নিজস্ব প্রতিবেদন
স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে অশোকনগর নাট্যমুখ আয়োজিত অমল আলোয় অনুষ্ঠিত হল ‛আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ শিরোনামে সারাদিন ব্যাপী কর্মসূচি। গত ১৫ অগাস্ট সকাল ১০ টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের বর্ষীয়ান সদস্যা শ্রীমতী শীলা চক্রবর্তী। এরপর সন্ধ্যে ৬ টা থেকে শুরু হয় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে এই অনুষ্ঠানে দর্শকের উপস্থিতি ছিল অন্যদিনের তুলনায় চোখে পড়ার মতো। সবচেয়ে বড় কথা হলো অনুষ্ঠানটি একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অশোকনগর নাট্যমুখের কর্ণধার অভি চক্রবর্তী সংক্ষিপ্ত বক্তৃতার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করেন। গোটা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন অরূপ গোস্বামী ও নীলাঞ্জনা বিশ্বাস। বাংলাদেশের নাট্যব্যক্তিত্ব জায়িদ রিপন কে বিশেষ অতিথি হিসেবে বরণ করে নেন দলের সভাপতি সঙ্গীতা চক্রবর্তী। এরপর দলের খুদে সদস্যা অমর্ষি চক্রবর্তী স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য বক্তৃতা পরিবেশন করেন। এছাড়া অশোকনগর নাট্যমুখের সদস্য-সদস্যাদের পাশাপাশি অশোকনগর অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুলের মধ্যে বিদ্যাসাগর বাণীভবন এর ছাত্র-ছাত্রীরা পরিবেশন করেন নাচ, গান, আবৃত্তি। এই অনুষ্ঠানের ফাঁকেই নাট্যমুখের সদস্য অদ্রীশ কুমার রায় আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের আদলে রাঙিয়ে তোলেন দলের অফিসঘরের দেওয়াল। অনুষ্ঠানটি শুরু হওয়ার একটু পর মঞ্চে এক পাগল ঢুকে পড়ে। স্বাধীনতার সঠিক মানে তার জানা নেই। সে জানে খিদে, সে জানে স্বাধীনতার মানে পেট ভরে ভাত। ১৩০ কোটি ভারতবাসীর সবাই কি ভালো আছে? সব পাখি মরে গেলে অন্তত কিছুদিন এই বন্দীশালায় বেঁচে থাকা, চৌকিদার সব শকুন নিজেরাই ঠুকরে খাক নিজেদের মগজ… এসব বলে পাগলটা দর্শকের মধ্য দিয়ে হারিয়ে যায়। এই পাগলটি আর কেউ নয়, দলের বিশিষ্ট অভিনেতা জয় চক্রবর্তী। কিছু সময়ের জন্য আমাদের ভেতরের মননটাকে নাড়িয়ে দেয়। সংগত দেয় সঙ্গে আরেক সদস্য অঞ্জন হোড়। এদিনের বিশেষ আকর্ষণ ছিল মন্মথ রায়ের বাংলা ১৩৬৪ সনে লেখা একাঙ্ক নাটক ‛নেতাজি আসছেন’ এবং একটি নৃত্য-আলেখ্য।
অশোকনগর নাট্যমুখ প্রযোজিত নবতম এই ২৫ মিনিটের নাটকটির প্রথম অভিনয় হয় এদিন। মূলত নেতাজিকে নিয়ে হয়ে চলা ভাঁড়ামো এবং সেগুলোর আড়ালে চাপা পড়ে যাওয়া ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকারকে ঘিরে নাট্যের কাহিনি। নেতাজীর আদর্শে দীক্ষিত মধুসূদন বাবুর বাড়িতে ছদ্মবেশে একজন মানুষ ঢুকে পড়ে। বহুবছর আগে এই বাড়িতে নেতাজীর পায়ের ধুলো পড়েছিল। নেতাজীর অন্তর্ধানের পর ভারতে স্বাধীনতা এসেছে। কিন্তু নেতাজী সুভাষ আসেননি। আজ এতগুলো বছর পর তবে কি তিনি পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে আজও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না মধুসূদন বাবুর স্ত্রী এবং ছেলে। তাদের অন্তরাত্মা মন জানে নেতাজী আসবেন, একদিন নিশ্চয়ই আসবেন। নাটকটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন অভি চক্রবর্তী এবং তাকে সহযোগীতা করেন অসীম দাস ও অদ্রীশ কুমার রায়। ৭ জন সদস্যের এ নাট্যের অভিনয়ে নজর কাড়েন অরূপ গোস্বামী, গৌতম বসু, শ্রেয়া সরকার, সৌমেন্দু হালদার, সৌম্য রায়, রুমকি নাগ ও অসীম দাস। নাটকটির আলো, মঞ্চ, রূপসজ্জা করেন অদ্রীশ কুমার রায়। এরপর অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ পর্বে নাট্যমুখের সদস্য-সদস্যা বৃন্দ পরিবেশন করেন কিছু দেশাত্মবোধক গান নিয়ে একটি নৃত্য-আলেখ্য। পরিচালনায় দেবাদ্রিতা ভট্টাচার্য্য। ভাষ্যপাঠে ছিলেন সৌমেন্দু হালদার। এই অনুষ্ঠানে জায়িদ রিপন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রিষড়া দূরায়নের নির্দেশক দ্বীপ চক্রবর্তী। সব শেষে ‛হর ঘর তিরঙ্গা’ স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের যবনিকা পতন হয়।