দিন আসবে হে | বিমলকুমার সোম

” দিন আসবে হে”
কবি সুবিনয় দাসের কাব্য গ্রন্থ পড়ে আমার যেমন লাগল।

সুবিনয় দাস , সিউড়ী থিয়েটার অভিযান নাট্য দলের কর্ণধার। একাধারে তিনি নাটককার নির্দেশক অভিনেতা ও সংগঠক। আবার তিনি শিক্ষকও। যদিও বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে শিক্ষক কোনদিন অবসর গ্রহণ করেন না। শিক্ষক যদি মানুষ গড়ার কারিগর হয়, এবং তা যদি হয় ব্রত, তাহলে সরকারি নিয়মের বাধ্য বাধকতায় এক সময় সরে আসতেই হয়। কিন্তু ব্রত চ্যুত হওয়া যায় না।কারণ ,একজন শিক্ষক সমাজ সংস্কারকও।
একজন নাটককারও সেই হিসাবে সমাজ সংস্কারক এবং শিক্ষকও।

ঠাকুর রামকৃষ্ণ-এর কথায়,” নাটকে লোক শিক্ষা হয়” যদি সত্যি মনে করি, তবে নাটককারও সমাজের উত্থান-পতন, ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ অবলোকন করে যখন মানুষের অন্ধকারাচ্ছন্ন চোখে আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে দেন, চেতনার উন্মেষ ঘটান, সেটাও শিক্ষা।

সমাজের অন্তর্নিহিত দিকটি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করে তাঁর একটি গুণের বিকাশ ঘটতে দেখা যায় কাব্যের মাধ্যমে। এমনই এক কাব্য, “দিন আসবে হে” আমার হাতে তুলে দেন। আপাদমস্তক পাঠ করে তাঁর দেখার চোখের স্বতন্ত্র শক্তিকে মনে মনে তারিফ করি।
বিন্যাস বুনন ও প্রকাশের ভাষার ব্যঞ্জনায় সব কবিতা উত্তুঙ্গ সৃষ্টির দাবী না করলেও কিছু কবিতা পাঠকের ভাবনার দরজাতে টোকা দিয়ে বলে জাগার কথা। কবিতার মধ্যে নষ্ট্যালজিয়া খেদ যন্ত্রণা বা শাশ্বত নিয়মের কাছে পরাভব স্বীকার করা হয়েছে। কবিতার মধ্যে জেগে ওঠার, বেঁচে থাকার আকুল আহ্বান আছে। আকুল উদ্বেগ আছে আগামীতে পরিবর্তনের নিশ্চয়তা নিয়ে।
কাব্য গ্রন্থের কবিতাগুলি পাঠককে ভাবতে বলবে। হতাশ না হয়ে আশার বীজ বপন করতে প্রেরণা জোগাবে।

আমার আলাদা ভাবে ভালো লাগা কবিতা গুলো, “সেই আম বাগানটা”, ” আমিও বাঁচবো “,
” আমার আকাশ”, “এসো প্রার্থনা করি,” সহ আরও কিছু কবিতা।
আলোর মৃত্যুর যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে”
আমার ভয় হয়” কবিতাতে।
“ঈশ্বর দর্শন” কবিতায় মানুষের মধ্যে ঈশ্বরকে দেখেছেন।

জীবনকে, জীবনের ব্যাপ্তিকে ও বহমানতাকে নিরীক্ষণ করে নাটককার হিসাবে নাটকের কবিতা গড়েছেন কবি সুবিনয় দাস। আগামী দিনে এমন সৃষ্টি থেমে থাকবে না বলে আশা রাখি। কাব্য সুর লহরীর বীণার ঝঙ্কার নব নব রাগ মঞ্জরীর দ্যোতনায় আশা জাগিয়ে রাখি।

One thought on “দিন আসবে হে | বিমলকুমার সোম

Comments are closed.