নাটক | ক্ষীরের পুতুল | অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর | অভি চক্রবর্তী | ২

আগে যা ঘটেছে

এক দেশে এক রাজা ছিল। তার ছিল দুই রাণী। নিঃসন্তান রাজা বড়রাণীর চেয়ে ছোটরাণীকে বেশি ভালোবাসত। একদিন রাজা দূর দেশে ভ্রমণে যাবেন তাই দুই রাণীর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করেন বিদেশ থেকে কি আনবেন উপহার। ছোটরাণীর চাহিদার শেষ নেই আর বড়রাণী বলেন রাজা ভালো ভাবে ফিরে আসলেই হবে তারপরও রাজার আদেশে একটি মুখপোড়া বাঁদর আনতে বলেন। সৈন্য সামন্ত হাতি ঘোড়া নিয়ে বিদেশ পারি দিলেন রাজা। কয়েক মাস পর সুস্থ ভাবে ফিরে আসার সময় ছোটরাণীর জন্য সব কিনে আনলেন কিন্তু বড়রাণীর উপহারের কথা গেলেন ভুলেন। রাজপ্রাসাদে এসে রাজার মনে পরলো বড়রাণীর কথা। মন্ত্রীকে আদেশ দিলেন যেখান থেকে পারো নিয়ে এসো একটা মুখ পোড়া বাঁদর।

পরের অংশ

সেখানে এসে রাজা দেখেন, ছোটরাণী সাততলা মহলে, সোনার আয়নার সামনে বসে, সোনার কাঁকুইয়ে চুল চিরে, সোনার কাঁটা দিয়ে চুল বাঁধছিলেন। পায়ে সখীরা আলতা পরিয়ে দিচ্ছে কেউ কেউ, পানের বাটা এগিয়ে দিচ্ছে কেউ- রাজা ঢুকলেন তখনই।

রাজা- এই নাও রাণী , তোমার আদেশ মতো আমি মাণিকের দেশ থেকে মাণিকের চুড়ি, পায়ের মল, রত্নখচিত মুক্তোর হার, ছ’মাস ধরে জ্যোৎস্না আলোয় বোনা নীল রেশমের শাড়ি সব এনেছি। (বলতে বলতে রাজা ছোটরাণীর পাশে বসেন)

রাণী সব নিলেন, দু’গাছা চুড়ি পরলেন হাতে। কিন্তু তার হাতে ঢিলে হল, দু’পায়ে দশগাছা মল পরলেন কিন্তু আলগা হয়ে সে মল খসে পড়ল। রাণীর মুখভার হয়ে এলো, হার গলায় পরতে গিয়ে দেখলেন, সে হার খাটো হয়েছে। গলায় লাগল ব্যাথা। চোখের জল নিয়ে নীল রেশমের শাড়ি পরতে গেলেন রাণী, তাও বহরে ছোট হল। তখন অভিমানিনী ছোটরাণী আট-হাজার মানিকের আট-গাছা চুড়ি খুলে ফেলে, নিরেট সোনার দশ-গাছা মল পায়ে ঠেলে, মুক্তোর মালা, শখের শাড়ি ধুলোয় ফেলে বল্লেন, ‘ছাই গয়না! ছাই এর শাড়ি! কোন পথের কাঁকড়, ধুলোবালি, নুড়ি পাথর জড়ো করে এসব বানানো মহারাজ? এ কার বাসি হার? এ কোন রাজকন্যের পরা শাড়ি? নিয়ে যাও তুমি। অনেক হয়েছে। আমাকে একা থাকতে দাও।

(দরজায় খিল দিলেন রাণী।)

রাজা তখন মলিন মুখে
এলেন রাজসভায়
বানর নিয়ে বসে আছেন
একা মন্ত্রীমশায়

মহারাজ- মন্ত্রী বড় আশ্চর্য হলাম, মাপে মাপে সমস্ত কিছু বেছে বেছে আনলাম ছোটরাণীর জন্য কিন্তু কিছুই তার গায়ে হলনা।

হঠাৎ বানরছানা রাজার পায়ে প্রণাম করে বল্লো,

বানর- বড় ভাগ্যবতী, পুণ্যবতী না হলে দেবকন্যের হাতে বোনা, নাগকন্যের হাতে গাঁথা, মায়া-রাজ্যের এ মায়া-গহনা, মায়া-শাড়ি পরতে পারেনা। মহারাজ, রাজভান্ডারে ওসব তুলে রাখ। যাকে বৌ করবে তাকে পরতে দিও।

মহারাজ- মন্ত্রী তোমার এ বানর বলে কি? ছেলেই হলনা বৌ আনব কেমন করে? মন্ত্রী তুমি স্যাকরার দোকানে ছোটরাণীর জন্যে নতুন গহনা গড়তে দাও গে। তাঁতির তাঁতে রাণীর নতুন শাড়ি বুনিতে দাও গে। এ-গহনা, এ – শাড়ি রাজভান্ডারে তুলে রাখ; যদি বৌ ঘরে আনি তাকে পরতে দেব।

