বিজয়কুমার দাস
চলন্তিকার বেড়ে ওঠা, পড়াশুনা সবই হাওড়ার বালিতে। ছোটবেলা থেকেই আবৃত্তিচর্চা আর লেখাপড়া গুরুত্ব পেয়েছে তার জীবনে। উত্তরপাড়ার মডেল স্কুল থেকে মাধ্যমিক। বেলুড় গার্লস হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক । পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিহারীলাল কলেজ থেকে হোম সায়েন্সে স্নাতক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতকোত্তর। প্রস্তুতি চলছে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার। কিন্তু লেখাপড়ার এই ব্যস্ততার মধ্যেও চলন্তিকা গঙ্গোপাধ্যায় জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছে থিয়েটারকে। আসলে বাবা প্রদ্যুৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও মা দীপালি গঙ্গোপাধ্যায় থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত বহুদিন । বাবা ছিলেন রমাপ্রসাদ বণিকের ছাত্র। তাঁদের ‘আগামী’ নামে একটি দলও আছে। সঙ্গীত, আবৃত্তি, নাটকের অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আগামী দলের সঙ্গে স্বভাবতই চলন্তিকার আত্মিক যোগ গড়ে ওঠে। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি আবৃত্তি, নাটক চর্চার সঙ্গেও জড়িয়ে গেছে চলন্তিকার জীবন।
ছোট থেকেই মা বাবার অভিনয় দেখেছে।তাঁরা এ ব্যাপারে উৎসাহও জুগিয়েছেন।আবৃত্তি শেখার শুরু সেই মেয়েবেলা থেকেই।সুদীপ্ত মিত্র, রুদ্রবাবু, জগন্নাথ বসু প্রমুখের কাছে আবৃত্তি শেখার সূত্রে বিভিন্ন আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশ নিত চলন্তিকা।ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করার পর নেহরু চিলড্রেন্স মিউজিয়াম থেকে একটি চিঠি আসে বাড়িতে। সেই চিঠি অনুসারে তাকে রমাপ্রসাদ বণিকের তিনদিনের একটি কর্মশালায় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।মা বাবার উৎসাহে সেই কর্মশালায় যোগ দেয় চলন্তিকা। ২০০৩ সালে কর্মশালার পর ২০০৪ সালে নেহরু চিলড্রেন্স মিউজিয়ামের নাটকে সুযোগ পায়। রমাপ্রসাদ বণিককেই তাই নাট্যগুরু মনে করে চলন্তিকা। ২০০৪ সালে রমাপ্রসাদ বণিকের নির্দেশনায় ” মাননীয় সত্য” নাটকে তার সচেতনভাবে থিয়েটারের জন্য মঞ্চে নামা। অবশ্য মা বাবার প্রেরণায় আগেও চলন্তিকার মঞ্চে নামার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
সেই তখন থেকেই থিয়েটারের প্রতি একটা আত্মিক আকর্ষণ গড়ে ওঠে। ” থিয়েটারে লোকশিক্ষে হয় ” – শ্রীরামকৃষ্ণের এই উক্তি তাকে প্রেরণা জোগায়। আর সাহস জুগিয়েছেন অবশ্যই তার মা এবং বাবা। ক্রমশ গ্রীণরুম, ক্রেপ, স্পিরিটগাম তার প্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর থেকে নানা নাট্যদলের নানা নাটকে নানা চরিত্রে মঞ্চে নেমেছে চলন্তিকা।নিজেকে বিশেষ কোন নাটকের দলে আবদ্ধ না রেখে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত থাকার ইচ্ছাকে অবলম্বন করে অভিনয় করেছে নানা নাটকে। সেই সূত্রে নাট্যজগতের নানা কিংবদন্তি পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ মিলেছে। মুখোমুখি নাট্যদলে অভিনয়ের সূত্রে প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সান্নিধ্য তার জীবনের পরম পাওয়া। পাশাপাশি রমাপ্রসাদ বণিকের মত নাট্য পরিচালকের সুযোগ্য নাট্য শিক্ষা তাকে অভিনেত্রী হয়ে উঠতে প্রেরণা জুগিয়েছে।
