শ্রীজিতা থাকতে চায়, থিয়েটারের চর্চায়

বিজয়কুমার দাস

 

কলকাতাতেই বড় হওয়া, বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া শ্রীজিতা ঘোষের। কলকাতার পার্কসার্কাস এলাকায় জন্ম। আবার এই কলকাতাতেই তার যোগসূত্র থিয়েটারের সঙ্গে। অথচ জীবনের প্রথম দিকে থিয়েটার নিয়ে তেমন ইচ্ছে ছিল না। কলেজে পড়তে এসে শ্রীজিতা পেয়ে গেল অধ্যাপক ড: মুক্তিনাথ চ্যাটার্জীকে। মুক্তিনাথবাবু চারুচন্দ্র কলেজের অধ্যাপক, থিয়েটারের মানুষ। দমদম চারুরঙ্গ নামে তাঁর নাটকের দল আছে। সেই মুক্তিনাথবাবুর সান্নিধ্যে এসেই শ্রীজিতার যোগ ঘটে গেল থিয়েটারের সঙ্গে। মুক্তিনাথবাবুর দমদম চারুরঙ্গ দলেই শ্রীজিতা প্রথম মঞ্চে নামে অভিনয় করতে। সেই যে থিয়েটার জার্নি শুরু হল তা এখনও জড়িয়ে আছে শ্রীজিতার জীবনকে।

থিয়েটারের প্রতি একটা ভালো লাগা যদিও ছোট থেকেই ছিল। তবু কলেজ জীবনের আগে সেভাবে যোগ ঘটেনি থিয়েটারের সঙ্গে।পরে থিয়েটারে যুক্ত হওয়ার পর থিয়েটারের প্রতি ভালো লাগাটা গভীর থেকে গভীরতর হয়ে ওঠে। দমদম চারুরঙ্গর হয়ে মঞ্চে নামার পর ইচ্ছেটা আরো প্রবল হয়। ওই দলেই মুক্তিনাথবাবুর নির্দেশনায় ” পাড়ি ” নাটক দিয়েই তার থিয়েটার চর্চার জীবনের শুরু।অভিনয়ের পাশাপাশি পরবর্তীতে থিয়েটার নির্মাণের কাজেও সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে শ্রীজিতা। যেমন কাব্যকলা মনন দলের প্রসিদ্ধ প্রযোজনা ” কাইট রানার ” নাটকে প্রসেনজিৎ বর্ধন ও সুমিত কুমার রায়কে নাটক নির্মাণের সহযোগী হিসাবে দায়িত্ব পালনের ভূমিকায় দেখা গেছে শ্রীজিতাকে। এটা তার অভিনয় জীবনের পরম পাওয়া অবশ্যই। এ নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি দুই সুপরিচিত অভিনেতা ও নাটক নির্মাতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার থিয়েটার চর্চার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে।

আসলে থিয়েটারের কাজ করতে করতেই তার থিয়েটার শেখা। বিভিন্ন নাট্যদলের প্রযোজনাতে অভিনয়ের পাশাপাশি একটা নিশ্চিত উপার্জনের জন্য আরো কিছু কাজ তাকে করতেই হয়। থিয়েটারের কর্মশালা,ছাত্র ছাত্রী পড়ানোর পাশাপাশি নিজের লেখাপড়ার কাজও চালিয়ে যাচ্ছে সমানতালে। মাঝে মাঝে তার মনে হয়, থিয়েটারকেই রুটিরুজির মাধ্যম হিসাবে বেছে নিলে বেশ হত। কিন্তু বাস্তবটাও তার জানা যে, শুধু থিয়েটার নিয়ে বেঁচে থাকা বড় বেশি ঝুঁকি। বিশেষত করোনার কাল সেই বাস্তব শিক্ষা দিয়েছে। তাই নিজের পড়াশুনো, থিয়েটারের নানা কাজ, ছাত্রছাত্রী পড়ানোর দায়িত্ব সামলেও বিভিন্ন দলের বিভিন্ন প্রযোজনায় অভিনয় করে চলেছে শ্রীজিতা।অরিত্র ব্যানার্জী, প্রসেনজিৎ বর্ধন, সুমিত কুমার রায়, সৌম্য মজুমদার, প্রান্তিক চৌধুরী প্রমুখদের নির্দেশনায় কাজ করার অভিজ্ঞতা শ্রীজিতার অভিনয় জীবনের ঝুলিতে রয়েছে।

দমদম চারুরঙ্গ ছাড়াও অন্য থিয়েটার, সন্দর্ভ, নৈহাটি ব্রাত্যজন, কাব্যকলা মনন ইত্যাদি নাট্যদলের বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করে শ্রীজিতা তার থিয়েটার অভিজ্ঞতাকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনই থিয়েটার মহলে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এখনও পর্যন্ত যা অভিনয় করেছে তাতে বিভাস চক্রবর্তীর পরিচালনায় “রাজরক্ত” নাটকে মেয়েটি চরিত্র তার কাছে প্রিয় চরিত্র হিসাবে চিহ্ণিত।

থিয়েটার শেখার ক্ষেত্রে শ্রীজিতার কাছে সহায়ক হয়ে উঠেছে বিভিন্ন দলের প্রযোজনায় কাজ করার অভিজ্ঞতা, নিয়মিত মহলা ও মুক্তিনাথ চ্যাটার্জীর বিভিন্ন কর্মশালা কেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ। শ্রীজিতা অভিনীত নাটকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজরক্ত ( অন্য থিয়েটার), পিতৃভূমি ( সন্দর্ভ),কাইট রানার ( কাব্যকলা মনন), একটি গাছ একটি প্রাণ ( দমদম চারুরঙ্গ),দাদার কীর্তি ( নৈহাটি ব্রাত্যজন) ইত্যাদি। একসময় থিয়েটারে যুক্ত হওয়ার যে ইচ্ছা লালন করেছিল মনে মনে সেই ইচ্ছার রূপায়ণের উন্মেষকাল থেকে থিয়েটারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পিছনে প্রাণিত শক্তি অবশ্যই পারিবারিক সহযোগিতায়।

শ্রীজিতা বিশ্বাস করে, থিয়েটার এমন এক মাধ্যম যেখানে অনেক কিছু শেখার আছে।অভিনয় শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে নানা বিষয়। অনুশীলন ও চর্চার সেইসব ইচ্ছাকে সামনে রেখেই থিয়েটারে সচেতনভাবে নিজেকে যুক্ত করেছে সে। এই থিয়েটার চর্চার মধ্যেই সে আগামীতে নিজেকে যুক্ত রাখতে চায়। সেই লড়াইটাই চালিয়ে যাচ্ছে শ্রীজিতা ঘোষ।

One thought on “শ্রীজিতা থাকতে চায়, থিয়েটারের চর্চায়

Comments are closed.