আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় এর চোদ্দটি ছবির মুখ্য ভূমিকাভিনেতা আর বাঙালি অভিনেতার ছিয়াশি বছরের বিবিধ কর্মবহুল জীবনকে শব্দ বন্ধনে আবদ্ধ করা দুরূহ কর্ম তদোপরি আমার মতো এক অতিসামান্য নাট্যশ্রমিকের পক্ষে যে তা কতখানি বিপন্নতার মুখোমুখি হওয়া তা লিখে বোঝানো যাবে না। যে মহারথী সম্পর্কে অন্যান্য রথী- মহারথীরা হাজার হাজার শব্দ ব্যয় করেছেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভাকে তুলে ধরতে সেখানে নতুন কিছু আমি আর কিই বা জানাতে পারি?
তাঁর বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় পরিজন, নাট্যমঞ্চ বড় পর্দা, ছোট পর্দা, আবৃত্তির আসর, গল্প আড্ডা, লেখালেখি, ছবি আঁকা পত্রিকা সম্পাদনার বিশাল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত সকলের কাছে ঋণী আমায় হতেই হবে। চেষ্টা করেছি তাঁর সবদিকটায় যতদূর সম্ভব আলোকপাত করার জন্য। শুরু করা যাক তাঁর ছোটোবেলায় বন্ধুদের দিয়েই।
সুধীর চক্রবর্তী মহাশয়ের পাড়ার বন্ধু ও সহপাঠী ‘পুলু’ তাঁর থেকে মাত্র চার মাসের ছোটো। ১৯৫৩ তে সুধীরবাবু যখন কৃষ্ণনগর কলেজে বাংলা অনার্স পড়ছেন, উনি তখন পড়ছেন কলকাতার সিটি কলেজে বাংলা অনার্স। গরম বা পুজোর ছুটিতে কৃষ্ণনগর গেলে দুই বন্ধুতে চুটিয়ে আড্ডা দিতেন চায়ের দোকানে – প্রসঙ্গ বাংলা কবিতা। পুলু নিজের লেখা কবিতা শোনাতেন সুধীরবাবুকে । ছোটোবেলার বন্ধুত্ব জমাট বেঁধেছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ পড়ার সময়। নিয়মিত আড্ডা, কবিতা পড়া, আবৃত্তি ও গান চলতো।
এম. এ পড়াকালীনই শিশির ভাদুড়ির সংস্পর্শে আসেন পুলু। মহম্মদ আলি পার্কে ‘প্রফুল্ল’ নাটকে শিশিরবাবুর সঙ্গে পুলু অভিনয়ও করেন। পকেটে পয়সা কম থাকায় তৎকালিন সিনেমা হলের চতুর্থ শ্রেণীর দর্শক হয়ে দুই বন্ধু প্রচুর সিনেমা দেখতেন । চিত্রা সিনেমা হলে প্রমথেশ পড়ুয়ার ‘মুক্তি’ ছবিটি পুলু এগারো বার দেখেছিলেন।
এম. এ পড়াকালীন কবি ও সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেন। সুধীরবাবু প্রেমের কবিতা সংকলন প্রকাশনা করেছিলেন। নাম ‘অমৃত যন্ত্রণা’। মূল্য – এক টাকা তিন পয়সা। পাঁচশো কপি বিক্রি হয়েছিল। সংকলন গ্রন্থটিতে পুলুর কবিতাটির নাম ছিল ‘ওই বাদাম গাছের ছায়ায়’। ১৯৫৭ সালে পুলু এম. এ পরীক্ষা দেননি। মাস কয়েক আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যদল নিয়ে দিল্লিতে আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য প্রতিযোগিতায় গিয়েছিলেন। নিয়ে এসেছিলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতার শিরোপা। ওঁর অন্যান্য বন্ধুরা যখন পাশ করে কলেজে অধ্যাপনা করতে ঢুকলেন পুলু তখন “অপুর সংসার” ছবি করতে গেলেন। পুলুর গর্বে গর্বিত হলেন তাঁর বন্ধু-বান্ধবরা।
১৯৪৬ এ হাওড়া পঞ্চাননতলা রোডে থাকতেন অশোক পালিত মহাশয়। তার পাশের বাড়িতে ভাড়া এলেন পুলুরা। চার ভাইবোন ও মা বাবা। ওঁদের চালচলন কথাবার্তা আদবকায়দা সর্বপরি সকলেরই গায়ের রঙ ফর্সা হওয়া মানে ওঁদের সাহেবিয়ানার জন্য আর ওঁদের বাড়িতে যারা আসতেন তাদের অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত বলে বোধ করতেন অশোকবাবুরা।
তৎকালিন সময়ে হাওড়ায় সাইকেলে ভাই বোনকে বসিয়ে পুলুর দাদা, সমিদার ( সম্বিত) বনবন করে ঘুরে বেড়ানো দেখে ছোট- বড় সবাই হাঁ হয়ে যেত। ওঁরা নিজেদের মধ্যে ‘ট’ দিয়ে কথা বলতেন। একটু খুলেই তাহলে বলা যাক। একভাই অপরভাইকে প্রশ্ন করলেন ‘ টিট্টু টিট্টরে টিট্যানো ইট্টামার কিট্টলমটা নিট্টিওছিস’? তিনি উত্তর দিলেন, ‘ ইট্টামি তিটটোল কিটটলমটা নিটটেইনিাল — অর্থাৎ প্রশ্ন ছিল, তুই কেন আমার কলমটা নিয়েছিস?
