অসীম দাস
তারপর একদিন অলিগলি ভেঙে
ছুটতে ছুটতে পৌঁছলাম —
যেখানে রাস্তা বলতে তেমন কিছুই নেই,
অবসাদের মতো বড় বড় খাই
একটু এগিয়ে বিরাট একটা মূর্তি
যাকে খুব পরিচিত মনে হলো
কথা বলতে চাইলাম, শুধু আমি একা নয়
সেও চাইল কথা বলতে, চাপা মনের কথা
বুকটা ভারি হয়ে এলো,
মনে হলো এত খুব চেনা কন্ঠস্বরের ধ্বনি
হাউ হাউ করে কাঁদছে
অপমানে অভিমানে কাঁদছে, মা –!
কাঁদতে দেখলাম, দেখলাম মানে দেখা হলো, অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করে অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি আয়োজিত শিশির মঞ্চে সে সুযোগ ঘটলো। দেখা হলো এই সময়ের সাথে সেই সময়ের। কথা হলো, উদাহরণ দেওয়া হলো, টানা হলো, একে ওপরকে আয়নার সামনে দাঁড় করানো হলো। আমাদেরও প্রত্যেকের পরিবার আছে। স্বপ্ন আছে। স্বপ্নভঙ্গ আছে। চাওয়া পাওয়া আছে। হতাশা হওয়াও আছে। লড়াই তো আছেই। কার সাথে কার লড়াই, মানবিকতার সাথে মমতার, সফলতার সাথে ব্যর্থতার নাকি বৃহৎ থেকে বৃহত্তমের?
এমন অনেক টুকরো টুকরো মান অভিমান নিয়ে অভিজিৎ এর অনির চরিত্রের বেদনা আর সময়ের জাতাঁকলে এক মায়ের অপেক্ষা থাকবে সেই সময়ের জন্য, একদিন এই বানপ্রস্থ বৃদ্ধাশ্রমই হয়তো একা থেকে একাকিত্বের খেলা ভেঙে দিয়ে সেজে উঠবে আমাদের আশা ভঙ্গ জীবন?
বেলঘরিয়া গোধূলি নাট্যদলের সকলের আন্তরিক এবং মানবিক ছবি “প্রতিপক্ষ” দেখলাম। আজ ৩৩ তম অভিনয় সম্পন্ন হলো শিশির মঞ্চে একবিংশ নাট্যমেলায়।
সময়েকে কোনঠাসা করে প্রতিটি মায়ের চাওয়া পাওয়া তার সন্তানের উপর চাপিয়ে দেওয়ার এই নিয়ম নীতি কোনো নতুন বিষয় না হলেও বাবার রেজাল্টের সঙ্গে ছেলের রেজাল্টের কম্পেয়ার, বাবা মা সম্পর্কে লিখতে দেওয়া রচনায় উঠে এসেছে যন্ত্রের কথা। তাহলে যান্ত্রিক পথে নিয়ে যাচ্ছে সন্তানকে তার মা, তার শেখানো বুলি সব তাহলে মিথ্যে? এই যে অমানবিক প্রতিপক্ষের লড়াই বড় ভয়ংকর, ভয়াবহ। এ লড়াই থামবে কোন পথে, কি দিশা আছে আমাদের কারোই জানা নেই। নিজের কাছে নিজের এই পরাজয় আসলে পক্ষ নেওয়া কোনও এক মহাসত্যের। আমরা কি মানতে রাজি? প্রশ্ন রেখে দিলেন নাট্যকার দীপ গুঞ্জন। কারণ হয়তো এর সঠিক উত্তর আমাদের কারোরই জানা নেই! সমঝোতার অলিন্দে টুকরো টুকরো স্বপ্ন বেঁচে থাকবে যেমন তেমনই বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যাও বাড়তে থাকবে শহরে নগরে,মফস্বলও পিছিয়ে থাকবে না!
সকলে খুব ভালো,দুর্দান্ত টিমওয়ার্ক। একাংক মঞ্চে এই নাটক অনেক অভিনয় হওয়া প্রয়োজন। পরিচালক অভিজিৎ মজুমদার একাই টেনে নিয়ে গেলেন প্রতিপক্ষকে।