বিজয়কুমার দাস
কলকাতাতেই লেখাপড়া এবং বড় হয়ে ওঠা গার্গী ঘোষের। বাঁকুড়ায় দেশের বাড়ি হলেও বাবার কর্মসূত্রে কলকাতায় বসবাস। বারাসাত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পাঠে নিবিষ্ট গার্গী। ছোট থেকেই নাচে গানে আঁকায় চৌকশ, পাশাপাশি নাটকেও। অভিনয় শিক্ষার পাঠও শুরু সেই মেয়েবেলাতেই। বাবা পরিমল ঘোষ এবং মা মিঠু মণ্ডল ঘোষ প্রথম থেকেই চেয়েছেন, মেয়ে সংস্কৃতির সব ক্ষেত্রেই নিজেকে গড়ে নিক। তাই মেয়ের সব ইচ্ছাতেই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন মা বাবা।
ছোট থেকেই নাচ গান আঁকা শেখার পাশাপাশি অভিনয় শিক্ষার হাতেখড়িও কম বয়সেই। অভিনয় শিক্ষার জন্য কলকাতা ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটে (KFTI) ভর্তি। সেখানে প্রশিক্ষক হিসাবে পেয়েছে নাট্য প্রশিক্ষক গৌতম হালদারকে। এছাড়া পাড়াতেই নাটকের ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় এবং দূরদর্শন ধারাবাহিকেও শিশুশিল্পী হিসাবে অভিনয়ের সুযোগ পায় গার্গী । মঞ্চে অবশ্য নাচের জন্যই প্রথম নামা।তবে পাড়ার থিয়েটারে একটা নাটকে কামারের বৌ এর চরিত্রে প্রথম অভিনয়ের স্বাদ পাওয়া। নাচ গান আঁকার পাশাপাশি অজান্তে অভিনয়কেও ভালবেসেছিল গার্গী।তাই পরবর্তীকালে নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্র পেয়ে গিয়েছিল হাতের মুঠোয়।
ছোটবেলাতেই যখন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী তখন প্রদীপ ধর পরিচালিত “রক্তে ভাসে রাজবধূ “ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ ঘটে। শুটিং হলেও অবশ্য সে ছবি মুক্তির আলোয় আসেনি। সেই বালিকাবেলাতেই ব্রিটানিয়া, প্রিয়গোপাল বিষয়ী, সিমোকো মোবাইল কোম্পানীর বিজ্ঞাপনে সুযোগ পেয়েছিল গার্গী। তবে kFTI থেকে অভিনেতা প্রশিক্ষক গৌতম হালদার ঠাকুরমার ঝুলি অবলম্বনে “কাঞ্চনমালা কাঁকনমালা ” নামে যে নাটক নির্মান করেছিলেন গার্গী সেই নাটকে রাখাল চরিত্রে অভিনয় করেছিল। তাই এটাই গার্গীর কাছে উল্লেখযোগ্য মঞ্চাবতরণ। তখন সবেমাত্র পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তারপর নানা ধারাবাহিকে অভিনয়। যদিও থিয়েটারে অভিনয়ের শক্ত মাটিটা তৈরি হয়েছিল কলেজে পড়ার সময়। নাট্যজন অধ্যাপক অরুণ দেবের কাছেই গার্গীর সচেতনভাবে নাট্যচর্চা শুরু। ব্রাহ্ম বালিকা গার্লস এবং টাকী গার্লস এর মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকপাঠ শেষে স্নাতক স্তরে গার্গী ভর্তি হয়েছিল বিদ্যাসাগর মেট্রোপলিটন কলেজে। এই কলেজে ড্রামা ক্লাব ছিল। কলকাতার সুবিখ্যাত অনীক দল এই কলেজে আন্ত: বিদ্যালয় ও আন্ত; মহাবিদ্যালয় নাট্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। সেখানে অধ্যাপক অরুণ দেবের নির্দেশনায় কলেজের পক্ষ থেকে যে নাটক( শত্রু) তৈরি হয়েছিল, সেই নাটকে দীপা চরিত্রে গার্গী নির্বাচিত হয় অভিনয়ের জন্য। এই চরিত্রের জন্য গার্গী নিজেকে প্রস্তুত করেছিল আন্তরিক শ্রমে। নাট্য প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রকাশের পর জানা গেল, গার্গী হয়েছে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী।অনীক প্রদত্ত এই সম্মান( ২০১৯ সাল) গার্গীকে থিয়েটারে আরো বেশি নিবিষ্ট হতে সাহায্য করেছিল। আর ঠিক তার পরেই অনীক এর পক্ষ থেকে গার্গীকে দলে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বাড়িতে মা বাবার সবুজ সঙ্কেত পেয়ে অনীক দলের সঙ্গে যুক্ত হয় গার্গী। শুরু হয় গার্গী ঘোষের থিয়েটার যাপন।
