ইতিহাস আশ্রিত নাটক: কিছু বিতর্ক | সুব্রত কাঞ্জিলাল

রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ভারতবর্ষের লিখিত ইতিহাসে ভারতবাসী নাই। তিনি ব্রিটিশ লেখক জেনারেল ট ড এর, রাজস্থানের ইতিহাস বইটাকে বিকৃত ইতিহাসের আকর গ্রন্থ বলে চিন্তিত করেছিলেন।
তপন মোহন চট্টোপাধ্যায়ের পলাশীর যুদ্ধ বইটা অসামান্য একটি দলিল গ্রন্থ এক বাক্যে বলা যায় কি? রীতি অনুযায়ী এখানেও সিরাজ বিষয়ে ভুল তথ্য এবং ঘৃণা ছড়ানো রয়েছে। মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব কে নিয়ে আজ পর্যন্ত ব্রিটিশ এবং ভারতীয় ইতিহাসবিদরা তাদের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের প্রকাশ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে হ্যাঁ ১০০ বছর আগে নাট্যকার বিদ্যাবিনোদ মহাশয় রচিত আলমগীর নাটক এইসব মুসলিমবিদ্বেষীদের গালে চপেটাঘাত করে গেছেন। সম্ভবত ক্ষীরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদ ফরাসি লেখক বর্নিয়ে মহাশয়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন। একই সঙ্গে বলতে হবে, শত বছর পূর্বে বাঙালি দর্শকরা অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। সেযুগে যাত্রা এবং থিয়েটারের জন্য ইতিহাস বিকৃত না করে অসংখ্য দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী নাটক রচিত হয়েছে। মুন্সি প্রেমচাঁদ তার সাহিত্য শতরঞ্জ কি খিলাড়ি তে নবাব ওয়াজেদ আলীর কাছ থেকে অযোধ্যা কেড়ে নেওয়ার যে ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন, পরবর্তী সময়ে সত্যজিৎ রায় একটি সিনেমা নির্মাণ করে, তার দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা প্রকাশ করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের এই ছবিটি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী একটি দলিল। ব্যাটেল অফ পলাশী নামে একটি ইংরেজি ছবি তৈরি হয়েছিল হলিউডের গোডাউন থেকে সেই চল্লিশের দশকে। এবং তার বহু আগে থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অনন্ত প্রচেষ্টা ছিল নবাব সিরাজদৌলা কে কিভাবে কলঙ্কিত করে তোলা যায়। রমিলা থাপার, ইরফান হাবিব প্রমূখ বিশ্ব বিখ্যাত আধুনিক ইতিহাস বিদদের সময় থেকে শুরু হয়েছিল ভারতবর্ষের প্রকৃত ইতিহাস চর্চা।

