নাম তার নিবেদিতা। পদবী একটা আছে,কিন্তু পদবী ব্যবহার করে না নিবেদিতা। নামের সঙ্গে পদবীর জায়গায় লেখে ক্ষেপী। হয়তো থিয়েটার নিয়ে একটা ক্ষ্যাপামি আছে বলেই সে নিজেকে নিবেদিতা ক্ষেপী নামেই পরিচিত করেছে। এই ক্ষ্যাপামিটা আসলে থিয়েটারের প্রতি তার প্রবল অনুরাগ। নিবেদিতা ডাক পেলেই বিসর্গ থিয়েটার দলের হয়ে ছোটে নাটক করতে। সাজানো গোছানো মঞ্চ না হলেও সে থিয়েটার করার ডাক পেলেই রাস্তার মোড়ে, ফাঁকা জায়গায়, যে কোন অঙ্গনে, বাড়ির ছাদে থিয়েটার করতেও প্রস্তুত। সঙ্গী সাইকেল আর দলের দ্বৈপায়ণ।
অভিনয় করার প্রবল ইচ্ছাই তাকে টেনে এনেছে থিয়েটারে।ব্যক্তিগত তাগিদেই নিবেদিতা থিয়েটারে নিবেদিত প্রাণ। তাকানো যাক নিবেদিতার জীবনের দিকে। বরানগর আলমবাজার অঞ্চলে বেড়ে ওঠা নিবেদিতার দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া বরাহনগর রাজকুমারী মেমোরিয়াল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। তবে থিয়েটারটা শুরু মাত্র চার বছর বয়সেই।প্রি প্রাইমারি স্কুলের (ব্লুমিং বাডস স্কুল) বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অবন ঠাকুরের “ক্ষীরের পুতুল” নাটকে ব্রাহ্মণী চরিত্রে মঞ্চে নামা। তারপর থেকে থিয়েটার আর ছাড়েনি নিবেদিতাকে। নিবেদিতাও ছাড়েনি থিয়েটারকে।থিয়েটার নিবেদিতার কাছে প্রাণের আরাম।থিয়েটার নিবেদিতার কাছে “কর্মহীন আনন্দ” – আনন্দহীন কর্ম নিবেদিতার অপছন্দ।থিয়েটার তাকে আনন্দ দেয় তাই সে হয়েছে থিয়েটারের নিবেদিতা
নিবেদিতা থিয়েটারকে ভালবেসেই নাটক ও নাট্যকলা বিষয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। প্রাচ্য নাট্যদলের সঙ্গে বছর পাঁচেক নিজেকে যুক্ত রেখে থিয়েটারের প্রশিক্ষণ নিয়েছে তারপর বিসর্গ থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থিয়েটারকে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরেছে। বিসর্গের থিয়েটার তার কাছে নব্য। প্রাচীন নাট্য অভিযান।প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেকে থিয়েটারের যোগ্য করে গড়ে নিতে চাইছে নিবেদিতা। বাধ্যবাধকতার জীবন যাপন নিবেদিতার অপছন্দ।এমনও হতে পারে,থিয়েটার বাধ্যবাধকতা হয়ে গেলে নিবেদিতা থিয়েটারের দাসত্বও ত্যাগ করতে পারে। এ কথা নিবেদিতা বলতে পারে নির্দ্বিধায়। অথচ থিয়েটারকেই সে রুটিরুজির মাধ্যম করেছে। থিয়েটারের ডাক পেলেই শহরে নগরে গ্রামে গঞ্জে চলে যেতে পারে।প্রয়োজনে সাইকেলে চেপে। নিবেদিতার কথায়, থিয়েটারের হোম ডেলিভারি। থিয়েটার ছাড়া আর কোন মাধ্যমের সঙ্গে সে নিজেকে জড়ায়নি। দৈনন্দিন জীবন যাপনকে অনুভবের মাধ্যমে এবং নিরন্তর নাটুকে জীবন যাপনের মধ্যে থেকে সে নিজেকে থিয়েটারের যোগ্য করে তুলতে চাইছে।
