মঞ্চে, লেখায়, ছবিতে। সেই প্রতিবাদকে কোনো বর্ণ, কোনো জাত ঠেকাতে পারেনি কখনও, কোনোদিন। তাই মহান মানুষ যে পথে পতাকা নিয়ে হাটে, যে পথে নিজের গন্তব্যে পৌঁছতে চায় স্বাধীনতার মন্ত্র। নেতাজির ডাক তাই আজও বুকে বাজে, আজও বুলন্দ হতে চায় স্বপ্ন।
নাটকটির সুর যে মাত্রায় নির্দেশক স্বপ্নদীপ সেন বেঁধেছেন, যে ভাষায় কথা বলেছেন তা সচেতন সব মানুষেরই ভাষা। সব অন্ধকারেরই আলোর দিশা। পথনাটকের আঙিককে প্রসেনিয়ামে এনে আলো আবহ দিয়ে টানটান একটা সার্থক নাট্য তৈরি হয়েছে। প্রথম অভিনয় দেখে সকল দর্শকের মতো আমারও একই মতামত। সাধু সাধু। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বুলন্দের প্রতিটি অভিনেতার মুভমেন্ট খুব ভালো। মঞ্চসজ্জায়, প্রতিবাদী সব পোস্টার, কাট আউট দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে এ নাটকের টেনশনে বিপ্লবের গন্ধ আছে। সৈকত মান্নার সামগ্রিক আলোর অন্ধকার দিয়ে নাটকের মান বাড়িয়ে দিয়েছে।
পূর্ণেন্দু ধরের দাদা তেমন নজর না কারলেও
দেবযানী সিংহর রূপকথা অসাধারণ। প্রতিটি এক্সপ্রেশন ডায়লগ ধরা ছাড়া খুব ভালো। ইন্দ্রজিৎ দের দুলাল দেখে আশাহত হয়েছি।আরো অনেক ভালো হতে পারত। তবে কোরাসে যারা সঙ্গত দিয়েছেন তাদের মধ্যে সমাদৃতা পাল, কৌশিক ওঝা, সৌরভ ধর, অজয় প্রধান, সুরজিৎ দাস, পৃথা বিশ্বাস, অঙ্কিত বিশ্বাস, নম্রতা রায় এবং রোহিত শীল প্রশংসনীয়। সবশেষে নাট্যকার তাঁর লেখায় বলিষ্ঠ বক্তব্য পেশ করেছেন। ধন্যবাদ জানাই স্বপ্নদীপ সেনকে। আগামীতে এমন আরো নাট্য দেখতে পাবো প্রসেনিয়ামে এই আশা রাখছি।
নাটকটি সবাইকে আগামীতে দেখার অনুরোধ রইলো।