আর উত্তর হলো আমি তোর কলমটা নিইনি।সমিদা, পুলু, অশোক ছিলেন ‘ত্রিমূর্তি’। দুষ্টমিতে, আড্ডায়, বেড়াতে যাওয়ায় ‘ত্রিমূর্তি ছিলেন বিখ্যাত বন্ধু মহলে। কৃষ্ণনগর স্কুলে ইংরেজি নাটকে পুলু রাজপুত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। হাওড়া জেলার স্কুলে মহারাজ নন্দকুমার নাটকে ‘ক্লেভারিং’- এর চরিত্রে। আরিয়াদহ থেকে এক গানবাজনার আসর থেকে ফেরার পথে, কুঁচো নিমকি শ্বাসনালীতে আটকে অশোকবাবুর যখন প্রায় যায়-যায় অবস্থা, খরখরে আওয়াজ বেরোচ্ছে, তখন পুলুর বক্তব্য, “দেখ দেখ অশোক কী দারুণ বড়বাবুকে নকল করছে “? অন্য এক বন্ধুর সাহায্যে জলপান করে অশোকবাবু যখন সুস্থ হলেন তখন আসল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পুলুর বক্তব্য, ” এখন বুঝতে পারছি কত বড় অভিনেতা শিশিরবাবু। এই অবস্থাটা কী নিঁখুত ভাবেই ফুটিয়ে তুলতেন স্টেজে, সত্যি জিনিয়াস “। শিশিরবাবুতে মগ্ন এক মানুষ পুলুর সেই সময়টা বাংলা ও ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি, গান গাওয়া আর বড়বাবুকে অনুসরণ করার পর্ব বলা চলে। খেলাধূলায়ও যথেষ্ট ভালো ছিলেন পুলু। স্কুলের শেষ পর্বে বা কলেজের গোঁড়ায় শুরু হয় তাঁর কবিতা লেখা। ওঁর বাঁধানো খাতার প্রথম পাতায় যে কবিতাটা ছিল, সেটির নাম সম্ভবত ‘দীপান্বিতা’।
অনেক ঘটনা দূর্ঘটনা পেরিয়ে পুলু- দীপার প্রণয় পর্ব চলে দশ বছর অবধি। যে মজার ঘটনাটা না জানালেই নয় তা হলো দীপার লেখা দুটি চিঠি, একটি বাবাকে ও অপরটি পুলুকে। কিন্তু পাঠাবার সময় ভুলবশত একজনের চিঠি ওপর জনের খামে ভরে পাঠানোর ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছিল। তবে প্রেমিক পুলু হাল না ছেড়ে যা করলেন তা হলো, দীপারা সপরিবারে দেওঘরে বেড়াতে গেলে পুলুও হাজির হন। আর একেবারে হবু শ্বশুরের কাছে তার কন্যার পাণি প্রার্থনা করেন। দশ বছরের উত্থান পতন পূর্ণ নাটকটি মিলনাত্মক, সানাই বেজেছিল দু’ বাড়িতেই।
সুবীর সিংহ রায় মহাশয়ের লেখা থেকে জানা যায় কৃষ্ণনগরে ‘নাট্যচক্র’ নামে যে ছোট্ট নাট্যদলটি ছিল সেটির পরিচালক ছিলেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ( মিঠুদা),যিনি পুলুদার আপন খুড়তুতো ভাই। প্রথিতযশা আইনজীবী তথা জেলার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন ললিত চট্টোপাধ্যায় মহাশয়। মদনমোহন তর্কালঙ্কারের দৌহিত্রী সুধাদেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ওঁদের দুই পুত্র মোহিত (বুটন) ও সুহৃদ (পুচো)। কন্যা তারা চট্টোপাধ্যায়ের বিয়ে হয়েছিল আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পুত্র রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