মারাঠি লেখক সখারম গণেশ দেউস কর এর ভারতের কথা বইটা আজকাল আর পাওয়া যায় না। ওটাও লেখা হয়েছিল শত বছর পূর্বে। লেখক ওই বইতে যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন যে সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা ভারতবর্ষের ইতিহাস বিকৃতি করবার উদ্যোগ নিয়েছিল কেন। ব্রিটিশ লেখকদের অসংখ্য লেখাতে দেখা যায়, তারা ভারতবাসীকে চোর, জোচ্চোর, অলস, নীতি ভ্রষ্ট, ডাকাত ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষিত করে গেছেন। আমরা ক’জন জানি যে, পারসিক শব্দে হিন্দু আসলে তাদেরকেই বলা হয়, যারা বেইমান, ডাকাত, নীতি হীন, বিশ্বাসঘাতক। আমেরিকান লেখক এডগার স্নো তার একটি বইতে লিখছেন, ভারতবর্ষ সম্পর্কে ইউরোপ এবং আমেরিকার মানুষের কাছে যে ছবিটা ফুটে ওঠে, সেটা হলো ভারত এমন একটি দেশ যে দেশের রাস্তায় গরু মহিষ ছাগল শিয়াল ঘুরে বেড়ায়। সাপুরেরা শত শত সাপ নিয়ে এখানে ওখানে খেলা দেখায়। বহু অঞ্চল আছে যেখানে হাজার হাজার সাপ অবাধে ঘুরে বেড়ায়। ভারত প্রকৃত অর্থে তুকতাক যাদুবিদ্যা, মাদারি খেলা, গাজা ভাং খাওয়া সাধু আর জোচ্চোরদের দেশ। ভারতের শাসকরা স্বাধীনতার পরবর্তী সময় এইসব ইতিহাস বিকৃতি মূলক বইগুলো স্কুল কলেজে পাঠ্য করে রেখেছেন। এই কারণেই রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ভারতবর্ষের যে ইতিহাস বই পড়ে মুখস্থ করে আমরা পরীক্ষায় পাস করি, সেই ইতিহাস বইতে ভারতবাসী নাই। আমাদের ছোটবেলায় দেশপ্রেম মূলক যেসব যাত্রা নাটক দেখেছি সেইসব পালাতে ইতিহাস বিকৃতির চিহ্ন ছিলনা। যেমন টিপু সুলতান, হায়দার আলী ,মীর মদন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, আলমগীর, এইসব ইতিহাস পুরুষদের দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিবেশিত হতো। একটু বাড়াবাড়ি রকমের জাতীয়তাবাদী চিন্তার বাংলার লোকনাট্য গুলোর মধ্যে ছৌ নাচের মুখোশ পৃথিবী বিখ্যাত। দিনাজপুরে আর এক ধরনের লোকনাট্য দেখা যায়। ওরা বলে মুখা পালা। এদের মুখোশের বৈচিত্র অন্যরকম। কেরালার কথাকলি নাচের মুখোশ আলাদাভাবে তৈরি করতে হয় না। এগুলো সবই শিল্প রসিকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে আছে। এইসব মুখোশ পরিহিত শিল্পীদের আসল মুখের সঙ্গে অনৈতিকতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। শিল্পের প্রয়োজনে এরা মুখোশ ব্যবহার করে।

নাগরিক জীবনে আর এক ধরনের মুখোশ আমরা অহরহ চারিদিকে দেখতে পাই। রাজনৈতিক মুখোশ। বাণিজ্যিক মুখোশ। প্রতারকের মুখোশ। আমি আজ আর এক ধরনের মুখোশের কথা বলবো, যে মুখোশ থিয়েটার এবং সিনেমার সঙ্গে যুক্ত থাকা কিছু অংশের লোকজনেরা ব্যবহার করে। যাদের সামাজিক মর্যাদা অসীম। সমাজে যারা রোল মডেল। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এরা পৌরহিত্ত করে। নাটক এবং সিনেমা জগতে প্রবেশাধিকার পাওয়ার জন্য তরুণ যুবক-যুবতীরা এদের অনুসরণ করে। ভোটের সময় রাজনৈতিক দলগুলো এদের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানায়। টেলিভিশনের সান্ধ্যকালীন আসরে এরা বিশেষ মর্যাদা নিয়ে সিংহাসনে বিরাজ করেন। সামাজিক রাজনৈতিক সংকটের সময় এদের মতামত নেওয়ার জন্য মিডিয়ার সাংবাদিকরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।
সিঙ্গুর থেকে রতন টাটা কে তাড়াবার জন্য এদের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। রেজওয়ানুর রহমানকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য খুন করেছিলেন এই বিশ্বাস এরাই তৈরি করে দিয়েছিল। সিপিএম জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল, এরাই মিডিয়াট্রাইলে প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল। মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ এই বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে জগদীশচন্দ্র বসু পোষণ করে এসেছেন। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার যখন এই সত্যকে কাজে পরিণত করবার চেষ্টা করেছিল, তখন এরাই বিদ্রোহ করে বলেছিল, ইংরেজি আমাদের মাতৃ দুগ্ধ।
এরাই বামফ্রন্ট সরকারের পতনের অন্যতম কারিগর।

