নীলদিগন্ত
গত ২৬শ জানুয়ারি দারুণ ভালো একটা দিন কাটলো। দুপুর থেকে রাত শুধু নাটক দেখা, নাটক নিয়ে আলোচনা, নাটক নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ, খাওয়া দাওয়া, পিকনিক, হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ। ফিরে পাওয়া গেল যেনো সেই নাটকের প্রতিযোগিতা মঞ্চ, গ্রুপ থিয়েটারের আসল চেহারা! “অশোকনগর নাট্যমুখ” এর নিজস্ব স্পেস “অমল আলো” তেই সবটা হলো।
এক দল, চার নাট্য, অন্তরদলীয় থিয়েটার যাপন করল এই দলেরই একঝাঁক তরুণ ছেলেমেয়ে। বাদল সরকারের সারা রাত্তির, সফোক্লেস অনুপ্রাণিত শিশিরকুমার দাশের ভাবানুবাদ থেকে অয়দিপস, ব্রাত্য বসুর মুখোমুখি বসিবার, শম্ভু মিত্র রচিত কালজয়ী নাট্য চাঁদ বণিকের পালা। এই চারটি নাটকের নাট্যাংশ নিয়ে অন্তর দলীয় কমপিটিশন। নিজেরাই নিজেদের নির্দেশক, নিজেরাই অভিনেতা, পোশাক মঞ্চ পরিকল্পক, আবহ নির্মাতা, রূপসজ্জাকার। এমন একটি দুর্লভ ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটালেন সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটির পরিকল্পক অশোকনগর নাট্যমুখ এর কর্ণধার অভি চক্রবর্তী। এমন একটি অনুষ্ঠানের সঠিকভাবে রূপ দেওয়ার জন্য দলেরই চারজন সিনিয়রকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল চারটি দলের মাথার উপরে মেন্টর করে। সঙ্গীতা চক্রবর্তী, অরূপ গোস্বামী, অদ্রীশ কুমার রায় এবং অসীম দাস। এই চারজনের তত্বাবধানে চারটি নাট্যাংশের চার অভিভাবক তাঁদের টিমকে সর্বত ভাবে সাহায্য করেছেন তা বোঝা গেল।
বিচারকের আসনে ছিলেন ভাবনা থিয়েটার পত্রিকার সম্পাদক অভিক ভট্টাচার্য, নাট্যব্যক্তিত্ব সুদীপ সিনহা ও অশোক মজুমদার।
এই প্রতিযোগিতার বাইরে রবীন্দ্রনাথ রইলেন সবার উপরে। ডাকঘর নাটকের নাট্যাংশ নির্মিত হয়েছে দলের একদম ছোটদের নিয়ে।যার নির্দেশনা ও দইওয়ালার ভূমিকায় অমর্ষি চক্রবর্তী। এবং মেন্টর অভি চক্রবর্তী। এক অদ্ভুত অদৃশ্য অসুখ এ পৃথিবী বহন করে চলেছে। কারো নিস্তার নেই। মহামারির মহাপ্রলয়ে রবীন্দ্রনাথ আমাদের একমাত্র ভরসা। ঘরবন্দী অসুস্থ অমলকে ডাক্তার ওষুধের সাথে একটি মুখের মাস্ক দিয়ে যান এবং বলেন মাস্ক সবসময় পড়ে থাকতে হবে এতে সবার ভালো হবে পৃথিবী ভালো থাকবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক। মোট তিনটি দৃশ্যে ও ৩৯৯টি সংলাপে সমগ্র নাটকটি সম্পূর্ণ হয়েছে। ডাকঘর রবীন্দ্রনাথের সাংকেতিক নাটকগুলির মধ্যে সম্ভবত সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় যা দেশে তো বটেই, বিদেশেও।এক সমীক্ষায় জানা গেছে ডাকঘর নাটকটি সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও অভিনীত হয়ে চলেছে।
চারটি টেক্সট চারটি নিয়ে পরিচালনা করেছেন যথাক্রমে ঝুমুর ঘোষ, সৌমেন্দু হালদার, অর্পিতা পাল এবং শ্রেয়া সরকার ।চারটি টেক্সটই ওদের বয়সের তুলনায় কঠিন ছিল। কিন্তু ওরা হাসিমুখে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করে কাজটা করেছেন। কেউ কম ভুল করেছে কেউ বা বেশি। কিন্তু একেবারে পেশাদার কায়দায় করতে পেরেছে। একদম শেষে ছিল চাঁদ বনিকের পালা। অমল আলোর বাইরের বসাট জায়গা বিদ্যাধরী জুড়ে মঞ্চ ভাবনা এবং সম্পূর্ণ বিদ্যুৎবিহীন আলো অর্থাৎ প্রদীপ, হ্যারিকেন ও মশালের আলোতে ঢোল কাঁসর শঙ্খের আবহে এক অন্য রকম পরিবেশ তৈরি করেছিল ওই নাট্যে। সব দিক থেকে ওদের উপস্থাপনা মুগ্ধ করেছিল দর্শক ও শ্রদ্ধেয় বিচারকদের। এবং পুরস্কার হিসেবে প্রথম স্থান অধিকার করে ওরাই।
দলের ছেলেমেয়েদের দিয়ে এই অনুশীলনটা করাতে পারলেন অভি, আজকের দিনে এটা বেশ কঠিন কাজ। ভবিষ্যতে আরও কাজ করুক ওরা। বাইরে থেকে এই অনুষ্ঠানের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কবি অংশুমান কর, সাহিত্যিক কৌশিক মজুমদার, ভাবনা থিয়েটার।