মোহিতবাবুর তিন পুত্র, সম্বিত ( সমিদা), পুলুদা আর সুহৃদবাবুর দুই পুত্র সুজিত , (বাবলু ) ও সুদীপ ( মিঠু ) এবং তিন কন্যা – মানা , তাতা ও গোপা । সুবীরবাবুদের সঙ্গে অর্থাৎ সিংহ রায় পরিবারের সঙ্গে চাটুজ্যে পরিবারের সম্পর্ক যে বহুদিনের, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুবীরবাবুর কাছ থেকে আমরা খুব সংক্ষিপ্ত একটি বংশ তালিকাও পেলাম।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর সঙ্গে পবিত্র সরকার মহাশয়ের দেখা হয় ১৯৫৬ সালে। এখন থেকে আমি সৌমিত্র নামটিই ব্যবহার করবো, কারণ তাঁকে ‘পুলু’ সম্বোধন করার মতো আর কারোকে আমি পাইনি। মফস্বলি গন্ধমাখা বাঙালি পবিত্রবাবু ১৯৫৬ -য় স্কটিশ চার্চ কলেজে এসে ভর্তি হন। সেই সময়েই মাঝে মাঝে তাঁর সৌমিত্রদাকে স্কটিশের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতেন। পরে অন্যান্য বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে জেনেছিলেন, তিনি আসেন দীপার জন্য, যে কিনা পবিত্রবাবুর একই ইয়ারের ছাত্রী। এই প্রসঙ্গেই মজার একটা ঘটনা জানিয়ে দিই। আরও দু’জন ছাত্রী সহ দীপা পাশেই এক হোস্টেলে থাকতেন। কিন্তু প্রায়ই ক্লাস শুরু হওয়ার পর বন্ধ দরজা ঠেলে ঢুকতেন। একদিন অধ্যাপক পঞ্চানন ঘোষাল ওঁদের ঢুকতে না দিয়ে বলে উঠলেন ,’ সরি , লেডিজ, বিউটি কান্ট ওপেন অল দ্য ডোরস’।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার ছাত্র সৌমিত্রদার গায়ের রং, শারীরিক দৈর্ঘ্য , নাকের তীক্ষ্ণতা , চাপা ও সুনির্নীত ঠোঁট, আর সুন্দর উজ্জ্বল চোখদুটোর প্রেমে পড়ে যান পবিত্রবাবু। তারপর কেটে গেছে বেশ কয়েক বছর। কেটে যাচ্ছিল দীপা – সৌমিত্র মুগ্ধতা। কিন্তু ১৯৫৯ সালে , “অপুর সংসার” ছবিতে ‘অপু’ হয়ে বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে ফেললেন পবিত্রর সৌমিত্রদা। সৌমিত্রর জন্য অর্থাৎ তাঁর সাফল্যে বাঙালি যেমন গর্বিত, তেমনি ‘অগ্ৰদানি’-র মতো বেশ কিছু নিবেশ ছবির জন্য বাঙালির দুঃখের অন্ত নেই । ‘স্বাগত’-তে তিনি নিজেই লিখেছেন -‘ ছবির পর ছবিতে অভিনয় করে চলেছি, অথচ অচরিতার্থর যন্ত্রণা কেন সঙ্গ ছাড়েনা, এ কথাটা বোধহয় তলিয়ে দেখার সময় এসেছে’।
পবিত্রবাবুর লেখা আরও একটি ঘটনার কথা না জানলেই নয়। তাঁর গুরু নট, নাট্যকার, নির্দেশক, সংগঠক দীপেন সেনগুপ্ত “অভিযান” ছবিটি দেখে বলেছিলেন, ‘রোববার কফিহাউসে যাবো, গিয়ে সৌমিত্র তাঁর বন্ধু বান্ধব নিয়ে দক্ষিণ পশ্চিম কোণের যে টেবিলটায় বসে আড্ডা দেয়, সেখানে বুলেটের মতো ছুটে যাবো, মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে বলবো, মশাই , আপনি শুয়োরের বাচ্চার মতো অভিনয় করেছেন ‘অভিযান’ এ, দিন পায়ের ধুলো দিন। এই বলে তাঁর পায়ের ধুলো নেবো ‘। আদৌ ব্যাপারটা ঘটেছিল কিনা তা পবিত্রবাবুর জানা না থাকলেও দীপেনবাবুর প্রশংসার মাত্রাটা