উত্তর ২৪ পরগণার দত্তপুকুরের মেয়ে ঐশী ভট্টাচার্যর জীবনে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে থিয়েটার। থিয়েটার পরিবারেই বেড়ে ওঠা। তাই জ্ঞান হবার পর থেকেই থিয়েটারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা হয়ে গেছে তার। বাবা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একজন নামী চিত্রশিল্পী, মঞ্চাভিনেতা, নির্দেশক। মা গার্গী ভট্টাচার্যও থিয়েটারে অভিনয় করেন। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত দত্তপুকুর দৃষ্টি নাট্যদলের কর্ণধার বুদ্ধদেববাবু তার বাবা যেমন এই দলের কর্ণধার ও অভিনেতা তেমনি মা গার্গীদেবী, এই দলের অভিনেত্রীও। তাই ঐশী তার জীবনে বোধ ও চেতনার জন্মলগ্ন থেকেই চিনে গেছে থিয়েটারের জগৎকে।
ছোটবেলাটা কেটেছে থিয়েটারের পরিবেশেই। দত্তপুকুর দৃষ্টির মহলাকক্ষেই কেটেছে ঐশীর অনেকটা সময়। মা আর বাবার অভিনয়, দলের কাজকর্ম, থিয়েটারের মহলা দেখতে দেখতেই বড় হয়ে ওঠা।ছোটবেলা থেকে দেখে আসছে মা নাটকের মহলায় ব্যস্ত থাকতে থাকতেই মেয়েকে খাইয়েছে, কখনো থিয়েটারের মহলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছে। এভাবেই থিয়েটারটা তার জীবনে কখন যেন অজান্তেই জড়িয়ে গেছে। সেই ঐশীর বড় হয়ে লেখাপড়ার চর্চার মধ্যে থাকতে থাকতে একসময় মনে হয়েছে থিয়েটার তার জীবনে অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
পরবর্তীতে থিয়েটার নিয়ে পড়াশুনো তাকে আরো বেশি করে থিয়েটারমুখী করে তুলেছে। ঐশী এখন অনিবার্যভাবেই হয়ে উঠেছে বাবার প্রতিষ্ঠিত নাট্যদলের নির্ভরযোগ্য অভিনেত্রী।
২০০৭ সালে দত্তপুকুর দৃষ্টি দলেই ঐশীর অভিনয়ে হাতেখড়ি। দলের খুব উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা ” মৎস্যমুখ ” নাটকে প্রথম শিশু চরিত্রে মঞ্চাভিনয়। অভিনয় সম্পর্কে তখনও তেমন ধারণা গড়ে ওঠেনি। কিন্তু এই নাটকে “বাপনা” চরিত্রে তাকে মঞ্চে নামানো হয়েছিল। কিন্তু তার মা – বাবা তাকে কখনোই থিয়েটারে অভিনয় করার জন্য জোর দেয়নি। স্কুলে ফাইভ- সিক্সে পড়ার সময় থেকে ক্রমশ মনে হতে থাকে, থিয়েটারটা তার কাছে ভাল লাগা ভালোবাসার বিষয় হয়ে উঠছে। তাই পরবর্তীকালে থিয়েটার নিয়ে পড়াশুনো করার সিদ্ধান্ত। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটক নিয়ে স্নাতক উত্তীর্ণ হয়েছে সে। স্বভাবতই থিয়েটারকে ঐশী আরো ভালভাবে হাতে কলমে বুঝতে শিখেছে।
এরপর বিভিন্ন কর্মশালায় যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। যার ফলে থিয়েটারটাকে সে আরো ভালভাবে বুঝতে শিখেছে।গোবরডাঙা নকসা, ঠাকুরনগর প্রতিধ্বনি এবং নাট্যজন তীর্থঙ্কর চন্দর কর্মশালা তার জীবনে থিয়েটারকে যেন আরো অনিবার্য করে তুলেছে। দত্তপুকুর দৃষ্টি নাট্যদলের নানা কর্মশালাতেও যোগ দিয়ে ঐশী থিয়েটারকে গভীরভাবে ভালবাসতে শুরু করেছে। মা গার্গী ভট্টাচার্য যেমন অভিনেত্রী তেমনই একজন নৃত্যশিল্পীও। মায়ের কাছে শেখা নাচ তার থিয়েটার জীবনে সহায়ক হয়েছে। ইতিমধ্যে CCRT(centre of cultural resource training) স্কলারশিপ পাওয়াতে থিয়েটারের অনেক নামী মানুষের সামনে থিয়েটারে অভিনয়ের সুযোগ মিলেছে তার। আশিস দাস, দেবব্রত দাস, মুকুন্দ চক্রবর্তী, তরুণ প্রধান, কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, ড:গাগনদীপ, ভাস্কর মুখার্জী, সুমন চ্যাটার্জী প্রমুখের কর্মশালা, সান্নিধ্য ও অনুপ্রেরণা তাকে থিয়েটারে আগ্রহী করে তুলতে সাহায্য করেছে। পরিবারে মা, বাবা ছাড়াও থিয়েটারপ্রেমী দুই জেঠু তারাশঙ্কর ভট্টাচার্য, শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য তার থিয়েটার বৃত্তের অন্যতম প্রেরণা। দাদু ( মায়ের বাবা) নিশিকান্ত হালদার ছিলেন উৎপল দত্তের পি এল টি দলের অভিনেতা।
ঐশীর অন্যতম পছন্দের চরিত্র ছোটদের নাটক বুড়ির কুয়ো তে মুনিয়া এবং চশমা চোর এ পল্টন আজও স্মৃতিতে খেলা করে।
কিশোরী ঐশীর মতে থিয়েটারে করোনা থাবা বসালেও সেই ধুলো ঝেড়ে থিয়েটার আবার উঠে দাঁড়াবে একদিন না একদিন। তবে এই সঙ্কট থিয়েটারের মানুষজনকে কিছুটা সমস্যায় ফেলেছে সেই বিষয়ে ঐশী একমত। থিয়েটার করতে না পারার একটা যন্ত্রণা আছে, এটা স্বীকার করে নিয়েও সে থিয়েটারে সুসময়ের প্রতীক্ষায় থাকাটাকেই জরুরী মনে করে।
এ পর্যন্ত প্রায় ২০ টা নাটকে সে অভিনয় করেছে। দলের প্রয়োজনে ব্যাকস্টেজের নানা কাজেও হাত লাগাতে হয় তাকে। শুধু অভিনেত্রী নয় একজন যথার্থ নাট্যকর্মী হয়ে ওঠাই তার লক্ষ্য। এভাবেই মা বাবা সহ বিভিন্ন গুণী নাট্যজনের সান্নিধ্য তাকে থিয়েটারে জড়িয়ে থাকার প্রেরণা জোগায়। সেই প্রেরণাকে পাথেয় করেই থিয়েটারের পথে এগোতে চায় ঐশী ভট্টাচার্য।
বাহ।