।। শিশিরকুমারের সঙ্গে।। ৫
সীতা নাটক হচ্ছে শ্রীরঙ্গমে। পুরনো নাটক, বড়ো বড়ো চরিত্রে নাম করা পুরনো অভিনেতা। বশিষ্ঠ খুবই ছোট চরিত্র – অভিনয় করার লোক নেই। আর একবার শত্রুঘ্ন করা নিয়েও একই গোল যোগ। শম্ভু মিত্রকে বলা হলো বশিষ্ঠ করতে, তিনি তো কিছুতেই করতেন না। এতো ছোট চরিত্রে নেমে কোন লাভ নেই। মান- সম্মানের প্রশ্ন।
শিশিরবাবুর কাছে কথাটা উঠলো। তিনি ডেকে বললেন : ‘বশিষ্ঠ খুব ভালো পার্ট। আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। তারপর বোঝাতে লাগলেন, বশিষ্ঠ খুব ইম্পর্ট্যান্ট ক্যারেকটার। রাম আর বশিষ্ঠ। একজন ক্ষত্রিয় শক্তির রিপ্রেজেন্টটেটিভ। আর একজন ব্রাক্ষণ্য আধিপত্যকে রিপ্রেজেন্ট করছে।’
‘আমি খুব বিনীতভাবে বললাম : এসব কথা ব্যাখ্যা হিসাবে খুব ভালো হতে পারে। কিন্তু নাটকে কিছু নেই। তখন একটু চুপ করে থেকে হঠাৎ হেসে ঈষৎ অন্তরঙ্গ সুরে বললেন : করে দাও পার্টটা।’ (বহুরূপী, নবান্ন সংখ্যা)
।। শিশিরকুমারের সঙ্গে।। ৬
১.১.১৯৪২ অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন :
SRIRANGAM
2/A, Raja Raj Nissen st.
1st Jan, Thurs. – 3 pm.
— ALAMGIR —
Alamgir – Sj. S. Kr. Bhadhuri.
Udipuri – Sm. Prova
Raj Singhe – Sj. Sailen Chowdhury.
Badal, Kanu Bando (A), Adal, Jilen, Salyen, Probodh, Kashi, Moni, Sambhu, Akhsoy, Mohesh, Panchu, Bepin, Protiva, Prokriti, Bandana, Sarada, Kamala Etc.
অমৃতবাজার পত্রিকার প্রতিদিনের বিজ্ঞাপন অনুসন্ধান করে দেখা গেছে জানুয়ারি – মে, ১৯৪২ এর এই সময়কালে শিশিরকুমারের সঙ্গে শম্ভু মিত্র শ্রীরঙ্গমে অভিনয় করছিলেন।
শ্রীরঙ্গমের অভিনয় সূচিতে পাওয়া গেছে — আলমগীর নাটকে ৪টি অভিনয়, চন্দ্রগুপ্ত তে ৩টি অভিনয়, উড়োচিঠি তে ২৩টি অভিনয়, বিজয়া নাটকে ২টি অভিনয়, জীবনরঙ্গ তে ৭টি অভিনয় , ষোরশীতে ১টি, রীতিমত নাটক এ ৫টি অভিনয়, সীতা নাটকে ১ টি অভিনয়, সধবার একাদশীতে ৩টি অভিনয়, রাধাকৃষ্ণ নাটকে ১টি অভিনয়, পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস নাটকে (প্রথম অর্ধেক) অভিনয়।
।। শিশিরকুমারের সঙ্গে।। ৭
১০.৩.১৯৪২ অমৃতবাজার পত্রিকার প্রকাশিত বিজ্ঞাপন: (উদ্বোধন রজনী)
SRIRANGAM
Mohan lal Moitra of the 6th year class for here by expelled to one year for gross misconduct. What is the misconduct. That will be revealed in Sj. Netai Bhattacharjee’s.
URO CHITHI
On Wednesday 11th March at 7 PM
Leading Roles : sj. Sisir kr. Bhaduri, Monoranjan Bhatta., Sailen chowdhuri, Sm. Usharani, Sm. Geeta, Sm. Raj lanshmi (Fultoosi)
Others in clude : Badal, Kanoo (a), Jiten, Kashinath, Sambhn, Sm. Sandhya, Sarala, Protiva Etc.
২২.৪.১৯৪২ অমৃতবাজার পত্রিকার প্রকাশিত বিজ্ঞাপন:
SRIRANGAM
Thursday, 23rd April 7 PM
SADHABER EKADASHI
Nimchand : Sisir kumar, Nakal: Biswanath Bhaduri, Atul : Sailen chowdhuri. Kanchan: Sm. Raj lakhmi,
Ram manikya : Monoranjan Bhattacharjee.
