শম্ভু মিত্র যাপনচিত্র – পর্ব ২ – কমল সাহা

কলকাতায় ফিরে এলেন লজ্জায় ‛বাপের হোটেল’ ছেড়ে এক দাদার হোটেলে। তাতে লজ্জা নেই। কারণ তিনি স্বাধীন। পুরোপুরি স্বাধীন। যতো খুশি চেঁচাও, যতো খুশি নাটক দেখো, বাবা আছেন অন্য প্রদেশে! বছর দেড়েক পরেই চলে এলেন ― লজ্জায় নয়, মূলত শিশিরকুমারের সর্বগ্রাসী টানে। আরো কিছুদিন বাদে শম্ভুর নাম হবে দিলীর খাঁ – তাকে সত্যিই গ্রাস করবেন আলমগীর রূপী শিশিরকুমার!

যদি বলি, শরৎকুমার কলকাতা ছেড়েছিলেন বড় ছেলে শম্ভুকে মানুষ করার জন্যে? সর্বনাশা থিয়েটারের হাত থেকে বাঁচানোর এও ছিল এক কৌশল? কিন্তু লক্ষ্মৌ-এলাহাবাদে গিয়েও শম্ভু ব‌ই পড়া ছাড়েনি। এই দুরন্ত যুবকটিকে নতুন করে কলেজে ভর্তি করানোর দুরূহ চেষ্টা অবশ্য করেননি শরৎকুমার। হয়তো ভাবছিলেন, থিয়েটারের ভুতটা ঘাড় থেকে নামলে নিজেই ভর্তি হয়ে যাবে। ছেলেটা কলেজে না গেলেও প্রচুর পড়ে। খুঁজে খুঁজে লাইব্রেরি জোগাড় করেছে। সেখানে গিয়ে রীতিমতো পরীক্ষার পড়া শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর আর কোন বিষয় নেই – শুধু নাটকের ব‌ই! নাটক নাটক আর নাটক! জীবনটাই নাটক! এ জীবন রঙ্গশালা স্বয়ং শেক্সপিয়ার বলে গেছেন! শরৎকুমারের শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হলো।

ছেলে এবার ভাসলো থিয়েটারের পৃথিবীতে…
‛একদিন বাবাকে বললুম যে আমি চললুম কলকাতায়। একটা সুটকেস আর বিছানা বগলদাবা করে, এলাহাবাদ থেকে বেরিয়ে পড়লুম কলকাতায়। তারপর থেকেই কলকাতাতেই থেকেছি… আমি চলে এসেছিলাম ৩৬ কি ৩৭ (১৯৩৭) এ।’ (শ.মি.)

কলকাতায় ফিরে এলেন কেন? বাবার সঙ্গে থাকতে তো কোন অসুবিধা হবার কথা নয়। তিনি কি থিয়েটারকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে চাইছেন? না নেশা ছিল। ‘ থিয়েটারের নেশা। এমন কিছু রোজগার করব, অমুক করব, তমুক করব, এরকম আকাঙ্খা কোন‌ও দিন‌ই ছিল না’। শ্যামবাজার থিয়েটারের সব মানুষের সম্পর্কে তাঁর ‛শ্রদ্ধা’ও ছিল না। থিয়েটার করার বাসনা ছিল তা কিন্তু খুব মারাত্মক নয়।

‛আমি যে বাড়িতে থাকতুম, সে এক ভদ্রলোক, তাঁকে দাদা বলি। তিনি খুব আদর করেন, ভগবান জানেন কেন… আমাকে তাঁর বাড়িতে রেখেছিলেন। আর সে বাড়িতে আমি ছিলুম বোধহয় আট-ন’ বছর। খুব‌ই তোফা থাকতুম। কিছু রোজগার করি আর না করি, কিছু এসে যাচ্ছে না। সে বেশ, খাই থাকি, সে বাড়িতে আরামে আছি।…(শ. মি) ’

কে এই ভদ্রলোক? বাড়িটা কোথায়? তিনিই কি জ্যোতিনাথদা? জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঘোষ? জ্যোতিরিন্দ্র কি করে জ্যোতিনাথ হবে! বাড়িটা ছিল ল্যান্সডাউন রোডে? অনেকগুলি ঘর, বেশ বড় বড়, ঝকঝকে – আলো হাওয়া আর চমৎকার আন্তরিকতায় ভরা?

