নিজস্ব প্রতিবেদন
গতকাল সন্ধ্যা অর্থাৎ ১৯/৮ ছিল শ্রদ্ধেয় নাট্যজন উৎপল দত্তর মৃত্যুদিন। কিন্তু উৎপলবাবুর অত্যন্ত কাছের মানুষ প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব সমীর মজুমদারের সাক্ষাৎকার শুনে আমার একবারও মনে হয়নি, উৎপলবাবু চলে গেছেন, বরং সমীরবাবু গল্পচ্ছলে উৎপল দত্ত কে নতুন করে আবিষ্কার করালেন, নানা দিক থেকে নানা মাত্রায়। উৎপলবাবুর নাট্য সমগ্রের দশটি খন্ডই আমার সংগ্রহে আছে এবং পড়াও প্রায় শেষ। তাছাড়া উৎপল দত্তের গদ্য সংগ্রহের দুটি খন্ড আছে, সেগুলো আগেই শেষ করে ফেলেছি। বিভিন্ন ম্যাগাজিনে তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন লেখকের বিশ্লেষণ পড়েছি। বিশেষ করে শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এর আলোচনাও শুনেছি। কিন্তু এতো কিছুর পরেও গতকালের সন্ধ্যায় উৎপল দত্ত মাত্র একটি ঘণ্টার জন্যে আমার কাছে জীবন্ত হয়ে উঠলেন অঙ্কুর নাট্য সংস্থার আয়োজনে সমীর মজুমদারের সাবলীল ভাষায় সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে।উৎপলবাবু যেমন বলতেন ” আমার সৃষ্টি যেন এমনটা না হয় যা তথ্য এবং তত্ত্বের ভারে মানুষের মাথা বা মন ক্লান্ত না হয়ে যায়, বরং আমার বলাটা যেনো অনায়াসে সমস্ত শ্রেণীর মানুষের কাছে পৌঁছে যায় সহজ ভাবে”। তাঁর সমস্ত প্রযোজনায় আমরা তাঁর এই বলাটাকে সত্যি করে পেয়েছি। কালকের সন্ধায় ঠিক তাঁর কথা মান্যতা দিয়েই এতো সহজ করে সমীর মজুমদার গল্পের মতো করেই ভিন্ন মাত্রায় উৎপলবাবুকে ফ্রেম বন্দী মালা দেওয়া ছবি থেকে মঞ্চে নামিয়ে আনলেন, এমন করে যা আমি অন্তত কোনোদিন কোনো বই পড়ে বা অন্য আলোচনা শুনে পাইনি। এমন -এমন কথা তিনি আলোচনা তিনি করতে লাগলেন মনে হলো আমি যেনো তাঁর ভাঁড়ার ঘরে ঢুকে পড়েছি।
৮২ বছর বয়সে পৌঁছে ও তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠস্বর, উচ্চারণ, বিভিন্ন স্বরও পর্দার ব্যবহারে আবেগ মথিত হয়ে পড়ছিলাম। সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানটাই একটা গোটা নাটক হয়ে উঠলো আমার কাছে। বীরকৃষ্ণ দাঁড় সাথে কাপ্তেনবাবুর কথোপকথন একাই গড় গড় করে বলে, অদ্ভুত এক ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করলেন। শুধু যেনো একটা মুগ্ধতা একটা বিস্ময় আমাকে এক সাধারণ দর্শকের চরিত্র হয়ে উঠতে বাধ্য করছিলেন। বীরকৃষ্ণ দা যখন বিভৎস একটা গলায় বলেন “আমার হাতের দশটা আঙুলে যে দশটি দামী পাথর আছে, এগুলো দিয়ে আমি, আপনাদের ওইসব সাহিত্য-ফায়িত্য কিনে নিতে পারি…” এইখানটায় উনি সমীর মজুমদার কিন্তু পরক্ষণেই যখন আবার বলেন “এই আনিস ঢালো” তখন তিনি আবার বীরকৃষ্ণ দা। এলিনিয়েশন এর চরম প্রয়োগ বোধহয় এমনভাবেই হয়।
প্রখ্যাত নাট্যকার, নাট্য গবেষক এবং প্রাবন্ধিক ডক্টর অপূর্ব কুমার দে অত্যন্ত সুনিপনভাবে এই মহান মানুষটিকে কথা বলিয়ে নিয়েছেন। পাহাড়প্রমাণ মানুষটি সম্পর্কে এত প্রাঞ্জল আলোচনা আদৌ একঘন্টার সম্ভব নয়, তাই অতৃপ্তি থেকেই গেল। প্রণাম, সমীর মজুমদার মহাশয় কে। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ডক্টর অপূর্ব দের প্রতি। এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করেছেন আমার অত্যন্ত কাছের একজন নাট্য প্রেমী ও অভিনেতা সৌম্য পাল। তাকেও আমার অন্তরের ভালোবাসা জানাই।আবার কোনদিন উনি এখানে এলে বাকিটা শোনার অপেক্ষায় রইলাম।
পরের অনুষ্ঠান ছিল অঙ্কুর নাট্য সংস্থার নিজস্ব প্রযোজনা উৎপল দত্তর রচিত “আজকের শাজাহান “। এক ঝাঁক নতুন অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়ে অংকুর স্পর্ধা দেখিয়েছে এই প্রযোজনায়। রাজা ভৌমিক একজন পরিণত অভিনেতার সঙ্গে কমবেশি সমান পাল্লা দিয়ে এ প্রজন্মের অনুজ সদস্যরা প্রাণ ঢেলে চেষ্টা করেছেন এবং সফল হয়েছেন । বিশেষ করে অনেকদিন মনে থাকবে, ওথেলো এবং ডেসডিমোনার মুহূর্তটি!শব্দ প্রক্ষেপণ এর গোলমালে অনেক সংলাপ হারিয়ে গেছে, এটা অবশ্য সংস্থার দোষ এর মধ্যে পড়ে না! মফস্বলের থিয়েটারের এটাই বোধহয় দুর্ভাগ্য শত চেষ্টা সত্ত্বেও তৃতীয় একটা শক্তি কিছুটা প্রযোজনা কে ব্যাহত করে। অঙ্কুরের জয় হোক।
নাটক শুরুর আগে আমার পরিচালক যে কথাগুলো বলে মোটিভেট করেন। জানিনা সবার কি মনে হয়। আমার মনে হয়। যখন যে পরিচালক যেভাবে মনের অন্দরে পরশের আগুন জাগাতে পেরেছেন কী সেই কথা গুলো?