দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সোনারপুরের ছেলে পার্থসারথি ঘোষ। আর পাঁচজনের মতই নিজের বৃত্তে লেখাপড়া, আবৃত্তিচর্চা, সাহিত্যপ্রীতি ইত্যাদি লালন করতে করতে বড় হয়ে ওঠা। ছোট থেকেই আবৃত্তি করার জন্য মঞ্চে দর্শকের সামনে দাঁড়ানো অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। স্নাতক জীবন শেষ করে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যের স্নাতকোত্তর। বিষয় অবশ্যই বাংলা সাহিত্য। তারপর যথারীতি একটা চাকরীর সন্ধানে ছুটে বেড়ানো। কিন্তু চাকরীর প্রস্তুতির পাশাপাশি থিয়েটার চর্চার সঙ্গেও জড়িয়েছিল পার্থসারথি। পরে থিয়েটারের প্রেমে পড়ে যাওয়া বলতে যা বোঝায়, তাই হল।পার্থসারথি ঠিক করল, থিয়েটারকেই পেশা হিসাবে নেওয়া যেতে পারে। ‘বাঘাযতীন আলাপ’ নামে নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ল। তারপর তো গভীর প্রেম জমে উঠল থিয়েটারের সঙ্গেই।
নিজেকে মফস্বলের ছেলে বলে পরিচয় দিতেই পছন্দ করে, তাই একটা লড়াকু মেজাজ আছেই। আর সেই লড়াকু মানসিকতার জোরেই পার্থসারথি থিয়েটারে নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করে নিতে পেরেছে। অবশ্য একটা সংগ্রামী নাটকের মাধ্যমেই তার পেশাদার অভিনেতা হিসাবে মঞ্চে ওঠা শুরু। সে নাটকের নাম – সাগিনা মাহাতো।
জীবনের একটা কঠিন সময়ে থিয়েটার নিয়ে বেঁচে থাকার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগোতে চেয়েছিল পার্থ। অবশেষে লক্ষ্যে স্থির থেকে লক্ষ্যভেদে সফল হয়েছে থিয়েটারের পার্থসারথি। একসময় তার মনে হয়েছিল, জীবনে বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় থিয়েটার অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মানুষের আবেগ, ভাবনা,স্বপ্নপূরণের কথা তো সবচেয়ে বেশি থিয়েটারেই ফুটে ওঠে। তাই থিয়েটার সমাজের জন্য প্রয়োজনীয়। আর সেই কথা ভেবেই থিয়েটার নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল তার।
থিয়েটার নিয়ে প্রথাগত কোন ডিগ্রী তার অর্জন করা হয়নি বলে কোন আক্ষেপ নেই বলে জানিয়েছে পার্থসারথি। সে মনে করে, থিয়েটার যেহেতু একটা শিল্প তাই থিয়েটারে যুক্ত থেকে, থিয়েটারের সঙ্গে নিজেকে গভীরভাবে মিশিয়ে ও মিলিয়ে দিয়ে থিয়েটার করতে করতেই থিয়েটার শেখা যায়।সার্টিফিকেট বা শংসাপত্র মিলবে দর্শকের কাছে। সেটাই পরম পাওয়া।
থিয়েটার মানে তার কাছে শুধুই অভিনয় নয়।থিয়েটারকে সে একটা সামগ্রিক কর্মকাণ্ড বলে মনে করে। এমন এক জরুরী শিক্ষা অভিনেতা পার্থসারথি পেয়েছে আর এক পার্থর কাছে। তিনি পার্থপ্রতিম দেব।পার্থসারথির নাট্যশিক্ষক। বাঘাযতীন আলাপের প্রাণপুরুষ। তাঁর শিক্ষা অনুসারেই অভিনয় ছাড়াও দলের সবরকম কাজে হাত লাগায় পার্থসারথি। আলোর কাজ, মঞ্চের কাজ, সেট তৈরি সবকিছুতেই যুক্ত থাকতে পছন্দ করে। দলের অফিসিয়াল কাজ, নতুনদের নিয়ে কর্মশালার প্রক্রিয়া – তাতেও এগিয়ে পার্থসারথি। পার্থপ্রতিম দেব এবং ঈশিতা মুখোপাধ্যায়ের অধীনে অভিনয় করে অনেক কিছু শিখেছে সে।
দু বছরের করোনা বিপর্যয়ে থিয়েটারে যুক্ত থাকা অনেকেই ভিন্ন পেশায় যুক্ত হলেও পার্থর বিশ্বাস : তারা আবার থিয়েটারে ফিরবে। থিয়েটার ঘুরে দাঁড়াবেই। থিয়েটার আর আবৃত্তি তার বড় প্রিয়। এসব নিয়েই বাঁচতে চায় সে। তার বাইরে জীবন সামাল দিতে টিউশন পড়িয়ে এই মাধ্যমের সঙ্গেই থেকে গিয়েছে। আগামীতেও থাকতে চায়।
অভিনীত সব চরিত্রের প্রতিই একটা বিশেষ ভালবাসা থাকলেও নিজের লেখা “অস্তাচলে” নাটকে সুমিত কুণ্ডুর নির্দেশনায় সুদামা চরিত্রটি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছিল তার। বই পড়া, সিনেমা দেখা, নাটক দেখা, শরীর চর্চার পাশাপাশি আবৃত্তি, অভিনয়, টিউশন পড়ানোই আপাতত – এই তার জীবন।
বাঘাযতীন আলাপের সাগিনা মাহাতো, কৃষ্ণপ্রিয়া, ইচ্ছাপূরণ, অসময়, অস্তাচলে, ছেদবিন্দু এবং উষ্ণীকের কাল্লুমামা, অগ্নিজাতক নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের সফল অভিনেতা পার্থসারথি ঘোষ এভাবেই লক্ষ্যভেদে স্থির থেকে এগিয়ে চলেছে।চরৈবেতি পার্থসারথি।
দুরন্ত ধারাবাহিক