কলকাতায় নানা নাট্যদল। সেখানে বিভিন্ন দলে অভিনয় করেন নতুন প্রজন্মের অনেকেই। বলা বাহুল্য, কলকাতায় থিয়েটারের পরিকাঠামো আছে। মঞ্চ এবং নাটকের দলও অনেক। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য বিভাগ বা মিনার্ভা রেপার্টরি চর্চা থেকে থিয়েটারের পাঠ, প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন থিয়েটারের দলে কাজ করছেন। আবার অনেকে থিয়েটারকেই রুটিরুজির মাধ্যম হিসাবেও বেছে নিয়েছেন ভালবেসে। এমন জলজ্যান্ত উদাহরণ আমাদের প্রচুর আছে।
কিন্তু কলকাতা থেকে দূরে মফস্বলের বিভিন্ন জেলায় যাঁরা থিয়েটার করেন, তাঁদের কাজটা আমার মনে হয় বেশ কিছুটা কঠিন। উপযুক্ত পরিকাঠামো, প্রশিক্ষণ, নানান কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও পারিবারিক সূত্রে অথবা থিয়েটারকে ভালবেসে তাঁরা থিয়েটার করেন। বিভিন্ন জেলার নাট্যদলগুলি এই নতুন প্রজন্মকে লালন করেছে সম্মানের সঙ্গে। নতুন নতুন ছেলেমেয়েদের তৈরি করার উদ্যোগী প্রয়াস নিয়েছেন নাট্য নির্দেশকরা।
ধরা যাক, কোচবিহারের কথা। কলকাতা থেকে বহু বহুদূর হলেও সেখানে থিয়েটারের চর্চা আছে অনেক অনেক বছর ধরে। কিছু প্রতিকূলতা থাকলেও থিয়েটার হচ্ছে। সেখানে চিরদীপার মত নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা থিয়েটারে উঠে এসেছে। এদের অনেকেরই কলকাতায় এসে থিয়েটার দেখা বা করার সুযোগ পায় না। কিন্তু থিয়েটারকে তারা জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নেয় ভালবেসে।
কোচবিহার ইন্সটিটিউট অফ পার্ফমিং আর্টস দল, কোচবিহার শহরে থিয়েটার চর্চায় নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠান। আর চিরদীপা বিশ্বাস করে সেই দলের সে নির্ভরযোগ্য অভিনেত্রী। পারিবারিক সূত্রেই “থিয়েটার” শব্দটার সঙ্গে পরিচয় ঘটে চিরদীপার। সেই বালিকাবেলা থেকেই চিরদীপা থিয়েটারের সংসারে বড় হয়েছে। তার ঠাকুরদা নীরজ বিশ্বাস এবং ঠাকুমা মণীষা বিশ্বাস কোচবিহারের স্বনামধন্য অভিনেতা অভিনেত্রী ছিলেন। থিয়েটারের জগতে তাঁদের বেশ নামডাকও ছিল।
কোচবিহার আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (২০২২) ছাত্রী চিরদীপার সুযোগ হয়নি ঠাকুরদা – ঠাকুমার অভিনয় দেখার। কিন্তু পারিবারিক অ্যালবামে তাঁদের অভিনয়ের ছবি এবং লোকমুখে তাঁদের অভিনয়ের সুনাম শুনতে শুনতে “থিয়েটার” শব্দটি তার মনে একটা ভাল লাগা তৈরি করে। ঠাকুরদা – ঠাকুমার পরে চিরদীপার বাবা নীলাদ্রি বিশ্বাস এবং মা চুমকী রায় বিশ্বাসও থিয়েটার করেন এখনও। চিরদীপা সেই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি, যে থিয়েটারকে ভালবেসে ছোটবেলা থেকেই মঞ্চে নেমেছে মা – বাবার প্রশ্রয়ে। মা – বাবা কোচবিহারের আই পি এ ( ইন্সটিটিউট অফ পার্ফমিং আর্টস) দলেই যুক্ত। বাড়িতে নাটকের মহলা চলত আর ছোট্ট চিরদীপা সেই মহলা দেখতে দেখতে সংলাপ বলা অভ্যাস করে ফেলে। দু’বছর বয়সে মনোজ মিত্র রচিত “মহাবিদ্যা”নাটকে “আমায় কোলে তুলে নিবি কাকু?” সংলাপটি সবাইকে শুনিয়ে বেড়াত। অবশেষে সেই মেয়েই মাত্র ৪ বছর বয়সে ওই দলের হয়ে ভরতেন্দু হরিশচন্দ্রের “অন্ধকার নগরী ” নাটকে মঞ্চে অবতীর্ণ হল। লেখাপড়ার পাশাপাশি নাচ, গান, আবৃত্তি এবং অবশ্যই থিয়েটার চর্চার সঙ্গে লেখাপড়াটাও চালিয়ে গেছে। কোচবিহারের ইন্দিরা দেবী বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ২০২০ সালে সুনীতি একাদেমি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে কলেজে পড়াশোনা চলছে ।