বুঝতে অসুবিধা হয়না। পবিত্রবাবুর হবু স্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কালিন যে লেডিস হোস্টেলে থাকতেন সেখানকার অনেকেরই ‘হার্টথ্রব’ ছিলেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি আর তার থেকেও বড় ব্যাপার হলো তাঁদের অনেকেই নাকি সংকল্প করেছিলেন তারা তাদের পুত্র সন্তানের নাম রাখবেন সৌমিত্র। চলচ্চিত্র আর নাটক, এই দুই দুরন্ত ঘোড়ার পিঠে দাঁড়িয়ে চাবুক হাঁকড়েছেন পবিত্রবাবুর সৌমিত্রদা। নাটক ও কবিতা ছিল তাঁর নিজস্ব তৃপ্তির জায়গা, এখানে তাঁকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করেনা বলেই পবিত্রবাবুর ধারণা।
কবি ও শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্বন্ধে নবনীতা দেবসেন এর বিশ্বাস “এই তারকা জীবন বহিয়া আমি কি ভাবে চলিবো?” এমন সমস্যায় তিনি কখনোই পড়েননি। তাঁর আত্মবিশ্বাস অন্য জাতের। তাতে ঘুণ ধরেনা ।খ্যাতি তাকে একচুলো নড়বড়ে করে ফেলেনি।অসাধারণ শক্তি প্রয়োগে তিনিও নিজেকে সাধারণ বুদ্ধিজীবী নাগরিক -এর ভূমিকায় তুলে রেখেছেন।
নবনীতা দেবী জানিয়েছেন, যেহেতু শক্তি সুনীলদেরও বন্ধু ছিলেন সৌমিত্র তাই তাঁদের আড্ডাতেও মাঝেমাঝেই দেখা সাক্ষাৎ হতো।
তিনি উচ্চভাষী তো ননই বরং মৃদুভাষী বলা যায়। গানে, গল্পে রাতভর আসর মাতিয়ে রাখতে পারতেন তবে অপরিমিত পান করে কখনও তাঁকে গ্রস্ত হয়ে পড়তে দেখেননি। নবনীতা দেবী লিখেছিলেন, “কবি অমিতাভ দাশগুপ্তর কর্নেল বিশ্বাস রোডের বাড়িতে একবার সারারাত আড্ডা হয়েছিল, সেখানে মাথায় বেলফুলের মালা জড়িয়ে সৌমিত্র একের পর এক গান ও কবিতা শুনিয়েছিলেন”। অমিতাভবাবু জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ক্লাসমেট ‘পুলু’ নীলকন্ঠ কেবিনে বসে পরস্পরকে সদ্য লিখিত কবিতা শোনাতেন। আরও একটি বিস্ফোরক ঘটনা, প্রেমেন্দ্র মিত্র মহাশয় জানিয়েছিলেন যে তিনি যখন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে হর্তাকর্তা তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নামে একজন ঘোষক এর কাজের জন্য আবেদন করেছিলেন এবং নামটা তাঁর চেনাচেনা লাগছিল, তবে ফিল্ম প্রসঙ্গে নয় লিটল ম্যগাজিনে পড়া একটি কবিতায় দেখেছিলেন কবি হিসেবে।
নবনীতা আরও জানিয়েছিলেন যে “অাবহ সঙ্গীত নেই, হাত- পা নাড়া নেই, আলোর কায়দা নেই, শুধু কন্ঠের কেরামতিতেই সব ভাব -ভাবনার আদান প্রদান করায় পারঙ্গমে ছিলেন তিনি তাঁর আবৃত্তি মাধ্যমে। ২৫ আগষ্ট, ২০১৬ য় দেজ এর সহায়তায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর দুটি খন্ডে গদ্য সংগ্ৰহ প্রকাশিত হল ‘নন্দন’এ। যেটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটল নাসির উদ্দিন শাহ মহাশয়ের হাত দিয়ে। নবনীতার আফসোস সৌমিত্রবাবুর পদ্যসংগ্ৰহর কি হবে ?