নেহরু চিলড্রেন্স মিউজিয়ামে রমাপ্রসাদ বণিকের তত্ব্বাবধানে বিদ্যাসাগর আকাদেমি থেকে তিন বছরের অভিনয় ক্লাস শেষে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ। প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফেরা ও ঘটক বিদায় নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা চলন্তিকার অভিনয় জীবনের সুবর্ণ সঞ্চয়।অভিনীত অজস্র চরিত্রের মধ্যে সীমাপিসি ( লুক্সেমবার্গের লক্ষ্মী),বিনোদিনী ( বিনোদিনী কথা), নীলি ( অথৈ জল), ফ্রিডা ( একনায়কের শেষ রাত) , রুবিনা ( কোথায় বামদেব), মালতী ( দহন), হামিদা ( ফাঁস) চলন্তিকার কাছে প্রিয় চরিত্র হয়ে আছে।
একজন পরিপূর্ণ অভিনেত্রী হয়ে উঠতে সে প্রতি মুহূর্তে নিজেকে প্রস্তুত করে। অভিনয় বিষয়ক বইপত্র পড়ে, একান্তে ভাবে এক একটি চরিত্রকে নিয়ে। কারণ অভিনয় নিয়েই সে থাকতে চায়। বাবা এবং মা এক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে তাকে সাহস যোগায়, প্রেরণা দেয়। তার অভিনীত নাটকের সংখ্যা অনেক। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে খ্যাতির বিড়ম্বনা, লক্ষ্মীর পরীক্ষা, নেহরু চিলড্রেন্স মিউজিয়ামে মাননীয় সত্য, মহাবিদ্যা প্রাইমারি, একলা পাগল, অনুভব, ভাঙা বুকের পাঁজর, যদিও সন্ধ্যা, লুক্সেমবার্গের লক্ষ্মী, থিয়েটার প্যাশনের ভ্যাবলাই ভালো, টালিগঞ্জ সায়ংসন্ধ্যার মুক্তির উপায়, একটি হলুদ গল্প, ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের বর্ণপরিচয়, বালি প্রভাত নাট্য সংস্থার না, কৃষ্টি পটুয়ার জেহাদ, কথাকলমের Black holes are not black, রসিকতা প্রযোজিত ফলসি চড়ার উপাখ্যান, স্বতন্ত্রর বিনোদিনী কথা, মুখোমুখি দলে ফেরা, ঘটক বিদায়, কোথায় বামদেব, উত্তরপাড়া ধুমকেতুর ভৌতিক, পূর্ব পশ্চিমের অথৈ জল, হযবরল দলের একনায়কের শেষ রাত, মুক্তিবন্দ, বরানগর আসরের অক্ষরবৃত্ত, মহিমা ইন্ডিয়ার বাঁধ ভেঙে দাও, গড়িয়া কৃষ্টি দলে তুঙ্গভদ্রার তীরে, চ্যাটার্জীহাট অনুকৃতির দহন, পারমিক ব্যারাকপুরের ফাঁস ইত্যাদি। বিভিন্ন নাটকে রমাপ্রসাদ বণিক,অমিত বিশ্বাস, রাজা ভট্টাচার্য, তিমির চক্রবর্তী, চৈতালি লাহিড়ি, বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায়, সুমিত কুমার রায়, রাজা সেন, পৌলমী বসু, ব্রাত্য বসু, চন্দন সেন, সিতাংশু খাটুয়া, অভিজিৎ লাহিড়ি, শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ নির্দেশকের অধীনে কাজ করেছে চলন্তিকা।
প্রতিবিম্ব ( টালিগঞ্জ সায়ংসন্ধ্যা) এবং সহবাস ( কলকাতা রমরমা) নামে দুটি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশকের দায়িত্বও পালন করেছে চলিন্তিকা।
এভাবেই থিয়েটারের পথে এক অক্লান্ত পথিক চলন্তিকা গঙ্গোপাধ্যায়। আগামীতে চলতে চায় থিয়েটারের পথেই।
থিয়েটারের পথে চলা অব্যাহত থাক।চরৈবেতি।নাট্যমেব জয়তে।
🙏🙏🙏🙏
Dhonnyobad, amar pronam janai apnader, apnader potrika te amay jayga dewar jonno..
Bijoy da apni amar pronam neben..
Ai vabe amar moto aro theater pagol manushder pase thakun ai kamona kori…
আপনার পরিচিতদের বলুন ই পোস্টে কমেন্ট করতে।
এভাবেই এগিয়ে যাও
এগিয়ে যাও। আশীর্বাদের যদি কোন মূল্য থাকে তাহলে রইলো প্রানভরা আশীর্বাদ। অনেক বড়ো হও।