সম্পাদক – অভি চক্রবর্তী
নির্বাহী সম্পাদক – অসীম দাস
প্রত্যেকটা শেষই হয় শুরুর জন্য। সর্বনাশী বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে আবার যেমন নতুন সাজে গড়ে ওঠে শহর গ্রাম! কখনও বা প্রবল শৈতপ্রবাহ আবার সর্বগ্রাসী বছর আসে লুট করতে! যুদ্ধ শেষে রণক্ষেত্র আবার সেজে ওঠে নতুন রণকৌশলে। কেউ কেউ পাপের ঘরা পূর্ণ করে দানবীর হয়, কেউ কেউ সবটা উজাড় করে দিয়ে সমৃদ্ধ হয়, আবার কিছু মানুষ হতাশায় ভোগে। এসব হাপিত্যেশ চলতেই থাকে আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনে।
‘কন্যাকথা’ বা ‘খোলা হাওয়া’ আসলে নাট্যমুখ এর একটা ব্র্যান্ড, একটা আলাদা পরিচিতি যেখানে এবার বাংলাদেশের নাট্যদল ‘স্বপ্নদল’ শান্তির বার্তা নিয়ে ভারতে মঞ্চস্থ করে গেলেন তাদের সাম্প্রতিক মনো ড্রামা ‘হেলেন কেলার’ নাট্যটি। অনেক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে বিশেষ কাজের আর্জি জানিয়ে, থিয়েটারকে ভালোবেসে স্পেশাল পারমিশান নিয়ে তাঁদের আসা যাওয়ার বিপুল খরচের আমরা হয়তো আংশিক মেটাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু ভালোবাসার টান, মাতৃভাষার টানে এসব এড়াতে পারেননি স্বপ্নদলের পরিচালক জাহিদ রিপন সাহেব।
অমল আলো স্পেসে খোলা হাওয়া-৭ এর এই সমারোহ আন্তরিকতার সঙ্গে নাট্যমুখ ভেবেছে এটাও কম নয়। দুইদিন অসংখ্য নাহলেও হল ভর্তি নতুন নাটকের দর্শকের সমাগমে যে প্রাপ্তি নিয়ে শেষ হল তাতে বুকে সাহস এল আগামীতে উৎসবের জোয়ার আসতে পারে এই স্পেসে। এই ভাবনা আপনারাও ভাবতে পারেন ভবিষ্যতে। ইতিমধ্যে দুটি দলের বড় উৎসব উৎযাপিত হবে এই অশোকনগরে, এই অমল আলো তে। আমরা নতুন করে আবার জেগে উঠব, আবার প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেব বেঁচে থাকার।
আসলে বাংলায় উৎসব শুরু হয়ে গেছে। বাঙালির বড় পার্বণ দুর্গোৎসব শুরু হতে হতেই শেষ হয়ে যাবে জানি। তবু চতুর্দিকে নাট্য সমারোহের ঢেউয়ের গর্জন ভেসে আসছে। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, ক্যানিং থেকে কৃষ্ণনগর। কোথাও ইতিমধ্যে উৎসব শেষ হয়েছে , কোথাও হচ্ছে, কোথাও হবে। যেমন ইউনিটি মালঞ্চ-র “চতুরঙ্গ” নাট্য উৎসব, রায়গঞ্জ বিনোদিনী নাট্যোৎসব, থিয়েটার অভিযান আয়োজিত ময়ূরাক্ষী নাট্য উৎসব ষষ্ঠ পর্ব, মালদা মালঞ্চের নাট্যৎসব, আতপুর জাগৃতি আয়োজিত ৫৯তম থিয়েটার উৎসব, নাট্যকথার নাট্য উৎসব, রায়গঞ্জে মিনার্ভা নাট্যচর্চা সংস্কৃতি কেন্দ্র, তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বিনোদিনী নাট্যোৎসব, দিগসুই মগরা চরৈবেতি নাট্যোৎসব, ইলোরা’র ভিলেজ থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল, সবুজের নাট্যসম্পর্ক, ফালাকাটা ড্রামাটিক হল শতবার্ষিকী নাট্যোৎসব, তপন থিয়েটারে অনীক কলকাতা আয়োজিত গঙ্গা যমুনা নাট্য উৎসব, রিষড়া আয়োজিত পট্ট নাট্যমেলা, ব্যতিক্রমী নবগ্রাম আয়োজিত নাট্যকলা মহোৎসব সহ আরও আরও অনেক উৎসব যা অজানার অভাবে লেখা হল না। উৎসব চলুক আনন্দে, হাসিতে ভালোবাসায়।
ওই যে দূরে দেখছি একদল মেয়ে গলার ওড়না ওড়াতে ওড়াতে ধেয়ে আসছে। পশ্চিমের দেশ গুলি সব না হলেও বেশির ভাগ ধর্ম ভীরু রাষ্ট্র, প্রশাসক বড় নির্মম খেলায় মেতে উঠেছে। এখন আগুন জ্বলছে যেমন ইরানে। প্রতিবাদ জড়ো হচ্ছে ক্রমশ। নারী শক্তি পথে নেমেছে। ২২ বছরের এক তরুণীর মৃত্যুতে ফুঁসে উঠেছে ইরানের নারী সমাজ, পথে পথে পুড়ছে মুখ ঢাকার পর্দা, যাকে ওরা হিজাব বলে, চুল কেটে চলছে প্রতিবাদ। ওই শোনো মুহুর্মুহু স্লোগান ‘অত্যাচারী নিপাত যাক’। গণ-আন্দোলন একত্র হচ্ছে পথে। থরথর করে কাঁপছে মধ্য-প্রাচ্যের এই দেশ। হিজাব ঠিক মতো না পরার ‘অপরাধে’ রাস্তায় পুলিশ আটকে ছিল মাহসা আমিনিকে। মুখে মুখে তর্ক করেছিল মেয়েটা সুতরাং বন্দী, পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু কিন্তু কিভাবে ঘটলো আমিনির মৃত্যু ? এই প্রশ্ন শুধু ইরানে নয়, সারা বিশ্ব নেমেছে পথে প্রতিবাদের মিছিল নিয়ে। বিবস্ত্র হয়ে, নিজেদের চুল কেটে পথে হাঁটছে প্রতিবাদী দুর্গারা। পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ আরও ৩১ জন প্রতিবাদীর। পথই একমাত্র প্রতিবাদের পথ। প্রস্তুত হও, এ লড়াই এখন মাহসা আমিনির নয়, এ লড়াই এখন আমাদের সকলের।