বিভাস চক্রবর্তীর কথায় সৌমিত্রকে চেনা অন্ধের হস্তিদর্শন এর মতোই। নিজের স্টার ইমেজকে কাজে না লাগিয়ে ক্লিশেকে সযত্নে দূরে সরিয়ে রেখে তিনি বরাবর চরিত্রই হয়ে উঠতে চেয়েছেন। বোঝা যায় চরিত্র নির্মাণে তিনি বরাবর তাঁর বোধ অনুভব ও অভিজ্ঞতার জগতে ডুব দিয়েছেন। বিভাসবাবুর মতে সাধারণ রঙ্গালয়ে নবজীবনের সঞ্চার করেছিল তাঁর “নাম জীবন”। চলচ্চিত্রের পেশাদার অভিনেতা চেষ্টা করেছিলেন বাংলার পেশাদার থিয়েটারকে বাঁচাতে। হাল ধরেছিলেন ঠিকই কিন্তু ফিরে আসেন গ্ৰুপ থিয়েটারে। বিদেশি নাটককে স্বদেশি করে তোলার এমন ক্ষমতা একমাত্র অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মনে পড়িয়ে দেয় বিভাসবাবু। নির্মল আচার্যের সঙ্গে যুগ্মভাবে ‘এক্ষণ ‘ পত্রিকায় ( লিটল ম্যাগাজিন) এর সম্পাদনা অভিনেতৃ সংঘের পুন সঞ্জীবন কালে তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতার পরিচয়, তাঁর গদ্য, কবিতার জন্য যেমন, তেমনই পাশের বাড়ির প্রতিবেশী সৌমিত্রদার গরবে গর্বিত বিভাস চক্রবর্তী।
মৌলিক, অনুবাদ, রূপান্তর অবলম্বন অনুপ্রেরণা মিলিয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাটকের সংখ্যা চল্লিশ, এমনটাই মনে করেন নাট্যকার চন্দন সেন । যতোই ফ্রেডরিশ ডুবেনমার্চের “দ্য ভিজিট ” এর ছায়া থাক না কেন “ফেরা” নাটকটিকে চন্দনবাবু মৌলিক নাটক হিসেবে গ্ৰহণ করার পক্ষপাতি। “নীলকন্ঠ” নাটকটিকে সৌমিত্রবাবু মৌলিক নাটক হিসেবে মানতে নারাজ কারণ ওতে তুর্ঘেনিভের “A poor Gentleman” এর ছায়া আছে। চন্দনবাবুর মতে নাট্যকার নিজে তাঁর ঋণ স্বীকার না করলে কারো সাধ্য নেই তা ধরতে পারে। শিশিরবাবু তাঁকে ব্রেখট অ্যাডাপ্ট করতে বলায় তিনি লেখেন “বিধি ও ব্যতিক্রম” যা ১৯৬০ সালে “এক্ষণ” পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ও ১৯৬২ তে প্রথম অভিনীত হয়। চন্দনবাবুর মতে বাংলায় সম্ভবত ব্রেখট নিয়ে এটিই সাহসী প্রয়াস। সৌমিত্র, আলবেয়ার ক্যেমুর Le malantendu ( MIS UNDER STANDING ) আশ্রিত “ভুল” নাটকটি লেখেন ১৯৪১ সালে। এটি সরাসরি অনুবাদ।
নান্দীকার এর জন্য অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপেন্দ্র সেনগুপ্ত হেনরিক ইবসেনের “ঘোস্টস ” নাটকটি অনুবাদ করেন। পরবর্তীকালে ১৯৭৩ সালে অভিনেত্রী সংঘের জন্য সৌমিত্রকে দিয়ে এই নাটকের অনুবাদ করার তাগিদও ছিল অজিতেশবাবুর। ক্লিফোর্ড ওডেটস – ‘ দ্য বিগ লাইফ’ অবলম্বনে ‘রাজকুমার শাঁওকেসির ‘দ্য শ্যাডো অফ আ গানম্যান’ অবলম্বনে আরও একটি নাটক জে.এম. সিঞ্জ এর ‘দ্য রাইডার্স টু দ্য সী’, রূপান্তর ‘সমুদ্র সওয়ার’, মাইকেল ডাইসন এর ‘রিপোর্ট ফর্ম কন্টারস’ অবলম্বনে একাঙ্ক ‘কুরবানি’, ‘আরও একটি দিন’ ইত্যাদির উল্লেখ করতেই হয়।
