থিয়েটারকে আশ্রয় করেও যে জীবনের বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন করে বাঁচা যায় – এই সত্য জীবনে অনুভব করেছে অভিনেত্রী সানন্দিতা দাস। সে জানিয়েছে, এমন একটা সময় এসেছিল জীবনে যখন চূড়ান্ত হতাশার মুখোমুখি হয়ে জীবন থেকেই সরে দাঁড়াতে চেয়েছিল সানন্দিতা। কিন্তু সেই সময় এক বন্ধুর পরামর্শে আবার থিয়েটারে যুক্ত হয়ে আনন্দের আস্বাদ পেয়েছিল। শুরু হয়েছিল নতুন করে বেঁচে থাকার নতুন লড়াই। আর এই লড়াইএ সানন্দিতা থিয়েটারে নিজের একটা জায়গা করে নিয়েছে। নানা চরিত্রের সুখ দুঃখ নিয়ে মঞ্চে হাজির হচ্ছে নানা ভূমিকায়।
আসলে প্রায় সবার জীবনেই এমন অনেক গল্প থাকে। হতাশা আসে। বিপর্যয়ের বিপাকে পড়ে অনেকেই। কিন্তু থিয়েটারও যে বাঁচার ঠিকানা দিতে পারে সেটা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে সানন্দিতা। তার জীবনের গল্পে বিপর্যয় এবং বিপর্যয় থেকে মুক্তি – দু’য়ের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে থিয়েটার। দমদমের মেয়ে সানন্দিতার বেড়ে ওঠা দমদমেই। বাবা সঞ্জয় দাস ও মা কাবেরী দাসের উৎসাহে ছোটবেলা থেকেই নাচ, গান, আঁকার একটা জগৎ তৈরি হয়েছিল তার। দমদম মোতিঝিল গার্লস হাই স্কুলের সীমানা ছাড়িয়ে ইগনু থেকে ইংরেজিতে স্নাতক। কিন্তু অভিনয়ের জগতের প্রতি তার একটা টান তৈরি হয়েছিল। সেই সূত্রেই উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর S E T C প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল অভিনয় শিক্ষার প্রয়োজনে। যদিও কম সময়ে খুব একটা কিছু শিখতে পেরেছিল বলে তার মনে হয়নি। সানন্দিতার মা – বাবা থিয়েটার দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন। স্বভাবতই তাঁরা আপত্তিও করেননি মেয়ের ইচ্ছায়। অজিতেশ মঞ্চে কিশোরীকালে একটা নাটক দেখেছিল সে। থিয়েটারের প্রতি একটা ভালবাসাও জন্মেছিল। SETC এর পর বেশ কয়েকটা ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ মিলেছিল। কালার্স বাংলায় আলোয় ভুবন ভরা , মা মনসা, জি বাংলায় ভানুমতীর খেল, বকুল কথা ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিল। অভিনয়ের নেশাটা পেয়ে বসেছিল এভাবেই।
গুগল অনুসন্ধানের মাধ্যমে ইফটা দলের খবর পেয়ে যুক্ত হয়েছিল ইফটার সঙ্গে। সেখানে “ডিয়ার পাপা ” নাটকে সুযোগ মিলল। খুব কম সময়ের রিহার্সালে অভিনয় করেছিল গিরিশ মঞ্চে। দেবাশিস দত্তর নির্দেশনায় এ নাটকে অভিনয় করার পর অভিনয়ের তৃষ্ণা বাড়ে। দেবাশিস দত্ত ছাড়াও ইফটার কার্তিক বেরার কাছেও অভিনয়ের নিবিড় পাঠ পেয়েছিল সানন্দিতা। বেশ চলছিল জীবনটা। কিন্তু ছন্দপতন হল একটি সম্পর্কজনিত কারণে। জীবনে নানা ঝড়ঝাপটার সম্মুখীন হয়ে অভিনয় জীবন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। বিপর্যস্ত হয়েছিল জীবন। চূড়ান্ত হতাশার অন্ধকারে যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল তার ইচ্ছাগুলো। তবু ভিতরে ভিতরে একটা লড়াই চালাচ্ছিল আনন্দের জীবনে ফেরার। সহায় হয়েছিল মা- বাবা। সে সময় এক বন্ধুর পরামর্শে আবার থিয়েটারকেই আঁকড়ে ধরেছিল সানন্দিতা। তার মনে হয়েছিল এমন একটা কিছু আঁকড়ে ধরতে হবে যা থেকে আনন্দের ভুবনে আবার ফেরা যায়। নিকটবন্ধুর পরামর্শ মেনে মা- বাবার অনুমোদনে আবার ফিরেছিল ইফটা দলেই। ইফটা (ইন্সটিটিউট অফ ফ্যাকচুয়াল থিয়েটার আর্টস) দলের নানা নাটকে অভিনয় করে সানন্দিতা তার অভিনয় প্রতিভার পরিচয় দিয়ে চলেছে। দেবাশিস দত্ত এবং কার্তিক বেরার ভূমিকা এক্ষেত্রে তার পরম পাওয়া। এই দলে এ পর্যন্ত তার অভিনীত নাটকগুলি হল – ডিয়ার পাপা (পাখি) , বুড়ো শালিক নট আউট (ভোগী), ভাঙা সম্পর্কের যাদুঘর (অনামী), কানেXশন (মুকুট দেবী), ঝিকড়গাছায় ঝঞ্ঝাট (স্যাঙাত) , কমরেড তবু মনে রেখো (কবিতা), ফোর্থ বেল (কোরিওগ্রাফি)।
এছাড়া রাজডাঙা দ্যোতকের দ্বিখন্ডিত নাটকেও কোরিওগ্রাফিতে অংশ নিয়েছে। অভিনয় করেছে ” থার্ড পার্সন ” নামে একটি শর্ট ফিল্মেও। নাচ, গান, আঁকার পাশাপাশি অভিনয়ের জীবনে ফিরে আবার জোরকদমে শুরু করেছে থিয়েটার। ইফটা দলেই প্রসেনজিত বর্ধন, গৌতম হালদার, অজিত রায়, সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়, মৈনাক সেনগুপ্ত, সৌরভ চ্যাটার্জীর অধীনে কর্মশালা করেছে।অন্যত্র শুভাশিস খামারুর কর্মশালাতেও যোগ দিয়েছে। এসবের মধ্যেও গল্পের বই পড়া, আবৃত্তিচর্চা, মডেলিংএ যুক্ত রেখেছে নিজেকে। অভিনয় তার কাছে একটা নেশা। এটাকেই জীবনে পেশা করতে চায় সানন্দিতা। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সানন্দে এগিয়ে চলেছে সানন্দিতা।