(রাজা বেরিয়ে গেলেন, চল্লেন বড়রাণীর ঘরের দিকে। সেখানে গিয়ে দ্যাখেন ছেঁড়া কাঁথা পেতে বড়রাণী শুয়ে আছেন। সেটা আরো ছড়িয়ে দিয়ে, রাজার পা ধুয়ে দিতে দিতে বলেন)

বড়রাণী- এসো রাজা। আমার এই ভাঙা ঘরের ছেড়া কাঁথায় বোসো। আমার আর কি আছে যে তোমায় বসতে দেব? কতোদিন তুমি বিদেশ- বিভুঁয়ে কাটিয়ে এলে, আমি এমন অভাগিনী যে ছেঁড়া কাঁথা পেতে দিলুম তোমার জন্য।

রাজা-(বড়রাণীকে বানরছানা দিয়ে বল্লেন) মহারাণী তোমার এই ছেঁড়া কাঁথা ভাঙা ঘর, ছোটরাণীর সোনার সিংহাসন, সোনার ঘরের চেয়ে লক্ষগুণে ভাল। তোমার এ ভাঙা ঘরে আদর আছে, যত্নে ভরা মিষ্টি কথা আছে। ছোটরাণীর জন্য বহুকষ্টে আনা, ঝড় ঝঞ্ঝাকে জয় করে আনা সমস্ত উপহার সে ঠেলে ফেলে দিয়েছে আর সামান্য মূল্যে আনা এই বানরছানাকে তুমি আদরে কোলে তুলে নিলে, আমি আর তোমাকে দুঃখ দেবনা। আবার আসব আমি।

বড়রাণী- এসো রাজা। বারেবারে এসো।

মহারাজ- দেখো। এ আবার পাঁচকান না হয়ে ছোটরাণীর কান অব্দি না পৌঁছে যায় তাহলে কিন্তু সে আমাকে বিষ খাওয়াবে…

(রাজা চলে গেলেন, বড়রাণী বড় যত্নে সেই বানরছানাকে দুধ কলা দিয়ে মানুষ করতে লাগলেন একদিন বানর রাণীকে জিজ্ঞেস করলেন)

বানর- হ্যাঁ মা। তুই কেন কাঁদিস? সারাদিন দেখি তুই রাজবাড়ির দিকে চেয়ে থাকিস আর কান্না করিস! ওখানে তোর কে থাকে?

বড়রাণী- ওরে বাছা। ওখানে আমার সব আছে। আমার সাতমহলা রাজপ্রাসাদ আছে। সাতশো দাসী আছে। সাত সিন্দুক গহনা আছে। সাতখানা মালঞ্চ আছে। আর বাছা ঐ সাতমহল বাড়িতে রাজার ছোটরাণী আমার সতীন আছে। সেই রাক্ষসী ডাইনী আমার রাজাকে বশ করে, আমার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে আমাকে কাঙালিনী, ভিখারিনী করেছে।

বানর- এই জন্য তুই কাঁদিস মা? তোর দুঃখে আকাশ লালচে হয়ে ওঠে, গাছের পাতা বইতে ভুলে যায়, নদীর জলে থমকে থাকে অন্ধকার।

বড়রাণী- বাছা আমি তো সবই পেয়েছিলুম। রাজার মেয়ে ছিলুম। স্বামীও রাজাই ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যদেবী সব কেড়েও নিলেন, না জানি কতো জন্মের পাপে এসব ঘটল! আমি পাষাণী তাই এতো অপমান এতো দুঃখ এতো যন্ত্রণা সয়ে বেঁচে আছি।

(এসব কথা বলতে বলতে পুনরায় কেঁদে ফেললেন বড়রাণী। বানর তাকে বল্লেন)

বানর- মারে কাঁদিসনে। আমি তোর দুঃখ ঘোঁচাবো। তোর সাতমহল বাড়ি ফিরিয়ে আনবো। সাতশো দাসী আবার হাজির হয়ে যাবে তোর ফায়- ফরমাশ খাটতে। তোকে সোনার মন্দিরে রাজার পাশে বসতে হবে। পাশে থাকবে সোনার চাঁদ ছেলে। এসব আমি করবই তবে আমার নাম বানর। আমি যা বলি তা যদি করিস তবে রাজবাড়িতে তোর যেমন আদর যত্ন ঐশ্বর্য ছিল তেমনই ফিরে আসবে সব…

রাণী- (কাঁদতে কাঁদতে হাসতে হাসতে বলে) ওরে বাছা দেবতার মন্দিরে কত বলি দিয়েছি, তীর্থে তীর্থে পুজো চরিয়েছি তবু একটা রাজপুত্র কোলে পাইনি। আর তুই কোন বনের বানর যে আমাকে আবার রাজরাণী করে কোলে রাজপুত্র এনে দিবি?

