শম্ভু মিত্র যাপনচিত্র | কমল সাহা, পর্ব – ১৭

চার অধ্যায়

প্রথম অভিনয় ২১.৮.১৯৫১ শ্রীরঙ্গম। উপন্যাস : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; নাট্যরূপ ও নির্দেশনা : শম্ভু মিত্র; আবহ : দেবব্রত বিশ্বাস; ছবি : খালেদ চৌধুরী; আলোক সম্পাত : পরেশ ঘোষ; আলো : সিতাংশু মুখার্জী, কালীপ্রসাদ ঘোষ; সঙ্গীত : শোভেন মজুমদার, বরুণ সেন, চন্দ্র ব্যানার্জী; মঞ্চ ব্যবস্থা : অশোক মজুমদার, মহম্মদ জ্যাকেরিয়া, শোভেন মজুমদার, নির্মল চ্যাটার্জী, ব্রজ চক্রবর্তী, বেণীমাধব মুখার্জী, নির্মল ঘোষ, কালিদাস চ্যাটার্জী, অনিল ব্যানার্জী।

অভিনয়

এলা : তৃপ্তি মিত্র
অতীন : সবিতাব্রত দত্ত/ শম্ভু মিত্র
বটু : শোভেন মজুমদার
কানাই গুপ্ত : কালী সরকার/ গঙ্গাপদ বসু/অমর গাঙ্গুলী/ দেবতোষ ঘোষ
অখিল : পরেশ ঘোষ/ দীপংকর মুখার্জী/রমাপ্রসাদ বণিক
ইন্দ্রনাথ : শম্ভু মিত্র/ মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য/গঙ্গাপদ গাঙ্গুলী/ কালীপ্রসাদ ঘোষ
সূত্রধর : অশোক মজুমদার/ অমর গাঙ্গুলী/কুমার রায়।

প্রথম অভিনয় অনুগ্রাহক সভ্যদের জন্য। তৃতীয় দৃশ্যে পেছনে চটের ওপর কাপড় সেঁটে মাকড়সার জাল বুনেছিলেন অরণি বন্দ্যোপাধ্যায় — পরে সেটি বাদ দেয়া হয়। চতুর্থ দৃশ্যে ছাতের ওপর ফণীমনসা গাছ আর দূরে কোন কোন বাড়িতে রাত জাগা আলোর উদ্ভাবক অশোক মজুমদার।

বামপন্থী মহল এই নাট্য নির্বাচনকে উগ্র উলঙ্গ প্রতিক্রিয়াশীল কাজ বলে নিন্দা করেন। গণনাট্য সংঘের আদর্শ ভুলে শম্ভু মিত্র এখন সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ। স্বাধীনতার পর দেশ গঠনের কাজ চলছে। এই সময়ে স্বাদেশিকতার ভুলভ্রান্তির পটভূমিকায় তীব্র প্রেমের গল্প! হঠাৎ কেন যে তিনি রবীন্দ্রনাথের ‘উপন্যাস’ দিয়েই রবীন্দ্রনাথে পৌঁছলেন? তার উত্তর সঠিক ভাবে দিতে পারবেন না ১৯৯৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পর দূরদর্শন সাক্ষাৎকারে মোহিত চট্টোপাধ্যায় কিংবা কুমার রায় মহাশয়ও!

