শিক্ষকতার পাশাপাশি থিয়েটারে রাজীব নিবেদিত প্রাণ | বিজয়কুমার দাস, পর্ব -৩২

সারা রাজ্য জুড়ে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে আছে এমন অনেকে যাঁরা থিয়েটারকে জীবনে বেঁচে থাকার একটা রসদ হিসাবে বেছে নিয়েছেন। সেখানে কোনো চাওয়া পাওয়ার হিসেব থাকে না। অবশ্য চাওয়া বলতে যেটুকু থাকে তা হল থিয়েটার করতে চাওয়া। মহানগর কলকাতায় অনেক নাট্যদল। সেই সব দলে অনেকেই জড়িয়ে আছেন পুরোপুরি থিয়েটারে। অনেকে থিয়েটারকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।তবুও সে কাজে ঝুঁকি অনেক। কিন্তু থিয়েটারের জন্য তাঁরা যে ঘাম ঝরাচ্ছেন ,যে শ্রম দিচ্ছেন তা স্মরণীয়।

কলকাতা থেকে কিলো- কিলোমিটার দূরে গ্রাম মফস্বলে বসে যাঁরা থিয়েটার চর্চা করছেন তাঁদের কাছে কাজটা অনেক কঠিন। কোথাও ভালো মঞ্চের অভাব, কোথাও দর্শকের অভাব, কোথাও অভিনেতা অভিনেত্রীর অভাব। তাই বলে জেলার থিয়েটারও থেমে থাকেনি। বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত শহর বা গ্রামের অনেক ছেলেমেয়েই ভালবেসে থিয়েটার করছেন।

ধরা যাক, মালদা ড্রামাটিক ক্লাবের রাজীব মোহন মৈত্রর কথা। মালদা ড্রামাটিক ক্লাব বয়সের নিরিখে ১২৫ এর চৌকাঠ পেরিয়েছে।একদা ১৮৬৪ সালে অবিভক্ত বাংলায় মালদার বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কিছু থিয়েটারপ্রেমী মানুষ গড়েছিলেন মালদা ড্রামাটিক ক্লাব। এই দীর্ঘ সময় ধরে এই ড্রামাটিক ক্লাব থিয়েটারের পতাকা ধরে আছে শক্ত হাতে। প্রতিষ্ঠাতারা কেউ আর নেই। কিন্তু প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে দলটি আছে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নিয়ে থিয়েটার চর্চার মাধ্যমে। সেই দলের অভিনেতা রাজীব পেশায় স্কুল শিক্ষক। মালদা বিবেকানন্দ শিশু বিদ্যামন্দিরে ২০১৭ সাল থেকে শিক্ষকতায় যুক্ত। বাবা নৃপেন্দ্র মোহন মৈত্রও শিক্ষকতা করতেন। মা নন্দারাণী অবশ্য গৃহবধূ হয়েও পরিবারের মানুষজনরা থিয়েটারে অভিনয় করুক তাতে প্রশ্রয় ছিল। মালদা স্কুলে ও কলেজে পড়াশুনোর পর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর।চাকরীও জুটে গেছে, শিক্ষকতা। খেয়ে পরে চাকরি করে রাজীব কাটিয়ে দিতেই পারত জীবনটা। কিন্তু বালকবেলায় থিয়েটারের পোকা ঢুকে পড়েছিল তার মাথায়। দাদু হৃদয় মোহন মৈত্র এবং কাকা অমরেন্দ্র মোহন মৈত্র মনের সুখে থিয়েটার যাত্রা করতেন। কোন নির্দিষ্ট দলে নয়, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দলে অভিনয় করতেন। তাঁদের সঙ্গে থিয়েটার দেখতে যাওয়ার সূত্রে থিয়েটারকে ভালো বেসেছিল রাজীব। সেই ভালবাসা থেকেই গেছে।

স্কুল জীবনেই নাটকের মঞ্চে নেমেছিল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গল্পপাঠ, শ্রুতিনাটক করতে করতে নাটক করার জেদটা মনের মধ্যে বাসা বাঁধে রাজীবের। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েও বিভাগীয় নাটকে অভিনয় করে বাহবা পেয়েছে। “রক্তকরবী” নাটকে বিশু পাগলের চরিত্রে অভিনয় করেছিল সেখানে ।