বানর- মা তুই আমার কথায় বিশ্বাস কর তুই রাজপুত্র পাবি।

রাণী- কেনো বাছা মিথ্যে সান্ত্বনা দিস! তার চেয়ে বরং আমার রাজা সুখে থাক, আমার সতীন সুখে থাক, আমার যে দুঃখ সে দুঃখই থাক। তোর এ অসাধ্য সাধন করতে হবে না। রাত হলো তুই ঘুমোতে যা।

বানর- আমার কথা না শুনলে আমি ঘুমাব না।(বানর জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে)

রাণী- ওরে তুই ঘুমো, রাত যে অনেক হল! পূব-পশ্চিমে মেঘ উঠলো, আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি এলো, রাজ্য জুড়ে ঘুম এলো। তুই এবার ঘুমো বাছা।

বানর- বললাম তো আমার কথা না শুনলে আমি ঘুমাবো না।

রাণী- কাল যা বলবি তাই শুনবো আজ তুই ঘুমতে যা। ভাঙা ঘরে দুয়ার দিয়েছি, ঝড় উঠেছে, ঘরের মাঝে কাঁথা পেতেছি শীত লাগছে। তুই দুধের বাছা, আমার কোলে, বুকের কাছে ঘুমিয়ে পর।(বাঁদর রাণীর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো, রাণীও ছেঁড়া কাঁথায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো, এমনি করে রাত কাটলো)

দৃশ্যান্তর

রাজসভা
(রাজা বসে আছেন। মন্ত্রী, সিপাই, কোটাল এবং অন্যান্য সভাসদরা রাজা কে ঘিরে রয়েছেন। নির্দেশক নিজের পছন্দ মত দৃশ্যটি তৈরী করে নেবেন)

সভার ভীড় এড়িয়ে বানর মহারাজাকে গিয়ে প্রণাম করে বলে।

বানর- মহারাজ বড়ো সুখবর এনেছি। মায়ের আমার ছেলে হবে।

রাজা- ওরে বানর বলিস কি! একি সত্যি কথা? বড়রাণী মানে দুয়োরাণী তার ছেলে হবে! দেখিস এ কথা যদি মিথ্যে হয় তোকেও কাটবো, তোর মা দুয়োরাণী কেও কাটবো।

বানর- মহারাজ সে ভাবনা আমার, এখন আমায় খুশী করো, আমি বিদায় নি।

(রাজা গলার গজমতি হার খুলে বানর কে দিলেন বানর সেটা নিয়ে রাজসভা ত্যাগ করলো।)

দৃশ্যান্তর

বড়রাণীর ঘর

বড়রাণী একা শুয়ে কাঁদছেয়।

বানর- এই দেখ মা তোর জন্য কি এনেছি।

রাণী- সকাল থেকে তোর দেখা নেই কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছিস, আমার বুঝি চিন্তা হয়না?

বানর- তুই রাজার রাণী গলায় হার দিতে পাসনে, কাঠের মালা কিনে পড়িস, এই নে মুক্তোর মালা পড় (হারটা দিয়ে দেয়)

রাণী- এ হার তুই কোথায় পেলি? এ যে রাজার গলার গজমোতি হার! যখন রাণী ছিলুম রাজার জন্য গেঁথে ছিলুম। বল বানর রাজা কি এ হার ফেলে দিয়েছেন? তুই কি রাজ পথে কুড়িয়ে পেলি?

বানর- না মা কুড়িয়ে পাইনি। তোর হাতে গাঁথা গজমোতির হার সে কি রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া যায়!

রাণী- তবে কি রাজার ঘরে ঢুকে চুরি করলি?

বানর- ছিঃ ছিঃ মা! চুরি কি করতে আছে? আজ রাজাকে সুখবর দিয়েছি তাই উনি খুশী হয়ে দিয়েছেন।

রাণী- ওরে বাছা, তুই যে দুঃখীর সন্তান রাজাকে কি এমন সুখবর দিলি?

বানর- মা আমি স্বপ্নে পেয়েছি আমার যেন ভাই হয়েছে, তোর কোলে খোকা এসেছে । সেই খোকা যেন রাজ সিংহাসনে বসেছে। তাই ছুটে রাজাকে খবরটা দিলুম। তাই রাজা খুশী হয়ে গলার হার দিলেন।

রাণী- ওরে রাজা আজ শুনলেন ছেলে হবে, কাল শুনবেন মিছে কথা, তুই এ কি করলি! মিছে খবর কেনো রটালি?