সধবার একাদশীতে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য অভিনয় করছেন। আশা করি অনুমান করা অসঙ্গত হবে না শম্ভু মিত্র এপ্রিল ১৯৪২ পর্যন্ত শিশিরকুমারের শ্রীরঙ্গমে ছিলেন।
টুরিং থিয়েটার
‘তখন রেঙ্গুনে বোমা পড়েছে, কলকাতা ফাঁকা হয়ে গেছে। সেই সময়ে আমি সামান্য কয়েকদিনের জন্য শ্রী কালীপ্রসাদ ঘোষের এক ভ্রাম্যমান থিয়েটারে যুক্ত হয়েছিলুম।’
এবারেও ভূমেন রায় তাঁকে নিয়ে গেলেন কালীপ্রসাদ ঘোষ, বি.এম.সি-র ট্যুরিং থিয়েটারে। ইনি বহুরূপীর কালীপ্রসাদ ঘোষ নন, সিনেমার মানুষ। গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ঘুরে অভিনয় – অনেকটা একালের ‘তিনদিক খোলা মঞ্চের’ মতন ব্যাপার। এই দলে অভিনয় করতেন নরেশ মিত্র, নির্মলেন্দু লাহিড়ী, জীবন গঙ্গোপাধ্যায়, বিভাননী দেবী, ভূমেন রায়, যোগেশ চৌধুরী, কৌতুকাভিনেতা রণজিৎ রায় এবং আরো অনেকে।
সেই কোম্পানীরই অভিনয় হচ্ছিল ‘বাংলার মেয়ে’। হয়তো চুঁচুড়া বা শ্রীরামপুর, বা ঐরকমই কোনো-এক জায়গায়। আমি উইংস-এ দাঁড়িয়ে সে অভিনয়ের কিছুটা দেখছিলুম। কিন্তু এতো বাজে লাগে যে সেখান থেকে সরে আসি। এই সব নাটক সম্পর্কে আমার চিরকালই বিতৃষ্ণা। সে বয়সে তো আরো বেশীই ছিল। এক আত্মত্যাগিনী প্যানপেনে মেয়েকে কেন্দ্র করে বাঙালী সমাজের কুসংস্কারগুলোর গুণকীর্তন করা হয়, ওতে আমার আনন্দ পাবার কিছু নেই।’ (‘বাংলার মেয়ে’ নাটকে যোগেশ চৌধুরীর অভিনয়ে পরে মুগ্ধ হয়েছিলেন শম্ভু মিত্র।)
‘মফস্বলের মঞ্চ। ইংরেজ পদানত বাংলার যুদ্ধকালীন মফস্বল। সুতরাং সেখানে না ছিলো দৃশ্যের ব্যবহার, না ছিলো আলোর কায়দা। রং উঠে যাওয়া আঁকা একটা পটের সামনে, কলকাতার তুলনায় অত্যন্ত ছোট একটা মঞ্চে, স্মরণীয় অভিনেতা যোগেশ চন্দ্রকে আমি অভিনয় করতে দেখেছিলুম।’ বলা বাহুল্য, এ নাটকে শম্ভু মিত্রও অভিনয় করেছিলেন।
ট্যুরিং থিয়েটারে বেশ কিছুদিন অবিভক্ত বাংলার গ্রামে গঞ্জে অভিনয় সফর সেরে কলকাতায় ফিরে এলেন। মিটিং বসলো হাতিবাগান বাজারের ওপর একটা ঘরে। কালীপ্রসাদ ঘোষ এতো ঝামেলা সইতে পারছিলেন না। সবাই মিলে ধরলেন শম্ভু মিত্রকে। এঁরা বুঝতে পারছিলেন এই যুবকটির মধ্যে সংগঠনী ক্ষমতা আছে। কালীপ্রসাদবাবু খুবই স্নেহ করতেন। কিন্তু শম্ভু মিত্র রাজি হলেন না। কিছুদিনের বিরতি।
আমরা দেখতে পাচ্ছি ১৯৩৯-৪২ এই তিন চার বছরে শম্ভু মিত্র কোথাও স্থির থাকতে পারছেন না। খুঁজে পাচ্ছেন না মনের মতো নাট্যচর্চার প্রতিষ্ঠান। পেশাদারী মঞ্চে যোগ দিলেন অভিনয়টাকে জীবিকারূপে গ্রহণ করার জন্যে, কিন্তু এর মধ্যেও চাই নতুন কোনো সৃষ্টি নতুন কোনো আনন্দ ,— একটা কোনো আদর্শ।
ক্রমশ…