কেন ভালোবাসি

  1. আপাত সহজ কথোপকথনের সূত্রে যে সহজতার দাবী আছে, বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ এক‌ই সঙ্গে জীবনের নানান স্তর সেভাবে অবলীলায় প্রকাশ করে তার নিদর্শন বাংলা ভাষায় গরহাজির।
  2. পটভূমিকায় প্রচন্ড Violence আর সেই রক্তাক্ত পটের উপরেই দুজন মানুষের প্রেম। এই নাট্যাভিনয়ে এলা ও অতীনের অনুভবে যে স্তরবৈচিত্র্য প্রকাশ পায়, সেটা — আমাদের অনুমান — ভাবীকালের বহু প্রতিভাশালী অভিনেতা ও অভিনেত্রীকে যেমন লুব্ধ করবে, সম্পাদনায় অসাধারণ কষ্ট‌ও তেমনি মর্যাদাযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
  3. অলোক সামান্য ভাষা। এ ভাষা যেন চ্যালেঞ্জের মতো অভিনেতার সম্মুখীন হয় — যে কেমন করে সেই নির্ঝরতুল্য শব্দ সুষমার প্লাবনকে ঠেকিয়ে মঞ্চের কাব্য প্রকাশ করবে। যা লেখায় প্রকাশ হয় না, আঁকায় প্রকাশ হয় না, গানে প্রকাশ হয় না, কেবলমাত্র নাট্যাভিনয়েই প্রকাশ হয়।
  4. মঞ্চের উপর তথাকথিত অ্যাকশন ব্যতিরেকে এবং প্রায় সমস্ত সময় ধরে দু’জন মাত্র লোকের সংলাপ — এমন নাট্যাভিনয় পৃথিবীর মঞ্চেই ঘটে। সেই কঠিন পরীক্ষার সুযোগ এসেছে।
  5. ‘দেশের আত্মাকে মেরে দেশের প্রাণকে বাঁচিয়ে রাখা যায় এই ভয়ংকর মিথ্যে কথা পৃথিবীর বহুস্থানে আজ ঘোষণা করা হচ্ছে’ — এই কথা আছে বলেই চার অধ্যায়কে ভালোবাসি।
  6. ‘পেট্রিয়টিজমের চেয়ে যা বড় তাকে যারা সর্বোচ্চ না মানে তাদের পেট্রিয়টিজম কুমিরের পিঠে চড়ে পার হবার খেয়া নৌকো। মিথ্যাচারণ, নীচতা, পরস্পরকে অবিশ্বাস, ক্ষমতা লোভের চক্রান্ত, গুপ্তচরবৃত্তি একদিন তাদের কখন নিয়ে যাবে পাঁকের তলায়। এ আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।’ এ নাটকে এই ধরনের সামাজিক দৃষ্টি আছে।
  7. ‘মানুষের স্বভাবকে হয়তো সংস্কার করতে পারো, তাতে সময় লাগে। স্বভাবকে মেরে ফেলে মানুষকে পুতুল বানালে কাজ সহজ হয় মনে করা ভুল। মানুষকে আত্মশক্তির বৈচিত্র্যময় জীব মনে করলেই সত্য মনে করা হয়।’ আমাদের গভীর আকাঙ্ক্ষার যে গণতন্ত্র তার সম্পর্কে এমন দৈববাণী — সদৃশ উচ্চারণ ( এতে আছে, তাই ভালোবাসি )।

বারেবারে দুঃখ পেয়েছি এই কথা ভেবে যে এমন নাটক আমরা সপ্তাহে তিনদিন করে অভিনয় করতে পারি না কেন! পারি না, কারণ চার অধ্যায় দেখবার মতন বিপুল দর্শক সংখ্যা আমাদের দেশে এখনো নেই।

আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই বিজ্ঞাপনী প্রস্তাব লিখেছেন স্বয়ং শম্ভু মিত্র।
সংক্ষেপিত সংকলন চার অধ্যায়, অভিনয় পত্রী ১৯৬৬

শিক্ষিত মনের কাছে

বাংলা থিয়েটারের পাদপ্রদীপ আজ নিবু নিবু। এবং শিক্ষিত মনের কাছে তার ডাক আর পৌঁছায় না। থিয়েটারের এই ভাঙা আসরে একমাত্র যাঁদের দেখে আশা জাগছে। সেই বহুরূপী নাট্য সম্প্রদায় নিউ এম্পায়ার রঙ্গমঞ্চে এ মাসে ‘চার অধ্যায়’ অভিনয় করলেন। সংস্কৃতি জগতে এ খবরটা বিশেষ খবর। বহুরূপী এখনো পর্যন্ত শৌখিন নাট্য সম্প্রদায়ের‌ই অন্তর্গত কেননা জাতীয় নাট্যশালার কোনো পরিকল্পনাও এতদিনে শোনা গেল না। কিন্তু তৃপ্তি মিত্র আর কালী সরকারের অভিনয় এবং শম্ভু মিত্রের সুশিক্ষিত পরিচালনা দেখে আশা হলো — এ নাট্যশালা না হলেও এবার হয়তো ভালো নাটক লেখা হবে। অন্তত হওয়া উচিত। অভিনয়ের জন্য এঁরা প্রস্তুত। ক্ষমতা আছে এঁদের। এঁরা জানেন।
টুকরো কথা : ১০/ সিগনেট প্রেস /অগাস্ট ১৯৫১