তাঁর দুটি মৌলিক নাটক ‘ ন্যায়মতি ‘ ও ‘মহাসিন্ধুর ওপার হতে’ র উল্লেখ করতেই হয় এবং ন্যায়মতি নাটকে ষাট জনেরও বেশি কুশীলব অংশগ্রহণ করেন। অ্যান্টানি সেফার এর ”শ্লুথ’ নাটকের রূপান্তরটি একটি স্মরণীয় রচনা বলে মনে করেন চন্দন সেন। সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯ তে বহুরূপী পত্রিকায় তা প্রকাশিত হওয়ার ছত্রিশ বছর পর ১৯৯৫ তে ‘স্বপ্নসন্ধানী’-র প্রযোজনায় নাটকটি মঞ্চস্থ হয় ও বিপুলভাবে সমাদ্রিত হয়। সৌমিত্রবাবুর ইচ্ছে ছিল পাবলিক থিয়েটারে চলার জন্য; তিনি ও উত্তমকুমার বা উৎপল দত্ত করলে ভালো চলতো। সিনেমা করার কথাও হয়েছিল তবে প্রযোজকরা নাকচ করার ফলে তা আর হয়ে ওঠেনি। পেশাদার মঞ্চ থেকে বার হয়ে এসে সৌমিত্র লেখেন ‘ প্রাণ তপস্যা’। তবে সাইমন জে-র ‘ দ্য লাইফ সাপোর্ট ‘এর রূপান্তর করতে গিয়ে অনেকগুলো নতুন অনুসঙ্গ, নতুন ভাবনা আনেন নাটককার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
সৌমিত্রর পেশাদারী মঞ্চে দুটি অসাধারণ কমেডি হলো ‘ চন্দনপুরের চোর’ ও ‘ঘটকবিদায়’, দুটিই বাণিজ্য সফল নাটক। সৌমিত্রবাবু মনে করতেন, ফরাসি প্রহসন ‘থিওস কার্নিভাল থেকে সৃজিত ‘চন্দনপুরের চোর’ (১৯৯৪) থেকে থর্টন ওয়াইন্ডারের’ দ্য ম্যাচমেকার রিওয়ার্ড এর রূপান্তর ‘ঘটকবিদায়’ অনেকটাই ভালো। আঁতেল নাট্যদর্শক ভ্রুকুঞ্চিত করলেও তার মতে এটি একটি অসাধারণ নাটক। একুশ বছর ধরে নাটকটি বার বার অ্যাডাপটেড হয়েছে এবং প্রতিবারই সুপারহিট হয়েছে। এটি রং তামাসা নয় মানুষের, মানুষের জীবন সংগ্রামের কাহিনী।
ভাস্কর জ্যোতি সেনগুপ্ত ১৯৫৮ তে স্কুল ফাইনালে পাস করেন যখন কলকাতায় মামারবাড়ী গরচায় থেকে কলেজে পরেন। তখনই নাটকের সঙ্গে পরিচয় এবং সেখানেই তাঁর নীলু কাকিমার ( নিবেদিতা দাস) বাড়িতে IPTA এর বহু অভিনেতা অভিনেত্রীর যাতায়াতের ফলে একটা সুন্দর পরিবেশের বৃত্তে ভাস্করবাবু ঢুকে পরেন। ১৯৫৯ তে অপুর সংসারে সৌমিত্রবাবু রিয়ালিস্টিক অভিনয় যেখানে নাটকীয়তার ছাপ নেই নামমাত্র । শেখার চেষ্টা শুরু হয়ে গেল তবে পরে বিহেভিয়্যারাল অভিনয় দেখেও চললো ভাস্করবাবুর শেখার চেষ্টা। তাঁর জীবনানন্দ দাসের ‘বনলতা সেন’ শুনে ভাস্করবাবু মুগ্ধ। তাঁর কম বয়সের ‘নামজীবন’ ও আশি বছরের ‘কিংলিয়ার’ দেখে ভাস্করবাবুর সিদ্ধান্ত সর্ব শক্তিমান তাঁকে আলাদা করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, এই চূড়ান্ত শক্তি দিয়ে IFA তে সৌমিত্রবাবুকে ফ্যাকাল্টি হিসেবে পেয়ে আবার নন্দন – ৩ এ ইনস্টিটিউটের তরফ থেকে ‘কোনি’ চলচ্চিত্রটি দেখানো হলে, তিনি সামনে দাঁড়িয়ে বুঝিয়েছিলেন অভিনয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি। প্রকৃত জ্ঞানী গুণী মানুষের ব্যবহার কত ভালো হতে পারে বা ভালো হওয়া উচিত তা সেদিনই উপলব্ধি করেন ভাস্করবাবু।