বানর – মা তুই কেনো এত ভাবিস? দশ মাস দশদিন চুপ করে থাক। সবাই জানুক বড়রাণীর ছেলে হবে, তারপর রাজা যখন ছেলে দেখবেন তখন তোর কোলে সোনার চাঁদ ছেলে দেব, তুই রাজাকে দেখাস। এখন চল বেলা হলো খিদে পেয়েছে।

রাণী- চল বাছা চল, বাটি ভোরে জল রেখেছি গাছের ফল এনে রেখেছি, পেট পুরে খাবি চল।

(রাণী আর বানর খেতে থাকে, দৃশ্য বদলে যায়)

ছোটরাণীর ঘর

(ছোটরাণী একা বসে আছেন পালঙ্কে এমন সময় রাজা প্রবেশ করে)

রাজা- রাণী শুনেছ বড়রাণীর ছেলে হবে, বড়ো ভাবনা ছিল রাজসিংহাসন কাকে দেবো! এতদিনে সেই ভাবনা কাটলো।

(ছোটরাণী রাজার দিকে সপ্রশ্নে তাকায়)

রাজা- যদি ছেলে হয় তবে তাঁকে রাজা করবো আর যদি মেয়ে হয় তবে তাঁর বিয়ে দিয়ে জামাইকে রাজ্য দেব। রাণী বড় ভাবনা ছিল, এতদিনে নিশ্চিন্ত হলুম।

রাণী- পারিনে বাপু আপনার জ্বালায়, পরের জন্য ভেবে মরেন?

রাজা- সেকি রাণী, এমন সুখের দিনে এমন কথা বলতে হয়? রাজপুত্র কোলে পাবো রাজ সিংহাসনের রাজা করবো, এ কথা শুনে মুখ ভার করে কেউ ? রাণী রাজ বাড়িতে সবার মুখে হাসি, তুমি কেনো অকল্যাণ চাও ?

রাণী- আর পারিনে! কার ছেলে রাজা হবে, কার মেয়ে রাজ্য পাবে, কে সিংহাসনে বসবে এত ভাবতে পারিনে, নিজের জ্বালায় মরি। পরের ছেলে মেয়ে বাঁচলো কি মরলো তার খবর রাখিনে।
(রাগ দেখিয়ে ছোটো রাণী আট গাছা চুরি দশ গাছা মল ঝমঝমিয়ে এক দিকে চলে যান)

সূত্রধর- রাজার ভারী রাগ হলো, রাজ কুমারকে ছোটরাণী মর বললো। মুখে তার অন্ধকার নেমে এলো, রাজা রাণী তে ঝগড়া হল। রাজা আর ছোটরাণীর মুখ দেখেন না, বড়রাণীর ঘরেও যান না, পাছে ছোটরাণী বড়রাণীকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে! রাজা বাইরের মহলে একলাই থাকেন। এক মাস, দুমাস, তিনমাস ঝগড়ায় ঝগড়ায় ছোটরাণীর সঙ্গে চার মাস কাটে রাজার। পাঁচ মাসের সময় বানর আসে রাজার সঙ্গে দেখা করতে)

দৃশ্যন্তর

রাজা আর বানর মুখোমুখি

বানর- মহারাজ মায়ের বড় দুঃখ, মোটা চালের ভাত মায়ের মুখে রোচে না। মা আমার না খেয়ে-খেয়ে কাহিল হয়ে পড়েছে।

রাজা- এ কথা তো আমি জানি নে। মন্ত্রীবর , যাও এক্ষুণি সরু চালের ভাত, পঞ্চাশ ব্যঞ্জন সোনার থালে সোনার বাটিতে সাজিয়ে বড়রাণী কে পাঠিয়ে দাও, আজ থেকে আমি যা খাবো বড়রাণীও তাই খাবে। যাও মন্ত্রী বানর কে হাজার মোহর দিয়ে বিদায় করো।

(মন্ত্রী বানর কে বিদায় করে রান্না ঘরে গেলেন আর বানর রাণীর কাছে গেলেন)

দৃশ্যান্তর

রাণী বানর মুখোমুখি হয়

রাণী- কিরে আজ আবার কোথায় ছিলি? এতখানি বেলা হলো রাঁধবো কখন আর খাবো কখন?

বানর – মা আর তোকে রাঁধতে হবে না, রাজবাড়ি থেকে সোনার থালায় সোনার বাটিতে খাবার আসবে, তাড়াতাড়ি নেয়ে আয় তুই।

সূত্রধর- রাণী তো নাইতে গেলেন সেই ফাঁকে বানর এসে এক মুঠো মোহর নিয়ে বাজারে গেলো। ষোল থান মোহর, ষোল জন ঘরামী নিলেন, ষোল গাড়ি খড় নিলেন ষোলশ বাঁশ নিলেন। সেই ষোলশ বাঁশ, ষোল গাড়ি খড় দিয়ে ষোল জন ঘরামী খাটিয়ে চোক্ষের নিমেষে দুয়োরাণীর ভাঙা ঘড় নতুন করে তুললেন। শোবার ঘড়ে নতুন কাঁথা এলো। খাবার ঘড়ে পাতা হলো নতুন পিঁড়ি , তখনই রাজ বাড়ির ষোল বামন মিলে রাণীর ভাত নিয়ে এলো।

(এ দিকে দুয়োরাণীও নেয়ে এলো, এসে দেখে সব কিছু নতুন চারিদিকে বানর কে জিজ্ঞাসা করল)

রাণী- ভাঙা ঘড় দেখে ঘাটে গেলুম, এসে দেখি নতুন ঘর, কেমন করে এলো?

