‘প্রস্তুতি থিয়েটার’ বইটি নিয়ে কথা বলা শুরু করার আগে বলে নিই বইটির মলাট থেকে শুরু করে ইলাস্ট্রেশন পুরোটাই একটা সফিস্টিকেটেড ফিল দেয় মনের মধ্যে, কিন্তু থিয়েটার নিয়ে লেখা বই তো এতো রঙচঙে হওয়ার কথা ছিলনা। বিশেষ করে যে বই মফস্বল থিয়েটারের অন্দরমহল নিয়ে লেখা, তা কেন আলোকসজ্জিত মঞ্চের মতো হবে! বরং তা হবে ধূসর রিহার্সাল রুমের মতো, কোথাও একটা জমাট বেঁধে থাকবে অভিনেতা-অভিনেত্রী, নির্দেশক এবং…
এই বইটি পড়তে গিয়ে আমি এক অদ্ভুত উপলব্ধির সম্মুখীন হই। এই লেখকের অন্যান্য কাজের সঙ্গে পরিচিত থাকার দরুণ আমার মনে হয়েছে লেখক তার লেখনির মাধ্যমে একটি কাল্ট চরিত্রের খোঁজ করে চলেছেন। ‘প্রস্তুতি থিয়েটার’ পড়তে গিয়ে আমি বেশ ভালোভাবেই টের পেলাম সেই কাল্ট চরিত্রটি আসলে লেখক নিজেই। কারণ এই লেখায় লেখক তার ইতিমধ্যে বহুল চর্চিত কিছু নাট্যের রসুইঘরের প্রণালী জানিয়েছেন বা বলা ভাল নিজেই সেই প্রণালী ফিরে দেখতে চেয়েছেন। মুক্তধারা, কন্যা তোর, নেমেসিস, মরাচাঁদ, মৃত্যু ঈশ্বর যৌনতা, গর্ভবতী বর্তমান এবং রাতবিরেতের রক্তপিশাচ এর নির্মাণকাহিনীর সঙ্গে সঙ্গেই এসেছে নাট্যমুখের ছোটদের নিয়ে কাজের ধরন- কৌশল এবং পথচলা। ফলত এই লেখা পড়তে পড়তে অবাক হয়ে ভাবতে বসি এ লেখা যাপন থেকে উঠে এসেছে — না লেখা থেকে পড়ে জীবনের চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে তা বলা অসম্ভব। হতে পারে সমগ্র লেখা জুড়ে নাট্যমুখ বারবার উঠে এসেছে কিন্তু এ লেখা মোটেই নাট্যমুখের গল্প করেনা, বরং সমগ্র লেখা জুড়ে লেখক নিজেই হেঁটে বেড়িয়েছেন, নিজেই প্রশ্ন করেছেন এবং নিজেই সবকটির উত্তর দিয়েছেন। একরাশ হিংসে রইলো লেখককে কারণ এই লেখায় বেঁচেছেন অভি চক্রবর্তী, এই লেখা লিখেছেন অভি চক্রবর্তী এবং সবচেয়ে মজার বিষয় হল এই লেখার পাঠকও অভি চক্রবর্তী নিজেই, কারণ এই লেখার ক্রাইসিসগুলো এতোটাই প্রবল যে এই লেখা পড়তে পড়তে আমরা প্রত্যেকেই অভি চক্রবর্তী হয়ে উঠি। এই যে মাথার মধ্যে ঢুকে একরাশ নাচানাচি করতে পারা, এর জন্য লেখককে অভিনন্দন। ব্যক্তিগতভাবে চিনি বলে নই, আমি সত্যিই মুগ্ধ এ লেখা পড়ে, অন্তত বারকয়েক চমকে উঠেছি পড়তে পড়তে।
সবশেষে থিয়েটার এবং থিয়েটারের বাইরের সবাইকে অনুরোধ রইলো এই বই পড়ার জন্য। থিয়েটারের বাইরের লোকেরাও এই বইকে ননফিকশন হিসেবে দিব্যি উপভোগ করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। সপ্তর্ষি প্রকাশন বরাবরই তাদের সম্ভারে নাট্যকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দিয়েছে এই বই তৈরি সেই পরম্পরাকেই মান্যতা দিল, ধন্যবাদ তাদেরকেও।