পুনশ্চ

নিবু নিবু কিন্তু নিবছে না। ম্যাকবেথ করার পরও গিরিশচন্দ্র আক্ষেপ করেছিলেন নির্দোষ নাটক দেখার লোক বঙ্গদেশে নাই! আপন প্রতিভাবলে রবীন্দ্রনাথ পৌঁছে গেলেন শিক্ষিত মনের কাছে — ঠাকুর বাড়ির ছোট্ট পরিসরে জোড়াসাঁকোয় — বিপুল মানুষের সাঁকো পেরুতে পারেন নি অন্তত নাটক প্রযোজনায়। একটানা ৬০ বছরেও! ওদিকে একদল নাট্যশ্রমিককে নিয়ে দিনরাত ক্লান্তিহীন লড়াই করে অশিক্ষিত মনের কাছে রয়ে গেলেন গিরিশচন্দ্র অর্ধেন্দুশেখর রাজকৃষ্ণ অমৃতলাল অতুলকৃষ্ণ বিহারীলাল…। সাধারণ রঙ্গালয়ে রবীন্দ্র নাটক করতে গিয়ে ভয়ংকর আর্থিক দুর্দশায় পড়লেন শিশিরকুমার — রবীন্দ্রনাথের সার্টিফিকেট পেলেন – পৌঁছুলেন শিক্ষিত মনের কাছে (রক্তকরবীকে বাজে নাটক বলেও ) অন্য দিকে শ্রমজীবী হয়ে র‌ইলেন অপরেশচন্দ্র নির্মলেন্দু বিধায়ক শচীন্দ্র অহীন্দ্র মহেন্দ্র বসুরা!

মিথ্যে কথা। শিক্ষিত মনের কাছে এখন তার ডাক পৌঁছে গেছে। একা শম্ভু মিত্র বা বহুরূপী নয়। উৎপল দত্ত শেক্সপিয়ার করে চলেছেন, এসে গেছেন বিজন ভট্টাচার্য, দিগিন বন্দ্যোপাধ্যায়, সলিল সেন, মন্মথ রায়, এঁরা সবাই পৌঁছেছিলেন অশিক্ষিত মনের কাছে? যদি তাই হয়, তবে সেটাও তো কম গৌরবের নয়। রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুর আগে তাই তো চেয়েছিলেন।
এরপর অনেক ভালো নাটক হয়েছে। তার জন্যে এই ‘চার অধ্যায়’ অনেকটা দায়ী। কমপক্ষে ২০০০ নাট্যকার এবং দু’লক্ষ নাট্যকর্মী … সবাই মিলে কাজ করে চলেছেন। প্রশ্নটা শিক্ষিত বা অশিক্ষিত নয় – মানুষের কাছে পৌঁছুনোর — শম্ভু মিত্র পেরেছিলেন কিনা সেটাই বিচার্য।

সমালোচনা ১

উপন্যাসের মধ্যে থেকে নাটকীয় উপাদানকে ছেঁকে তোলা শিল্পীর কৃতকর্ম। এ পরীক্ষায় বহুরূপী হালে পানি না পেলেও, ফাস্ট ডিবিশনের নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন। যে জিনিসটা প্রথমেই চোখে পড়েছে তা হল নাটকের প্রয়োগ কৌশলের বিশিষ্টতা। সূত্রধর গল্প শুরু করল। সেই গল্প মোড় নিয়ে নাটকের মোহনায় প্রবেশ করল, নাটক শুরুতে সংস্কৃত ঘেঁষা এই পদ্ধতিটি নূতনত্বের স্বাদ এনেছে নিঃসন্দেহেই তবে সূত্রধারের বাচনভঙ্গী যদি শম্ভু মিত্রের হতো তবে শেষ পর্যন্ত আলুনি হয়ে পড়তো না বোধ হয়। গল্পটা এলা ও ইন্দ্রনাথের পরিচয়ের মোড়ে পৌঁছুলে সূত্রধারের কন্ঠ আশ্রয় ত্যাগ করে এলা ও ইন্দ্রনাথের নেপথ্যে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে যেভাবে দর্শকদের সামনে উপস্থিত হয়েছে, তার জন্য পরিচালকের উদ্ভাবনী শক্তির প্রশংসাই করতে হয়। এই নাটকটি যদি সাধারণকে তৃপ্তি দিতে নাও পেরে থাকে সংলাপাশ্রয়ী নাটক শুনতে সাধারণ দর্শক অভ্যস্ত নয় বলেই এই আশংকা তবুও যাঁরা নাট্যমোদী, বিশেষ করে যাঁরা নাটক অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত তাঁরা নাটকের প্রয়োগ ক্ষেত্রে নতুন পথের সন্ধান পাবেন। চার অধ্যায় তারই ইঙ্গিতময় নতুন এক অধ্যায় খুলে ধরেছে।
— মধ্যযুগ ২৪.৮.১৯৫১