বানর- মা রাজা মশাই মোহর দিয়েছেন তাতেই সব কিছু, তুই এখন খেতে বসবি চল।

সূত্রধর- রাণী খেতে খেতে ভাবেন ,আজ রাজা সোনার থালে খাবার পাঠিয়েছেন, কাল শশ্মানে নিয়ে মাথা কাটবেন।

এমনি করে দিন চলে যায়
মাসের পরে মাস
দুয়োরাণীর বাড়িতে ঘনায় দীর্ঘশ্বাস,

চাল ফুটো হয় ভাঙে দেয়াল
শীত ঢুকে যায় ঘরে
বানরকে দ্যাখা যায় রাজার দরবারে,

রাজসভা

বানর – মহারাজ ভাঙা ঘরে শীতের তাণ্ডবে মায়ের আমার ঘরে থাকা দায়। আগু‌ন জ্বালাবার কাঠ নেই, গায়ে দেবার কাঁথা নেই-

মহারাজা- তাইতো তাইতো! বানর তোর মাকে রাজবাড়ি নিয়ে আয় – আমি মহল সাজাতে বলি –

বানর – মহারাজ মা-কে আনতে ভয় হয়, যদি ছোটরাণী বিষ খাইয়ে দ্যায়!

মহারাজ- সে ভয় নেই! নতুন মহলে রাণীকে রাখব – মহল ঘিরে গড় কাটাব – গড়ের দুয়ারে পাহারা বসাব। ছোটরাণী আসতেই পারবে না। সে মহলে বড়রাণী থাকবে, বড়রাণীর বোবা – কালা দাই থাকবে, আর বড়রাণীর পোষা ছেলে তুই থাকবি –

বানর – যাই তবে মহারাজ মাকে আনি।

রাজা – যাও মন্ত্রী, মহল সাজাও –

মন্ত্রী তখন লোকজন নিয়ে
লেগে গেল কাজে
সাজল তখন নতুন করে
রাজমহলের সাজে,

ছোটরাণী জ্বলে উঠল
এসব ঘটনায়
চুপিসাড়ে তখন তিনি
ডাকিনীকে ডেকে পাঠায়,

ব্রাহ্মণী, ডাকিনী ও ছোটরাণী মুখোমুখি

ডাকিনী – ভাই ডাকলে কেন? মুখ ভার চোখের কোণে জল – কি হয়েছে?

ছোটরাণী – হয়েছে আমার মাথা আর মুণ্ডু – সতীন আবার ঘরে ঢুকেছে, – যে সোনার শাড়ী পরেছে। নতুন মহল পেয়েছে – রাজার প্রেয়সী হয়েছে। ভিখারিনী দুয়োরাণী – রাজার মহল জুড়ে বসেছে – বামুন সই দেখে অঙ্গ পুড়ে গেল। আমার বিষ দে খেয়ে মরি। সতীনের এ আদর প্রাণে সয় না।

ছোটরাণী – না ভাই। বাঁচতে আর সাধ নেই। আজ বাদে কাল দুয়োরাণীর ছেলে হবে, সে ছেলে রাজ্য পাবে – লোকে বলবে, আহা দুয়োরাণী রত্নগর্ভা – মা হল! আর দেখ না – পোড়ামুখী মহারাজার সুয়োরাণী হলো, তবু রাজার কোলে দিতে ছেলে দিতে পারলো না! ছিঃ! ছিঃ! অমন অভাগীর মুখ দেখে না। নাম করলে সারাদিন উপোস যায়! ভাই – এ গঞ্জনা প্রাণে সবে না – তুই বিষ দে, হয় আমি খাই, নয়তো সতীনকে খাওয়াই।

ব্রাহ্মণী – ছি! ছি! ও কথা কী মুখে আনে কেউ? কোন দুঃখে বিষ খাবে, দুয়োরাণী আজ রাণী হয়েছে কাল ভিখারিনী হবে আবার – তুমি যেমন সুয়োরাণী তেমন -ই থাকবে –

ব্রাহ্মণী – চুপ কর রাণী। দেওয়ালেরও কান আছে। ভাবনা কি? চুপিচুপি বিষ এনে দেবো। দুয়োরাণীকে খেতে দিস। এখন বিদায় দে। বিশেষ সন্ধানে যাই।

ছোটরাণী – যা ভাই। কিন্তু দেখিস বিষ যেন আসল হয়। খেতে না খেতেই বড়রাণী যেন মাথা ঘুরে পরে।