এরাই সেদিন ঘোষণা করেছিল, পরিবর্তন অনিবার্য। বুদ্ধদেববাবু একটি নর রাক্ষস। তবে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এরাও ছিল প্রিভিলেজ ক্লাস। বুদ্ধদেব বাবু এদের কথায় অনবরত ঘাড় নাড়তেন। এদের সমীহ করতেন। সমর্থন করতেন। গুরুত্ব দিতেন। ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়া বেশ সক্রিয়। মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরা ক্যামেরা এবং বুম নিয়ে হাইকোর্ট চত্ত্বর থেকে শুরু করে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিস, নেতাদের বাড়ি ছুটে যাচ্ছেন। অনবরত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার বিষয় তুলে ধরছেন। রাজনীতি থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সাক্ষাৎকার প্রচার করছেন। এইরকম দুটি সাক্ষাৎকার ইউটিউবে পাওয়া গেল। এই দুজন বাংলা থিয়েটারের জগতের প্রবীণ মানুষ। শ্রদ্ধার আসনে বসে থাকা মানুষ। শত শত নাট্যকর্মীদের কাছে রোল মডেল। এদের কথা শোনার জন্য নাট্যকর্মীদের একটা অংশ চন মন করে ওঠে।

বাংলা থিয়েটার এর ক্ষেত্রে এদের কথা বেদ বাক্যের মত গ্রহণ করা হয়। এরাও নিজেদের কেউকেটা মনে করেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, ভারতীয় থিয়েটারের ক্ষেত্রে এদের কতটুকু ভূমিকা রয়েছে? উৎপল দত্ত শম্ভু মিত্রদের পাশে এরা কি দাঁড়াবার যোগ্য? কোন কোন ক্ষেত্রে এদের প্রতিভাযুগ কে নতুন পথ দেখিয়েছে? অভিনয় এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে এদের কাজ কি ব্যতিক্রমী? বলা বাহুল্য ধরণী ঘোষ অনেক দিন প্রয়াত। তাঁর মত ক্ষুরধার নাট্য বিশ্লেষক আর তো তেমন খুঁজে পাওয়া গেল না! এসবের উত্তর তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যেত। বিগত চল্লিশ বছর ধরে পরস্পর পিঠ চুলকে দেবার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে। কর্পোরেট মিডিয়াতে এদের কাজের স্তুতি প্রশংসা দেখে ভাববার কোন কারণ নেই যে এরা জাতীয় মানকে স্পর্শ করতে পেরেছে। প্রথম থেকে এরা বামপন্থী মুখোশ ঝুলিয়ে রেখেছেন।

আসলে এরা সুযোগ পন্থী। চীন ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ, কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজন, নকশাল আন্দোলন, সিঙ্গুর থেকে রতন টাটাকে বিতরণ, রেজওয়ানু কান্ড ইত্যাদি সময় এদের মুখোশ খুলে পড়ে। বর্তমানে এদের বয়সের ভারে কোন কাজ নেই। সেহেতু এরা ক্যামেরার সামনে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। যেমন একজন বললেন, আমার কাছে বাম পন্থা আর দক্ষিণ পন্থার কোন পার্থক্য নেই। আমি রাজনীতি বুঝি না। তবে মনে করি রাজনীতি খুবই খারাপ বিষয়। আর একজন বললেন, আমাকে কি এই বয়সেও মোমবাতি নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে হবে? দুর্নীতি ভারতীয় গণতন্ত্রের সঙ্গে মানানসই। সেহেতু বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলকে আক্রমণ করতে পারবো না। বর্তমান সরকারের পরিবর্তন চাই না। একজনের তো জ্যোতি বসুর বিরুদ্ধে সীমাহীন রাগ আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়লো। ভট্টাচার্য্য ভালো মানুষ। তবে পলিটিক্সে বেমানান। তৃণমূল নেত্রী সজ্জন। ভালো লোক। ভালো কাজ করতে চান। বামফ্রন্ট যা সব করেছে সবই পলিটিক্সের জন্য। মানুষের কাজ কোথায় হল?