২০১১ সালে এম এ পাশ করার পর মালদায় ফিরে শুরু হয় জোরকদমে নাট্যচর্চা। মালদা অন্তরঙ্গ দলের নাট্য নির্দেশক রণজিৎ দেবভূতির সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সূত্রে মালদায় অভিনয় শুরু। তবে ২০১৪ সালে মালদায় সে মঞ্চে নেমেছিল “ফুলমোতিয়া” নামে ভোজপুরী নাটকে যমনা চরিত্রে। তারপর থেকেই শুরু হল রাজীবের থিয়েটারে নিয়মিত অভিনয়। ২০১৭ সালে রাজীব যুক্ত হয় মালদার পুরনো নাট্যদল মালদা ড্রামাটিক ক্লাবে। বেশ কিছুকাল এই দলে আসা যাওয়ার পর দলের সদস্য হয়েছিল সে। আসলে রাজীব তখন নিয়মিত থিয়েটারচর্চার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছিল। ড্রামাটিক ক্লাবের মত একটি দলে যুক্ত হতে পারায় তার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়। কিন্তু শুধু অভিনয় নয়, নাটকের সবরকম কাজে সে নিজেকে যুক্ত করে। যে সব নাটকে অভিনয় করে না সেই নাটকেও আলো,আবহ, সেট ইত্যাদির দায়িত্ব পালন করে। ড্রামাটিক ক্লাবে চিত্ত বিনিময় (নন্দী চরিত্রে) নিহত নিয়তি (ডা: বোসের চরিত্রে) অভিনয় করে নিজের অভিনয় প্রতিভার দক্ষতা প্রমাণ করেছে রাজীব।

তার থিয়েটার জীবনে অভিনীত বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটক হল : অবাক জলপান, জীয়নকন্যা, মহেশ, জীবনের খোঁজে, দুই পৃথিবী, রক্তকরবী ইত্যাদি। নাটকগুলি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে করেছিল। কিন্তু এই নাটকগুলিতে প্রাপ্ত প্রশংসাই তাকে পরবর্তীকালে গভীরভাবে থিয়েটারে যুক্ত হতে প্রাণিত করেছে।জীয়নকন্যা নাটকটি অভিনয় করেছিল রণজিৎ দেবভূতির পরিচালনায়।

থিয়েটার শেখার তাগিদে বেশ কিছু নাট্য কর্মশালায় থিয়েটারের পাঠ নিয়েছে।কলকাতা এবং পজিটিভ নাট্যদলের কর্মশালায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি দিল্লির তড়িৎ মিত্রর কাছে সুদীর্ঘ সময় কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছে থিয়েটার শেখার তাগিদে।এবং পজিটিভ এর কর্মশালায় প্রশিক্ষক ছিলেন নাট্যশিক্ষক রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র বসু, বাদশা মৈত্র এবং কমল চট্টোপাধ্যায় প্রমুখরা। নাটক বিষয়ক নানা বইপত্র পড়া আর সাহিত্যচর্চা তার অন্যতম নেশা। রাজীব জানিয়েছে, কলকাতা থেকে দূরে মালদা জেলায় থিয়েটার চর্চায় যুক্ত থাকলেও থিয়েটার সে ছাড়বে না। কারণ থিয়েটার তাকে অন্য একটা আনন্দের জগতে নিয়ে যায়।

14 thoughts on “শিক্ষকতার পাশাপাশি থিয়েটারে রাজীব নিবেদিত প্রাণ | বিজয়কুমার দাস, পর্ব -৩২

  1. আন্তরিক শুভেচ্ছা রইলো।

    1. brilliantly summed up.Hope he thrives a lot on the way forward.lots of good wishes…

  2. অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই অমল আলো পত্রিকার সম্পাদক কে ।

    1. অসাধারণ সুন্দর একটি লেখা। অজস্র ধন্যবাদ বিজয় বাবু আপনাকে। ভালো থাকবেন। দেবাশীষ ভূতি।

  3. অমল আলো এদের কথা প্রকাশ করে এক মহান দায়িত্ব পালন করছে থিয়েটারের সাম্রাজ্যে।কলকাতার পাশাপাশি উঠে আসছে জেলার মুখগুলিও।মালদা ড্রামাটিক ১২৫ বছরের নাট্যদল।সেই দল বহন করছে নতুন প্রজন্মকে।রাজীব মোহন সেই প্রজন্মের প্রতিনিধি।নাট্যমেব জয়তে।

    1. আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এমন সুন্দর লেখার জন্য । ভালো থাকবেন । শুভ কামনা রইলো ।

    1. ভালো থাকবেন । শুভ কামনা রইলো ।

  4. @Rajib mohon maitra dada tumi r o sudirgha poth egiye cholo ey kamona kori..Tomar nattyochorchar pothe egonor soilpik disha amader moto nobbo der onuprerona jogabe…Pase achi pase theko..
    Good wishes…

  5. প্রিয় রাজীব
    তোমাদের দলে সাম্প্রতিক মহলায় কি চলছে তা লিখে জানাবেন।
    আরো অনেক কাজ করুন। এগিয়ে চলুন।

    1. বর্তমানে নবতম প্রযোজনা ” যমে মানুষে ” ।
      এছাড়াও রয়েছে ” ঠিকানার সন্ধানে “, “জগবন্ধু “, “সোনার চেয়ে দামী “, “বাদশা বেগম ” , “নিহত নিয়তি ” ।

  6. বর্তমানে নবতম প্রযোজনা ” যমে মানুষে ” ।
    এছাড়াও রয়েছে ” ঠিকানার সন্ধানে “, “জগবন্ধু “, “সোনার চেয়ে দামী “, “বাদশা বেগম ” , “নিহত নিয়তি ” ।

Comments are closed.