ডাকিনী – ভয় নেই, ভয় নেই। বড়রাণীকে বিষ আমি খাওয়াবোই। জন্মের মতো মা হওয়া আমি ওর ঘোঁচাবো। তুই নির্ভয়ে থাক।

সূত্রধর – ডাকিনী গেল বিশেষ সন্ধানে। বনে বনে খুঁজে খুঁজে ভর সন্ধ্যাবেলা ঝোঁপের আড়ালে ঘুমন্ত সাপকে মন্ত্রে বশ করে, তার মুখ থেকে কালকুট বিষ এনে দিল। ছোটরাণী সেই বিষ দিয়ে খিড়ের নাড়ু, মুগের সাচ, মতিচুর মিঠাই গড়লেন। একতালা মিঠাই সাজিয়ে ডাকিনী ব্রাহ্মণীকে বললেন, ভাই এক কাজ কর এই বিষের নাড়ু বড়রাণীকে বেঁচে আয়। ব্রাহ্মণী বড়রাণীর কাছে যায়।

(ডাকিনী, ব্রাহ্মণী থালা হাতে এদিক থেকে ওদিক চলে গেল)

বড়রাণীর প্রাসাদ

ডাকিনী, ব্রাহ্মণী এসে দরজা ঠকঠক করে।

বড়রাণী – আয় লো আয়। এতদিন কোথায় ছিলি? দুয়োরাণী বলে কি ভুলে থাকতে হয়?

ডাকিনী – সে কি গো? তোমাদের খাই, তোমাদের পড়ি তোমাদের কি ভুলতে পারি। এই দেখো তোমার জন্য যত্ন করে ক্ষীরের নাড়ু, মুগের সাচ, মতিচূড় মিঠাই এনেছি।

বড়রাণী – ওমা! তাই তো। দে দে। (রাণী মিঠাই এর থালিটা নিলেন এবং ডাকিনীকে দুমুঠো মোহর দিয়ে বিদায় করলেন। আর ব্রাহ্মণী হাসতে হাসতে চলে গেলেন।)

সূত্রধর – এরপর রাণী ক্ষীড়ের সাচ ভেঙে মুখে দিলেন। জিভের স্বাদ চলে গেল। মুগের নাড়ু মুখে দিলেন, গলা কাঠ হয়ে এলো। মতিচুর মিঠাই খেলেন, বুক যেন জ্বলে গেল। বানরকে ডেকে বললেন, ব্রাহ্মণী আমায় এ কি খাওয়ালে? গা কেমন করছে। আমি মনে হয় আর বাঁচবোনা। (রাণী মূর্ছা গেলেন)

খবর গেল রাজবাড়িতে … রাজা দৌঁড়তে দৌঁড়তে রাণীর কাছে এলেন। সঙ্গে এলেন রাজবৈদ্য ,লোক লস্কর, দাসী-বাদি সবাই।

বানর – মহারাজ এত লোক কেন এনেছো? আমি মাকে ওষুধ দিয়েছি। মা ভালো আছে। মাকে একটু ঘুমোতে দাও। এত লোককে যেতে বলো।

রাজা – মহামন্ত্রী, আপনি আপাতত রাজ্য শাসনের দ্বায়িত্ব নিন আর আমাকে বড়রাণীর সঙ্গে একটু একা থাকতে দিন।

সূত্রধর – চারদিন পর জ্ঞান এলো মহারাণীর। বানর এসে মহারাণীকে খবর দিলেন, মহারাজ, বড়রাণী সেড়ে উঠেছেন। আপনার একটি রাজ চক্রবর্তী ছেলে হয়েছে —

রাজা – (বানরকে একটি হীরের হার উপহার দিল) চল বানর। বড়রাণী ও বড়রাণীর ছেলেকে দেখে আসি।

বানর – মহারাজ ,গণনা করে দেখলাম। এখন ছেলের মুখ দেখলে তোমার চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। তুমি বরং ছেলের বিয়ে হলে ছেলের মুখ দেখো। এখন বড়রাণীকে দেখে এসো, ছোটরাণী কি দুর্দ‌শা করেছে।

(রাজা বড়রাণীকে দেখতে গেলেন, গিয়ে দেখলেন বিষের জ্বালায় বড়রাণীর সমস্ত অঙ্গ কালো হয়ে গেছে। তাকে যেন চেনা যায়না)

সূত্রধর – দেখে রাজা ক্রোধে ফেটে পড়লেন। ছোটরাণীকে প্রহরীরা জেলখানায় বন্দি করলেন। এবং ডাকিনী বুড়িকে রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দিলেন। ঘোষক জানান দিল, রাজার হুকুম মতো সাড়া রাজ্য জুড়ে হবে আলোর উৎসব। মোহর বিছিয়ে দেওয়া হবে গরীব দুঃখীদের মধ্য। রাজ্যে জয় জয়কার হলো‌। এভাবেই নৃত্যনতুন আমোদে দেবতার মন্দিরে পুজো দিয়ে মাকালীর পায়ে বলি দিয়ে… দেখতে দেখতে ১০ বছর কেটে গেল।

রাজা – দশবছর তো পূর্ণ হলো। এবার ছেলে দেখাও।

বানর – মহারাজ, আগে ছেলের বৌ ঠিক করো। তারপর তার বিয়ে দাও। তারপর মুখ দেখো। এখন দেখলে তো অন্ধ হবে!