আমরা জানি ১৯৪৫ সালে বম্বে গিয়ে বিয়ে করবেন তৃপ্তি মিত্রকে – ফিরে এসে উঠবেন না আর এই বাড়িতে। তখন শম্ভুবাবু গৃহহীন। পার্টি অফিসে একা থাকা যায়, সস্ত্রীক নয়। দেবব্রত বিশ্বাস বলবেন – এতো ভাববার কী আছে! আমার এখানে থাকো না, দুটো ঘর আমার। অর্থাৎ ১৯৩৬-৩৭ থেকে ১৯৪৫ এই আট-ন’ বছর জ্যোতিনাথদার ল্যান্সডাউন রোডের বাড়িতে থাকলেন শম্ভু মিত্র।

এই পর্বে, এই দীর্ঘ সময়ে ২১-৩০ বছর সময়টাই যেকোন মানুষের সৃষ্টি ও নির্মাণের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। পেশাদারি থেকে অভিনয় এবং গণনাট্যে যোগদান সব‌ই ঘটবে এই সময়কালে। উপার্জন করবেন যৎসামান্য। হয়তো টিউশনি করেছিলেন প্রথম দিকে। সে কথা তাঁর নিবন্ধে পাওয়া যাবে। কিন্তু বিস্তৃতভাবে এই ভদ্রলোকের কথা প্রায় কিছুই লিখে যাননি তিনি। এই দীর্ঘদিনের আশ্রয়দাতার প্রতি নীরবতা বেশ রহস্যময় এবং অস্বাভাবিক। শম্ভু মিত্রকে গড়ে ওঠার সময়ে সবরকমের সাহায্য ও সহযোগিতা করে, ‛এই ভদ্রলোকের’ অবদান বাংলা নাট্য ইতিহাসে নজিরবিহীন উদারতার প্রমাণ হয়ে থাকবার কথা। আমরা আরো খুশি হতাম যদি আরো কিছু কৃতজ্ঞতার বর্ণনা মিলতো তাঁর মূল্যবান ১০০টি নিবন্ধে। অত্যন্ত বেদনা ও পরিতাপের বিষয়, এব্যাপারে তিনি তাঁর পিতামাতার প্রসঙ্গের মতোই নির্লিপ্ত।

বহু বছর বাদে আবার বাবার সঙ্গে দেখা হলো। ‛ বাপের বাড়িতে গেলুম, তখন বাবা দেরাদুনে। ৩৯-এ নাকি ওই রকম সময়ে কবে গেলুম।… বাবা খুব খাতির টাতির করলেন। মানে মুখে কিছু বললেন না তো। ওই গেলেন হয়তো, ফিরে এলেন বেড়িয়ে। বেড়াতেন রেগুলার, ব্যায়াম করতেন, শরীর ভাল ছিল। খাবার কিনে আনলেন হয়তো পাঁচরকম। মুখে কিছু বলতে পারেন না-ইয়ে, এইটা-এরকম করে সেই খাবারটা দেওয়া হতো। এই রকম ছিল বাবার স্নেহপ্রকাশের ভঙ্গি। তা সেখান থেকে আবার চলে এলুম কলকাতায়। (শ. মি.) ’

বহু বছর মানে মাত্র আড়াই তিন বছর! পিতৃস্নেহ তাকে টেনে নিয়ে গেল আবার। বাবা তখন দেরাদুনে। লক্ষ্মৌ, এলাহাবাদ, দেরাদুন শরৎকুমারের বর্তমান জীবনচিত্র অস্পষ্ট। ‛মুখে কিছু বলতে পারেন না’–কেন? তিনি কি অসুস্থ? শম্ভুর সঙ্গে আড়ি? না কি তীব্র অভিমান এবং তীব্রতর স্নেহের অসম্ভব গাঢ় একটি নাট্যমুহূর্ত! মাসখানেক ছিলেন সেবার। ঘরে ঘরে শিশিরকুমারের রেকর্ড বাজছে- অস্থির শম্ভু ফিরে এলেন নাট্যক্ষেত্রে। সবশেষে ছোট্ট একটি নাট্যমুহূর্ত গড়ে ছেলেবেলা পর্বের ইতি। পর্দা উঠছে। স্থান: জ্যোতিনাথদার বাড়িতে শম্ভুর থাকবার ঘর। চরিত্র: জ্যোতিনাথদা, তাঁর পরিচিত এক ভদ্রলোক এবং শম্ভু। সময় ১৯৩৮-৩৯।