অরুময় বন্দ্যোপাধ্যায় এর কাছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় চিরকালই ম্যাটিনি আইডল । তাঁর চেহারা অভিনয় কাব্য, লেখা, কবিতা পড়া সব মিলিয়ে একজন টপ ইন্টেলেকচুয়াল বাঙালি। যাকে শিল্পচর্চায় মোহগ্ৰস্ত এক তরুণ হিসেবে অরুময়বাবুর সমিহ না করে কোনো উপায় ছিল না। অরুময়বাবু তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন বড় অভিনেতা অভিনেত্রীরা সবসময় জীবনযাপনে অত খুঁত খুঁত করেন কেন ? এটা চাই, ওটা চাই, এটা খাবো না, সেটা খাবোনা, সৌমিত্রবাবু তাঁকে প্রশ্ন করেন , “ছুতোরের বাটালি দেখেছো “? অরুময়বাবু উওর দেন , চকচকে ধার দেওয়া। তিনি বলেন “ঠিক তাই , আমরা হলাম ছুতোরের ধারওয়ালা বাটালির মতো। সবসময় চকচকে রাখতে হয় নিজেকে। শরীরের যত্ন নিতে হয়। পারফরমারের শারীরিক ধার কমে গেলে চলে না। তাই এতো বাছবিচার করে চলতে হয়”। অনিল দে মহাশয় একটি নাটক লিখেছিলেন ‘কালতরঙ্গ ‘ নামে। অরুময়বাবু তখন দূরদর্শনের নাট্যবিভাগের প্রযোজক। মূল চরিত্রটি সৌমিত্রবাবুকে দিয়ে করানোর বাসনা অনিলবাবুর, তাই দূরদর্শনের তরফ থেকে তাঁর কাছে ওরা গেছিলেন প্রস্তাবটি নিয়ে। তিনি রাজি হলেন, কিন্তু তখন তিনি বিদেশে যাচ্ছিলেন তাই ফিরে এসে করার সম্মতি ও পাঁচ/ ছয়টি রিহার্সাল ও দেবেন বললেন। তিনি মনোযোগ সহ স্ক্রিপ্ট শুনেছিলেন ও ছয়দিনই টানা মহড়া দিয়েছেন। আসতেন সবার আগে। পর পর দু ‘দিন শুটিং করেছেন, বাকিটা ইতিহাস। কলকাতা দূরদর্শন প্রযোজিত নাট্য প্রযোজনা গোটা দেশের টেলিভিশন ড্রামা কম্পিটিশনে ফাস্ট হয় ও অরুময়বাবু নাট্যপ্রয়োজক ও নির্দেশক রূপে ন্যাশনাল আওয়ার্ড পান ২০০৭ সালে। আলোকিতা বন্দ্যোপাধ্যায় অরুময়বাবুর কন্যা , নামকরণ করেছিলেন সৌমিত্রবাবু। দিল্লি ডিরেক্টরের নির্দেশ তাঁর আশি বছর পূর্তিতে তাঁর ডকুমেন্টরি ” জন্মদিনে কিছুক্ষণ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়” এবং পরের বছর ইংরেজি ভাষায় তাঁকে নিয়ে আবার একটি ফিল্ম তৈরি করেন অরুময়বাবু। একবার সাক্ষাৎকারে অরুময়ের প্রশ্ন ছিল আপনার জীবনের ইচ্ছে কি? তাঁর উত্তর ছিল শেক্সপিয়ারের একটি নাটক নির্দেশনা অভিনয় ও মঞ্চস্থ করা এবং দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল আপনার জীবনের শেষ স্বপ্ন কি? ওর উত্তর অভিনয় করতে করতে মঞ্চের উপর মৃত্যু মুখে ঢলে পড়া ।
সতীনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন উনি তো পাক্কা পেশাদার, তাই ব্যক্তিগত সুখ , দুঃখ কোনো কিছুরই প্রভাব কাজের ওপর পড়তে দেয় না। ভাবনাকে আত্মস্থ করে রাখার বহিঃপ্রকাশ না ঘটানোয় রবীন্দ্রনাথ ওঁনার একনম্বর গুরু। সে ব্যাপারে কোনো আপোস নেই । সর্বাথে কমপ্লিট একজন আর্টিস্ট , সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে তাঁর সৌমিত্র কাকুই তাঁর অনুপ্রেরণা। বুম্বাকে কোলে বসিয়ে অন্নপ্রাশনের ভাতটা তাকে সৌমিত্রকাকুই খাইয়েছিলেন । প্রসেনজিৎ এর কাছে ফ্রেন্ডফিলোজপার , গাইড সৌমিত্রবাবু। প্রসেনজিৎ এর বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন।
