চেতনা ৫০ ও জগন্নাথ এর ফিরে আসা | সুজন নীল মুখোপাধ্যায়

১৯৭৭ সালে অরুণ মুখোপাধ্যায় রচিত, নির্দেশিত ও অভিনীত ‘ জগন্নাথ ‘ নাটকটি আসমুদ্র হিমাচল কাঁপিয়ে ভারতবর্ষের থিয়েটারে এক ঝড় তুলেছিল। সাধারণ মানুষ থেকে অতি নামজাদা সবাই এটা জাতির গর্ব বলেই মেনে নিয়ে, একবার দুবার বা একাধিক বার দেখার উৎসাহ নিয়ে চেতনার সেরা সম্পদ হিসেবেই প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল।  সেই তালিকায় জ্যোতি বসু থেকে সত্যজিৎ রায় হয়ে মৃণাল সেন ঘুরে উত্তম কুমার বা শম্ভু মিত্র, কেউ ইই বাদ যাননি।

সেই অধ্যায় পেরিয়ে, অনেক বসন্ত কাটিয়ে ২০১২ সালে অরুণ মুখোপাধ্যায় ৭৫ বছর বয়েসে আবার অভিনয় করে, চেতনা ৪০ উৎসব কে রাঙিয়ে দেন.. কিন্তু মুশকিল সাধে তার শরীর। ৩ টি অভিনয়ের পর, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বন্দী.. এদিকে বেশ কয়েকটি আমন্ত্রিত অভিনয় সামনে, ওনার মঞ্চে নামা অসম্ভব.. ঘটনাচক্রে দলের সম্মান বা অর্থনৈতিক দুরবস্থা কে সামাল দিতে এই অধম মাঠে নামে জগন্নাথ করতে…. ৮০ র দশকে অরুণ বাবুর যখন হার্টের অসুখ ধরা পড়ে, তখন বিপ্লব কেতন চক্রবর্তী সামলে দিয়েছিলেন দলকে রক্ষা করতে.. এবার এই অধমও লড়ে গেলো.. নস্টালজিয়া অতিক্রম করে ২৫ টি অভিনয় করলো… অনেকেই বাহবা দিলেন, অনেকেই অরুণ বাবুর সঙ্গে তুলাদন্ডে মেপে অহেতুক বিতর্ক বাড়ালেন। সেটা হতেই পারে।

এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, অরুণ মুখোপাধ্যায় এর মতো জগন্নাথ পৃথিবী তে কেউ করতে পারবে না.. সেটা হয় না.. যেটা হয় সেটা হলো নতুন আবিষ্কার। হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, কিং লিয়ার বা পপুলার দেবদাস বা ডন, একেকজন অভিনেতা একেকভাবে সামলেছেন.. সবার শরীর, গলা, তাকানো, হাসি, কান্না আলাদা বৈভব এনেছে।  এক্ষেত্রেও তাই…. তাই হাসপাতাল থেকে ফিরে এই অধমের অভিনয় দেখে সৃষ্টি কর্তার মন্তব্য ছিলো “তুই ঠিক দিকে আছিস। চরিত্রায়নে কোন ভুল নেই”।

জয় গোস্বামী, মনীশ মিত্র, দেবেশ চট্টোপাধ্যায় সহ বহু মানুষ সাহস দিলেন। তারপর চেতনা নতুন পথে হাঁটতে শুরু করলো.. নতুন নতুন নাটক হলো.. জগন্নাথ বিশ্রাম নিলো। তাই আজ চেতনা ৫০ এর উৎসবে প্রায় ৭ বছর পর, আধুনিক থিয়েটারের এই অনবদ্য প্রয়োগ ভাবনা কে নব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই বিশেষ দুটি অভিনয়। আর হবে না, আমিও পারবো না। লু শুনের একটি ছোট গল্পের আধারে সম্পূর্ণ মৌলিক এই নাটক পাঠ্যপুস্তক সম, এই নাটকের সঙ্গীত নিয়ে এক সপ্তাহের কর্মশালা হতে পারে..  তদুপরি তৎকালীন (৭০ দশক) স্তানিস্লাভস্কীয় ঘরানার বাইরে এক অতি সাধারণ নায়কের মারকাটারি অভিনয় প্রয়োগ, সমগ্র নাট্য জগতকে নতুন দিশা দিয়েছিলো.. সেই ইতিহাস ফিরে দেখানোর তাগিদেই আমাদের এই পরিশ্রম। এবারে সুমন মুখোপাধ্যায়,সুপ্রিয় দত্ত, নিবেদিতা সহ চেতনার সবাই রয়েছে আপনাদের সেই চির আধুনিক নাট্য রসে নিমজ্জিত করতে।

বন্ধুরা দেখা হোক উৎসবে.. জগন্নাথে।