ভদ্রলোক : কী শম্ভুবাবু, নাটকের ব‌ই পড়লেই চলবে, থিয়েটারে ঢুকবেন না?
শম্ভু : কী করে ঢুকবো! আপনি যদি কোনো রঙ্গালয়ের স্বত্বাধিকারী হতেন!
ভদ্রলোক : নাইবা হলাম, তবু ইচ্ছে থাকে তো বলুন, ঢুকিয়ে দিচ্ছি।
শম্ভু : রসিকতা করছেন? অসহায় বালককে নিয়ে পরিহাস?
ভদ্রলোক : না না, সত্যি বলছি, আমি পারি, ভূমেন রায় আমার বিশেষ পরিচিত।
শম্ভু : তিনি তো নমস্য শিল্পী। বিখ্যাত।
ভদ্রলোক : তাইতো বলছি, যাবেন?
শম্ভু : দূর! গিয়ে কি হবে! পার্ট দেবে মৃতসৈনিকের নয়তো চাকরের –
(জ্যোতিনাথদার প্রবেশ)
জ্যোতিনাথদা : কী? আমি তোমাকে চাকরের মতো রেখেছি?
শম্ভু : ছিঃ ছিঃ দাদা, এসব কী বলছেন আপনি! আমরা নাটকের কথা বলছিলাম।
জ্যোতিনাথদা : ও! তাই বলো। বিষয় তো ওই একটাই! দিনে ২৫ ঘন্টা!
ভদ্রলোক : বলছিলাম একটা সুযোগ ছিল। শম্ভুবাবুকে থিয়েটারে ঢোকাবো, তা উনি কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না।
জ্যোতিনাথদা : কেন? আপত্তি কেন?
শম্ভু : ছোটখাটো রোল দেবে – তুচ্ছতাচ্ছিল্য অসভ্যতা নোংরামি অশ্লীল গল্প… থিয়েটারের ছেলেরা বড় চরিত্রহীন দাদা।
জ্যোতিনাথদা : তোমাকে কি শুরুতে রাজার পার্ট দেবে নাকি? থিয়েটারের লোকজন যখন এতো খারাপ তো সারাদিন এনিয়ে এতো ভাবো কেন?
শম্ভু : আমি তো মঞ্চটাকে দেখি। সেখানেই তো সব সৃষ্টির আনন্দ…
জ্যোতিনাথদা : এতোদিন থিয়েটার নিয়ে বড় বড় অনেক কথা বলেছ আমাদের। যাও না, একবার করেই দেখাও না। দেখিনা কদ্দুর কী পারো!
শম্ভু : আচ্ছা, তাই হবে।

জ্যোতিনাথদার শেষ কথাটা বুকে বাজলো তাঁর। অল্প বয়স। আত্মসম্মান বোধ একটু বেশি। ঢুকে পড়লেন থিয়েটারে। শুরু করলেন দেখিয়ে দেবার পালা। এর পর শুধু নির্মাণ আর বিস্ময়, বিস্ময় আর নির্মাণ। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো ১০/১২ বছর। শম্ভু মিত্রের স্মরণীয় নাট্যকর্মের হাতেখড়ি, প্রস্তুতি ও পরীক্ষার নিরীক্ষার অধ্যায় এই বার।

তিনি যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তখন একেবারে পাওয়া যাবে না শরৎকুমার কিংবা জ্যোতিনাথবাবুকে! ছোটভাই শংকরের প্রসঙ্গ‌ও উঠবেনা কখনো। তবু তাঁরা থাকবেন, এবং দেখবেন – তাঁদের প্রিয় শম্ভু লেখাপড়া ছেড়ে একটুও ভুল করে নি!

পেশাদারি মঞ্চে প্রবেশ করার আগে ৮/৯ টি যাত্রায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। যদ্দুর মনে হয় ১৯৩৮-৩৯ সালের মধ্যপর্বে

দ্বিতীয় পর্ব – নাট্য জীবন

বিশ্বযুদ্ধ শুরু

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলিতে যখন শিল্পোৎপাদনের মন্দা চলছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের চরম দুর্দশা – এর কোন প্রভাব সোভিয়েত রাশিয়ায় পড়েনি। বরং শ্রমিক ঐক্য এবং উৎপাদন বেড়েই চলেছে। এটার মূলে ছিল সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির উপকারিতা। সমস্ত দেশ এই আর্দশ গ্রহণ করেছিল নিজেদের সংকটমোচনের পন্থায়।

আমাদের দেশে তখন বৃটিশ রাজত্ব। ১৯৩৬ এবং ১৯৩৭ পর পর দু’বছর জ‌ওহরলাল নেহেরু কংগ্রেসের সভাপতি হলেন। চীনের প্রতি জাপানের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে প্রস্তাব গৃহীত হলো। সভাপতির ভাষণে নেহেরুর কণ্ঠে ধ্বনিত হলো বামপন্থী সুর ‛আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পৃথিবীর এবং ভারতের সকল সমস্যার সমাধান সমাজতন্ত্রের মধ্যে নিহিত। … এ সমাজতন্ত্রের অর্থ আমাদের সমস্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর বিপুল এবং বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এ সমাজতন্ত্র ভূমি ও শিল্পের ওপর কায়েমী স্বার্থের অবসান ঘটাবে, ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার সমস্ত সমাজতান্ত্রিক, স্বেচ্ছাচারী বুনিয়াদকে উচ্ছেদ করতে…।’ অবশ্য নেহেরুজী কতোটা সমাজতন্ত্রী ছিলেন এ বিষয়ে গভীর সন্দেহ ছিল তাঁর রাজনৈতিক গুরু গান্ধীজীর মনেই। আগাথা হ্যারিসনকে লিখিত গান্ধীজীর চিঠিপত্র পড়লে তা স্পষ্ট বোঝা যাবে।

