বিজয়কুমার দাস
ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি একটা আগ্রহ ছিল ঋকের। যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে তখন একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে আঁকা শিখতো। আর সেই প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক অনুষ্ঠানে নাটকও হতো। মায়ের হাত ধরে আঁকা শিখতে গিয়ে আগ্রহটা বেড়েছিল আঁকার পাশাপাশি অভিনয়েও। জন্মসূত্রে অবশ্য অভিনেতা ঋক দেব মালদার। জন্ম মালদাতেই। ঘটনাচক্রে কলকাতায় আসা এবং বরানগরে বেড়ে ওঠা। পড়াশুনো স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে এবং পরবর্তীতে বিদ্যাসাগর কলেজে। তবে নাটকের মঞ্চে নামা কিন্তু সেই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়েই “জুয়েল থিফ ” নাটকে।
ছোটবেলায় অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থাকলেও পরবর্তীকালে সেই অভিনয়ের অঙ্গনই হয়ে উঠেছে ঋক দেবের ভালবাসার ক্ষেত্র।থিয়েটারের মঞ্চে নিজের যোগ্যতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে একজন অনিবার্য অভিনেতা হিসেবে। থিয়েটার হয়ে উঠল ভাল লাগার মাধ্যম। ভাল লাগা থেকে এই মাধ্যমটির প্রতি এক অনন্য ভালবাসা তৈরি হয়ে গেছে তার।নিজেকে একজন বলিষ্ঠ অভিনেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই চলছে ঋকের। ঋক জানিয়েছে আগামীতে সে নিজেকে একজন ক্লাস এক্টর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। সে মনে করে, থিয়েটারই একমাত্র জায়গা যেখানে নিজেকে ক্লাস এক্টর হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সে পৌঁছে দিতে পারবে।
অভিনয় তো সে করছেই। বিভিন্ন নাট্যদলের বিভিন্ন নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে ঋক বাংলা থিয়েটারের দর্শকদের বুঝিয়ে দিতে পেরেছে, থিয়েটারে নিজেকে প্রতিষ্ঠার লড়াই এ সে পিছিয়ে যেতে রাজী নয়। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি থিয়েটারের সেট ডিজাইন নিয়ে তার একটা বিশেষ আগ্রহ আছে। অবশ্য থিয়েটারের তথাকথিত কোন ডিগ্রী তার নেই। সে থিয়েটারের ময়দানে নেমে থিয়েটারের কাজ করতে করতে থিয়েটার শেখায় অনেক বেশি বিশ্বাসী।
কাজ করতে করতে, নানা চরিত্রে অভিনয় এবং বিভিন্ন প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে থাকতে, বিভিন্ন পরিচালকের অধীনে কাজ করতে করতে সে প্রতিনিয়ত থিয়েটার শিখেছে । দুর্গা চক্রবর্তী, সমীর বসু, ব্রাত্য বসু, প্রসেনজিৎ বর্ধন, তুলিকা দাস, সমরেশ বসু, সিতাংশু খাটুয়া, অরিত্র ব্যানার্জী, অভিজ্ঞান ভট্টাচার্য, কলিকা মজুমদার প্রমুখ পরিচালকদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রযোজনায় কাজ করার অভিজ্ঞতা তার অভিনয় জীবনের ঝুলিতে রয়েছে এখনও পর্যন্ত ।
ঋকের জীবনের সঙ্গে থিয়েটার বৃত্তের একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠলেও আগামীতে অন্য মাধ্যমেও যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে আছে তার। ঋকের কথায় : টার্গেট মিডিয়া। ক্লাস এক্টর হবার প্রশিক্ষণে সে থিয়েটারে আছে।
অবশ্য আপাতত থিয়েটারই তার রুটিরুজির মাধ্যম। বাড়িতে মা বাবা তার থিয়েটারের কাজে সহায়ক শক্তি বলেই সে থিয়েটারকে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে বাঁচার লড়াইটা চালাতে পারছে।
এ যাবৎ অভিনীত সব চরিত্রই তার প্রিয় তবে তার মধ্যে কয়েকটার নাম করে বাকিদের প্রতি অবিচার করার পক্ষপাতী নয় ঋক। তবুও তার নাটকগুলির কথা বলতে ভালো লাগে। যেমন বুদ্ধুরাম, গোরুরগাড়ির হেডলাইট, দখলনামা, কালপুরুষ, ২১ গ্রাম, আনন্দমঠ, দাদার কীর্তি, ফলসি চড়ার উপাখ্যান, আবার যদি ইচ্ছা করো, কনকচাঁপা, মাধুকরী, কাদম্বরী ইত্যাদি।
নৈহাটি নাট্যসমন্বয় এর টিনের তলোয়ার এবং গড়িয়া কৃষ্টির গর্ভধারিণী নাটকেও ঋক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছে। নিজেকে সে আদ্যোপান্ত একজন থিয়েটারের মানুষ বলে মনে করে। প্রতিনিয়ত তাই অনুশীলনের মধ্যে থাকে। বাড়িতে যেমন চর্চা চালায়, তেমনি রিহার্সালেও একটা নাটকের বাস্তব চরিত্র হয়ে উঠতে চায় সে। একই সঙ্গে শরীরকে সে ভাল থিয়েটার করার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মনে করে। তাই শরীরচর্চাও করে নিয়মিত।
থিয়েটার থিয়েটার এবং থিয়েটার। প্রতিনিয়ত থিয়েটারের মঞ্চে নিজেকে চেনানোর লড়াই এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে ঋক দেব।
আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল ঋক ।
জয় হোক।
ফোকাসে এমন নতুন প্রতিভাদের জীবনকথা জানতে পারছি বিজয়দার কলমে। ভালো লাগছে।