দেজ প্রকাশিত সৌমিত্রবাবুর লেখা গদ্য সংগ্ৰহ প্রকাশ করতে এসে অভিনেতা নাসির উদ্দিন শাহ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন সৌমিত্র একজন তাঁর কাছে সেরিব্রাল অভিনেতা, তাঁর বুদ্ধি বিচার ,বিশ্লেষণ, ক্ষমতা ,মেধা , মঞ্চাভিনয় , নির্দেশনা, চরিত্র, রূপ নির্মাণ এককথায় অসাধারণ । তিনি মনে করেন আলকাজি দুবের মতোই অত্যন্ত শক্তিশালী একজন নাট্য-নির্দেশক সৌমিত্রদা। তিনি আরও মনে করেন জর্জ বার্নাড শ, শেক্সপীয়র,ইসমৎ চুগতাই, মান্টো প্রমুখের সঙ্গে তুলনা টানা যায় সৌমিত্র দার প্রতিভার।
মা আশালতা ও বাবা মোহিতকুমার চট্টোপাধ্যায় পুত্র পুলু বা সৌমিত্রর জন্ম ১৯ জানুয়ারি, ১৯৩৫ । কম বয়সে কলকাতার কলেজে ভর্তি হওয়া ও শিশির ভাদুড়ি অভিনয় দেখা শুরু । আর তখনই মনস্থির করে ফেলেন তিনি অভিনেতাই হবেন, আর কিছু না, সৌমিত্র মনে করতেন পেশাদার মঞ্চ ছাড়া অন্য কোনও কিছুই হতে পারে না। পরিপূর্ণ পেশাদার অভিনেতা হয়ে কাজ করা ও টিকিট না কেটে থিয়েটার দেখায় তাঁর কোনো আশা ছিল না। দু ‘দিনের সখের থিয়েটারের কোনো মূল্যই তাঁর কাছে ছিল না। তিনি তাঁর এই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন ‘চেতনা ‘ পত্রিকার সম্পাদক, চপল বিশ্বাস ও ইন্দ্রজিৎ আইচকে । কবি, প্রাবন্ধিক, আবৃত্তিশিল্পী, চিত্রকলা, আকাশবাণীর ঘোষক , পত্রিকার সম্পাদক ও সর্বপরি চলচ্চিত্রাভিনেতা , এমনি বহুগুণ সম্পন্ন মানুষ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে আমি যত শব্দ ব্যয় করেছি তা বহু গুণী মানুষের প্রত্যেক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমার মতো করে একটা প্রচেষ্টা মাত্র যাতে অন্তত বিভাসবাবুর ‘অন্ধের হস্তিদর্শন’ দোষ সামান্য মাত্র দেখানো যায়। যদিও তা সিন্ধুতে বিন্দু সম, তবুও আশা রাখি সীমিত সংখ্যক পাঠকের ভালো লাগলেও লাগতে পারে।
চলচ্চিত্রকার শ্যামল বোসের ছ’ টি ছবির অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে শ্যামলবাবুর ধারনা, অনেকেই তাঁকে আপাত দৃষ্টিতে অহংকারী দাম্ভিক বলে মনে করেন কিন্তু তিনি তা নন। তাঁর কাছে তাঁর সৌমিত্রদা হলেন একজন কোমল হৃদয় পরোণকারী অন্যর দুঃক্ষে সমব্যথী , অন্যের আনন্দে আনন্দিত , পরিপূর্ণ এক মানুষ।
শেষ করার আগে আপনাদের জানাই ১৫ নভেম্বর ২০২০ তে তাঁর প্রয়াণের পর কলকাতায় প্রকাশিত বেশ কিছু সংখ্যক পত্র- পত্রিকা তাঁর সম্পর্কে যা লিখিতাবস্থায় প্রকাশিত হয়েছিল, তা নিয়ে একটি অ্যালবাম তৈরি করেছিলাম তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। হয়তো কখনো কোনো গবেষক – এর কাজে লাগলেও লাগতে পারে, তাই যোগাযোগ এর নম্বর টুকু দিলাম ৯৯০ ৩৫১ ১৯৭১।