কোচবিহার আই পি এ দলের একজন নির্ভরযোগ্য অভিনেত্রী চিরদীপা থিয়েটারের জন্য আলাদা সময় বের করে নেয়। ১০ বছর বয়সে অলটারনেটিভ লিভিং থিয়েটার এবং কোচবিহার আই পি এ দলের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত নাট্য কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে সে। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন দলের অভিনয়ে এবং মূকাভিনয় কর্মশালাতেও যোগ দিয়েছে।থিয়েটারের টানেই Bengal School Of Arts এর ৩ মাসের অনলাইন থিয়েটার কর্মশালায় যোগ দিয়েছে। কোভিডের সময়েও অনলাইনে নাটকের আলোচনা ও কর্মশালায় নিয়মিত অংশ নিয়েছে চিরদীপা। আই পি এ দলে স্নেহাশিস চৌধুরীর নির্দেশনায় বেশি নাটক করেছে সে। স্নেহাশিসবাবুর কাছেই তার থিয়েটারে হাতেখড়ি – এ কথা জানিয়েছে চিরদীপা। এছাড়া শঙ্কর দত্তগুপ্ত,পূর্বাচল দাশগুপ্ত, দেবব্রত আচার্যর পরিচালনাতেও বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছে।
ভবিষ্যতে অধ্যাপনার ইচ্ছা থাকলেও থিয়েটারে সারাজীবন অভিনয় চালিয়ে যেতে চায় চিরদীপা। প্রয়োজনে পড়াশুনোর পাশাপাশি থিয়েটার নিয়ে পড়াশুনো করার ইচ্ছাও আছে। কারণ সে মনে করে, থিয়েটার নামক মাধ্যমটি জীবন গঠনে সহায়ক। থিয়েটারের সঙ্গে নাচ, গান, কবিতা সবই যুক্ত। তাই থিয়েটারের অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন সে লালন করে আসছে ছোটবেলা থেকেই।
চিরদীপার অভিনীত নাটকগুলির মধ্যে আই পি এ দলের প্রযোজনায় সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের লেখা অণুনাটক “অন্তক্ষরণ ” এ পৌলমী চরিত্রটি তার প্রিয়। এ পর্যন্ত তার অভিনীত নাটকের সংখ্যা ২৫ এর কাছাকাছি। “অন্ধকার নগরী” ছাড়াও রবীন্দ্রনাথের “বিসর্জন” অবলম্বনে নির্বিন্ন ঔষ্ণিক, বাইপ্রোডাক্ট, নারী, এবং সেলফোন, ভয়, অন্তক্ষরণ এর মতো প্রভৃতি নাটকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছে।
আন্ত:বিদ্যালয় কলা উৎসবে ২০১৬ তে যখন নবম শ্রেণির ছাত্রী তখন আন্ত:বিদ্যালয় কলা উৎসবে লোকনাট্য বিভাগে কোচবিহারের লোকনাট্য কুষাণ পালা “লক্ষ্মণের শক্তিশেল” এ অভিনয় করে জেলা স্তরে প্রথম হয়ে রাজ্যস্তরে অংশগ্রহণ করেছিল।
চিরদীপার থিয়েটার চর্চায় মা এবং বাবার প্রেরণা এবং ভূমিকা তার কাছে বিশেষ প্রাপ্তি।পারিবারিক সূত্রেও থিয়েটার তাকে প্রাণিত করেছে। ঠাকুরদা নীরজ বিশ্বাস এবং পিসিমা মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস অভিনয়ের জন্য দিশারি পুরস্কার পেয়েছিলেন। পরিবারের এই অভিনয় ঐতিহ্য তাকে থিয়েটারে আসতে উৎসাহিত করেছে। আর আই পি এ দলের ভূমিকাও অনেকখানি। চিরদীপা এভাবেই থিয়েটারের পথে হাঁটতে হাঁটতে অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
❣️
❤️❤️
বাঃ 😌❤️
দারুন
উত্তরের মঞ্চ-খবর এভাবেই ছড়িয়ে যাক। উপস্থাপন ভাল লাগল।
বাংলা থিয়েটারের নতুন প্রজন্ম উদ্ভাসিত অমল আলোয়।কলকাতা থেকে দূরে জেলায় জেলায় থিয়েটারে যারা নিয়োজিত তাদের চর্চা অব্যাহত থাক। চিরদীপারা উদ্ভাসিত হোক মঞ্চের আলোয়।শুভ কামনা।
থিয়েটার মানুষ গঠন করে আর সেই বোধ যদি ছোট্ট বেলার সময় থেকেই আগ্রহী শিশুদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, উপকৃত হবে সমাজ-সভ্যতা। উত্তরের সীমিত সামর্থ্য যদি সুগন্ধী পুষ্পের সম্ভারে মঞ্চ ভরিয়ে তোলে, তাহলে উপকৃত হবে সমগ্র নাট্য সমাজ। অমল আলো এবং বিজয় বাবুর প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ।
সামান্য কয়েকদিন চিরদীপার সঙ্গে কাজ করবার সুযোগ পেয়েছি। দারুণ লেগেছে। প্রাণবন্ত, উদ্যমী এবং যত্নশীল কাজের মেয়ে।
May I simply just say what a relief to find someone who truly understands what they are discussing on the web. You definitely understand how to bring a problem to light and make it important. More and more people ought to check this out and understand this side of your story. Its surprising you arent more popular because you definitely have the gift.