উত্তর ২৪ পরগণার সীমান্ত শহর বনগাঁ। সেই বনগাঁ থেকে আরো বেশ কিছুটা দূরে এক প্রত্যন্ত গ্রাম গাঁড়াপোতা। এখানে গাঁড়াপোতা শপ্তক নামে একটি নাট্যদল থিয়েটার নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই নাট্যদলের সঙ্গেই গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা প্রণয় বিশ্বাসের ধ্যানজ্ঞান হল থিয়েটার। অবশ্য গাঁড়াপোতা শপ্তক দলটির পূর্বনাম ছিল কচি সংসদ।
ছোটবেলায় সেখানে থিয়েটার দেখতে আসত প্রণয়। থিয়েটার দেখতে দেখতেই অজান্তে থিয়েটারের প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি হয়।পরে একদিন ৫-৬ জন বন্ধু মিলে থিয়েটার করার বাসনা নিয়ে যোগ দিয়েছিল এই দলে।কচি সংসদই পরবর্তীকালে রেজিস্ট্রেশনের সময় থেকে গাঁড়াপোতা শপ্তক নামে পরিচিত হয়।
গ্রামের নামের সঙ্গে ” শপ্তক ” শব্দটি জুড়ে কচি সংসদ নতুন উদ্যমে থিয়েটার শুরু করেছিল। শপ্তক শব্দের অর্থ হল যোদ্ধা। তাই গাঁড়াপোতা শপ্তকের থিয়েটার কর্মীরা এক একজন থিয়েটার যোদ্ধাই। অবশ্য প্রথম দিকে নাটক করতে এসে ভাল চরিত্র পায়নি প্রণয়।অধিকাংশ নাটকে ছোট চরিত্রে অথবা কোরাসের দলে সুযোগ মিলেছিল। কিন্তু হাল ছাড়েনি প্রণয়। গাঁড়াপোতা শপ্তকের স্বপন রঞ্জন হালদার প্রণয়ের নাট্যগুরু। অবশেষে একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে সুযোগ মিলল প্রণয়ের। ২০১৪ সালে ” শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা ” নাটকে একটা চরিত্র পেল।কিন্তু চরিত্রটা চ্যালেঞ্জিং, এক ট্রান্সজেন্ডার এর চরিত্র। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল প্রণয়।নিজেকে তৈরি করল এই চরিত্রের জন্য।নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার পর তার অভিনীত চরিত্রটি দর্শকদের ভাল লেগে গেল। থিয়েটারে উৎসাহ বেড়ে গেল প্রণয়ের। সেই প্রণয় পরবর্তীকালে গাঁড়াপোতা শপ্তকের অন্যতম সেনাপতি।
২০১৫ সালে আনন্দবাজার পত্রিকার মাধ্যমে অভিনেতা গৌতম হালদারের নাট্য কর্মশালার খবর পেল। যোগাযোগ করে কর্মশালায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল।মনপ্রাণ দিয়ে কর্মশালায় শিখে নিল অভিনয়ের খুঁটিনাটি। গৌতম হালদারের “নয়ে নাটুয়া ” দলে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে গেল প্রণয়। ২০১৫-২০১৯ পর্যন্ত নয়ে নাটুয়ার নানা নাটকে অভিনয় করেছে। এই দলে প্রণয়ের উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হল, ঠাকুরমার ঝুলি, ওথেলো, মেঘনাদবধ কাব্য, মৈমনসিংহ গীতিকা, মাটির গাড়ি মৃচ্ছকটিক। মেঘনাদবধ কাব্য ও ওথেলো নাটকে কোরাস চরিত্রে অভিনয় করলেও ঠাকুরমার ঝুলি, মৈমনসিংহ গীতিকা, মাটির গাড়ি মৃচ্ছকটিক নাটকে পেয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।এ সময় থিয়েটারের টানে একটানা পাঁচ বছর গাঁড়াপোতা থেকে কলকাতায় গৌতম হালদারের দলে যাতায়াত করে থিয়েটার করেছে প্রণয়।
একসময় যে কম বয়সে এসেছিল গাঁড়াপোতা শপ্তকে থিয়েটার করতে সেই শপ্তকেই প্রণয় হয়ে উঠল পরিচালক। ২০১৬ সাল থেকে পরিচালনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। গাঁড়াপোতা শপ্তকের “নিরাশ্রয়” নাটক প্রণয়কে চিনিয়ে দিল। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ পাণ্ডুলিপির
পুরস্কার নিয়ে এল নিরাশ্রয় নাটক।
রাকেশ ঘোষের দমদম শব্দমুগ্ধ দলে স্যাফো চিত্রাঙ্গদা নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি ২০১৮ সালে “হাওয়াই” নাটক করতে ইউরোপ গিয়েছে। ২০১৯ এ এন এস ডি এর হয়ে ভারত রঙ মহোৎসবে যোগ দিয়েছে সে।
নিজের দলে ছোটদের নিয়ে কাজ করে প্রণয় আনন্দ পায়। বিচ্ছুর বুদ্ধি, টুনটুনি লো, জুতা আবিষ্কার সহ রবীন্দ্রনাথের সাধারণ মেয়ে এবং সব্যসাচী দেবের কৃষ্ণা কবিতা অবলম্বনেও নাটক নির্মাণ করেছে প্রণয়।সাধারণ মেয়ে ও কৃষ্ণা নির্মাণে যথাক্রমে রুমা চ্যাটার্জী ও রিয়া মণ্ডল তাকে সহযোগিতা করেছে। রবীন্দ্রনাথের ‘গুরু’ মঞ্চে এনেছে ৩৭ জন শিশুশিল্পীকে কাজে লাগিয়ে। গাঁড়াপোতা শপ্তক এলাকায় থিয়েটার নিয়ে একটা আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছে এলাকায়। প্রণয়ের কথায় , দলের নাট্য উৎসবে সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। এখানে বাংলা থিয়েটারের প্রথিতযশা শিল্পীরা অভিনয় করে গেছেন।অথচ তেমন উপযুক্ত মঞ্চ নেই, চারদিক ঘিরে মঞ্চ তৈরি করে নাটক করতে হয়।
ছোটদের নাটক নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছে দলটি। প্রণয় সেই দলের হয়ে তার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য অবশ্যই ভালো থিয়েটার করা। এলাকায় থিয়েটারের একটা পরিকাঠামো গড়ে তোলা। এ লড়াইয়ে জিততে চায় গাঁড়াপোতা শপ্তকের প্রণয় বিশ্বাস।
দারুণ বলেছে প্রণয়।
আমার মতো অতি তুচ্ছ এক গ্রামীণ নাট্যকর্মীকে খুঁজে বের করে লেখার জন্য ধন্যবাদ বিজয় কুমার দাস ও নাট্যপত্রিকার কর্তৃপক্ষকে।
ভাই এটা ভুললে চলবেনা “বিন্দু বিন্দু জলেই সিন্ধু ” তুই আমাদের গর্ব আমাদের অহংকার, ভালো থাক,আরো ভালো কাজ করতে থাক, শুভেচ্ছা শুভ কামনা রইল, ভালোবাসা নিস।