এরা কেউ এই সময়ের ঐতিহাসিক শিক্ষা দুর্নীতি দেখতে পান না। বর্তমান সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে বামফ্রন্টের নেতাদের তফাৎ খুঁজে পান না। খুঁজে না পাওয়াটা এদের দোষ নয়। বর্তমান সরকারকে আদর্শ সরকার মনে করাটা এদের গণতান্ত্রিক মনোভাবের দিক। কোন স্বৈরাচারী, ফাসিস্ট, চম্বলের ডাকাত দলকে সমর্থন করবার অধিকার সম্ভবত সংসদীয় গণতন্ত্রে পাওয়া যায়। সেই অধিকার বলে এরা যা খুশি বলতে পারেন। ঘন ঘন নিজেদের অবস্থান বদল করতে পারেন। আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা এদের অনুগামীদের কাছে সবিনয় কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরব। যেমন এদের একদা সঙ্গী তথা বন্ধু প্রখ্যাত ভাষাবিদ। অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে মত প্রকাশ করেছেন, তৃণমূল নেত্রীর কবিতা গুলো ননসেন্স ছাড়া আর কিছু না। উনার লেখায় কোথাও সাহিত্য নেই। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য সহ আরো অনেকেই বলেছেন, ওই মহিলা প্রতি হিংসা পরায়ণ। দুর্নীতিগ্রস্ত। ১১ বছর ধরে বাংলার সর্বনাশ করেছে। প্রখ্যাত অধ্যাপক ডক্টর অমল মুখোপাধ্যায় ও একই রকম মত প্রকাশ করেছেন।

আমাদের প্রশ্ন এইরকম,
১/ আপনি কি নেত্রীকে ডিলিট পাওয়ার মত যোগ্য কবি বা সাহিত্যিক মনে করেন?
তাহলে ভেজাল ডক্টরেট পাওয়াটা সমর্থন করেন?
ওই ধরনের মিথ্যাচার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসা যায়?
২/ আপনার কি মনে হয় ওই মহিলা যোগ্য প্রশাসক? জ্যোতি বসু, প্রফুল্ল সেন, সিদ্ধার্থ শংকর রায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এদের অতিক্রম করে ফেলেছেন?
৩/সারা ভারতের সঙ্গে বাংলার প্রায় প্রতিটি মানুষ আজ বিশ্বাস করে, বর্তমান সরকার সমস্ত দিক থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত! এই দলে যারা রয়েছে তাদের অধিকাংশ গুন্ডা, ডাকাত, দুর্নীতিগ্রস্তদের একটা ক্লাব।
পরিবর্তনের নামে বাংলার এত বড় সর্বনাশ আর কখনো হয়নি।
৪/ ভারতবর্ষ কেন গোটা পৃথিবীতে তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান করেও খুঁজে পাওয়া যাবে না এই রাজ্যে যেভাবে ব্যাপক অর্থে শিক্ষা দুর্নীতি হয়েছে! এবং এটা সংগঠিত ক্রাইম! প্রশাসনের মাথা থেকে পা পর্যন্ত এই ক্রাইমের সঙ্গে যুক্ত! এক্ষেত্রে সরকারের প্রধান ব্যক্তি নিজেকে দায় মুক্ত করতে পারেন না।

এইসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর আমরা আপনাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করছি। শিল্পী সাহিত্যিকরা সমাজের কণ্ঠস্বর হিসেবে চিহ্নিত হন। প্রতিটি দেশে, সমাজে, এবং যুগে যুগে এইসব মানুষদের মর্যাদা প্রায় ঈশ্বরের তুল্য। খাদ্য দ্রব্য, ওষুধপত্রে ভেজাল দেওয়ার থেকেও অনেক বড় ক্রাইম শিল্প ক্ষেত্রে ভেজালের কারবার।

এতক্ষণ এই লেখাটা পড়বার পর, নাট্য জগতের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলবেন, প্রথম জীবনে এদের লড়াই সংগ্রাম ছিল। সেটাকে অস্বীকার করা যায় কি? আমাদের উত্তর, রত্নাকার দস্যু থেকে বাল্মিকী হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া আমাদের অজানা নয়। এটাই তো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। উল্টো রকম হলে প্রশ্ন থেকে যায়। আমাদের সামনে রবীন্দ্রনাথ সবচেয়ে বড় আদর্শ। তিনি যত এগিয়েছেন, নিজেকে বিশ্ব পথিক করে নিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সে এসেও শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পথের মিছিলে সামিল হয়েছেন। আর তাই বলতে চাই যে, অতীতের জীবন সংগ্রামের ছবি দেখিয়ে, শীতঘুমে চলে যাওয়াটাকে মহিমান্বিত করা যাবে না। আমি আগেই বলেছি মুখোশের দাম যাচাই করে নিতে হবে। দেখে নিতে হবে ওটা ছৌ নাচের শিল্পীদের মুখোশ নাকি, সীতা হরণকারী রাবণের ছদ্মবেশ।