৪৩ বর্ষে গোবরডাঙ্গা শিল্পায়ন | অরিন্দম দে

বাংলা থিয়েটারের উজ্জ্বল ইতিহাসে গোবরডাঙ্গা এক উল্লেখ যোগ্য নাম । সেই গোবরডাঙ্গার থিয়েটার চর্চার সঙ্গে নিরলস ভাবে যুক্ত থেকে যে দলগুলি আজ জেলা নয় , রাজ্য নয় জাতীয় স্তরে এই মফস্বল এলাকার নাম স্থায়ী করেছে তার মধ্যে শিল্পায়ন গোবরডাঙ্গা অন্যতম থিয়েটার সংগঠন । যাঁরা কেবল নিজেরা থিয়েটার করে তাই নয়, পরবর্তী প্রজন্মকে থিয়েটার মূখী করে তুলতে স্থানীয় পৌরসভা , বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী ও নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু ও নিজেদের দলের কর্মীদের অদম্য উৎসাহে গড়ে উঠেছে একটি নাট্য বিদ্যালয় । শিল্পায়ন নাট্য বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রশিক্ষক জয়ন্ত বিশ্বাসের পরিচালনায় রায়বেশে নাচের মধ্যদিয়ে ৪৩ তম জন্মদিনের আলোকময় সন্ধ্যার সূচনা হলেও আনুষ্ঠানিক সূচনায় ঐতিহ্যমণ্ডিত উপস্থিতিতে যোগদান করেন গোবরডাঙ্গা পৌরসভার পৌরপ্রধান শঙ্কর দত্ত, পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রশাসনিক আধিকারিক অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য একাডেমির সদস্য সচীব ড. হৈমন্তী চট্টোপাধ্যায়, নাট্যকার অধ্যাপক শেখর সমাদ্দার, বিশিষ্ট সাংবাদিক বিপ্লবকুমার ঘোষ, অভিনেতা নির্দেশক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী সহ বাংলা থিয়েটারের বহু স্বীকৃত দলের নাট্যকর্মীদের সামনে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে জন্মদিনের শুভারম্ভ হয় । চাঁদপাড়া এ্যাক্টোর কর্ণধার ও শিল্পায়ন স্টুডিও থিয়েটার এর অন্যতম ফ্যাকাল্টি সুভাষ চক্রবর্তীর অনবদ্য পারফর্মেন্স ও দলের অভিনেত্রী দীপা ব্রহ্মের অসাধারণ লোকসংগীত পরিবেশন করেন।

এতদিনকার কীর্তি অকীর্তি মেশানো নাট্য, জীবন, শিল্প, সাহিত্য, সম্পর্ক সব একাকার হয়ে কোন অনাগত কালস্রোতের দিকে ধেয়ে যেতে থাকে… তার কি কোনো তল খুঁজে পাওয়া যাবে কোনোদিন কখনো? হয়তো ভবিষ্যৎ সে করতলে লিখে দেবেন মহাপর্বের ইতিহাস। সেই ইতিহাসজে সাক্ষী রেখে নমিতা ব্রহ্ম স্মারক সম্মান পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রশাসনিক আধিকারিক অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় মহাশয়কে প্রদান করা হয়। নাট্যকার অধ্যাপক শেখর সমাদ্দার মহাশয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় অকাল প্রয়াত লেখক বন্ধু রবিশঙ্কর বল নামাঙ্কিত স্মারক সম্মান ও শিল্পায়ন সম্মান জ্ঞাপন করা হয় অভিনেতা নির্দেশক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী মহাশয়কে । প্রত্যেকেই তাঁদের বক্তব্যে নানা সামাজিক প্রতিকূলতার মধ্যেও এইভাবে একই রকম ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দীর্ঘ ৪৩ বছর নাট্যচর্চার সাথে সাথে এলাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখার সাধু ও সফল উদ্যোগের প্রশংসা করেন ও পুনরায় আসবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

সকল অতিথির হাতে উত্তরীয়, জন্মদিনের স্মারক, সুদৃশ্য একটি কৃষ্ণনগর এর মৃৎশিল্প নিদর্শন, বই ও একটি পরিণত জুঁই ফুলের গাছ উপহার হিসাবে তুলে দেওয়া হয় । একই সাথে সকল দর্শকের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি সুন্দর চারা গাছ । সবুজের সঙ্গে থেকে সবুজকে অক্ষুন্ন রাখার দায় থেকেই যে এই প্রয়াস তা সহজেই অনুমান করা যায় । জন্মদিনের প্রাথমিক পর্বের সম্মাননা জ্ঞাপন পর্বের শেষে পরিবেশিত হয় শিল্পায়ন এর সাম্প্রতিক অসাধারণ প্রযোজনা দ্বিভাষিক অনুবাদ নাটক ‘খামোশ আদালত’। পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে সফল মঞ্চায়নের মধ্যে দিয়ে সার্থক হয়ে ওঠে শিল্পায়নের ৪৩ তম জন্মদিন পালন উৎসব । শিল্পায়ন এর এই উজ্জ্বল দিনে স্থানীয় ও বাইরের বহু নাট্যদল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপস্থিতি ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন প্রমান করে এই কঠিন সময়েও নিজেদের আরো বেঁধে বেঁধে থাকার সরল রসায়ন সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর জনসংযোগ । এভাবেই থিয়েটার দীর্ঘজীবী হয় ও রয় ।

One thought on “৪৩ বর্ষে গোবরডাঙ্গা শিল্পায়ন | অরিন্দম দে

  1. May I simply just say what a relief to find someone who truly understands what they are discussing on the web. You definitely understand how to bring a problem to light and make it important. More and more people ought to check this out and understand this side of your story. Its surprising you arent more popular because you definitely have the gift.

Comments are closed.