দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সুভাষগ্রামের বিশালকে এখন এলাকার সবাই চেনে থিয়েটারে নিবেদিতপ্রাণ এক যুবক হিসাবে।তার সারাদিনের ভাবনায় আর চর্চায় জড়িয়ে থাকে থিয়েটার। মাস্টারদা সূর্যসেনের ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের কথা তো ইতিহাস। সেই ইতিহাস খ্যাত চট্টগ্রামে জন্ম বিশালের।অবশ্য বিশালের লেখাপড়া, বড় হওয়া, থিয়েটারে জড়িয়ে যাওয়া সবই এই বাংলায়। তার ছোটবেলাতেই বিশালের পরিবার এসে উঠেছিল সুভাষগ্রামে। তারপর বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই। অনেক দু:খের দিন, অনেক বেদনার দিন, অর্থকষ্টের দিন গেছে সুভাষের পরিবারের। তবে তারই মধ্যে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে বিশাল। সোনারপুর মাটিয়ারা বিদ্যালয়, কোদালিয়া প্রসন্ন বঙ্গ বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনোর পর নেতাজীনগর কলেজ থেকে স্নাতক এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর ডিগ্রী তার পকেটে। মধ্যপ্রদেশের গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণায় রত বিশাল ভট্টাচার্যর অন্য পরিচয় হল আবির্ভাব থিয়েটার দলের প্রতিষ্ঠাতা,কর্ণধার সে। নানা ঘাটের জল খেয়ে বিশাল এখন নিজের নাটকের দল আর দলের প্রযোজনা নিয়েই মেতে আছে। একেবারে নতুন ছেলেমেদের কর্মশালার মাধ্যমে থিয়েটার উপযোগী হিসাবে গড়ে নিয়ে থিয়েটার করছে।
বিশালের থিয়েটারে যুক্ত হওয়ার গল্পটাও নাটকের মত। রিয়েলিটি শো এর আকর্ষণে আকৃষ্ট হয়ে সেইসব শো তে যোগ দেওয়ার জন্য ছবি তুলতে গিয়েছিল স্টুডিওতে। সেখানে তাকে দেখে থিয়েটার করার প্রস্তাব দেন নাট্য পরিচালক প্রদীপ চক্রবর্তী।তিনি তাঁর মালঞ্চ অয়ন নাট্যদলের কর্মশালায় তাঁকে যোগ দিতে বলেন। রাজী হয়ে যায় বিশাল। শুরু হয় তার নাট্যজীবন। কর্মশালার পরে মালঞ্চ অয়ন দলের নানা প্রযোজনায় অ’ভিনয় করে বিশাল। কালবৈশাখী, মাদল প্রভৃতি নাটকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে। থিয়েটারের পোকা এভাবেই বাসা বাঁধে বিশালের মগজে। মালঞ্চ অয়ন দলে বিশাল প্রথম অভিনয় করে (২০৯৬-০৭সাল) ফণীমনসার মঙ্গলকাব্য নাটকে। অন্যান্য নাটক: বধ্যভূমি, এই রাত সেই রাত। এরপর থিয়েটারকে আরো নিবিড় করে পেতে নাট্যজন অশোক মুখোপাধ্যায়ের থিয়েটার ওয়ার্কশপের কর্মশালায় (২০১৭ সাল) যোগ দেয় বিশাল। এখানে নাট্যশিক্ষক হিসাবে কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, গৌতম হালদারের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয়। সংসৃতি নাট্যদলের দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যও তাকে অনুপ্রাণিত করে। দেবাশিস রায়ের থিয়েটার প্লাটফর্ম নাটকে “একটি সহজ খুনের গল্প” নাটকে অভিনয় করেছে বিশাল।
এখন নিজের দল আবির্ভাব থিয়েটার নিয়ে মেতে আছে বিশাল। এ জন্য মালঞ্চ অয়ন দলের পরিচালক প্রদীপ চক্রবর্তীর কাছে সে কৃতজ্ঞ। বিশাল মনে করে, প্রদীপ চক্রবর্তীই তাকে থিয়েটার নিয়ে বাঁচার স্বপ্নটা দেখিয়েছে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করাই তার বাসনা। করোনা আবহের মধ্যেও নতুন ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনলাইন, অফলাইন কর্মশালা,নাট্য প্রযোজনার কাজ চালিয়ে গেছে। বিশাল মনে করে, করোনা থিয়েটারের ওপরে এক বিশাল থাবা বসিয়ে দিয়েছে।প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে থিয়েটারে যুক্ত থাকা বহু মানুষ করোনায় বিপন্ন হলেও থিয়েটার নিয়ে বাঁচার স্বপ্নটা ছাড়েনি অনেকে।বিশালও ছাড়েনি। একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিল করোনা আবহের মধ্যেও দলের ছেলেমেদের থিয়েটারমুখী করে রাখার জন্য। একেবারে অভিজ্ঞতাহীন ছেলেমেয়েদের কর্মশালার মাধ্যমে থিয়েটার উপযোগী হিসাবে গড়ে নেওয়ার ব্রতে ব্রতবদ্ধ বিশাল। নতুনদের নিয়ে কাজ করে এক অন্য আনন্দ পায় আবির্ভাব দলের কর্ণধার। প্রায় প্রতিটা দিন তাদের ব্যস্ত রাখে প্রশিক্ষণের সঙ্গে। সুভাষগ্রাম আবির্ভাব থিয়েটার নিয়ে সে মাতিয়ে দিতে পেরেছে এলাকার নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের। থিয়েটারের পাশাপাশি ওয়েব সিরিজ, দূরদর্শন ধারাবাহিক, টেলিফিল্ম, চলচ্চিত্র ইত্যাদি মাধ্যমের সঙ্গেও নিজেকে যুক্ত রেখেছে সে। খুব লড়াই এর মধ্যে কেটেছে তার কৈশোর, যৌবন। তাই থিয়েটারের জন্যও লড়াইটা চালিয়ে যেতে চাওয়া তার অন্যতম ইচ্ছা। নিজের দলের ছেলেমেদের নাটক নিয়ে সে পৌঁছতে চায় কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়।। নানা পত্র পত্রিকায় থিয়েটার নিয়ে লেখালেখি, গবেষণার কাজ, নানা সামাজিক কাজ, ছাত্রছাত্রী পড়ানোর পাশাপাশি থিয়েটার চর্চাও তার জীবনের অঙ্গ। জীবনে রুটিরুজির জন্য থিয়েটার নিয়ে বেঁচে থাকা যদিও খুব ঝুঁকির বিষয়, সেটা জেনেও থিয়েটারকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার স্বপ্নই ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে বিশালের চোখে।
খুব ভালো লাগলো লেখাটা।তরুণরা এভাবেই এগিয়ে আসুক।
অসংখ্য ধন্যবাদ 🙏
অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই অমল আলো জার্নাল তথা অশোকনগর নাট্যমুখকে এবং বিজয় দা কে এমন প্রেরণা জোগানোর জন্য।