অশোকনগর নাট্যমুখ পরিচালিত সাপ্তাহিক ওয়েবজিন অমল আলো জার্নাল ৪৪ তম সংখ্যা, ২০ অগাস্ট ২০২২
সম্পাদক – অভি চক্রবর্তী
নির্বাহী সম্পাদক – অসীম দাস
সম্পাদকীয়
হিংসাশ্রয়ী ইসলামিক শক্তির বাড়বাড়ন্ত। তাদের অভিধানে মুক্তচিন্তার কোনও জায়গা নেই। তিনি জানতেন না, ফতোয়ার তেত্রিশ বছর পরেও আততায়ীরা তাঁকে হত্যার সুযোগ খুঁজে চলেছে। যাঁর লেখা ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ অনুবাদের জন্য দু’জনের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল এবং তাঁদের মধ্যে এক জাপানি অনুবাদক মারা গিয়েছিলেন। সেই লেখককে হাতের সামনে পেলে আততায়ীরা ছেড়ে দেবে, ভাবাটাই যে অবাস্তব! নিরাপত্তার ফাঁক গলে আততায়ীরা হিংস্র বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ার মধ্যেই পরিষ্কার যে লেখকের মাথার দাম তেত্রিশ বছর আগে আঠাশ লক্ষ ডলার ঘোষণা হয়েছিল! নিউজার্সি থেকে বাসে করে নিউইয়র্কের গুটোকোয়া ইনস্টিটিউটের হানে পৌঁছে গিয়েছে তারা। তারপর মুখোমুখি হতেই এলোপাথাড়ি অন্তত দশবার ছুরি দিয়ে লেখককে আঘাত করা হয়। পঁচাত্তর বছরের লেখক এখন হাসপাতালে, বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই করছেন। বেঁচে গেলেও তাঁর একটি চোখ নাকি অন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাঁর শরীরের নানা জায়গায় গভীর ক্ষত, যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত। এই হামলা একজন লেখকের বাকস্বাধীনতা তথা মানবতার ওপর নিকৃষ্ট আঘাত। দীর্ঘদিন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেননি তিনি। প্রাণনাশের একরাশ আতঙ্ক তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়েছে। প্রথম ছ’মাসে তিনি ছাপান্নবার বাড়ি বদলেছিলেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে গোপন করে রাখার জন্য জোসেফ অ্যান্টোন ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। ওই নামে লিখতেন। তেরো বছর কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ছিলেন। পালিয়ে বেড়াতে বেড়াতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এভাবে বেঁচে থাকা যায়? তাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেয়েছিলেন। অতঃপর ফের নিজ নামে লিখতে শুরু করেন। হামলার কয়েকদিন আগেও এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, মৃত্যু পরোয়ানা তিনি আর ভয় পান না। মানুষের ওপর ছিল তাঁর পূর্ণ আস্থা।
কেবল ভিন্নমতের মানুষকেই নয়, তাদের সমর্থকদের ওপরও হামলা নেমে আসছে। এর আগে আমরা দেখেছি, কীভাবে বাংলাদেশে একের পর এক মুক্তচিন্তার মানুষকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারের এক প্রাক্তন মুখপাত্র সাম্প্রতিক বক্তব্যকে ঘিরে বিতর্কের জেরে তাঁর বক্তব্যের একাধিক সমর্থকের ওপরও প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। এত অমানবিক হিংস্রতা কি ধর্মে সয়? সহিংস মৌলবাদী ইসলামিক শক্তি কখনও কি তা ভেবে দেখবে না ?