কলেজের অধ্যাপক অরুণ দেবের “বাগুইহাটি নটসাথী” নামে নিজস্ব দল আছে।গার্গী অরুণবাবুর আমন্ত্রণে নটসাথী দলের সঙ্গেও যুক্ত হয়। এই দলের শত্রু, পার, শিকার,ফাঁকি প্রভৃতি নাটকেও অভিনয় করেছে। এইসব নাটক নটসাথীর হয়ে বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করেছে। এর মধ্যে শত্রু নাটকে অভিনয় করেই গার্গী অনীক আয়োজিত আন্ত:মহাবিদ্যালয় নাট্য প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হয়েছিল।
অনীক নাট্যদলে যোগ দিয়ে জোরকদম থিয়েটার চর্চা শুরু করেছে গার্গী। অনীক তার কাছে এখন একটা পরিবারের মত। অরূপ রায়, অভিজিৎ সেনগুপ্ত প্রমুখ অনীক এর অভিভাবক সদৃশ মানুষের উৎসাহ, প্রেরণা, সহযোগিতা, নাট্যশিক্ষা তার থিয়েটার জীবনের পরম পাথেয় হয়ে উঠেছে।
থিয়েটারের জন্য কোন প্রতিবন্ধকতাকেই সে প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করে না।বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস সেরে, টিউশন সেরে অথবা নাচের অনুষ্ঠান সেরে ঠিক পৌঁছে যায় অনীক এর রিহার্সালে অথবা নাটকের শো তে। শুধু অভিনয় নয় – অনীক এর সমস্ত কর্মসূচিতে গার্গী যুক্ত থাকতে ভালবাসে। করোনার দিনগুলিতে , আম্ফানের বিপর্যয়ে, বাগবাজারে ভয়াবহ অগ্নি কান্ডের দিনগুলিতে অনীক এর সামাজিক কর্মসূচিতেও গার্গী যুক্ত থেকেছে। গার্গী মনে করে, একজন থিয়েটারকর্মীকে সামাজিক ক্ষেত্রেও দায়বদ্ধ হতে হয়।
অনীক দলের যে প্রযোজনাগুলিতে গার্গী সুঅভিনয়ে দর্শকের নজর কেড়েছে সেগুলি হল : ব্রাহ্মণ, হারিয়ে পাওয়া, ভালোবাসা, ঈশ্বর, প্রজেক্ট মানহাটান, পিরানদেল্লো ও পাপেটিয়ার ইত্যাদি।
নাচের মঞ্চেও গার্গী বীরপুরুষ, তাসের দেশ, চিত্রাঙ্গদা, শ্যামা, চণ্ডালিকা, মহিষাসুর মর্দিনী প্রভৃতি নৃত্যনাট্যে মঞ্চ মাতিয়েছে। দ্রৌপদী the horror night সহ দুটি চলচ্চিত্রেও গার্গী অভিনয়ে যুক্ত বিশেষ চরিত্রে। দূরদর্শনে খনা, দুর্গা, এখানে আকাশ নীল, ধন্যি মেয়েে ধারাবাহিকে অভিনয় করেছে। তবু থিয়েটারই তার ভাল লাগার প্রিয় মাধ্যম। তাই প্রতিনিয়ত থিয়েটার চর্চায় যুক্ত থেকে হয়ে উঠতে চেয়েছে একজন দক্ষ অভিনেত্রী এবং দায়বদ্ধ থিয়েটারকর্মী। এই লক্ষ্যেই এগোতে চায় গার্গী। এবং সেই লড়াইটা সবে শুরু হয়েছে । কিন্তু থিয়েটারের জন্য আরো বেশি করে লড়াই এর জন্য প্রস্তুত গার্গী।
হোক থিয়েটার। অভিনন্দন।শুভেচ্ছা।
অসংখ্য ধন্যবাদ ‘অমল আলো’ এবং বিজয় কুমার দাদা। আশির্বাদ করবেন, পাশে থাকবেন। ❤️
গার্গী কে আন্তরিক অভিনন্দন ।
Congratulations 🙌🏻🙌🏻
অনেক অনেক অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা রইল আপনার সাথে। অনেক দিন ধরেই আপনার থিয়েটারের প্রতি ভালোবাসা এবং কঠোর পরিশ্রম আজ আপনাকে উচ্চতার এই শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। তবুও এখনও অনেক পথ চলা বাকি। এইভাবেই এগিয়ে চলুন । সবাই আপনার পাশে আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। 😊