১৯৩৮-৩৯ দু’বছর কংগ্রেস সভাপতি হলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। তাঁর সংগ্রামী মনোভাবে এবং আপসহীন সিদ্ধান্তে হরিপুরা অধিবেশনের পর বামপন্থী ঐক্য আরো দৃঢ় হলো। নেতাজী দ্বিতীয়বার সভাপতি হয়েছিলেন গান্ধীজীর মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে। ত্রিপুরী অধিবেশনে গোভিন্দবল্লভ পন্থের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ দেখা দেয়। কম্যুনিস্টদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের পরিণামে কলকাতা অধিবেশনে নেতাজী পদত্যাগ করেন। গান্ধীজীর সঙ্গে বিরোধের পরিণামে ৩.৫.১৯৩৯ নেতাজী গঠন করেন ফর‌ওয়ার্ড ব্লক।

হিটলার আক্রমণ করেন পোল্যান্ড ১.৯.১৯৩৯। তার দু’দিন পর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইংল্যান্ড।

শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। মশকবাহিনী নাৎসিবাহিনী তৈরি হয়। তখন দূরদর্শন ছিল না। সংবাদপত্র এবং রেডিও শুনেই আন্তর্জাতিক যুদ্ধের খবর জানতেন কলকাতার শিক্ষিত বাবুসম্প্রদায়। শত্রুবাহিনী এগিয়ে চলেছে। হিটলারের তীব্র সাম্রাজ্য লালসা। স্তালিন চিন্তিত। সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ করবে না তো হিটলার? মিত্রবাহিনী লড়ছে। এখন প্রতিদিন শুধু পরাজয়ের সংবাদ। একটা সামান্য মানুষ জয় করবে সমগ্র পৃথিবী!

ওদিকে নাৎসিবাহিনী এদিকে মশকবাহিনী। ছোট্ট একটা মশা উড়ছিল… খুব‌ই ছোট কিন্তু হিটলারের চেয়ে ভয়ংকর। একটি তুচ্ছ মশা ডেকে আনছে মৃত্যু বাংলার মানুষ ম্যালেরিয়ার ভয়ে কাঁপছিল। জাপানি বোমা না পড়লেও এদেশে আরো এক যুদ্ধ চলছিল কলেরা যক্ষ্মা ম্যালেরিয়া মহামারী নিয়ে।

তো এই নিয়ে একটা প্রচারমূলক তথ্যচিত্র হচ্ছে। ইংরেজিতে ‛A TINY TING BRINGS DEATH’। একটা রোগামতন মেয়ে দরকার। প্যারীচরণ মিত্র স্কুলের গাঁ থেকে। রোগা পাতলা গড়ন। দেখলেই মনে হয়, এই মাত্র উঠেছে জ্বর থেকে। নায়ক‌ও পাওয়া গেছে। সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রাক্তন ছাত্র, যাত্রা-টাত্রা করে, বেঁটে-রোগা-বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। মনে হয় ক্যামেরার সামনে নার্ভাস হয়ে যাবে না। তথ্যচিত্র নির্মিত হলো। মুক্তি পেল ১৯৪০। ইংরেজিতে অভিনয় জীবন শুরু করলেন আমাদের পরবর্তীকালের মিত্রদম্পতি – সিনেমা দিয়ে শুরু। আরো পরে মঞ্চের ওপর ‛জবানবন্দী’র মৃত পরাণ মণ্ডল শুয়ে আছে। পূর্ববঙ্গে শো ছিল। অসহায় মৃত সেই অভিনেতা শম্ভু মিত্র নড়তে পারছেন না আর একটা মশা উড়ছে তাঁর পেটের ওপর। তিনি তখন সত্যিই উঠেছেন ম্যালেরিয়া থেকে। তথ্যচিত্রের অবদান কাজে লাগেনি। কাতর কণ্ঠে শম্ভু বলছেন : ওরে বিজন, তাড়াতাড়ি শেষ কর। আমি তো আর পারছি না। ওই দ্যাখ –

তখন বিজনবাবুর কাঁদবার দৃশ্য। কিন্তু কাঁদতে কাঁদতেই হাসতে লাগলেন তিনি। পর্দা নেমে এলো। দর্শকের হাততালি। বাঁচলেন পরাণ মণ্ডল! বিজন কবি ছিল। মশা কিংবা হিটলার কাউকেই ভয় পেত না। কবির কাছে সব‌ই সমান। হাসি-কান্না যে কোন পরিবর্তন, সব‌ই তুচ্ছ।