রাজা – ঠিক আছে। আমি দেশে দে‌শে আমার দূতদেরকে পাঠাচ্ছি রাজকন্যার সন্ধানে।

সূত্রধর – পাটুলি দেশের রাজকন্যাকে মনে ধরলো রাজার। তার অঙ্গের বরণ কাঁচা সোনার মতো। জোড়া ভ্রু যেন বাঁকা ধনুক। দুটি চোখ টানাটানা। দুটো ঠোঁট হাসি হাসি। এলিয়ে দিলে মাথার কেশ পায়ে পরে।

রাজা – ছেলের বৌ ঠিক করেছি। কাল শুভ দিন, শুভ লগ্নে বিয়ে দিতে যাবো।

বানর – মহারাজ, কাল সন্ধ্যাবেলা বরের পালকি মায়ের দুয়ারে পাঠিয়ে দিও। বরকে নিয়ে বিয়ে দিতে যাবো।

রাজা – দেখো বাবু, দশবছর তোমার কথা শুনেছি। কাল ছেলে না দেখলে অনর্থ হবে।

বানর – মহারাজ সেই চিন্তা নেই। তুমি বেয়াইবাড়ি চলে যাও, আমরা ঠিক সময়ে বর নিয়ে পৌঁছে যাবো‌।

রাজা : বেশ। এবারও তোমার কথাই শুনলাম।

সূত্রধর:- রাজা চল্লেন বেয়াইবাড়ি
খুব ভয়ে ভয়ে
সঙ্গে র‌ইলো বরযাত্রী
মিছিল শয়ে শয়ে,
ওদিকে
বানর গিয়ে অন্তঃপুরে
দেখে রাণী কাঁদছেন
ছেলে কোথায় পাবেন তিনি
এ নিয়েই ভাবছেন

বড়রাণী, বানর মুখোমুখি

বড়রাণী – বাছারে প্রাণে কী তোর ভয় নেই? কোন সাহসে ক্ষীরের পুতুল বর সাজিয়ে বিয়ে দিতে যাবি? রাজাকে কি ছলে ভোলাবি? বাছা কাজ নেই — তুই আর আমার পাপের বোঝা বাড়াস না — তুই বরং রাজাকে ডেকে আন আমি সব কথা খুলে বলি—

বানর – মা গো ওঠ! এসব কথা ভাবিসও না। ক্ষীরের ছেলে গড়ে দে — টোপর আন, চেলীর জোড় আন — বর সাজিয়ে বিয়ে দিয়ে আনি — আর রাজাকে কোথায় পাব এখন? দু’দিন হলো রাজা কনের বাড়ি সেখানে গ্যাছেন—

বড়রাণী – এসব তুই করিস নে বাছা—

বানর – মা তুই কথা রাখ। এখন বর না পাঠালে অপমান! তুই অতো ভাবিস নে – যদি ষষ্ঠীর কৃপা হয় তবে ষষ্ঠী দাস বাছা কোলে পাবি—

গানের দল: বানর ভরসা দিল
বানর ভরসা দিল
রানী গড়ল অপরূপ
ক্ষীরের পুতুল হলো

সোনার টোপর
জরির জুতোয়
আসল বর
বিল কুল
বানর ভরসা দিল

বানর ভরসা দিল
পুতুল পালকিতে তুলল
ক্ষীরের বরের
ছোট্ট পা-জোড়া
দেখা গ্যালো রঙীন জুতো
হাতে ফুল ধরা।

পালকি চলে
গগণ তলে
হুলস্থূল কাণ্ডে
রাণী তখন
একলা ঘরে
কাঁদে আনন্দে।

সূত্রধর – ধীরে ধীরে পালকি চলতে চলতে দিগ্‌নগর দীঘির ধারে যখন এসে পৌঁছল তখন ভোর হল। মশাল পুড়ে পুড়ে সিবে গেল, ঘোড়া ছুটে ছুটে বেদম হল, কাহার পালকি হয়ে হয়রাণ হল — ঢাক পিটে ঢাকির হাতে খিল ধরল — বানরের হুকুম মতো তাঁবু পড়ল দীঘির পারে, ‘কেউ যেন এখন বরকে না দেখে’ এই নির্দেশ ছড়িয়ে পড়ল চারিধারে — এমনকি গাঁয়ের বৌ-ঝিরা ষষ্ঠীঠাকুরণের পুজো দিতে এলে, রাজার পাহারা হাঁকিয়ে দিলে। বানর মনে মনে হাসতে লাগল—

