অমল আলো নিজস্ব প্রতিবেদন:
অশোকনগর অমল আলোর বর্ষপূর্তি নাট্যসন্ধ্যার আজ ছিল তৃতীয় দিন, নাটক শুরুর আগে মঞ্চে উপস্থিত হন, অশোকনগর প্রশাসনের সংস্কৃতিপ্রেমী বিধায়ক, শ্রী নারায়ন গোস্বামী, পৌরসভার উপ মুখ্যপ্রশাসক শ্রী অতীশ সরকার। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে পৌরসভার পক্ষে ছিলেন শ্রী অনুপ রায় চিরঞ্জীব সরকার এবং এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী গুপী মজুমদার।
অশোকনগরের এই নিয়মিত নাট্যচর্চা কেন্দ্র অমল আলোয়, নাট্যমুখের কর্নধার অভি চক্রবর্তীর স্বাগত ভাষনের পরে, উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিদের বরন করে নেওয়া হয়। নারায়ন গোস্বামীকে সম্মাননা জানান এলাকার বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক প্রেমি লেখিকা অধ্যাপক কৃষ্ণা মিত্র।
সংস্কৃতিপ্রেমী বিধায়ক তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে, অশোকনগরের দীর্ঘ সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার কথা উল্লেখ করেন। সংস্কৃতির মান উন্নয়নে নাট্যমুখের সবিশেষ প্রশংসা করেন। অশোকনগরের সুস্থ সংস্কৃতির ধারা বিকাশে তার একগুচ্ছ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা একে একে উল্লেখ করেন তিনি। সমস্ত নাট্যদল এবং সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।
ছোটবেলায় মাঠের খেলার চাইতে, মঞ্চের নাটক তাকে বেশি আকর্ষন করত। তিনি সংস্কৃতির এই আঙিনাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলতে চান।
এই নাট্যোৎসবের তৃতীয় দিনের দুটি প্রযোজনার প্রথমটি ছিল হাতিবাগান শিল্পীচক্রের ‛জীবিত ভিক্ষুক, মৃত কুকুর’। নির্দেশনা ও প্রয়োগে স্বাগতম হালদার। মূলত ফ্যাসিবাদ বনাম গণতন্ত্রই হল এই নাটকের মূল বিষয়বস্তু। নাটকে ফ্যাসিবাদের প্রতীকস্বরূপ দিল্লীশ্বর বা দিল্লিরাজ চরিত্রটির আবির্ভাব ঘটেছে। যে কিনা যুদ্ধ, যুদ্ধজয়ের উল্লাস এসবেই মেতে রয়েছে। রয়েছে তাকে তোষামোদ করবার জন্য বেশ কিছু চামচাও। এরপর নাটকটিতে এক ভিক্ষুক ও তার সদ্য মৃত কুকুরের আবির্ভাব ঘটে। যদিও মঞ্চে আলো জ্বলার পরেই তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। নাটকটিতে ফ্যাসিবাদের বেশ কিছু ঐতিহাসিক উদাহরণ যেমন হিটলারেরও উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার গণতন্ত্রের প্রতীক সেই ভিক্ষুকটিও নেহাতই ঠাট্টার ছলে ফ্যাসিস্ট রাজার চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয় ফ্যাসিবাদের সর্বশেষ পরিণতি হিটলারের নৌকাডুবির মতোই হয়। ভিক্ষুক চরিত্রের অভিনেতার সাবলীল অভিনয় এ নাটকের সম্পদ। তবে সহ-অভিনেতাদের নিয়ে নির্দেশকের আরো বেশি করে কাজ করা উচিত বলে মনে হয়। বিশেষত দুজন পার্শ্বচরিত্রের মুভমেন্ট ও অভিনয় আরো সিংক্রোনাইজড হওয়া দরকার। তবে সব মিলিয়ে অমল আলো নাট্যোৎসবের তৃতীয় দিনের সূচনা বেশ জম্পেশ ভাবেই করে হাতিবাগান শিল্পীচক্র।
দ্বিতীয় নাট্য পরিবেশনা করে জোড়াসাঁকো প্যাঁচার নাট্যদল। এডওয়ার্ড এলবির বিখ্যাত নাটক জু স্টোরি অবলম্বনে তাদের নাট্যের নাম ছিল অবিনাশ গাঙ্গুলি ও সেই লোকটি। অভিনয়ে দুরন্ত মন কাড়ে নাট্য। আলো ও আবহের কাজও প্রয়োজনানুযায়ী এগিয়েছে। নাট্যের শুরুর অংশের উপভোগ্য উপস্থাপনার পর ধীরে ধীরে নাট্যটি সামান্য শ্লথ হয়ে পড়ে। আশাকরি কয়েকটি মঞ্চায়নের পর এই দুর্বলতা দূর করে নেবে এই নব্য সম্ভাবনাময় দলটি।
শেষ বেলায় উৎসবের প্রথানুসারে থিয়েটার মাসকাবারি এবং কোলকাতা থিয়েটার গাইডের সম্পাদক তমাল মুখোপাধ্যায়ের হাতে সম্মাননা তুলে দেন এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মী সুতপেশ চক্রবর্তী। এই সদ্য শীত আসা সময়ে অমল আলোর এই উৎসব এলাকাবাসীকে যথেষ্ট উদ্দীপিত করেছে বলেই ধারণা করা যায়, অডিটোরিয়ামে প্রাত্যহিক উপস্থিতি দেখে।