গত ১১ অগাস্ট অশোকনগর নাট্যমুখ আয়োজন করেছিল তাদের নিজস্ব অমল আলো মঞ্চে রাখীবন্ধন উৎসব ও বাইশে শ্রাবণ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিরোধান দিবস উপলক্ষে এক ঘরোয়া সন্ধ্যা।
বাইশে শ্রাবন বাঙালীর ঈশ্বর হারাবার দিন। রবীন্দ্রনাথের ভাবধারায় রাখীবন্ধন সমগ্র জাতিকে এক সূত্রে গাঁথার এই এক অপূর্ব প্রয়াসের পথ ধরে নাট্যমুখের শিশু- কিশোর অভিনেতারা রবিবারের ক্লাসে তৈরি করেছিল রাখী। অনুষ্ঠান শেষে সকলের হাতে তারাই ভালোবেসে পরিয়ে দিয়েছে উপস্থিত দর্শক ও দলের সকলকে।
বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে এক এবং একা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে স্মরণ। দলের সকলের মিলিত প্রয়াসে রবীন্দ্র অনুসারী সত্তরের কবি সমীর ভট্টাচার্য তাঁর স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন প্রথমে এরপর অসীম দাস পাঠ করেন প্রিয় রবিবাবুকে লেখা কাল্পনিক চিঠি যা নিজের জীবনের সঙ্গে গভীর যোগাযোগের কথা কবিতায় প্রকাশ করেছেন। অভি চক্রবর্তী পড়েন সুবোধ সরকারের লেখা একটি কবিতা এবং নিজের নাট্য উপন্যাস আত্মধংশী কোয়ারান্টাইন ও রবীন্দ্রনাথ থেকে একটি অংশ। রবীন্দ্রনাথের বৈকুন্ঠের খাতা থেকে খণ্ডাংশ পাঠ করেন জয় চক্রবর্তী অরূপ গোস্বামী এবং গৌতম বসু ।
সবশেষে রবীন্দ্রনাথের চারটি নাটককে অবলম্বন করে ‘মারের সাগর পারি দেবো’ নাটকটির ষষ্ঠ অভিনয় মঞ্চায়ন হয়। রক্তকরবী, রাজা, মুক্তধারা আর তাসের দেশ
নিয়ে সঙ্গীতা চক্রবর্তীর ভাবনার সঠিক ব্যবহার করেছেন অভিনেতারা। মঞ্চে সব মিলিয়ে উনিশ জন। লাইভ মিউজিক। বাঁশির বেদনার সুরে প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন মর্জিনা। তবলা আর কাহনে ঝড় তুলেছে সৌরিদ, গিটারে মল্লার।
চারটি নাটকের স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ তাঁর সৃষ্টিতে একেকটি সময়ের অবক্ষয় তুলে ধরেছিলেন। সেই পরিপ্রেক্ষিত, কোথায় মুদ্রিত হয়েছিল, কোন সংস্করণে কি নাম ছিল, সে নাটকের মূল ভাব কি ছিল তাকে মিশ্রিত করেছেন দেবাদ্রিতা ভট্টাচার্য, সৌমেন্দু হালদার । অনেকটা পুরনো দিনের বিবেক বা সূত্রধার এসে বলে যাবে কথা। যে কথার সূত্র ধরে ‘আমি মারের সাগর পারি দেবো’ নাট্যটি মূলত অশোকনগর নাট্যমুখের একটি ওয়ার্কশপ ভিত্তিক প্রযোজনা। যার মূল ব্যঞ্জনা দেশের সময়ের এক আশা নিরাশার বেদনাভরা আর্তনাদ।
ভারতীয় নাটকের ধারায় রবীন্দ্রনাথ খুব কম চর্চিত হয়েছে বাংলা দেশে। আমরা তাঁকে বুঝতে পারিনি। বুঝতে চাইনি হয়তো। কেউবা না বুঝেই চেষ্টা করেছেন। কবি ঋভু চক্রবর্তীর সংযোজন ও সৌমেন্দু হালদারের পরিমার্জনায় পূর্ণতা পেয়েছে নাট্যের অবয়ব। অদ্রীশকুমার রায় নাট্যমুখের সব নাটকের মতো এখানেও মঞ্চকে ভেবেছেন সেই পুরাণের মনসা পালা বা রয়ানী গানের অথবা রাম যাত্রায় ব্যবহৃত চাঁদোয়ার নিচে এই নাটকের মঞ্চায়ন যাতে স্বার্থক রূপদান দিয়েছেন সঙ্গীতা চক্রবর্তী। পোশাকের ভাবনা বেশ পরিশীলিত, সকলের একই ড্রেস। শুধু একটাই আবেদন যেহেতু এখানে রবি ঠাকুরের মরমিয়া গানের ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে অধিক যত্নবান হওয়া আরো প্রয়োজন। rap সঙ্গীতের ব্যবহারটি চটুল, মনে লাগলো বড়।
আরো প্রযোজনাটির গতি পাক আরো বেশি বেশি অভিনয় হোক।
পঞ্চম বৈদিক ৪০ বছরে পদার্পণ
১১ অগাস্ট ১৯৮৩ সাল, এই দিনে পঞ্চম বৈদিক নাট্যদলের যাত্রা শুরু হয়েছিল কলকাতায়। বহুরূপী থেকে নির্বাসন নেবার পর প্রবাদপ্রতিম নাট্যব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্র এই দলেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কখনও বাইরে কখনও ভেতরে ছিলেন। শম্ভু মিত্র প্রযোজিত, শাঁওলী মিত্র রচিত ও নির্দেশিত “নাথবতী অনাথবৎ” অভিনয় দিয়ে শুরু হয়েছিল পথচলা।
১১,১২,আর ১৪ আগস্ট ছিল সেদিন। এ নাটকের প্রথম তিনটি অভিনয় দেখা গিয়েছিল কলকাতার নামী দুটি হলে। প্ৰথম দুদিন শিশির মঞ্চে, তৃতীয় অভিনয় রবিবার সকালে আকাডেমিতে।
আজকের এই বিশেষ দিনটিতে জন্মলগ্নের সেইসব গুরুজনদের, যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ভালোবাসাকে পাথেয় করে পঞ্চম বৈদিক আজও এগিয়ে চলেছে। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শাঁওলীদিকে এই প্রথমবার এই দিনে দেখতে পাবে না দলের ভেতরে বাইরে কোথায়। কিন্তু সকলের দৃঢ় বিশ্বাস বাইরে দিদি অলক্ষ্যে থেকে মাথায আশীর্বাদের হাত রেখেছেন। তাঁর প্রতি জানাই ভালোবাসা ও প্রণাম।
আগামী ১৭ অগাস্ট ২০২২, সন্ধ্যা ৬.৩০ টায় আকাডেমিতে পঞ্চম বৈদিক নাট্য তর্পণ করবে শাঁওলি মিত্র স্মরণে ।
Sothik mulyayon
মারের সাগর পারি দেবো এক অসাধারণ প্রযোজনা। কন্ঠ শিল্পীদের আর একটু যত্নবান হওয়া দরকার। বাঁশি, তবলা অসাধারণ। মারের সাগর দীর্ঘজীবি হোক।
❤️
শুভেচ্ছা