ষষ্ঠীঠাকুর – বাঁচা গ্যালো। বানরটা গ্যাছে। এবার বেরোনো যাক। পেট খিদেয় জ্বলে গ্যালো মাঈরী। কিন্তু কি হলো? আজ তো কোনো নৈবেদ্যর ফল প্রসাদ, চাল কলা জুটল না। ( পালকির কাছে এগোয় ) আরে এ তো ক্ষীরের পুতুল! ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি তোরা যে যেখানে আছিস জলদি আয়। সবার চোখে ঘুম দে। আমি এই ডুলির ভিতরকার ক্ষীরের পুতুলটি খাই।

(সব্বাই যে যেখানে ছিল ঘুমিয়ে পড়তে লাগল, নির্দেশক পছন্দমত মঞ্চ সজ্জা তৈরি করবেন। )
(ক্ষীরের পুতুলটি খেতে খেতে) আঃ! কি দারুণ – নে বেড়ালেরা তোরাও খা (ছুড়ে দেন) নাও গো মাসিপিসিরা তোমরাও খাও (দুটো হাত ছুড়ে দিলেন)— আঃ শান্তি – যাই এবার আবার কাঠামোয় ঢুকে যাই —
(বানর বেরিয়ে ষষ্ঠীঠাকুরণের পথ আটকায়)

বানর – ও ঠাকুরণ পালাও কোথা – আগে ক্ষীরের ছেলে দিয়ে যাও — চুরি করে ক্ষীর খেয়ে ধরা পড়লে – বিশ্বজোড়া কলঙ্ক রটাব।

ষষ্ঠী – আঃ, মর! এমুখপোড়া বলে কি! সর – সর, আমি পালাই, লোকে আমায় দেখতে পাবে।

বানর – তা হবে না, আগে ছেলে দাও – তবে ছেড়ে দেব, নয়তো কাঠামো সুদ্ধ আজ তোমায় দিঘীর জলে চুবিয়ে মারব।

ষষ্ঠী – (কাঁপতে কাঁপতে লজ্জায়) ছি! ছি! চুপ কর – কে কোন দিক থেকে শুনতে পাবে – বটতলায় আমার ছেলেরা খেলা করছে তোর যেটিকে পছন্দ সেটিকে নিয়ে বিয়ে দেগে যা, আমার বরে দুয়োরাণী তাকে আপনার ছেলের মতো দেখবে। এখন আমায় ছেড়ে দে।

বানর – ক‌ই ঠাকুরণ বটতলায় তো ছেলেরা নেই। আমায় দিব্যচক্ষু দাও তবে তো ষষ্ঠীর দাস ছেলেদের দেখতে পাব।

সূত্রধর – ষষ্ঠীঠাকুরণ বানরের চোখে হাত বোলালো, বানর দিব্যদৃষ্টি পেল, বানর দেখল নানারকম ছেলে কেউ শ্যামলা, কেউ ধলা কারো পায়ে নুপুর, কেউ লাল জুতো পায়ে হাঁটছে — কেউ দস্যি কেউ লক্ষ্মী – কেউ টাট্টু ঘোরায় টগবগ করছে তো কেউ দীঘির জলে মাছ ধরছে, কেউ স্নান করছে, কেউ ফুল তুলছে, চারিদিকে খেলাধুলো, মারামারি, হাসিকান্নার পালা চলছে। বানর সেখান থেকে শ্রেষ্ঠ ছেলেটিকে যেই না তুলে নিল সঙ্গে সঙ্গে বানর দেখল এতোক্ষণের মায়া রাজ্য হারিয়ে গ্যাছে — একজন মা ছেলেকোলে বটতলার ধারে একা দাঁড়িয়ে আছে। বানর তাড়াতাড়ি লোকজন ডেকে সেই সোনার চাঁদ ছেলেটিকে পাল্‌কি চড়িয়ে, আলো জ্বালিয়ে, বাদ্যি বাজিয়ে সন্ধ্যেবেলা দিগ্‌নগর ছেড়ে গেল। —

গানের দল:- রাজা তখন খুব চিন্তায়
একলা বেহাই বাড়ি
সামনে পেলে বানরকে
কাটবেন আড়াআড়ি

(এমন সময়)

এমন সময়, রাজপ্রাসাদে
উঠলো কলরোল
এলো বানর রাজার মতো
সঙ্গে বর – মাদল—
মহানন্দে, সমারোহে
সারা হলো বিয়ে
যাত্রা শুরু হ’লো এবার
দুয়োরানীর তরে—
রাজ্যে ফিরে মহা হৈচৈ
রাজ্য পেল ছেলে
বানর মশাই মন্ত্রী হ’লো
দুয়ো কন্যে পেলে
এতো আলোয় ছোটরাণী
বুক ফেটে যায় মরে
রাজ্যে এখন শান্তি ঘোরে
গল্প শেষের ভোরে

সমাপ্ত