পুনশ্চ

  1. সমালোচক বার তিনেক ‘সূত্রধর’ লিখেছেন।
  2. আগ্নেয়াস্ত্র ছোঁড়ার শব্দ দিয়ে আবহ সৃষ্টি — পটভূমিতে সন্ত্রাসবাদ স্পষ্ট।
  3. সূত্রধর দিয়ে শুরু – সংস্কৃত ঘেঁষা পদ্ধতি।
  4. সংলাপের ভাষা প্রয়োগে রবীন্দ্র ভাবনার উপস্থিতি।
  5. চার অধ্যায় শুরু হয়েছে ‘বিভাব’ নাটকের আরম্ভের নাট্য সংগঠন দিয়ে।
  6. মঞ্চস্থ হবার আগে কেউ কল্পনা করতে পারেননি এটা নাটক হতে পারে।
  7. ‘অসাধ্য সাধন’ — অশোক সেন / বহুরূপী ১০.১০.৮৮ / সংখ্যা : ৭০
  8. এর মঞ্চ সাফল্য শম্ভু মিত্রকে আরেক দুঃসাহসী ও উচ্চাকাঙ্খী করে তোলে।
  9. মিত্র দম্পতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনয় (এলা–অতীন)
  10. সঙ্গীতের অনুষঙ্গে ‘বন্দেমাতরম’ একেবারে নতুন মাত্রা যোজনা করেছে।

সমালোচনা ২

The subtle conflict brought not more by Tagore’s inimiable dialogues then through concrete action would not when staged permit its easy apprehensive by the majority of audience and so Stipend in the producer (Mr. Sanbhu Mitra) with his new psychological technique and actors with their rate gifts of expression to list audience to lure of Tagore’s spirit.

Behar Herold,12.1.1952 (বছরের শুরুতেই পাটনায় আমন্ত্রিত অভিনয় করেছে বহুরূপী। ছেঁড়াতার ও চার অধ্যায়। ভিন্ন প্রদেশে এই প্রথম যাত্রা। সেই উপলক্ষেই এই সমালোচনা)

পুনশ্চ

আমাদের বিচারে শম্ভু মিত্রের স্মরণীয় প্রযোজনা ৬টি। তাঁর অভিনয়, নির্দেশনা ও সৃজন ক্ষমতার চূড়ান্ত পরিচয় এই সব নাটকে। চার অধ্যায়, রক্তকরবী, রাজা রবীন্দ্রনাথের তিনটি; ইবসেনের দশচক্র এবং পুতুল খেলা; সোফোক্লেসের রাজা অয়দিপাউস। তিনটে স্বদেশী তিনটে বিদেশী। অর্ধেক নাট্যরূপ/ অনুবাদ শম্ভু মিত্রের। আর মিত্র দম্পতির উজ্জ্বল অভিনয় সব কটিতেই। (দশচক্রে তৃপ্তি মিত্র কখনো মেয়ে, কখনো স্ত্রী) চার অধ্যায় নাটকটিকে একটা আশ্চর্য মদির রসে সিক্ত করে ছিলেন তিনি। দর্শক মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে শুনেছে তাঁদের ভালোবাসার সংলাপ। যে এলার জন্য পুরোটা সময় অতীন গুমরে মরেছে তাকেই গুলি করে হত্যা করেছে নিজের হাতে নিজের কোলে, ছাতের ওপর শেষ দৃশ্যে পুলিশ ঢুকবার আগেই। বারবার বন্দেমাতরম ধ্বনিত হয়েছে আবহের অনুষঙ্গে। এক অনবদ্য নাটকীয় পরিণতি। অসাধারণ অভিনয় নৈপুণ্য। সমস্ত দর্শকদের এক জায়গায় যাদু বলে নিজের ইচ্ছা মতো টেনে নিয়ে গেছেন অচেনা রাজ্যে – যেন সেই রূপকথার বংশীবাদক – ছেলেরা পিছু পিছু চলেছে তাঁর। প্রেমের দুরন্ত আর্তিতে ছটফট করেছে অন্তু। ৭৫ বছরের এক যুবক লিখছিলেন এই সব প্রাণের কথা – আর শম্ভু মিত্র তাঁর অনবদ্য কন্ঠ লাবণ্যে, মুদ্রায়, উচ্চারণে তৎসহ তৃপ্তি মিত্রের‌ও সমান্তরাল অভিনয় দাপটে চার অধ্যায় যেন এক ম্যাজিক। একটানা ২৫ বছর … এলা-অতীনের বয়স বাড়েনি। বাইরের সংকট থেকে এ যেন মানুষকে ভুলিয়ে দেবার তীব্র ছলনা। মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলা। এই তার শুরু।

