গোবরডাঙা নাবিক নাট্যম ছেচল্লিশ বছরের দল। প্রতিষ্ঠা ১মে ১৯৭৭, অভিজ্ঞতায় ঐতিহ্যে ও পরম্পরায় এই শহরের মাটিতে দীর্ঘদিন এই দল শক্ত ঘাঁটি গেড়ে আছে। শুধু বাংলায় নয়, সারা ভারত জুড়ে নাটকের মধ্যে দিয়ে নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে। মানুষের মন জয় করার এই ধারাবাহিকতা আজ বর্তমান।
সম্প্রতি ‘মায়া’ নাটকটি তাদের ৭৮ তম অভিনয় সম্পন্ন করেছে। পুরোনো প্রযোজনা গুলির মধ্যে অন্যতম সম্রাট ভূত দেখেছেন, চোর, মহাবিদ্যা, লাটাখাম্বা, দুইহুজুরের গপ্পো, একটুকরো সাদা মেঘ, টোটোপাড়া, মিলন বীনা প্রভৃতি আরো বহু প্রযোজনা নাবিক রাতের পর রাত পরিবেশন করেছে কখনো প্রতিযোগিতা মঞ্চে, কখনো অন্য দলের নাট্য উৎসবে গিয়ে আবার কখন নিজেদের নাট্য উৎসবে।
নাবিক নাট্যমের নতুন প্রযোজনা অথ বৃষ মঙ্গল কথা প্রথম অভিনয় ০৪.০৩.২০২২ গোবরডাঙ্গা শিল্পায়ন স্টুডিও থিয়েটার। নিজস্ব আয়োজিত মিলন উৎসবে। অথ বৃষ মঙ্গল কথা নাটকটি রূপক ধর্মী পাশাপাশি হাসির মোড়কে বর্তমান সময়ের একটি জীবন্ত দলিল। নাট্যকার কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের অসাধারণ লেখনীকে নির্দেশক জীবন অধিকারী হাস্যরসের মালা গেঁথে এই নাটকের প্রতিটি সংলাপকে করে তুলেছেন জীবন্ত।
মঞ্চ ব্যবহার চমকপ্রদ। প্রচলিত অর্থে সেটের ব্যবহার না করে এক ছক ভাঙা আঙ্গিকে নাটকটি উপস্থাপনা করে দর্শকগণকে আপ্লুত করেছেন পরিচালক। গৌতম সরকারের আলোক ভাবনা বেশ রুচিশীল। আস্তিক মজুমদারের আবহ সংগীত এই নাটকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পোষাক নির্মাণ করেছেন অনুতোষ ও মহিতোষ দত্ত। সৌরভ পালের পাপেট ও প্রিয়েন্দু শেখর দাসের মুকুট অসাধারণ। অভিনতা ও অভিনেত্রীদের কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। একঝাঁক অভিনেতা ও অভিনেত্রী মঞ্চে দাপিয়ে অভিনয় করেছেন। দলগত অভিনয় এই নাটকের বড়ো সম্পদ। যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁদের মধ্যে প্রদীপ কুমার সাহা, শ্রাবনী সাহা, অবিন দত্ত, অনিল কুমার মুখার্জি, স্বরূপ দেবনাথ, আল্পনা সরকার, রাখি বিশ্বাস, নিকিতা সরকার, অশোক বিশ্বাস, সুপর্ণা সাধুখাঁ, নবনীতা বিশ্বাস, সৌরজ্যোতি অধিকারী ও জীবন অধিকারী প্রত্যেকের সাবলীল অভিনয় এই নাটককে একটি ছন্দে বেঁধে রেখেছে। আল্পনা সরকারের ডান্স কম্পোজিশন বেশ চমৎকার। সব মিলিয়ে একটা আধুনিক রুচিশীল নাটক উপহার দিলেন গোবরডাঙা নাবিক নাট্যম। নির্দেশকের কথায় , বর্তমান সময় আমরা হাসতে ভুলে যাচ্ছি, প্রতি মুহূর্ত যাপন করছি নানান মানসিক অবসাদে, তাই এই ধরণের একটি নাটক দর্শকশ্রোতা বন্ধুদের হয়তো একটু আনন্দ দেবে। লাগাতার মানুষের ভালোবাসা পেয়ে এতগুলো বছর অতিক্রম করে আজও কোনো না কোনো সন্ধ্যায় নাবিকের ভূমিকা পালন করে নাট্যম। নাবিক নাট্যমের এই গতি চলছে চলবে।
সেভাবে দেখতে খুব একটা চমক নেই নাটকে।ভীষণ জোর করে হাসানোর চেষ্টা শুধু।