তিন বছর বয়সে বাবার আকস্মিক মৃত্যু। তার মাস চারেক পরেই নাচের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল নিবেদিতার মা। সেখানেও নিবেদিতা ছিল বাধ্য অনুগত শিক্ষার্থী। নিদারুণ সহযোগিতা ও প্রেরণা ছিল মায়ের। চার বছর বয়সে ব্লুমিং বাডস স্কুলের প্রেসিডেন্ট নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় মঞ্চে নামা। পরে রাজকুমারী স্কুলের শিক্ষিকা সোহিনী সেনগুপ্ত (যিনি নান্দীকারের অভিনেত্রী, নির্দেশক), বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় (নির্দেশক, প্রাচ্য), সংগ্রাম গুহ (নির্দেশক, মাণিকতলা স্পন্দন), প্লাবন বসু (নির্দেশক, রঙ্গশিল্পী), অমর্ত্য মুখোপাধ্যায় ( অধ্যাপক, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য বিভাগ)ও বিসর্গ থিয়েটারের দ্বৈপায়ণের সাহচর্যে থিয়েটারের কাজ করার সুযোগ।
বিসর্গ থিয়েটারের দলে থিয়েটারকে সমষ্টিগত কাজ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সেজন্য একটা থিয়েটার নির্মাণ করতে যা কিছু দরকার তার সবটাই দলের সবাই যৌথভাবে গড়ে তোলে। তাই থিয়েটারের সব কাজটাই সে করতে ও শিখতে চায়। শুধু থিয়েটার নয়, দলের অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজও তারা এভাবেই সবাই মিলে করে।
প্রাচ্য দলে রোমি ও জুলি নাটকের এলা, বিসর্গ থিয়েটারের উড়ালি বাওয়ের নাও নাটকের ষোড়শী ও বাতাসী, বাঘ চাল নাটকের কামিনী, ফুলটুসি নাটকের ফুলটুসি নিবেদিতার প্রিয় চরিত্রের তালিকায়। ক্ষীরের পুতুল দিয়ে শুরু চার বছর বয়সে। তারপর আলিবাবা ও চাল্লিশ চোর,কাবুলিওয়ালা,চিত্রাঙ্গদা,তাসের দেশ, দ্যা পাইট পাইপার, চণ্ডালিকা, ইটসি বিটসি, রোমি ও জুলি, ক্যালিগুলা, টিপুর স্বপ্ন, গ্যালিলিও গ্যালিলি, ভূতপত্রীর যাত্রা, চিৎকার, ফেরারি বাফুন,যাত্রা.. অফ দ্য রাণ, নয়ন কবীরের পালা, অঘটন, শকুন্তলা, উড়ালি বাওয়ের নাও, কৌটো, চৈতন্যের কড়চা, মায়ের দয়া, বেহুলা, সুটে মুটে, বাঘ চাল, ফুলটুসি, সমীকরণ প্রভৃতি নাটকে নানা চরিত্রে অভিনয় করেছে নিবেদিতা। একবার ডাক পেলেই বিসর্গ থিয়েটারের নিবেদিতা ঠিক হাজির হয়ে যাবে দ্বৈপায়ণকে সঙ্গী করে। নিবেদিতার লক্ষ্য, থিয়েটারের হোম ডেলিভারি। বিসর্গ থিয়েটারের নিবেদিতা এই ভাবনাতেই গড়ে উঠছে থিয়েটারের জন্য।
Speechless
খুব ভালো লাগলো ! এগিয়ে চলো বন্ধু ! অনেক অনেক শুভেচ্ছা, ভালোবাসা ও অভিনন্দন !
খুব ভালো লাগলো ! এগিয়ে চলো বন্ধু ! অনেক অনেক শুভেচ্ছা, ভালোবাসা ও অভিনন্দন !