আরেক অতীন

যখন সেখানে ‘চার অধ্যায়’ একজন দর্শক উপস্থিত। তিনি প্রায় প্রতিটি অভিনয় দেখবেন এই তাঁর প্রতিজ্ঞা। সে শুধু মুগ্ধ বিস্ময়ে এলা-অতীনের প্রণয় দৃশ্য দেখে চলেছে। প্রতিটি শব্দ সংলাপ ভঙ্গী তার ভালো লাগছে। যেন আরেক অতীন এলার দ্বিতীয় প্রেমিক। ব্যাপারটা চোখে পড়েছে বহুরূপীর‌ও। কেননা প্রত্যেক শো’তে দর্শক প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য দলের সভ্যরা দর্শকদের সঙ্গে গুপ্তচরবৃত্তি করতো নির্দেশকের নির্দেশে। একদিন তাঁকে প্রশ্ন করা হয় : আপনি প্রতিটি শো দেখে চলেছেন …

হেসে উত্তর দিলেন : একটা শিহরণ। প্রতিদিন একেক রকম আনন্দ পেয়ে চলেছি। আমি আজীবন দেখবো, উপভোগ করবো।

এ ঘটনার অনেক বছর বাদে তাঁর স্ত্রীকে প্রশ্ন করি : কি ব্যপার বলুন তো? এতোবার তিনি চার অধ্যায় দেখছিলেন কেন?

ছোট্ট উত্তর : সে অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে।

আশা করি সকলেই বুঝতে পেরেছেন কে এই দর্শক। একালের বাংলা নাটকের সবচেয়ে নিবিড় যোদ্ধা এবং প্রেমিক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমাদের শমীকদা।

অগাস্ট ১৯৯৭, নন্দনে চলছে ‘চার অধ্যায়’। কুমার সাহানি পরিচালিত হিন্দি ছবি। প্রযোজনা : এন. এফ. ডি. সি এবং দূরদর্শন। আমাদের অতীন ছবিটা দেখে যেতে পারলেন না!

এলাকে বুঝতে পেরেছিলাম, তার দ্বিধা তার ভালোবাসা আবেগ অহংকার সবই। কারণ সে আমাদের‌ই কাছের শিক্ষিতা শিক্ষিকা তীক্ষ্ণধী রূপবতী কোন নারী যে পারিবারিক জীবনে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুল হয়েছেন এবং গুপ্ত আন্দোলনের পথে পা বাড়িয়েছেন। আমার শৈশবে এই ধরনের মানে এর কাছাকাছি অনেকের কথা আমি শুনেছিলাম। কিন্তু এই সংলাপে সেই নারীকে ফুটিয়ে তোলা কষ্টসাধ্য হয়েছিল। …
– তৃপ্তি মিত্র

চার অধ্যায় : শম্ভু মিত্র-তৃপ্তি মিত্রের শেষ অভিনয় ১৯৮১ প্রযোজনা : চেনামুখ।

৯.৮.১৯৫১ আজ মুক্তি পেল ‘৪২’ ,নির্দেশনা হেমেন গুপ্ত। স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনি। ৪২ এর অগাস্ট আন্দোলন। অভিনয় – শম্ভু মিত্র , প্রদীপকুমার। আলোকপাত পত্রিকায় ১৯৯২ এ “বোম্বাই ফিল্ম জগতে শম্ভু মিত্র” নিবন্ধে অভিনেতা প্রদীপকুমার বটব্যাল সাক্ষাৎকারে বলেছেন শম্ভু বাবুর সঙ্গে কলকাতায় প্রথম কাজ করি হেমেন গুপ্তের ‘৪২’এ। উচ্চাঙ্গের অভিনেতা।

২৯.০৬.১৯৫১
আজ মুক্তি পেল ‘বোধোদয়’ চলচ্চিত্র। নির্দেশনা নিরঞ্জন পাল। ছবিটি তোলা হয়েছিল অরোরা ফিল্ম স্টুডিও। মাত্র তিন রিলের স্বল্পদৈর্ঘ্যর ছবি। অভিনয় করেছিলেন শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র দুজনেই।

ক্রমশ…