অশোকনগর নাট্যমুখে অব্যাহত ‘জয়’ যাত্রা – বিজয়কুমার দাস

অশোকনগর নাট্যমুখের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা জয় চক্রবর্তীর অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে। এজন্য টালিগঞ্জে তার একটা লড়াই এর ইতিহাস আছে। এমত সময়ে পরিচালক শোভন দাশগুপ্ত জয়কে বলেছিলেন অ্যাক্টিং এর উন্নতি করতে হলে নাটক অর্থাৎ থিয়েটারে যোগ দাও। থিয়েটারের জগৎটা তখন অচেনাই ছিল অশোকনগরের সুদর্শন যুবক জয়ের। তার চোখে তখন চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্ন। তাই, খুঁজতেই হল একটা নাটকের দল।

নাটক সম্পর্কে অভিজ্ঞতা তখন শূন্য। শুধু ছোটবেলায় মায়ের হাত ধরে কিছু থিয়েটার দেখার স্মৃতি। অন্ধকারে আলোর দিশা দেখাল ছোটবেলার বন্ধু সমীরণ। আসলে সমীরণ তখন একটা থিয়েটারের দলে কাজ করত। সেই সমীরণের হাত ধরেই জয় চলে এল অশোকনগর নাট্যমুখের ঠিকানায়। সেই দলের সঙ্গে জয় জড়িয়ে গেছে থিয়েটারের টানে।

অশোকনগরেই জয়ের বেড়ে ওঠা এবং বড় হওয়া। অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুল, চৈতন্য কলেজের সীমানা ডিঙিয়ে জয় জড়িয়ে আছে অভি চক্রবর্তীর অশোকনগর নাট্যমুখের সঙ্গে।

শুরুটা হয়েছিল পথনাটক দিয়ে। তারপর ২০০৬ অথবা ২০০৮ এইরকম একটা সময়ে প্রথম মঞ্চে নামা দিবারাত্রির গদ্য নামের নাটক দিয়ে। চরিত্রের নাম ছিল লকা। যদিও নাটকে থেকে যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে জয় আসেনি। এসেছিল অভিনয়টা ভাল করে শিখে নিতে। কিন্তু থিয়েটার ছেড়ে সে যায়নি।হয়তো থিয়েটারই ছাড়েনি তাকে। তাই অশোকনগর নাট্যমুখে জয় হয়ে উঠেছে অনিবার্য এবং নির্ভরযোগ্য মুখ। দলের সবরকম কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিল জয়। যদিও পরে অভিনয়েই বেশি জোর দিয়েছে। তেমন করে প্রথাগতভাবে কর্মশালা বা প্রশিক্ষণ নয় – থিয়েটার করতে করতে আর নাটক তোলাতে তোলাতেই জয় অভিনয়ের খুঁটিনাটি শিখেছে। অশোকনগর নাট্যমুখের দুই নির্মাতা মুখ অভি চক্রবর্তী আর সঙ্গীতা চক্রবর্তীর সঙ্গে নানা অভিনয়ের পাশাপাশি দমদম গোত্রহীন দলের সুপ্রতিম রায়, রাজেশ দেবনাথের সবুজ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের লেডি ম্যাকবেথ ইত্যাদির সঙ্গেও কাজ করেছেন। পার্থসারথি রাহার প্রতিবিম্ব যুক্ত হলেও মঞ্চ পর্যন্ত এগোয়নি।

করোনায় থিয়েটারের ক্ষতি হলেও তার দল অশোকনগর নাট্যমুখ বিকল্প একটা পথ খুঁজে নিয়েছিল। নিজেরাই অশোকনগরে অমল আলো থিয়েটার স্পেস গড়ে নিয়ে থিয়েটার করার কাজে নিয়োজিত ছিল। কিন্তু বাইরের আমন্ত্রিত অভিনয় থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়েছিল। এটাকেই সে ক্ষতি বলে মনে করে।থিয়েটারের দল একটা পরিবারের মত হয়ে যায়। এটা তার থিয়েটারে আগামীতে যুক্ত থাকতে চাওয়ার একটা কারণ। তবে জয় এখনও জানে না, ইচ্ছা থাকলেও আগামীতে থিয়েটারেই থেকে যেতে পারবে কিনা। কারণ থিয়েটারকে রুটিরুজির মাধ্যম হিসাবে বেছে নেওয়ার একটা ঝুঁকি তো আছেই। করোনার সময় জয় দেখেছে, থিয়েটারজীবীদের কাছে বেঁচে থাকার লড়াইটা কত কঠিন। তবে থিয়েটারের প্রতি তার একটা অমোঘ টান তৈরি হয়েছে সেটা সে অনুভব করতে পারে।

অভিনীত সব চরিত্রই জয়ের প্রিয়। তবে লোহার দাম নাটকে একটা অদ্ভুত টাইপের চরিত্রে অভিনয় তার কাছে অন্যরকম অভিজ্ঞতা। থিয়েটার ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, ওটিজি প্লাটফর্মে, ইউটিউবে,শর্ট ফিল্মে, ভিডিও অ্যালবামে অভিনয়কে সম্বল করে লড়ে যাচ্ছে জয় চক্রবর্তী। ব্রাইডাল ফটোগ্রাফির সঙ্গেও যুক্ত সে। সে বলে, থিয়েটার খুব বড় একটা ব্যাপার। তাই থিয়েটার নয়, নাটক করি।একজন পরিপূর্ণ অভিনেতা হয়ে ওঠার লড়াই চলছে নাটককে কেন্দ্র করে। পারিবারিক সহযোগিতার পাশাপাশি মানসিক জোরকে সম্বল করে নাটকের মঞ্চে জয় নিজেকে প্রতিষ্টা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিবারাত্রির গদ্য, আবুল বাশারের কাগজের নৌকো, রবি ঠাকুরের মুক্তধারা বিষণ্ণজন সহ লোহার দাম, কন্যা তোর,বিদ্যাসাগর, কুহকিনী বীররাত্রি,মিঃ রাইট প্রভৃতি নাটকের পাশাপাশি বেশ কিছু চলচ্চিত্র, ধারাবাহিকেও কাজ করেছে। জয়ের লক্ষে এভাবেই এগিয়ে চলেছে নাট্যমুখের জয়।

5 thoughts on “অশোকনগর নাট্যমুখে অব্যাহত ‘জয়’ যাত্রা – বিজয়কুমার দাস

  1. একত্রে কাজ করে যেতে হবে এইটুকুই ভবিতব্য। দেখা যাক।

  2. আগেই পড়েছি …এই সাফল্য তোর নিজের কঠোর পরিশ্রমের …ভালো থাকিস আরো ভালো অভিনয় দেখতে চাই 💖❤💖❤

  3. Wishing to Joy a very happy and successful life as an Actor, as a human being . My endless good wishes for Ashokenagar Nattyamukh forever .

  4. আমি গর্বিত আপনার মতো অভিনেতার সাথে একই মঞ্চে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি।
    আরো অনেক কাজ করুন সব ক্ষেত্রেই।
    ভালো থাকুন।

Comments are closed.